নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেয়ালের অপর পীঠ

তব ঘৃণা বক্ষে চাপিনু, হাসিনু মুখে, জঞ্জাল তব চাপিনু পিঠে, চলিনু মহাকালে ।

দি ভয়েস

নিজেকে নিয়ে গবেষণা চলছে । জানলে জানাব ।

দি ভয়েস › বিস্তারিত পোস্টঃ

এটাকে কি ভালবাসার গল্প বলব ?

০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ১১:৩২

সেদিন দেখি এক মেয়ে ও এক ছেলে রিকশা থেকে নামলো । ছেলেটি তার মোটা স্বাস্থ্যবান মানি ব্যাগ থেকে রিকশা ভাড়া চুকালো । তো আমি রোডের ওপাশ থেকে তা দেখে হেসে ফেললাম । শুনলাম আমার হাসি ইকো হয়ে আমার কাছেই ফিরে এলো । কিন্তু পথের মধ্যে তো ইকো হওয়া সম্ভব না । পাশে ফিরতেই দেখি আমার মতো আরেক ছেলেও ঐ রিকশা ভাড়া ঘটিত ব্যাপারখানা নিয়ে মজা করছে ।



তার দিকে তাকাতেই বলল, '' ভাই সবই মোহ । ''

আমি '' হুম... ভাই, সাথে মানি ব্যাগের কেরামতি । ''



তবে তার কথার মাঝে কিছু একটা আছে ভেবে বললাম, '' ভাই মেয়ে মানুষ খুব আজিব প্রানী গুলোর মধ্যে একটা । কি বলেন ? '' সে ও উত্তর করল, '' চলেন ঐ পাশটায় গিয়ে বসি । '' চলেন ।



কাহিনীটাকি এইবার বলেন ।



সে বলে গেল,

আমি তখন টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছি । নিয়মিত কোচিং এ যাই । ভাই, ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিলাম না । আমার শ্রেনীর ক্যাপ্টেইন ছিলাম । এ দিক থেকে শিক্ষকরাও বেশ আদর করতেন । আমি বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে । সেদিক থেকে বাসায়ও আমার বেশ আদর যত্ন করা হত । দিন গুলো কাটাচ্ছিলাম রাজ পুত্রের মত ।



তিনি এ পর্যন্ত বলে একটু দম নিলেন । লক্ষ্য করলাম, তার চেহেরায় একটা উজ্জ্বল আলোকময় হাসি খেলে যাচ্ছে । বুঝলাম সে অতীতের সফরে মশগুল । তাই একটু নড়া দিয়ে বললাম, '' ভাই তারপর ।'' তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন এবং বললেন, '' ভাই দেখি গল্পের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছেন । আমি বললাম, '' ভাই এটাকে গল্প বলছেন কেন ? তিনি উত্তর করলেন, '' তা ঠিক বলেছেন । এটা আসোলেই গল্প না, আমার জীবনের একাংশ ।'' খেয়াল করলাম, তার চেহারার সেই হাসিটা একটু মলিন হয়ে এলো । তিনি সুরু করলেন ।



সেদিন সকালে নাস্তা করার পর কোচিংয়ের উদ্দেশ্যে বেড় হব, '' মা, ও মা । '' '' কি হয়েছে ? মা উত্তর করলেন । '' মা, আজ মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে ।'' আমি বললাম । তো ছাতা নিয়ে যা । '' আমি বললাম, '' আকাশ মেঘলা, কিন্তু বৃষ্টি হতে অনেক বাকী । '' ভাই বিশ্বাস করেন মাঝ পথে যেতেই সুরু হল ঝুম বৃষ্টি । আমি কোন মতে পথের ধারে একটা বাড়ির রেন শেডের নিচে গিয়ে দাড়ালাম ।



একটু পরেই তেরে আসলো একটা সাদা রঙের বিদেশি কুকুর । বলেই তিনি হাসলেন । আমি, '' এখানে হাসার কি হল ভাই ? আপনার তো দৌড় দেয়া উচিৎ ! '' না রে ভাই । কুকুরের পিছনে এলো পরী । উঠুনের মাঝখানটায় আসতেই ধপাস ! খেল এক হুঁচোট । আমি এসব ঝেড়ে ফেলে বললাম, '' তবে তার নাম পরী ! '' হুম... আমার দেওয়া নাম ।



আমি তো ভাই সেই হাসা । এমন একটা পরীর মতো মেয়ে হুঁচোট খেয়ে কেমন শাক চুন্নির মত লাগছে । একটু জোরেই বলে ফেলেছিলাম । সেও শুনেছিল । '' কি ? আপনি আমাকে শাক-চুন্নি বললেন ? '' রাগে গজগজ করতে করতে সে আমার দিকে আসতে আসতে বলল । '' আমি বললাম, '' ওমা ! সে-কি ! শাকচুন্নি শুনলা আর পরী বললাম সেইটা শুনলানা । '' সে বলল, '' তবে যাও ক্ষমা করে দিলাম । '' আমি বললাম, '' যাবো কিভাবে ? বাইরে যে বৃষ্টি হচ্ছে তা কি রাজকন্যার জন্য টিভিতে ব্রেকিং নিউজ করে দেখাতে হবে ! '' সে বলল, দাঁড়াও । আমি বললাম , '' বসার জন্য তো কিছু রাখইনি, সেই দাঁড়িয়েই তো আছি । বলেই একটা হাসি দিলাম । '' সে কিছু না বলে চোখ গরম করে চলে গেল । কিছুক্ষন পর একটা ছাতা নিয়ে ফিরে এলো । আমি বললাম, '' বাহ ! এতো দয়া ! '' সে বলল, পরী ও রাজকন্যা বলার জন্য । আর রাজকন্যা হয়ে তো প্রজার দুঃখ দেখতে পারি না । '' প্রজা বল আর যাই বল, ছাতা দিয়েছ এতেই আমি খুশি মনে মনে বলেই বের হলাম । সে পিছন থেকে ডেকে বলল, '' ছাতা কিন্তু ফেরত চাই । ''



বিশ্বাস করেন ভাই, আমি চোখ বন্ধ করলেই এখনো সেই প্রতিটা মুহূর্ত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে । প্রতিটা কথা আমার কানে ছন্দে ছন্দে আন্দোলিত হতে থাকে । লাইনটা কেমন যেন আজব হয়ে গেল না ! বলেই তিনি একটু হাসার চেষ্টা করলেন । বুঝলাম, তিনি পরিবেশ হাল্কা করার চেষ্টা করছে । চোখের অশ্রুর মাঝে বৃথা বাঁধ দেবার আকুতি আর কি । একটা সিগারেট ধরালেন । টান শেষ না হতেই বললেন, '' কথা চেপে রাখতে পারছি না । আপনি আবার বিরক্ত হচ্ছেন নাতো ! '' আমি বললাম কি যে বলেন না ভাই ! আমার মন+ দেখে কি তাই মনে হচ্ছে আপনার ?! তিনি হাসলেন ।



কিন্তু কথার মাঝেই একটা বাঁশ খেলাম । আসলো তার ফোন । তিনি বললেন, '' ভাই আমকে যে উঠতে হবে । আমার ক্লাইন্ট অপেক্ষা করছে । বাকীটা অন্য দিন বলব । '' আমি বললাম, '' তাকে ভাই বলেন ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে । আমার ঘুমের মাঝে এমন একটা বাঁশ দিয়ে ভাই যাইয়েন না ।'' সে হেসে বলল, '' ঠিক আছে সারাংশ বলি । আমি বললাম তা হলেও চলবে ।



বলেই তিনি পিঠের দিক থেকে টি-শার্ট তুললেন এবং বললেন, '' কিছু কি দেখা যাচ্ছে ? '' আমি ভীত স্বরে বললাম, '' এই সব কি ভাই ? '' তিনি বললেন, '' তার যখন বিয়ে ঠিক হয় তখন আমি তার জন্য পাগল প্রায় । আমি তাকে সবধরনের অফার করেছি । সে যা চাইবে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে হলেও পূরণ করব ওয়াদা দিয়েছিলাম । '' দেখলাম লোকটা কান্নায় ভেঙ্গে পরেছে । চোখের কোনে জল ছল ছল করছে । বললাম। '' ভাই থাক বলা লাগবে না । আপনি আপনার কাজে যান । '' তিনি মুখ ফিরিয়ে বললেন, '' না, ভাই ঠিক আছি । ''



যখন বুঝলাম সে ধোঁকা দিয়েছে তখন কস্তে মরে যেতে মন চাচ্ছিল । কিন্তু মরতে পারব না আমি । কেননা আমিই যে মায়ের একমাত্র সম্বল । ইতিমধ্যে আমার কোন এক পাগলামির জন্য আমার বাবা গত হোন । সে ঘটনা অন্য কোন দিন দেখা হলে বলব । যাই হোক মরতে যেহেতু পারব না । তাই কষ্টের পরিমান একটু কম করার জন্য কিচেনের বড় ছুরিটা নিয়ে ছাদে গেলাম । অন্তরের ব্যাথা কম করার জন্য পীঠে অনবরত আঘাত করতে লাগলাম ।



প্রায় পনের মিনিট পর মাতালদের মত টলতে টলতে গায়ে শার্ট জড়িয়ে বেড় হলাম । বলাবাহুল্য মা বাসায় ছিল না । ব্যাংকে গিয়েছিলেন । বাসা থেকে বের হয়ে সোজা গেলাম কলেজ মাঠে । ফোন দিলাম প্রান্তকে । প্রান্ত আমার বেস্ট ফ্রেন্ড । সে আসলো এবং আমাকে দেখেই বলল, '' কি রে কিছু একটা ঠিক নেই । কি হয়েছে তোর ? কাছে আসতেই দেখে আমার পিছন দিয়ে রক্ত চুয়ে চুয়ে পড়ছে । '' সে আমায় জড়িয়ে ধরে বলে, '' ভাই, এইটা তুই কি করেছিস ? '' বলেই সে গাড়ির দরজা খুলে আমায় বলে উঠ, এখনি হসপিটালে নিতে হবে । ''



আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, '' দোস্ত, ব্যাস্ত হবার কিছু নেই । আমার জন্য একটা কাজ কর । '' কি করতে হবে বল '' সে উত্তর দিল । আমি বললাম, '' সবাইকে ফোন দিয়ে পরীদের বাসায় না গিয়ে বল হসপিটালে আমার জন্য অপেক্ষা করতে । বলাবাহুল্য যে, সে সকল ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে বলেছিল, পরীকে তুলে আনার জন্য । আমি বললাম, '' প্রান্ত, তুই পরীকে একটা ফোন দে । বল শেষ বারের মতো আমায় যেন একটু দেখে যায় । '' পরী জানে প্রান্ত আমার খুব কাছের ফ্রেন্ড । তাই তার কথা সে ফেলতে পারল না ।



আমি বললাম, '' পরী এসেছো ? '' '' প্রান্ত ভাই বলেন, কি জন্য ডেকেছেন ?'' সে প্রান্তকে বলল । প্রান্ত বলল, '' শুনো অর্ক যেন কি বলবে তোমায় । '' বলেই প্রান্ত আমার দিকে তাকালো । আমি বললাম, '' প্রান্ত, গাড়িতে ব্যাক সিটে একটা প্যাক আছে নিয়ে আয় । '' ভাই ঠিক ঐ সময়টায় আমি এক মুহুর্তের জন্য তাকে চোখের আড়াল করিনি । বলেই সে কেঁদে ফেলল । না ভাইচোখের পানিটা বড় নির্লজ্জ সময় বোঝে না । দেখলেন ঠিকই বের হয়ে এলো ।



প্রান্ত কাগজের প্যাকটা এনে দিল । আমি তার সামনে গায়ের জামাটা খুলে ফেললাম । তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সে অবাক নেত্রে আমার পাগলামির সীমানাটা অবলোকন করছে । আমি পেকেট থেকে কাঁচা মরিচ বের করে তার হাতে দিলাম এবং বললাম, '' এবার আমার ভালবাসার প্রাপ্তিটাকে বুঝিয়ে দাও । চুকিয়ে দাও দেনা-পাওনার নির্মম হিসেবটাকে । '' দেখলাম সে পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে মুখে কোন কথা নেই । আমি নিজেই কিছুটা মরিচ আমার গায়ে দলে দিতেই প্রান্ত হাত ধরে ফেলল ।



সে আমার পা ধরে বলল, '' আমি রাজি তোমার কাছে আসতে । তুমি যা চাও তাই হবে । '' আমি শত যন্ত্রনার মাঝেও একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, '' তুমি আসার আগেই আমার পরী মরে গেছে । সে আজ আমার কাছে ধ্রুব তারা বই আর কিছুই না । সুখে থেকো । '' প্রান্তকে বললাম, '' গাড়ি স্টার্ট দে ।'' প্রান্ত চলে গেল । আমি ফিসফিসিয়ে তার কানের কাছে গিয়ে বললাম, '' সুখ যে তোমার হবে না , তা আমি জানি । যার দরুন এসব কিছু করা ;; না তুমি পারবে তোমার স্বামীকে পুর্ন ভালবাসা দিতে, না পারবে আমার কাছে ফিরে আসতে । ''



এর মাঝেই তার দুইবার ফোন এসেছিল । এই নিয়ে তৃতীয় বার এলো ।সে বলল, '' আজ আর হচ্ছেই না । অন্য আরেকদিন সিউর বলব । আজ উঠি । আমিও বুঝলাম তার জন্য কেউ বসে আছে । তাই আর কিছু বলতে পারলাম না । বিদেয় দিতেই হল । সে কালো রঙের পাজেরোটা নিয়ে চলে গেল । আমি মাঠের গ্যালারিতে বসে উকি দিয়ে দেখলাম ।



তার সেই রিকশা ভাড়া সংক্রান্ত হাসিটার মানে বুঝার চেষ্টা করলাম ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:০৩

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: শিক্ষা শিক্ষার মতই দেয়া হইছে, যদিও রক্তপাতের ব্যপার ছিলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.