![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
.১.
অফিসে মাত্র প্রবেশ করলেন, কর্ণেল সাহেব।
এরই মাঝে ডেস্কের পাশের টেলিফোনটা বেজে উঠল। টেলিফোন রিসিভ করে কানে তুললেন। ওপাশ থেকে যন্ত্রের মত সালাম দিয়ে বলল, ‘ডিজি স্যার আপনাকে জরুরী তলব করেছেন। দুপুরের মধ্যে হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করতে বলেছে।'
কপালের চামড়াগুলো ভাঁজ হয়ে গেল। কর্ণেল সাহেবের মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। হঠাৎ ডিজি স্যার সরাসরি অফিসে ডাকলেন কেন? তাহলে কি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু!
র্যাবের হেডকোয়ার্টারে ওয়েটিং রুমে বসে আছেন কর্ণেল সাহেব। এমন সময় একজন এসে বলল, ‘স্যার! ডিজি স্যার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।’।
রুমে প্রবেশ করে ডিজি সাহেবকে সামরিক নিয়মমোতাবেক স্যালুট দিল কর্ণেল।
ডিজি স্যার মুখের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসি দিয়ে বললেন, ‘ওয়েলকাম মাই সান। প্লীজ টেক ইউর সীট।’
ডিজি সাহেব বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলেন। তারপর একটা খাম কর্ণেল সাহেবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘চিঠিটা তোমার জন্য। পড়।’
চিঠি পড়তে পড়তে মুখটা প্রায় ফ্যাকাশে হয়ে গেল কর্ণেল সাহেবের। তখন ডিজি সাহেব বললেন, ‘কর্ণেল গুলজার! তোমার ট্রান্সফারের বিষয়টি আমারও জানা ছিল না। আজই হঠাৎ করে চিঠি পেলাম। তোমাকে আগামী রোববারের মধ্যে বিডিআর এ জয়েন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এতো কম সময়ে তোমার সম্মানে যে একটা ডিনারপার্টির আয়োজন করব সেই সুযোগটাও পেলাম না। কর্ণেল, তুমি যেখানেই যাও দেশ তোমার সেবা পাচ্ছে এটাই বড় কথা। আজকের এই সাফল্য মন্ডিত ‘র্যাব’ নামটির পিছনে কর্ণেল গুলজারের অবদান জাতি নিশ্চয়ই ভুলবে না। এবার তোমার বিডিআরকে সেবা দেবার সময়। গো এহেড, মাই বয়।’
সবেমাত্র বিডিআর এ জয়েন করেছেন কর্ণেল গুলজার। কর্ণেল গুলজারের পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকজন সেনা অফিসারকে র্যাব থেকে বিডিআর এ ট্রান্সফার করা হয়। হঠাৎ এমন ট্রান্সফারের জন্য কেউই তেমন প্রস্তুত ছিলেন না। তাই দির্ঘদিনের কর্মস্থল এবং পরিচিত সহকর্মীদের ছেড়ে যেতে বেশ কষ্টই হল। কিন্তু কষ্ট হলেও যেতে তো হবে। একজন সৈনিকের জীবনে এমন মুহুর্ত বারংবার আসবে। সেই মুহুর্তগুলো পাশ কাটিয়ে মনের গহীন কোনে জমা রেখে তাকে ছুটতে হয় দেশ মাতৃকার সেবায়। সেই দেশ মাতৃকার সেবায় কর্ণেল গুলজার এইবার ছুটলেন বিডিআর বাহিনীতে। এবার বাংলাদেশের সীমানাকে নিরাপদ করার মিশন। এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই বাংলাদেশের সীমান্তকে নিরাপদ রাখতে হবে। তাদের উপর বাংলার ১৮ কোটি মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব। এযে পরম গুরুভার।
২.
বাবা বিডিআর এর সৈনিক ছিলেন। বাবাকে দেখেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদান করার। এরপর ক্যাডেট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন শাকিল আহমেদ। প্রচন্ড মেধাবী এই মানুষটি অল্পদিনের মধ্যেই নিজের জাত চিনিয়ে ফেললেন। কমিশ র্যাংকের সমস্ত পরীক্ষায় ধারাবাহিক ভাবে রেকর্ডসংখ্যক নাম্বার নিয়ে মেজর পদে উন্নীত হন। এরই মাঝে কেটে গেছে অনেক গুলো সময়। সেই সৈনিকের ছেলে এখন বিডিআর এর ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ।
মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ বিডিআর এর দায়িত্ব গ্রহনের পরপরই নিজের বাহিনীকে সুসংগঠিত করতে মনোনিবেশ করেন। যেহেতু তিনি একজন সৈনিকের সন্তান। সেকারণে একজন সৈনিকের জীবনযাপন সম্পর্কে স্পস্ট ধারণা রাখেন। তিনি জানেন, কি করলে তার সৈনিকদের কাছ থেকে ১০০% সেবাটি পাবেন। তিনি সরকারের কাছে বেতন বৃদ্ধির প্রতি পরামর্শ প্রদান করলেন। সৈনিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে জোর তাগিদ দিলেন। সেই সাথে বাহিনীতে আরো সৈনিক বাড়িয়ে শক্তি বৃদ্ধিতে জোর তাগিদ দিলেন।
সীমান্ত হত্যা। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাবার পর থেকেই সীমান্ত হত্যা সমস্যাটিকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ছোট্ট একটি বাংলাদেশ। তার চারদিকে ভারত। এই ভারতের সীমান্তরক্ষি বাহিনী সুযোগ পেলেই বাংলাদেশের মানুষগুলোকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু এই হত্যাকান্ডকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারলেন না, মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ। দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠকের আহব্বান করলেন। পতাকা বৈঠকে তিনি দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে বললেন, “আমার দেশের সীমানায় ভারত যদি অন্যায়ভাবে আর একটা গুলি ছুঁড়ে। আমার দেশের মানুষকে যদি অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয় তবে বিডিআর চুপ করে থাকবে না। তাদের রাইফেলগুলো শুধু গাঁধে ঝুলিয়ে রাখার জন্য দেওয়া হয়নি। এই রাইফেল ভারতের দিকে তাক করা হবে। গুলির জবাব গুলি দিয়ে দেওয়া হবে। আমরা গুলির জবাবে নীরবতা পালন করতে বাধ্য নই। এবার সিদ্ধান্ত তোমাদের! আমি আমার বক্তব্য স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি।”
একজন মেজর জেনারেল যে এতোটা স্পষ্ট করে হুমকী প্রদান করবেন তা হয়তো ভারত কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। এরপর কি হল?
এরপর সীমান্তের চিত্র সত্যিই রাতারাতি বদলে গেল। দু’একজন ঘাড় ত্যাড়া বিএসএফ যদিও গুলি ছুড়েছিল তার জবাব বিডিআর বাহিনী গুলি ছুড়েই দিয়েছিল। এরপর সীমান্ত হত্যা অনেকাংশেই কমে যায়। কিন্তু এরপরে কি ভারত চুপ করে থাকবে?
এরপর ২৫-২৬ ফেব্রয়ারী ২০০৯ এর ‘বিডিআর সপ্তাহ’। চারদিকে সাজ সাজ রব। এই সাজ সাজ রবের পিছনে যে দান্তের নরক অপেক্ষা করছে তা কারো কল্পনাতেও ছিল না। দ্যা ডিভাইন কমেডি এর সেই নরক রচিত হয়েছিল পিলখানা বিডিআর সদরদপ্তরে। ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে কর্ণেল গুলজার এবং মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ এর লাশ। কর্ণেল গুলজারকে এতোটাই আঘাত করা হয়েছিল যে তার লাশটিকে দেখে চেনার উপায় ছিল না। মাত্র ২৩ দিন আগে বিডিআর এ জয়েন করা কর্ণেল গুলজারের উপর বিডিআর জওয়ানদের কিসের এতো আক্ষেপ ছিল? যে লোকটিকে মাত্র ২৩ দিন আগ থেকে কাছে পেয়েছে তার উপর এতোটা রাগ কোথায় পেল?
তবে এই রাগ পূর্বশত্রুদের?
হ্যাঁ! এই রাগ পূর্বশত্রুতার। পাশ্ববর্তি রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার জেএমবি প্রজেক্ট যে কর্ণেল গুলজার একাই ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাদের এতো বছরে প্ল্যানিং তিনি কয়েকমাসের অভিযানেই ভেস্তে দিয়েছেন। রাগ তো থাকারই কথা।
তেমনি রাগ ছিল মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ এর উপর। দেশকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে যাওয়াই অপরাধ। দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়াটাই অপরাধ। সীমান্তকে নিরাপদ করাটাই অপরাধ। আরো বড় অপরাধ বিডিআর বাহিনীকে শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করা। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা। এতো সব অপরাধের সাজা যে এতোটাই নির্মম হবার কথা। আর তাদেরকে মদদ দিয়েছে যারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারটি কার হবে সেই ফয়সালা দান করে। ক্ষমতায় কে কতোদিন থাকবে সেই সিদ্ধান্ত যে দেশের রাজধানী থেকে নির্ধারন করা হয় সেই দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। আর তাদেরকে মদদ জুগিয়েছে সর্বকালেল সেরা দালাল খুনী এবং নির্লজ্জ হায়েনারা। এই হায়েনাদেরকে জাতি কোন দিন ক্ষমা করবে না।
২| ২৬ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:০৮
করুণাধারা বলেছেন: মন্তব্য নেই!!
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৫
কলম চোর বলেছেন: শেষ পর্যন্ত শুনুন। Click This Link