![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি জেল পলাতক পুলিশ!!!!! শেষমেশ এই সামুতে আশ্রয় নিলাম।
ভুতের গল্প কার না ভাল লাগে?
ছোট বেলায় ভুতের গল্প পড়েনি কিংবা শোনেনি এমন মানুষের সংখ্যা যে অতিশয় নগন্য তাতে কিঞ্চিত সন্দেহ নাই।
যতই মানুষ ভয় পাক না কেনো ভূতের প্রতি আকর্সন সবারই আছে। ভুত দেখার বাসনা সবার ভিতরেই লুকায়িত থাকে।
গ্রামের ছেলেরা তো আরও বেশি ভুতসুলভ। তারা পারলে তো ভুতকূলেরও নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে ।
আমিও এরকমই এক মনুষ্যশাবক পালের গোদা ছিলাম। আমি যে তাদের দলপতি হিসেবে উপযুক্ত এবং ভুতজাতে নির্ভয়ী সেটা প্রমান করার জন্য প্রত্যেকদিন ঘুমানোর আগে কিছু দুঃসাহসি আষাঢ়ে গল্প বানাতাম। পরের দিন এসে সেগুলা দলীয় সমাবেশে উদগিরন করতাম।তারা সেগুলা হা করে গিলতে থাকত আর নির্দিধায় বিশ্বাস করত।আজকাল কার ছেলেমেরা তাদের বাবা মার কথাও এতটা বিশ্বাস করে কিনা সন্দেহ।
মাঝে মাঝে হাড়পাকা বৃদ্ধ দের সাথে ভুতচর্চা করেও সেগুলো তাদের মগজে ঢুকিয়ে দিতাম।
যাই হোক, ভুত দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম একবার। আমার এক চাচির উপরে নাকি ভুত চেপেছে। আর সেটাকেই উত্তম মধ্যম দিয়ে এলাকা ছাড়া করা হবে।
আর সেইটা দেখার সুযোগ টাও নিয়ে নিলাম। তবে একটু কান্নাকাটি করেই অনুমতিপত্র টা নিতে হল।
সন্ধ্যা বেলাতেই খাওয়া শেষ করে ভুত তাড়ানো বাড়িতে উপস্থিত।
গিয়ে দেখি সেখানে আমার মত অনেকেই ভুতের ভবিষ্যৎ দেখবার জন্য ইতিমধ্যেই মহাবেশ তৈরি করে ফেলেছেন।
অতি উৎসাহে তাড়া আমাকে বরণ করে নিলেন।
এবার বুজি ভুত বাবাদের বেইজ্জতির আর সিমা থাকবে না। সেইটা নিজের চোখে দেখাও বিশাল ব্যাপার।
রাত ১২ তার দিকেই কলকব্জা নিয়ে হাজির ভুতেদের যম। মানে কথিত ফকির দরবেশ বাবারা।
নাহ! এই দরবেশদের সেই বাংলা ছবির দরবেশদের মত দাড়ি কিংবা লম্বা আলখেল্লা নেই।
সাধারন গ্রাম্য মানুষ। তবে তারা ভুতের হাড় হদ্দ সবই জানেন। তাদের কাছে নাকি ভুত তাড়ানো মশা মারার চেয়েও সহজ কাজ!
মাটিতে কাটাকুটি খেলার মত কিছু আকিবুকি করেই তাদের মিশন সুরু করলেন।
ভুতাক্রান্ত ব্যাক্তিকে নামাজের পাটিতে বসিয়ে চারদিকে গন্ডি একে দেয়া হল। এটাই ভুত আর মানুষের মধ্যে লাইন অব কন্ত্রোল।।
সিমান্ত পাহারার জন্য এক প্লাটুন কড়ি,এক প্লাটুন হাড় গোড় আর একপ্লাটুন গোপন বাহিনী নিযুক্ত করে দিলেন।
আমরা চুপচাপ খাটে বসে আছি। তারা নিচে বসে তাদের ভুত তারানোর গান শুরু করলেন।
এই গান নাকি ভুতের খুব প্রিয়। তারা নাচতে নাচতে চলে আসেন এই গান শুনতে।
আমি ভুতের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি।
আর মনে মনে ভাবছি ভুত কি মানুসের মত দোপেয়ে নাকি কুকুরের মত?নাকি তাদের পাখির মত ডানা আছে? ডানাই হবে নাহলে মানুশের ঘাড়ে কিভাবে চড়বে?আর তারা কি কালো জামা পরে না সাদা,তাদের আলিফ লায়লার ভুতের মত শিং আছে?? তাদের পায়ের পাতা কি সত্যি ঊল্টা ??? গল্পে যেরকম টা পড়েছিলাম। এখানে ঢুকবেই বা কি করে? দরজা তো বন্ধ।
তাকিয়ে দেখলাম
ভুতাক্রান্ত ব্যাক্তিটিও তাদের গানের সাথে মাথা ঝাঁকাচ্ছেন। তার মানে এইত ভুত সাহেব আসলো বলে কথা।
ঘন্টা খানেক পর এসেও গেল। গান বন্ধ করে দিলেন।
কিন্তু ভুতটার অবস্থান কই? যেই কজন মানুষ বসা ছিল সেই কজনই তো তাহলে ভুতটা কই বসল??ভুতাক্রান্ত ব্যাক্তিটির ঘাড়ে বসেছে নিশ্চই।
ভুত তো আর সাধারন জাতি নয় যে যেখানে সেখানে বসে পড়বে।
ফকিরদের মধ্য হতে একজন রাগি সরে বলে উঠল
---"বল তোর নাম কি?
---"আমার নাম অমুক,আমি ত অমুক বারির বউ।অমুকের পুত্রবধু........
ইত্যাদি ১৪ গুষ্ঠির পরিচয় দিল আসনের ভুতাক্রান্ত ব্যাক্তিটি নিজের কন্ঠেই।
কিন্তু এটাই নাকি ভুতের কণ্ঠস্বর। তার ঘাড়ে থাকা ভুতটাই নাকি এসব বলছে!
বাহ!ভুতটার ত দারুন স্মৃতিশক্তি।সবকিছু কেমন গড় গড় করে বলে দিল।আমার সাথে যদি এরকম একটা ভুত থাকত তবে ওকে দিয়ে বই পড়াতাম।আর আমার চেহারা নিয়ে পরিক্ষা দিত। আমি ১ম হতাম ক্লাসে।ভুতের সাথে প্রতিযোগিতা করার মত মেধাবি ছেলে আমার ক্লাসে একটাও নেই।ভাবতেই আমার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
এবার ফকির আরো রেগে জিজ্ঞেস করল
---"এটা তো রোগির নাম,তোর আসল নাম বল।"
বলেই লাঠিটা হাতে নিলেন।
---আমার নাম পাতালবাসরী। মানে আমি পাতালে পাতালে চলি তো তাই।
পাতালবাসুরি??তার মানে মেয়ে ভুত! কৌতুহলি হয়ে উঠলাম।আর ভুতটা নামের ব্যাখ্যাও দি্তেও জানে! তার মানে শিক্ষিত ভুত। বড় বড় পাশ না করলেও ৮ ক্লাস ১০ ক্লাস যে পড়েছে তা নিশ্চিত। ।চালাকও বটে, আগের বার ভুয়া নাম বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল।
---পাতাল বাসুরি ভাল কথা,তা এই রুগির সাথে কবে আসলি?
---আট থেকে ১০ বছর আগে।তাদের বাড়ি যখন নদিতে ভেংগে যায় তখন তারা কলাবাগান কেটে সাফ করে সেখানে ছাপড়া দিয়েছিল।কলাবাগানে দেখেই তাকে আমার পছন্দ হয়, ওখান থেকেই তার পিছু নেই।
---এখন ছেড়ে দে একে।
---না,আমার মায়া লাগে।
---কি!!!! মায়া লাগে তোর? দেখাচ্ছি তোকে??
এই বলেই লাঠি উচালেন নিরতিশয় ক্রুদ্ধ ফকির।
---ছেড়ে দেব ছেরে দেব। বলেই চিৎকার করে উঠল ভুতটা।
---কই যাবি তুই? একদম খালের ওপার চলে যাব।
---না,তুই একদম নদির ওপার যাবি। কখনওই এপার আসবি না।আর কি নিবি বল??
---ভরা কলস।
---না তুই ছেড়া জুতা নিয়ে যাবি।
ভুতটা নিরব হয়ে গেল।
--"যতক্ষন না বলব ততক্ষনে যাবি না।"
বলেই আবার গান শুরু করল তারা,তবে এইবার গানের মাধ্যমে কিরা কান্ড দেওয়া হচ্ছে ভুতকে।অনেক ধরনের কিরাকান্ডের পর আবার নতুন গান।
তবে এবারে গালির গান। গানে গানে গালি দিয়ে উদ্ধার করে দেয়া হচ্ছে ভুত সমাজকে।
এত এক অবলা নারীভুত। স্বয়ং ভুত সমাজের সরদারও যদি থাকত তবে সেও এই গালি শুনে লুংগি খুলে পালাত।
যাই হোক শেষ মেশ অনেক দরকষাকষির পর ভুত টা অগস্ত্য যাত্রায় বাধ্য হল।।
ছেড়া চামড়ার জুতা চাইল বিদায় উপহার হিসেবে।
এখানেও বেচারিকে ঠকানো হল,চামড়ার বদলে ছেরা স্পঞ্জ জুটল বেচারির কপালে।
স্যান্ডেলটা দাত দিয়ে কামড়ে ধরে ভুতটা খোলা দড়জা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেল।
সেই সাথে ভুত ইতিহাসে রচিত হল মানুস্য সমাজের কাছে হেরে যাওয়ার আরেকটি নতুন অধ্যায়....অসহায় আত্মসমর্পণ করল ভূত বাহিনীর আরেক সিপাহী।
২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:০৪
আমি চির-দুরন্ত বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। আর বেশি বেশি ভুতচর্চা করবেন।
২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:০৯
ওমেরা বলেছেন: জী না , আমি ভূতকে ভয় পাই ।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৪২
ওমেরা বলেছেন: ছোট বেলায় আমার আম্মুর কাছে এরকম ভুতের গল্প শুনেছি । ধন্যবাদ বেয়াদব ভাইয়া ।