নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় যারা যান, এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে তাদের হরেক রকম মূর্তি দেখেই ইন্দোনেশিয়া দর্শন শরু করতে হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠির এই দেশটিতে যেখানে সেখানে আপনি অসংখ্য মূর্তি দেখবেন। আমি তো হাঁ হয়ে গেছি এয়ারপোর্টের ঠিক বাইরে বিশাল বিশাল চারটি মূর্তি দেখে। মূর্তি না দেখে আকাশপথে জাকার্তা প্রবেশ সত্যি কঠিন। অবশ্য যদি আপনি অন্ধ না হন। এয়ারর্পোটের মূল সড়কের ডিভাইডারে মাঝে মাঝেই নানান মূর্তী এর মধ্যে তাদের জাতির জনক সুকর্ণের মূর্তিও আছে।
এত মূর্তি থাকার পরও ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা মনে করছেন না মূর্তি তাদের মুসলমানিত্বে কোন আঘাত করছে। নিজেদের সাচ্চা মুসলমান প্রমাণ করতে বা মুসলমানিত্ব জাহির করতে তারা মূর্তি ভাংতে সোচ্ছার হচ্ছেন না। আমি আমার পরিচিত নেতা গোছের এক ইন্দোনেশিয়ানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম (যিনি আমাদেরকে এগিয়ে দিতে এয়ারপোর্টে এসেছিলেন)- আচ্ছা এই যে বড় বড় মূর্তি এয়ারপোর্টে এতে আপনাদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে না? উনি বল্লেন- কৈ না তো! এসব মূর্তি তো আমাদের সাংস্কৃতির অংশ। হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজাদের সময়ের ঐতিহ্য বহন করে এগুলো। আমি বল্লাম এটা ইসলাম বিরোধী। উনি বল্লেন- না, আমরা কি ছিলাম- সেই ঐতিহ্যকেই এটা জানান দিচ্ছে। মানুষ হিসাবে আমাদের পূর্বপুরুষের কথা, তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এগুলো অস্বীকার করলে আমাদের পূর্বপুরুকের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হয়।
আমি ইন্দোনেশিয়ানদের ঐতিহ্য নিয়ে কথা বাড়াইনি বেশি। কিন্তু নিজে নিজে চিন্তা করেছি অনেক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। এইতো বেশিদিনের কথা নয় আমাদের শাহাজালাল বিমান বন্দরের প্রবেশপথে লালন ফকিরের একটি মূর্তি তৈরী করা হচ্ছিল। একদল মৌলবাদী জোট বেধে এসে সেটা ভেঙ্গে দিল। সরকার মৌলবাদীদের ভয়ে পিছু হটলো- লালনের পরিবর্তে তৈরী করলো আরবী লেখা একটি ইসলামী মূতী। আরবী লেখা ইসলামী মূর্তী বলে সেটা এখনও রাস্তার মাঝে শোভা পাচ্ছে, কেউ ভাঙ্গার কথা চিন্তা করছে না বা বলছে না এটা ইসলামের বিরুদ্ধে।
ঐতিহ্য মূখ্য না ধর্ম? পূর্বপুরুষের চিন্তা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে কি শুধু ধর্মকে আকড়ে ধরে একটি জাতি সামনে আগাতে পারে? দলবেঁধে বকের ট্যাং ভেঙ্গে সমাজে কি ধর্ম প্রতিষ্ঠা সম্ভব? ধর্ম এবং শিল্প-সংস্কৃতির মধ্যে কি সাপে-নেউলে সম্পর্ক?
আমার সংস্কৃতি, আমার হাজার বছরের মানবিক, অসাম্প্রদায়িক শিল্প-সাহিত্য-ঐতিহ্যকে বাঁচানোর পথ যে বড়ই বন্ধুর।
©somewhere in net ltd.