নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
“ধর্মের ঢোল আপনি বাজে” “ধর্মের কল বাতাসে নড়ে” প্রবাদ দুটি শুনলেই মনে হয় ধর্মের কথাই বলছে। প্রবাদ দুটি সমার্থক। কিন্তু বাস্তবে প্রবাদ দুটির সাথে বা এর অর্থের সাথে ধর্মের কোন সংযোগ নেই। প্রবাদদুটির অর্থ হচ্ছে সত্য অবশ্যই প্রকাশিত হবে বা সত্য কখনও চাঁপা থাকে না- এরকম। হয়তোবা প্রবাদদুটি যখন সৃষ্টি হয়েছিলো তখন ধর্মের সত্যতা বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
ধর্মের ঢোল আসলেই নিজে নিজে বাজে নাকি? উনি বল্লেন- বাজে মানে, অবশ্যই বাজে। ধর্ম বলে কথা, বাজবে না আবার! আচ্ছা- ধরেন বাজলোনা- তখন? উনি বল্লেন- বাজবে..না, ওর বাপ শুদ্ধ বাজবে। আচ্ছা ধরে নিলাম ঢোল নিজে নিজেই বাজবে, কিন্তু কথা হচ্ছে যদি না বাজে তখন আপনি কি করবেন? উনি বললেন, জোর করে বাজাবো, আমরা আছি কি করতে!
অর্থাৎ ধর্মের ঢোল আপনি না বাজলেও জোর করে বাজানোর মানুষের অভাব নেই। ঢোল নিজে না বাজলেও তার বাপকে বাজতে হবে। তবে প্রবাদ দুটির অর্থের সাথে আমার বেশ সহমত আছে। সত্য অনন্তকাল চাঁপা থাকে না বলেই আমিও বিশ্বাস করি। কিন্তু সত্য তো সত্যই। সেখানে জোরের প্রয়োজন কি? আর সত্য প্রমাণে যদি জোর খাটাতে হয় বা সত্য স্বীকারে যদি জোর করতে হয় তাহলে সেটা কি আর সত্য থাকে। সত্যের মধ্যে মিথ্যার গন্ধটা তখনই উঁকি দেয় না-কি!!
ধরেন কাউকে বললেন যে, আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে- মাছ পানিতে বাস করে। উনি কি আপনাকে খুব বুদ্ধিমান মনে করবেন? হ্যা সমগোত্রীয় হলে করতেও পারে। এভাবে আপনি বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করতে পারেন যে, দুই আর দুই মিলে চার হয়, খাবার না খেলে ক্ষুধা লাগে। এগুলো আপনি কাউকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করেছেন কখনও? কেন করেন নি??? কেন??? কারণ আপনি জানেন সবাই এগুলো বিশ্বাস করে। কারণ এগুলো সত্য। আপনি প্রতিনিয়তই এগুলোর সত্যতার প্রমাণ পাচ্ছেন। আর সত্যকে প্রমাণ করে দেখানোর কোন প্রয়োজন নেই। সত্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন বা জোর করারও কোন প্রয়োজন নেই। বরং আপনি যদি জোর করেন, কৌশল অবলম্বন করেন তখনই বোঝার সুযোগ থাকে যে, আপনি মিথ্যা বিষয়কে সত্য প্রমাণের চেষ্টা করছেন। অবশ্য যদি ঐ মানুষের বোঝার মতো সামর্থ বা জ্ঞান থাকে।
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। কিন্তু উনি বললেন, কোনো সাইনবোর্ডে কি লেখা আছে যে এটা রাজধানী। অকাঠ্য প্রমাণ হাজির করে বললেন, তার নিজের চোখে দেখা ‘রাজধানী ভাতের হোটেল’ সেটা গাজীপুরে, যার মালিক নুরু মিয়া। এর পরও বিশ্বাস করতে কইবেন ঢাকার নাম রাজধানী। ..... কন, কি কইবেন কন।
আবার আপনি বললেন যে, বিশ্বাস করতেই হবে সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে। অনেকেই বলবে যে, এটা আপনার বলার কি হইলো। সকাল বেলায় খাড়াঁইলেই তো হয়। আবার কেউ কেউ বলবেন- সূর্যের বহুত কাম আছে মিঞা। সকাল বেলা পূবে ওঠা আর সন্ধ্যায় পশ্চিমে ডোবার সময় নাইক্কা। বিজ্ঞান প্রমাণ করছে যে, সূর্য খাড়াইয়া থাকে। আপনার জোর করে বিশ্বাস করানোর কোন প্রয়োজন নেই। যেটা সত্য সেটা প্রকাশিত হবেই। দুদিন আগে আর পরে।
আপনি প্রতিনিয়ত নিজে বিশ্বাস করার চেষ্টা করছেন এবং অন্যকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছেন যে, সৃষ্টিকর্তা সত্য, তাঁর হুকুম ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না। মানুষ মনে করছে যে, জোরের কোন বিষয় না, সত্য তো সত্যই। আপনি যখন বলেন, সৃষ্টিকর্তা সত্য- তখনই সন্দেহের শুরু, আপনার কেন বলতে হবে এটা সত্য। চোখের সামনে যে সত্য ব্যাপারগুলো অহরহ ঘটে আপনিতো সেগুলোর ব্যাপারে কোন কথা বলেন না, জোর খাটান না। সৃষ্টিকর্তা যদি নিরেট সত্য হবে, তা হলে সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে জোর-জুলুম কেন? কেনইবা এতো কৌশল অবলম্বন। প্রতিদিন, প্রতি মূহুর্তে বলতে হবে- আল্লা সত্য, ভগবান সত্য, ঈশ্বর সত্য? আমি সত্য বললেই যদি ওটা সত্য হয়, তাহলে মিথ্যা বললেও তো মিথ্যা হয়ে যাবে। নিঃশ্বাস না নিলে মানুষ বাঁচে না-এটা যেমন সত্য। আপনার সৃষ্টিকর্তা কি তেমনই সত্য??? নাক-মূখ চেঁপে ধরলেই তো আমি আপনি যখন খুশি ওই সত্য বুঝতে পারি, যাচাই করতে পারি। আপনার সৃষ্টিকর্তা সত্য-এটা বুঝার এমন সহজ উপায় কি? বলবেন তো- বিশ্বাস করতে হবে। বিশ্বাস করতেই হবে। আর না করলে??? বাঁশের কেল্লা তো আপনার হাতে, বাঁশ চালানো টাও সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসের সাথে ওৎপ্রতোভাবে জড়িত। ফলে সৃষ্টিকর্তার হুকুমেই মাথায় বাঁশ পড়বে। ধর্মের ঢোল নিজে না বাজলেও বাজনেওয়ালার অভাব নাই, তারাই বাজাবে। তবে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে এটা নিজে নিজেই বাজে।
বিশ্বাস করানোর কত রকম ফর্মূলা, কত রকম বুদ্ধি-কৌশল। ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত অসংখ্য বার আপনাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে হবে সৃষ্টিকর্তা সত্য, সর্বশক্তিমান, গাছের পাতা....। কারণ আপনাকে তো ওই নিয়মের মধ্যে জোর করে, কৌশল করে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ওই নিয়মের বাইরে চিন্তা করার সুযোগ খুবই সীমিত। গোবরের পরিমাণ বেশি হলে বা ফায়দা লোটার একান্ত ইচ্ছা থাকলে সীমিত সুযোগ কাজে না লাগিয়ে নিয়ম করে সত্য সত্য করতে হবে। তাতে অন্যরাও সংক্রামিত হবে। সমাজ আপনাকে ধার্মিক বলবে- তাই আপনি চুরি-ডাকাতি-ঘুষ-দুর্নীতি-সুদ-খুন-ধর্ষণ যাই করুন না কেন। আপনার সব গুনাহ্ সমাজের সুপারিশে সৃষ্টিকর্তা এক কথায় মাফ করে দিবে। জয় হবে আপনার ধর্মের, আপনার সৃষ্টিকর্তার।
©somewhere in net ltd.