নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
মানুষের ডিএনএর সঙ্গে পশুর ডিএনএ মিশিয়ে নতুন ভ্রূণ তৈরির বিষয়টিতে নানা নৈতিক বাধা রয়েছে বিজ্ঞানীদের। কিন্তু করপোরেট বিশ্বে নিজ স্বার্থ হাসিলে গোপন গবেষণা থেমে আছে কি? জাপানের গবেষকেরা প্রাণীদেহে মানুষের অঙ্গ তৈরির বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
এ বছরের ২০ জুন বিজনেস ইনসাইডার-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানের গবেষকেরা মানুষ ও প্রাণীর জিন ব্যবহার করে নতুন একধরনের ভ্রূণ তৈরি করতে চান, যা মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরিতে কাজে লাগবে।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ‘সিমেরিক এমব্রায়ো’ তৈরির প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন, যাতে প্রাণীর ভ্রূণের সঙ্গে মানুষের স্টেম সেল স্থাপন করা হয়। এতে করে প্রাণীর শরীরে ‘মানুষ ও পশুর হাইব্রিড’ তৈরি হবে, যা থেকে মানুষের চিকিত্সায় ব্যবহূত অঙ্গ পাওয়া যাবে।
গবেষকদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মানুষ ও প্রাণীর মিশ্রিত ভ্রূণ গর্ভাশয়ে স্থাপনের পর স্বাভাবিক জন্মগ্রহণ করে হাইব্রিড প্রাণী। এরপর সেই হাইব্রিড প্রাণীদেহে উত্পাদিত অঙ্গটি সংগ্রহ করবেন গবেষকেরা এবং মানুষের শরীরে তা প্রতিস্থাপন করবেন।
এখন পর্যন্ত ‘সিমেরিক এমব্রায়ো’ তৈরির বিষয়টি বৈধ; তবে কোনো প্রাণীর গর্ভে তা স্থাপন করার বিষয়টি জাপানে বৈধ নয়। জাপানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অনুমোদন দেওয়ার কথা ভাবছে। জাপানের গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা অনুমোদন পেলে এক বছরের মধ্যেই প্রাণীদেহে মানুষের অঙ্গ তৈরির বিষয়ে সাফল্য পাবেন।
বিজ্ঞানের সাহায্যে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছেন গবেষকেরা। বিজ্ঞানের কাল্পনিক যে কাহিনি চিত্র আমরা হরহামেশাই দেখে আসছি, তা সত্যি হতে চলেছে। গবেষকেরা নতুন করে ‘মানুষ ও পশুর হাইব্রিড’ তৈরির বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করতে কাজ চলছে।
নৈতিকতার প্রশ্ন
আজ থেকে দুই বছর আগে ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যাকাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সেস একটি সাড়াজাগানো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল; যাতে বলা হয়েছিল, দেশটির গবেষকেরা মানুষের বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাণী পরীক্ষাগারে জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন। সিমেরিক এমব্রায়ো তৈরির গবেষণার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যেই আইন মানা হয়েছিল। গবেষকেরা এ সময় পশুর ডিম্বাণুর সঙ্গে মানুষের শুক্রাণু মিলিয়ে তৈরি করেন ‘সাইব্রিড’। তবে অনেক ক্ষেত্রে গবেষণায় প্রয়োজনীয় অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় গবেষণা।
মানুষ ও পশুর ভ্রূণ তৈরির বিষয়টি সব সময় বিতর্ক তৈরি করেছে, নৈতিকতার প্রশ্ন উঠেছে। যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা নৈতিকতার প্রশ্নে গবেষণার কাজ এগিয়ে নিতে পারেননি। এ রকম দুটি গবেষণার ক্ষেত্র হচ্ছে মানুষের শুক্রাণু বা ডিম্বাণুধারী কোনো হাইব্রিড ও মানুষের মস্তিষ্ক বা বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হাইব্রিড।
নতুন করে এ গবেষণার বিষয়টি আলোচনায় আসায় আশঙ্কার প্রশ্ন উঠছে যে, যদি দুর্ঘটনা ঘটে পরীক্ষা ব্যর্থ হয়, তবে নিশ্চয় আইনের সীমা লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটবে। যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, স্টেম সেল নিয়ে পরীক্ষা কেবল গবেষণার খাতিরে মানুষের প্রয়োজনে করা যাবে; কোনো ভ্রূণকে ফিটাস পর্যায়ে রূপান্তর করা যাবে না। ভ্রূণ তৈরির ১৪ দিন পরেই তা ধ্বংস করে ফেলতে হবে। (তথ্য দেখুন Click This Link)
গবেষকদের যুক্তি হচ্ছে, সহজে নিরাময় করা যায় না এমন রোগের চিকিত্সায় এ গবেষণা কাজে লাগবে। এ গবেষণা নিয়ে সমালোচনাও করেছেন অনেক গবেষক। বিরোধীপক্ষের মত হচ্ছে, স্টেম সেল নিয়ে গবেষণা করে চিকিত্সাক্ষেত্রে যত সাফল্য এসেছে, সব ক্ষেত্রেই পূর্ণবয়স্ক স্টেম সেল ব্যবহার করা হয়েছে, ভ্রূণ কোষ ব্যবহারে সাফল্যের হার নগণ্য। সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি সমালোচনা হচ্ছে যে গবেষণার বিষয়টি গোপন রাখার কোনো কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।
গোপন গবেষণা
আইনের চোখে নিষিদ্ধ হলেও এ ধরনের গবেষণা গোপনে চালানোর আশঙ্কাও অমূলক নয়। আইনের ফাঁক গলে এ করপোরেট পৃথিবীর কোনো গবেষণাগারে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য হয়তো গবেষণা চলছে হাইব্রিড মানুষ তৈরির কাজ। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে সিমারিক ভ্রূণ নিয়ে গবেষণা। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। ২০১১ সালের ২২ জুলাই ডেইলি মেইল প্রকাশ করেছিল যুক্তরাজ্যের পরীক্ষাগারে গোপনে ১৫০টি ভ্রূণ তৈরির তথ্য। ২০০৮ সাল থেকে তিন বছর গবেষণা চালিয়ে পরীক্ষাগারে এ ভ্রূণ তৈরি করেন গবেষকেরা। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য এই ভ্রূণ নিয়ে গবেষণার কথা জানানো হয়েছিল।
আশঙ্কার কথা
কল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে অনেক ফারাক। আমাদের কল্পনাকে হার মানাতে পারে এমন কিছু নিয়েও হয়তো কোনো গোপন গবেষণাগারে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মানুষের ডিএনএর সঙ্গে অন্য কোনো প্রাণীর ডিএনএ মিশিয়ে নতুন কোনো প্রাণী তৈরির প্রচেষ্টা। নিশ্চয় বায়োটেকনোলজির সাহায্যে মানুষের বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাণী তৈরির বিষয়টি গা ছমছমে এক বিষয়। ভয় বা আশঙ্কা কোনো ‘ফ্রাংকেনস্টাইনের’।
প্রথম আলো
©somewhere in net ltd.