নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
(লেখাটি পুরোপুরি কাল্পনিক! বাস্তবে রূপ নেবে ভেবেই মানুষ ভবিষ্যতবাণী করে। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে চাই আমার এই লেখাটার প্রতিটা শব্দ ভুল প্রমাণিত হোক। যারা ৫৭ ধারার আড়ালে ব্লাসফেমী নামক আইনের বিরুদ্ধে, তাঁরা দয়াকরে লেখাটাকে প্রচারে নিয়ে আসবেন।)
(এক)
রুবেল বেশ আনমনা হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো, বলে কি চিঙ্কু বামটা! কথাগুলো অধিকাংশই তার দলের বিরুদ্ধে! কিন্তু তারপরও কথায় বেশ যুক্তি আছে। বামপন্থীদের যুক্তিপূর্ণ কথা শুনতে তার ভালই লাগে। তাই রুবেল আবার সোজা হয়ে বসলো! বলেন সজল ভাই! কি বলছিলেন জানি? আমলীগ ইচ্ছা করেই রাজাকারগো ফাঁসি দেয়নি?
সজল সহজ ভাবেই উত্তর দিলো! হ্যা! আওয়ামী লীগ মনে করছিলো রাজাকারের ফাঁসিটাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেই ভোটে জিতবে! আর আবার ক্ষমতায় আসলে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিবে রাজাকারদের ফাঁসি দেয়া উচিত কি না!
আরে কন কি আপনি সজল ভাই? অভিজ্ঞ রাজনীতিকের ভঙ্গিতেই বললো রুবেল! আপনি বামপন্থি মানুষ! আমাগো চাইতে রাজনৈতিক জ্ঞান একটু বেশিই আপনাগো। আমরা আবার ব্যবসায় পাকা। কিন্তু এত সহজ হিসাব করলে ক্যামনে হইবো সজল ভাই! চান্দের সাঈদী আর কাদের মোল্লা তো কম পাওয়ারফুল আছিলো না! কিন্তু ওই দুইডারে তো ঠিকই ঝুলাইয়া দিছে! আরগুলানরে ফাঁসি দিতে পারে নাই সেটা সত্য! কিন্তু এটাতো অনলি সময়ের অভাব! অনেক চেষ্টা কইরাও সময়ের অভাবে ফাঁসি দেওয়া সম্ভব হয়নাই! আপনার একথা মোটেও ঠিক না যে আমলীগ চেষ্টার কোন ত্রুটি করছে! বা ইচ্ছার কোন অভাব আছিলো!
ওটা আপনাদের নেতাদের বুঝ রুবেল ভাই! সেটাই আপনি তোতা পাখির মতো বলছেন! কিন্তু রাজনীতিটা ছিলো অন্য জায়গায়! আবারও স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলেলো সজল! আওয়ামী লীগ যেমন সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছিলো হেফাজতের সাথে ঐক্য করতে, হেফাজতকে আওয়ামী লীগে ঢোকাতে, তেমনি জামায়াতের সাথেও চেষ্টা করেছিলো নানামূখী সমঝোতা করতে! কিন্তু হেফাজত যেমন শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করেনি, তেমনি শেষ পর্যন্ত জামায়াতও শেখ হাসিনার কথার উপর বিশ্বাস রাখতে পারে নি। কারণ জামায়াত আওয়ামী লীগের চরিত্র সম্পর্কে অবগত। তারা এও জানে যে, আওয়ামী লীগে অনেক নেতা আছে যারা জামাতের সাথে ঐক্য মানসিকভাবে মেনে নিতে পারবে না! সাঈদী আর কাদের মোল্লারে ঝুলাইয়া জামায়াতকে ভয় দেখানো হইছিলো! আপনাদের আওয়ামী লীগ মনে করছিলো, দুইটারে ঝুলাইয়া দুই ঢিলে তারা চার পাখি মারবে! পাখি এক, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষদের সকল ভোট পাওয়া যাবে। এমনকি শাহাবাগীদেরও! কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবী পূরণ হইছে তাদের! পাখি দুই, জামায়াত-শিবিরকে বশে এনে ধানের শীষে ভোট দেয়া ঠেকিয়ে দেয়া যাবে! জামায়াত-শিবিরের ভোট নৌকায় না গেলেও লাঙ্গলে যাবে, কিন্তু কিছুতেই ধানের শীষে যেতে দেয়া যাবে না! পাখি তিন, হেফাজতের কান্দের থেকে বিএনপিকে সরাইয়া নিজেরাই ঘাড়ে চেপে বসা যাবে! হেফাজতরে একটা মন্ত্রীত্ব দিতে হলেও লাভ আছে! আর পাখি চার, শিবিরের পোড়খাওয়া, বিদ্যুতসাহী নেতাগুলানরে আওয়ামী লীগে ঢুকাইয়া আগামী দীর্ঘদিনের ক্ষমতার আসন পাকা করা সম্ভব হবে। এমনটাই ছিলো আওয়ামী লীগের পলিসি। তবে জামায়াত কিন্তু সে ভয় পায় নি! বরং উল্টো পথে হেটেছে। তাই দুই নেতাকে হারালেও আগের জায়গায় জামায়াত-শিবির ফিরে এসেছে আবার।
রাজনীতির এত প্যাচ রুবেলের মাথায় ঠিক ঢোকে না। সে সোজা মানুষ! যুবলীগ দিয়ে শুরু। আর এখন আওয়ামী লীগ করে। ঢাকা দক্ষিণের একটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি সে। এলাকার কিছু বিএনপি-জামাতের ক্যাডাররা তাকে সন্ত্রাসী বললেও সে মূলত খারাপ কাজের সাথে তেমন যায় না। তবে নানা হাত ঘুরে তার হাতেও নিয়মিত কয়েক লাখ টাকা আসে। ফুটপথের ব্যবসায়ী আর রাস্তার মোড়গুলোর টংদোকানদারদের মাসিক চাঁদার কিছু অংশ, ট্রাফিক সাজেন্টের টহল চৌকি আর থানা থেকে সামান্য সম্মানী। মোটা দাগে এটাই! তাতেই দিব্যি চলে যায় রুবেলের রাজনীতি। ওয়ার্ডের সভাপতি বলে কথা। গতবার দল ক্ষমতায় থাকতে কামাই রোজগার বেশ ভালই আছিলো। এবার দল ক্ষমতায় গেলে নিঃসন্দেহে সে কমিশনার পদে টিকিট পেতো! অন্তত টাকা দিয়ে টিকিট কেনার যথেষ্ট যোগ্যতা হয়েছে তার। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনটা সব এলোমেলো করে দিলো।
রুবেল আবার প্রশ্ন করলো, আচ্ছা সজল ভাই! একটা বিষয় বুঝতে পারছি না? বলেন তো? বিএনপি বাবুনাগরীরে কেন ধর্মমন্ত্রী বানালো! ভোটে দাঁড়ায়ে তো ব্যাটায় গো-হারা হারছে! নৌকায়ই মানষে ভোট দেয় না, তা আবার রিসকায়? তারউপর রাজনীতির র’ নাই মাথার মধ্যে। কিন্তু তার পরেও কেন বাবুনাগরী টেকনোক্রাট ধম্মমন্ত্রী? দেশটা তো পুরোটাই মাদ্রাসা বানায়ে ফেলবো?
সজল একটু হেসে উঠলো! বললো, হেফাজত থেকে তো একজনকে অন্তত ফুল মিনিস্টার রাখার বাধ্য-বাধকতা আছে বিএনপির! হেফাজতীদের বুদ্দির সীমানা প্রায় সবার একই রকম! তাই খালেদা জিয়া অন্য কোন মিনিস্ট্রী দিতে হয়তো সাহস করেন নি। তাছাড়া শফী সাহেবের বয়স বেশী। তারউপর শফী হুজুরের তেতুল তত্ত্ব নিয়ে নাকি খালেদাজিয়া নিজেই নাখোস। ফলে হেফাজতের সন্তুষ্টি রক্ষায় বাবুনাগরীই যুতসই সমাধান। আর মাদ্রাসা বানানোর কথা বলছেন, সে তো আপনাদের হাসিনা সরকারও মসজিদ মাদ্রাসার পেছনে পাবলিকের টাকা কম ঢালে নি। বাবুনাগরী পরিমাণটা একটু বাড়ায়ে দেবে আর কি! এ এমন কিছু না!
লম্বা সরু রাস্তা। দুই পাশ দিয়ে সারিবদ্ধ ছোট ছোট রুম। জেলখানায় এগুলোকে সেল বলে। রুবেল মাথা উঁচু করে তাকিয়েই বললো, ঐ যে! বিম্পিডা আইতাছে।
মোশারফ হোসেন সবুজ! যুবদলের মহানগর কমিটির নেতা! আবার বিএনপি’রও ক্যাডার! মারামারির আগে থাকে সব সময়! কিন্তু এখন কাশিমপুর কারাগারে! তার দল ক্ষমতায়, তারপরও! তাই সবুজের মেজাজটা সব সময়ই খিচিয়ে থাকে!
সবুজ কাছে আসতেই একটু হাসি দিলো রুবেল! বললো, সবুজ ভাই! টয়েলেটে গিয়েই এতক্ষণ! কি? মোবাইলে কোন নেতার লগে কথা কইলেন না কি?
সবুজ একেবারে ঝাড়ি দিয়ে উঠলো! আপনাদের নেত্রীই তো যত নষ্টের গোড়া! আইন বানাইছে একখান ‘হাসিনাধারা’!
রুবেলও ঝাড়ি দিয়ে উঠলো! ওই মিয়া কথাবাত্তা ঠিক মতো কইয়েন কইলাম! হাসিনাধারা কি আবার? কন ৫৭ ধারা! নেত্রীর নামে একটুও ফালতু কথা কইবেন না!
না! কমু না! আপনার নেত্রীরে পুজো দিমু! আপনিও তো ধরা খাইছেন হাসিনাধারায়! সজল ভাইও! শেষ পর্যন্ত আমারেও ধরা খাওয়াইলেন! ছাগলামির একটা শ্যাষ আছে! ক্ষমতায় গেছোস, ঠিক আছে! মেজরিটি আছে, আইন বানা? কিন্তু তাই বলে এমন আইন? পুলিশ তো অহন ব্যাংকে যাইয়া খবর লইতাছে! যার একাউন্টে লেনদেন বেশি! তার বাসাতেই হানা দিতাছে! যা কইবে তাই দিতে হইবো! দরকষাকষিতেও তেমন কাজ হইতেছে না! না হইলে সোজা হাসিনাধারায় লালদালান! হাসিনাধারায় পাবলিক এ্যারেস্ট করতে তো পুলিশের আর কোন ওয়ারেন্ট লাগে না!
সজল এতক্ষণ শুনছিলো! এখন একটু ধমকের সুরেই সবুজকে বললো! থামেন মিয়া আপনি! রুবেলের দিকে ফিরেও বললো, এই রুবেল ভাই! থামেন! জেলখানার মধ্যে ফাল পাইড়া লাভ নাই। আবার সবুজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়ে বললো- আচ্ছা বলেন তো সবুজ? এই যে ৫৭ ধারায় হাজার হাজার পোলাপান জেলে আসতাছে! এরা কারা? এরা কি কোন প্রথম শ্রেণী বা দ্বিতীয় শ্রেণীর নেতা? আর হাসিনার কথা কইতাছেন! হাসিনার ৫৭ ধারা কেন, ১৫৭ ধারা বা্নাইলেও কিছুই হবে না! জেল ১৪ বছরের জায়গায় ২৮ বছর করলেও কিছুই হবে না! জামিন অযোগ্য বা বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার যাই হোক না কেন এতে হাসিনার বা তাঁর প্রাক্তন মন্ত্রী-এমপিদের কিছুই আসে যায় না! দ্বিতীয় শ্রেণীর নেতাগোও পুলিশ যথেষ্ট ভয় পায়। তাদেরও অনেক ক্ষমতা! ফলে ৫৭ ধারা তাদের জন্যও কোন বিষয়ই না! হ্যা! তৃতীয় শ্রেণীর নেতাদের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে। যেমন রুবেল ভাই চলে এসেছেন কাশিমপুর। যদিও রুবেল ভাই নিজের দোষেই জেল খাটছে। বিএনপির সাথে একটু ভাও দিয়ে চললেই হতো। এতদিন পরে ক্ষমতায় এসেছে, চাঁদার টাকাটা আশিভাগ ওদের দিয়ে দিলেই দিব্বি এলাকায় থেকে রাজনীতি চালাতে পারতেন রুবেল ভাই। কিন্তু তা না! আপনাকে সবই খেতে হবে! এখন থাকেন ১৪ বছর!! ৫৭ ধারা মূলত ঘাড়ে চেঁপে বসেছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের। জেলখানা ভরে যাচ্ছে এইসব চতুর্থশ্রেণীর আমলীগারদের দিয়ে। যারা দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কিন্তু লুটপাটের ভাগ পায়না! মিছিলে, মিটিংয়ে যায়, দলের পক্ষে কীর্তন গায় সব সময়, তারাই স্বদলবলে এখন জেলখানা গরম করছে।
রুবেল আবার গজগজ করে উঠলো! সজল ভাই আপনার কিন্তু একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্চে। আমরা ক্ষমতায় আসলে তখন তো সিক্সটি-ফোরটি করে নিয়েছিলাম! এখন ওরা কেন আশি ভাগ দাবী করলো! বলে কি না বিশ ভাগ জামাতকে দিতে হবে! আমি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি! আমি কেন জামাতকে বিশ পার্সেন্ট দেবো??
হো হো করে হেসে উঠলো সজল! হায় রে স্বাধীনতা! ঘুষ, চাঁদাবাজীর টাকায়ও তুমি মিশে আছো??
(চলবে....)
আগামী কাল দ্বিতীয় পর্ব পাওয়া যাবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৭
আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: ভাই ৫৭ ধারা টাও কি কাল্পনিক?