নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
৫৭ ধারা সমেত তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংসদে পাশ হয়েছে গতকাল! কি ঘটতে পারে ৫৭ ধারার প্রভাবে??
আমার কাল্পনিক লেখাটি পড়তে পারেন.......
৫৭ ধারায় কাশিমপুর
(এক)
রুবেল বেশ আনমনা হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো, বলে কি চিঙ্কু বামটা! কথাগুলো অধিকাংশই তার দলের বিরুদ্ধে! কিন্তু তারপরও কথায় বেশ যুক্তি আছে। বামপন্থীদের যুক্তিপূর্ণ কথা শুনতে তার ভালই লাগে। তাই রুবেল আবার সোজা হয়ে বসলো! বলেন সজল ভাই! কি বলছিলেন জানি? আমলীগ ইচ্ছা করেই রাজাকারগো ফাঁসি দেয়নি?
সজল সহজ ভাবেই উত্তর দিলো! হ্যা! আওয়ামী লীগ মনে করছিলো রাজাকারের ফাঁসিটাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেই ভোটে জিতবে! আর আবার ক্ষমতায় আসলে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিবে রাজাকারদের ফাঁসি দেয়া উচিত কি না!
আরে কন কি আপনি সজল ভাই? অভিজ্ঞ রাজনীতিকের ভঙ্গিতেই বললো রুবেল! আপনি বামপন্থি মানুষ! আমাগো চাইতে রাজনৈতিক জ্ঞান একটু বেশিই আপনাগো। আমরা আবার ব্যবসায় পাকা। কিন্তু এত সহজ হিসাব করলে ক্যামনে হইবো সজল ভাই! চান্দের সাঈদী আর কাদের মোল্লা তো কম পাওয়ারফুল আছিলো না! কিন্তু ওই দুইডারে তো ঠিকই ঝুলাইয়া দিছে! আরগুলানরে ফাঁসি দিতে পারে নাই সেটা সত্য! কিন্তু এটাতো অনলি সময়ের অভাব! অনেক চেষ্টা কইরাও সময়ের অভাবে ফাঁসি দেওয়া সম্ভব হয়নাই! আপনার একথা মোটেও ঠিক না যে আমলীগ চেষ্টার কোন ত্রুটি করছে! বা ইচ্ছার কোন অভাব আছিলো!
ওটা আপনাদের নেতাদের বুঝ রুবেল ভাই! সেটাই আপনি তোতা পাখির মতো বলছেন! কিন্তু রাজনীতিটা ছিলো অন্য জায়গায়! আবারও স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলেলো সজল! আওয়ামী লীগ যেমন সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছিলো হেফাজতের সাথে ঐক্য করতে, হেফাজতকে আওয়ামী লীগে ঢোকাতে, তেমনি জামায়াতের সাথেও চেষ্টা করেছিলো নানামূখী সমঝোতা করতে! কিন্তু হেফাজত যেমন শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করেনি, তেমনি শেষ পর্যন্ত জামায়াতও শেখ হাসিনার কথার উপর বিশ্বাস রাখতে পারে নি। কারণ জামায়াত আওয়ামী লীগের চরিত্র সম্পর্কে অবগত। তারা এও জানে যে, আওয়ামী লীগে অনেক নেতা আছে যারা জামাতের সাথে ঐক্য মানসিকভাবে মেনে নিতে পারবে না! সাঈদী আর কাদের মোল্লারে ঝুলাইয়া জামায়াতকে ভয় দেখানো হইছিলো! আপনাদের আওয়ামী লীগ মনে করছিলো, দুইটারে ঝুলাইয়া দুই ঢিলে তারা চার পাখি মারবে! পাখি এক, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষদের সকল ভোট পাওয়া যাবে। এমনকি শাহাবাগীদেরও! কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবী পূরণ হইছে তাদের! পাখি দুই, জামায়াত-শিবিরকে বশে এনে ধানের শীষে ভোট দেয়া ঠেকিয়ে দেয়া যাবে! জামায়াত-শিবিরের ভোট নৌকায় না গেলেও লাঙ্গলে যাবে, কিন্তু কিছুতেই ধানের শীষে যেতে দেয়া যাবে না! পাখি তিন, হেফাজতের কান্দের থেকে বিএনপিকে সরাইয়া নিজেরাই ঘাড়ে চেপে বসা যাবে! হেফাজতরে একটা মন্ত্রীত্ব দিতে হলেও লাভ আছে! আর পাখি চার, শিবিরের পোড়খাওয়া, বিদ্যুতসাহী নেতাগুলানরে আওয়ামী লীগে ঢুকাইয়া আগামী দীর্ঘদিনের ক্ষমতার আসন পাকা করা সম্ভব হবে। এমনটাই ছিলো আওয়ামী লীগের পলিসি। তবে জামায়াত কিন্তু সে ভয় পায় নি! বরং উল্টো পথে হেটেছে। তাই দুই নেতাকে হারালেও আগের জায়গায় জামায়াত-শিবির ফিরে এসেছে আবার।
রাজনীতির এত প্যাচ রুবেলের মাথায় ঠিক ঢোকে না। সে সোজা মানুষ! যুবলীগ দিয়ে শুরু। আর এখন আওয়ামী লীগ করে। ঢাকা দক্ষিণের একটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি সে। এলাকার কিছু বিএনপি-জামাতের ক্যাডাররা তাকে সন্ত্রাসী বললেও সে মূলত খারাপ কাজের সাথে তেমন যায় না। তবে নানা হাত ঘুরে তার হাতেও নিয়মিত কয়েক লাখ টাকা আসে। ফুটপথের ব্যবসায়ী আর রাস্তার মোড়গুলোর টংদোকানদারদের মাসিক চাঁদার কিছু অংশ, ট্রাফিক সাজেন্টের টহল চৌকি আর থানা থেকে সামান্য সম্মানী। মোটা দাগে এটাই! তাতেই দিব্যি চলে যায় রুবেলের রাজনীতি। ওয়ার্ডের সভাপতি বলে কথা। গতবার দল ক্ষমতায় থাকতে কামাই রোজগার বেশ ভালই আছিলো। এবার দল ক্ষমতায় গেলে নিঃসন্দেহে সে কমিশনার পদে টিকিট পেতো! অন্তত টাকা দিয়ে টিকিট কেনার যথেষ্ট যোগ্যতা হয়েছে তার। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনটা সব এলোমেলো করে দিলো।
রুবেল আবার প্রশ্ন করলো, আচ্ছা সজল ভাই! একটা বিষয় বুঝতে পারছি না? বলেন তো? বিএনপি বাবুনাগরীরে কেন ধর্মমন্ত্রী বানালো! ভোটে দাঁড়ায়ে তো ব্যাটায় গো-হারা হারছে! নৌকায়ই মানষে ভোট দেয় না, তা আবার রিসকায়? তারউপর রাজনীতির র’ নাই মাথার মধ্যে। কিন্তু তার পরেও কেন বাবুনাগরী টেকনোক্রাট ধম্মমন্ত্রী? দেশটা তো পুরোটাই মাদ্রাসা বানায়ে ফেলবো?
সজল একটু হেসে উঠলো! বললো, হেফাজত থেকে তো একজনকে অন্তত ফুল মিনিস্টার রাখার বাধ্য-বাধকতা আছে বিএনপির! হেফাজতীদের বুদ্দির সীমানা প্রায় সবার একই রকম! তাই খালেদা জিয়া অন্য কোন মিনিস্ট্রী দিতে হয়তো সাহস করেন নি। তাছাড়া শফী সাহেবের বয়স বেশী। তারউপর শফী হুজুরের তেতুল তত্ত্ব নিয়ে নাকি খালেদাজিয়া নিজেই নাখোস। ফলে হেফাজতের সন্তুষ্টি রক্ষায় বাবুনাগরীই যুতসই সমাধান। আর মাদ্রাসা বানানোর কথা বলছেন, সে তো আপনাদের হাসিনা সরকারও মসজিদ মাদ্রাসার পেছনে পাবলিকের টাকা কম ঢালে নি। বাবুনাগরী পরিমাণটা একটু বাড়ায়ে দেবে আর কি! এ এমন কিছু না!
লম্বা সরু রাস্তা। দুই পাশ দিয়ে সারিবদ্ধ ছোট ছোট রুম। জেলখানায় এগুলোকে সেল বলে। রুবেল মাথা উঁচু করে তাকিয়েই বললো, ঐ যে! বিম্পিডা আইতাছে।
মোশারফ হোসেন সবুজ! যুবদলের মহানগর কমিটির নেতা! আবার বিএনপি’রও ক্যাডার! মারামারির আগে থাকে সব সময়! কিন্তু এখন কাশিমপুর কারাগারে! তার দল ক্ষমতায়, তারপরও! তাই সবুজের মেজাজটা সব সময়ই খিচিয়ে থাকে!
সবুজ কাছে আসতেই একটু হাসি দিলো রুবেল! বললো, সবুজ ভাই! টয়েলেটে গিয়েই এতক্ষণ! কি? মোবাইলে কোন নেতার লগে কথা কইলেন না কি?
সবুজ একেবারে ঝাড়ি দিয়ে উঠলো! আপনাদের নেত্রীই তো যত নষ্টের গোড়া! আইন বানাইছে একখান ‘হাসিনাধারা’!
রুবেলও ঝাড়ি দিয়ে উঠলো! ওই মিয়া কথাবাত্তা ঠিক মতো কইয়েন কইলাম! হাসিনাধারা কি আবার? কন ৫৭ ধারা! নেত্রীর নামে একটুও ফালতু কথা কইবেন না!
না! কমু না! আপনার নেত্রীরে পুজো দিমু! আপনিও তো ধরা খাইছেন হাসিনাধারায়! সজল ভাইও! শেষ পর্যন্ত আমারেও ধরা খাওয়াইলেন! ছাগলামির একটা শ্যাষ আছে! ক্ষমতায় গেছোস, ঠিক আছে! মেজরিটি আছে, আইন বানা? কিন্তু তাই বলে এমন আইন? পুলিশ তো অহন ব্যাংকে যাইয়া খবর লইতাছে! যার একাউন্টে লেনদেন বেশি! তার বাসাতেই হানা দিতাছে! যা কইবে তাই দিতে হইবো! দরকষাকষিতেও তেমন কাজ হইতেছে না! না হইলে সোজা হাসিনাধারায় লালদালান! হাসিনাধারায় পাবলিক এ্যারেস্ট করতে তো পুলিশের আর কোন ওয়ারেন্ট লাগে না!
সজল এতক্ষণ শুনছিলো! এখন একটু ধমকের সুরেই সবুজকে বললো! থামেন মিয়া আপনি! রুবেলের দিকে ফিরেও বললো, এই রুবেল ভাই! থামেন! জেলখানার মধ্যে ফাল পাইড়া লাভ নাই। আবার সবুজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়ে বললো- আচ্ছা বলেন তো সবুজ? এই যে ৫৭ ধারায় হাজার হাজার পোলাপান জেলে আসতাছে! এরা কারা? এরা কি কোন প্রথম শ্রেণী বা দ্বিতীয় শ্রেণীর নেতা? আর হাসিনার কথা কইতাছেন! হাসিনার ৫৭ ধারা কেন, ১৫৭ ধারা বা্নাইলেও কিছুই হবে না! জেল ১৪ বছরের জায়গায় ২৮ বছর করলেও কিছুই হবে না! জামিন অযোগ্য বা বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার যাই হোক না কেন এতে হাসিনার বা তাঁর প্রাক্তন মন্ত্রী-এমপিদের কিছুই আসে যায় না! দ্বিতীয় শ্রেণীর নেতাগোও পুলিশ যথেষ্ট ভয় পায়। তাদেরও অনেক ক্ষমতা! ফলে ৫৭ ধারা তাদের জন্যও কোন বিষয়ই না! হ্যা! তৃতীয় শ্রেণীর নেতাদের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে। যেমন রুবেল ভাই চলে এসেছেন কাশিমপুর। যদিও রুবেল ভাই নিজের দোষেই জেল খাটছে। বিএনপির সাথে একটু ভাও দিয়ে চললেই হতো। এতদিন পরে ক্ষমতায় এসেছে, চাঁদার টাকাটা আশিভাগ ওদের দিয়ে দিলেই দিব্বি এলাকায় থেকে রাজনীতি চালাতে পারতেন রুবেল ভাই। কিন্তু তা না! আপনাকে সবই খেতে হবে! এখন থাকেন ১৪ বছর!! ৫৭ ধারা মূলত ঘাড়ে চেঁপে বসেছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের। জেলখানা ভরে যাচ্ছে এইসব চতুর্থশ্রেণীর আমলীগারদের দিয়ে। যারা দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কিন্তু লুটপাটের ভাগ পায়না! মিছিলে, মিটিংয়ে যায়, দলের পক্ষে কীর্তন গায় সব সময়, তারাই স্বদলবলে এখন জেলখানা গরম করছে।
রুবেল আবার গজগজ করে উঠলো! সজল ভাই আপনার কিন্তু একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্চে। আমরা ক্ষমতায় আসলে তখন তো সিক্সটি-ফোরটি করে নিয়েছিলাম! এখন ওরা কেন আশি ভাগ দাবী করলো! বলে কি না বিশ ভাগ জামাতকে দিতে হবে! আমি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি! আমি কেন জামাতকে বিশ পার্সেন্ট দেবো??
হো হো করে হেসে উঠলো সজল! হায় রে স্বাধীনতা! ঘুষ, চাঁদাবাজীর টাকায়ও তুমি মিশে আছো??
(দুই)
হঠাত মনে পড়ে গেলো সজলের! রুবেলকে তো বলাই হয়নি কথাটা! শুনেছেন রুবেল ভাই?
রুবেল মুখ ফেরালো! কি? ভাই?
আপনাদের সরোয়ার ভাইরে গতকাল নাকি কাশিমপুর নিয়ে এসেছে?
রুবেল অনেকটা উদ্বিগ্ন হয়ে গেলো! সরোয়ার ভাইরে? আগেই জানতাম! বিম্পি ক্ষমতায় আইসেই সরোয়ার ভাইয়ের উপর প্রতিশোধ নিবো! এতদিন সময় দিছে এইটাইতো বেশি! কি? খুনের মামলা নিশ্চয়ই?
না? উত্তর দিলো সজল। ওনারেও ৫৭ ধারায় ১৪ বছর!
বলেন কি? আরে উনি তো কম্পিউটারই চালাইতে জানেন না! মোবাইলও ঠিকমতো চালাইতে পারেন না! ওহনও নাম সেভ করতে পারেন না মোবাইলে! হ্যারে ৫৭ ধারায় দিবো ক্যামনে? না, না! আপনি ভুল শুনছেন!
আমি ঠিকই শুনেছি রুবেল ভাই! সহজ ভঙ্গীতেই জবাব দিলো সজল। আদালতের রায়ে নাকি বলা হইছে সরোয়ার হোসেন তার ছেলেরে ফেসবুকের একটা ছবিতে লাইক দিতে কইছিলো! ওই ছবিটা নবীজীর বিরুদ্ধে ছিলো! এতেই বাবুনাগরীর ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগছে।
কন কি? রুবেলের কন্ঠস্বরে অনেকটা ভীতি ছড়িয়ে পড়লো! আর ওনার ছেলে? যে কি না ওই ছবিটায় লাইক দিছে? তারও কি চৌদ্দ বছর হইছে না কি?
আপনি বুঝছেন না কেন রুবেল ভাই? টার্গেট ছিলো সরোয়ার ভাই? আর আপনাদের নেত্রী অস্ত্রটাও দিয়েছে খাসা? তাই ৫৭ ধারায়ই সরোয়ার ভাইকে ফাঁসানো হয়েছে। খুবই সোজা কাজ। ওনার ছেলে হয়তো এগুলো জানেও না।
এগুলো কি হইতাছে? ও সবুজ ভাই, আপনিই কন? আপনাদের নেত্রী কি রাজনীতির বদলে এখন শুধু প্রতিশোধই নিতাছে?
সবুজ একটু অন্যমনস্ক ছিলো! রুবেলের কথায় নড়েচড়ে বসলো। বললো, শুনেন! নেত্রীর দোষ দিয়ে লাভ নাই! নেত্রীর কাছে এতকিছুর খবরই পৌঁছায় না! এগুলো মুলতো নেত্রীর চারপাশের ধান্ধাবাজরাই করে! এই যে দেখেন? আমারেও জেলে ঢুকাইছে! যে দলের জন্যে জান বাজী রাইখা কাজ করছি! আমার সেই বিএনপি এখন ক্ষমতায়! আর আমি জেলে! তাও ১৪ বছরের সাজা। আমি জানি নেত্রী কেন, আমাগো মন্ত্রীর কাছেও এ খবর পৌঁছায় নাই। প্রয়োজন ফুরালে কে কার খবর রাখে বলুন? আফসোস! কেউ কখনও একবার খোঁজও নেয় না! একবার দেখতেও আসে না!
রুবেলও বেশ হতাশার সুরেই বললো, হ্য! এখন সবই সম্ভব! ঐ তো! পিয়াল ভাইরে থানায় নিয়ে পিস্তল ঠ্যাকাইয়া ধমক দিয়া কইছিলো, ফেসবুক ওপেন কর! ফেসবুক ওপেনের পর তার ফেসবুকেই একটা স্ট্যাটাস কপি কইরা পোষ্ট দিয়ে দিলো। এসআইয়ের সাথে বিম্পির তিনজন ক্যাডারও নাকি আছিলো! তাই পিয়াল ভাই সাংবাদিক হইয়াও রা শব্দ করতে পারে নাই। তার কেসে স্ট্যাটাস পোস্টের দুই ঘন্টা পরে গ্রেফতার দেখানো হইছে। আর ওই স্ট্যাটাসে নবীজীরে গালি দেয়া হইছিলো। তাই সহজেই ৫৭ ধারায় চৌদ্দ বছর! কাহিনী পিয়াল ভাইয়ের নিজের মুখ থেকেই শোনা! এখন তারে শুনছি ঐ দক্ষিণ দিকে যে নতুন জেলখানা বানাইছে ওইখানে লইয়া গ্যাছে।
সবুজের মেজাজ ইতিমধ্যে বেশ শান্ত হয়ে গিয়েছে। সে রুবেলের হাত ধরেই বললো, রুবেল ভাই! এত হতাশ হয়ে লাভ নাই! তার চেয়ে জেলখানায় থেকে কিছু রাজনীতি শিখি! সজল ভাই! ধরেন আপনিই আমাগো রাজনৈতিক গুরু। আপনি আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দ্যান? বেশি কড়া কইরা কইয়েন না! তাইলে আবার মাথাডা গরম হইবার পারে!
সজল সহজাত হাসি দিয়েই বললো, আচ্ছা বলেন!
আমার প্রথম প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ এত গলাবাজী করলো যে তারা ব্লাসফেমী আইন চায়না। কিন্তু তারপরও কেন তথ্য প্রযুক্তি আইনের নামে সেই ডিজিটাল ব্লাসফেমী আইন করলো? বিশেষ করে ৫৭ ধারা! যেটা হাসিনাধারা নামে পরিচিত! পাগলেও তো নিজের ভালো বোঝে? কিন্তু শেখ হাসিনা ক্যান বুঝলো না?? বিএনপি সব সময়েই জামাত-হেফাজতের সাথে এত মিল দিয়ে চলে কিন্তু তারপরও তো কখনো ব্লাসফেমী আইন করে নাই।
সজলের মুখ একটু গম্ভীর হয়ে গেলো! বললো, আমার কথা শুনেই ফাল পাইড়েন না! একটু হজম করার চেষ্টা কইরেন! রুবেলের দিকে মুখ ফিরাইয়া বললো, রুবেল ভাই! আপনিও! প্রশ্ন করবেন কোন সমস্যা নাই! কিন্তু উত্তর শুনে মেজাজ গরম করবেন না! অনুরোধ!
দুইজনই মৌন থেকে সম্মতি দিলো। সজল নিজের মতো করেই বলতে শুরু করলো।
শোনা যায় শেখ হাসিনাও ব্লাসফেমী আইন করতে চান নি! কিন্তু হেফাজত ছাফ জানিয়ে দেয়, ব্লাসফেমী না করলে তারা নৌকার বিরুদ্ধেই ভোট দিবে। হেফাজত তখনও খেলাফত মজলিসের রিক্সা প্রতীক নিয়ে জামায়াতের সাথে নির্বাচনের ঘোষণা দেয় নি। তাই তখন ভোটের হিসাব ছিলো সম্পূর্ণ অন্যরকম। আওয়ামী লীগ অনেক হিসাব নিকাশ করে বুঝতে পারে যে, হেফাজত নৌকার বিরুদ্ধে গেলে ক্ষমতায় ফিরে আসা সম্ভব নয়! সেটা আওয়ামী লীগকে আবার আওয়ামী মুসলীম লীগ ঘোষণা দিলেও? কারণ হেফাজত নৌকায় না আসলে নিশ্চিত বিএনপিতে যাবে। আর বিএনপি বিপুল ভোটে জিতবে। ভোটকেটে জেতার দিনও এখন আর নাই। তাই শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা রাজি হয়ে যায়! শোনা যায় একটা গোপন চুক্তিও হয়েছিলো হেফাজতের সাথে। যেমনটা ২০০৭ সালে শাইখুল হাদিসের খেলাফত মজলিসের সাথে ভোট সামনে রেখে গোপন চুক্তি করেছিলো আওয়ামী লীগ। অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেয় তথ্য প্রযুক্তি আইন সংশোধনের নামে সেখানে হেফাজতের চাহিদা মতো একটা ধারা যোগ করে দেবে! সেই ধারাটাই ৫৭ ধারা! আওয়ামী লীগকে এতো নির্বোধ ভাবার কোন কারণ নেই। তারা ঠিকই জানতো যে ৫৭ ধারার নামে ব্লাসফেমী আইন এটা সংবিধান পরিপন্থী! তারা এও জানতো যে ৫৭ ধারা বাক স্বাধীনতা বিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী, মানবাধিকার বিরোধী এবং পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক! এটা আওয়ামী লীগের দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধীও বটে! কিন্তু তারপরও আবার ক্ষমতায় আসার জন্য জেনেশুনেই বিষ পান করলো তারা! এখন সেই বিষে মরছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সাথে মরছে মুক্তমনা, প্রগতিশীল বামপন্থীরা। ফেসবুকার, ব্লগাররা! বিএনপিও হাসিনার ব্লাসফেমী আইনের ফান্দে ফেলে ছাত্রদল-যুবদল-শ্রমিকদলসহ বিএনপির কিছু বেয়াড়া কর্মীদের শায়েস্তা করছে! সে কারণেই সবুজ এখন কাশিমপুরে।
রুবেল এবং সবুজ দু’জনেরই চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো! আরো অনেক কিছু জানতে চায় তারা! দু’জনই বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছে এবং রাজনৈতিক মারপ্যাচ বোঝার চেষ্টা করছে!
রুবেল বললো, এইজন্যই তো আওয়ামী লীগের সরকারে একটার পর একটা মন্ত্রী হয় সাবেক বামপন্থিরা! আর সবুজও বলে উঠলো, বিএনপিও বামেদের জামাই আদরে বড় বড় পোষ্ট দিয়ে দলে নেয়, মন্ত্রী-এমপি বানায়!
রুবেল বললো, আচ্ছা সজল ভাই এইবার আমার একখান প্রশ্ন! আমারে একটু বুঝান দেহি, আমলীগ তো মেলা ভাল কাজ করছে! কিন্তু তার পরেও পাবলিকে ভোট দেয় নাই ক্যান? বুঝলাম ৫৭ ধারাটা বানানো ঠিক হয়নাই! কিন্তু অন্যদিকে? আপনি বিদ্যুতের দিকে দেহেন! জিডিপি দেহেন! খাদ্য মজুত দেহেন! শুধু ৫৭ ধারায়ই ভোট সব শ্যাস হয়ে গেলো?
সজল আবার মুখ খুললো! বরাবরের মতো এবারও তার সেই শান্ত এবং হাসিমাখা মুখ। না! শুধু ৫৭ ধারা না! তবে ৫৭ ধারা এবং এর সাথে জড়িত অন্যান্য আকাম আওয়ামী লীগকে ডুবাতে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আপনি একটা ব্যাপার বোঝেন রুবেল ভাই! আওয়ামলীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার শ্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় আসলো এবং শেষপর্যন্ত সেই ডিজিটাল ব্লাসফেমীতেই ধরাটা খাইলো! প্রতিটা গ্রামের অন্তত এককুড়ি ছেলে-মেয়ের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট আছে এখন! প্রতিদিন না হলেও গড়ে অন্তত সপ্তাহে একদিন তারা স্ট্যাটাসের খবর নিচ্ছে। লাইক-কমেন্টস মারছে! রাজনীতি তাদের সামনে অনেক বেশি পরিষ্কার! এই ফেসবুক প্রজন্মের একটা বড় অংশ আবার ভোটার হয়নি এখনও। কিন্তু তা হলে কি হবে! নিজের পরিবারের ভোটারদের প্রভাবিত করার মতো যথেষ্ট ঘিলু তাদের মাথায় আছে। আওয়ামী লীগ যদি শুধু এই ফেসবুক প্রজন্মকে কাছে টেনে নিতো! যদি শুরু থেকেই প্রগতিশীল মুক্তমনাদের পক্ষে থেকে হেফাজতের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট এ্যাকশানে যেতো! কওমী মাদ্রাসাগুলোরে শুধু যদি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন করে আধুনিক শিক্ষার প্রচলন করে দিতো! তা হলেই হেফাজতের লাফালাফি বন্ধ হয়ে যেতো! কিন্তু তা না! আওয়ামী লীগ নিজেরে জামাতের চেয়েও সহি ইসলামীক দল হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলো! মৌলবাদী ভোটারদের মন জয় করতে চেয়েছিলো! আর সমস্যাটার শুরু মূলত ওখান থেকেই! আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভুলটা করলো আবারও জামায়াতের সাথে সমঝোতা করতে গিয়ে। ৯৬ সালের সেই আওয়ামী লীগ-জামায়াতের ঐক্যের কথা মানুষ তো এখনও ভোলে নাই! তাই যখনই দেখা গেলো জামায়াত-শিবিরকে হঠাত করে সমাবেশের পারমিশন দেয়া শুরু হয়েছে! শিবিরের ভাঙচুর, হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে! ফাঁসির জায়গায় জেল দেয়া হচ্ছে, তখন তো মানুষের দু’য়ে দু’য়ে চার মিলাতে কষ্ট হয় নি! আবার রাজাকারদের বিচার ক-র-তে ক-র-তে একেবারে এমন সময়ে নিয়ে আসলো যে শাস্তি কার্যকর করারও সময় থাকলো না! এর মধ্যে আবার হেফাজতের তের দফা বাস্তবায়নে মুক্তমনা ব্লগার-ফেসবুকারদের উপর শুরু হয়ে গেলো পুলিশী হয়রানী। লক্ষ লক্ষ ফেসবুকার, অনলাইন এক্টিভিস্টদের আস্তা হারাতে শুরু করলো আওয়ামী লীগ। আর যখন ৫৭ ধারা জনগণের সামনে হাজির করলো, তখন তো অনলাইন এক্টিভিস্টরা নিশ্চিত হয়ে গেলো যে, আওয়ামী লীগ অন্তত ফেসবুকারদের পক্ষের কোন সরকার নয়! লক্ষ লক্ষ ফেসবুকার, ব্লগার মন খারাপ করে স্ট্যাটাস দেয়া বন্ধ করে দিলো! অনেকে আবার ফেক আইডি খুলে কাজ শুরু করলো! কিন্তু আওয়ামী লীগের ভোটের তো বারটা বেজে গেলো! এমনও খবর আছে, গোড়া আওয়ামী লীগারের ফেসবুকার ছেলেও নৌকায় ভোট দেয় নি!
আবার দেখেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আওয়ামী লীগ এমন প্রচারণা চালালো যে, পাবলিকের আকাংখা একেবারে তালগাছের মাথায় উঠায়া দিলো! এমন মনে হলো যে, পদ্মা সেতু না হলে জীবনই বৃথা! অনেক মন্ত্রী তো সদম্ভে ঘোষণাই দিলেন যে, পদ্মা সেতু না করতে পারলে জনগণ নৌকায়ই ভোট দিবে না! তারপর কি হলো? সীমাহীন ব্যর্থতা! জনগণের আকাংখা এখনও সেখানেই আছে এবং আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতুর পরিবর্তে এমন কিছুও করতে পারেনি যা দিয়ে সে পাবলিক সেন্টিমেন্ট রিকভার করতে পারে! তিস্তা চুক্তি, সিটমহল বিনিময় কিছুই হয়নি!
আবার বিদ্যুতের ফুটানি দেখেন! রেন্টাল-কুইক রেন্টালেন নামে পাবলিকের টাকা, বিদেশী লোনের টাকা হরিলুট হলো! আওয়ামী লীগের নেতা-পাতিনেতারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হলো! তখনও কিন্তু ভোটের বাক্সে হাত পড়েনি। ভোট কমতে শুরু করেছে যখন বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় দ্বিগুন, তিনগুন, চারগুন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গ্রামের যে কৃষক মাসে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা বিদ্যুত বিল দিয়েছে বছরের পর বছর! সে আওয়ামী লীগের বিদ্যুত ফুটানিতে পড়ে মাসে ৫/৬শ টাকা গুনছে! ঐ কৃষক বিদ্যুতের মোহে আবার নৌকায় ভোট দিবে এটা বলদের চিন্তা ছাড়া কিছুই না! গরীব মানুষের পকেটের টাকা যে আওয়ামী লীগার রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মালিকদের পকেটে ঢুকছে পাবলিক তা ভালই বুঝতো!
রামপাল বিদ্যুত প্লান্টের ব্যাপারে অবশ্য বামপন্থীদের সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন আওয়ামী লীগের ভোট কমাতে পারে নি। কিন্তু হেফাজত-জামায়াত যখন ভোটের আগে রামপাল বিদ্যুত প্লান্টের বিনিয়োগ ও লভ্যাংশের ভাগ নিয়ে ইস্যু বানালো তখনই নৌকার ভোট কমতে শুরু করে। ভারত মাত্র ১৫% বিনিয়োগ করে ৫০% মুনাফা নিয়ে যাবে! ভোটারদের কাছে আওয়ামী লীগের গণবিরোধী এবং ভারততোষণ এই চুক্তিকে একটা বড় ইস্যূ হিসাবে সামনে নিয়ে আসতে সমর্থ হয় হেফাজত জামায়াত!
অথচ আওয়ামী লীগ বিদ্যুতের উৎপাদনের কেরামতি নিয়ে ফালাফালি কম করে নাই! আর কৃষকরা এত কষ্ট করে ফসল ফলায়, পরিবারকে বাঁচায়, দেশকে বাঁচায়! এখানে তো রাষ্ট্রের কোন রকম কেরামতি নেই! রাষ্ট্রীয় সহায়তা তো সব পায় ঐ লুটপাটকারী শিল্পমালিক শ্রেণী আর লুটেরা ব্যবসায়ীক শ্রেণী। তারপরও কেন কৃষকের উতপাদনের উপর নিজেদের মিথ্যা কেরামতি দেখিয়ে পাবলিকের ভোট কাটতে চায় আওয়ামী লীগ।
এরপর টেন্ডারবাজী, বিশ্বজিত হত্যা, রামুতে বৌদ্ধ মন্দির ভাঙা, হলমার্কের নামে ব্যাংক লুট... আরো.. আরো কতো কি? সব মিলায়ে আওয়ামী লীগের ভোটে টান পড়েছে! তবে হ্যা মূল কারণ কিন্তু ৫৭ ধারা! ৫৭ ধারা না হলে ভোটের অনেক হিসাবই বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো!
(শেষ পর্ব)
সবুজ একটু চঞ্চল হয়ে উঠলো! একটু বিরক্ত হয়েই বললো, আমলীগ কে নিয়ে এতো কথা বলার কি আছে? তার চেয়ে আপনি একটু বিএনপির কথা বলেন সজল ভাই! আচ্ছা বলেন তো, বিএনপি এত হুমকি-ধামকি দেয়ার পরও কেন হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলো? তত্ত্বাবধায়ক বাদই দিলাম! অন্য কোন ফর্মূলার নিরপেক্ষ সরকার হলেও চলতো! কিন্তু তাও না! শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা ক্ষমতাই ছাড়লেন না। তারপরও কেন বিএনপি হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলো?
রুবেল ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছিলো। সবুজের কথা বলার ভঙ্গি তার সহ্য হচ্ছিল না! ভাবছিল সবুজ আবার তার নেত্রীকে নিয়ে বাজে কথা বলবে! সজল তাই রুবেলকে হাত ধরে বসতে বললো। আবার কথা শুরু করলো সজল! সবুজ? আমি আপনার কষ্টটা বুঝি! আপনার নেতারা নির্দেশ দিয়েছিলো, দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোল, তত্ত্বাবধায়ক আদায় করতে হবে! আওয়ামী নির্বাচন প্রতিহত করো! আপনারা জীবন বাজী রেখে রাস্তায় নামলেন। কিন্তু কখনও বলে নাই হাসিনা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলেও তারা নির্বাচনে যাবে। আর আপনার মতো সবুজরা শুধু আন্দোলনই করেছে, মার খেয়েছে! তারপর আবার রাস্তায় গিয়েছে! কিন্তু নেতারা ঠিকই কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে নির্বাচনে নেমে গিয়েছে। হ্যা! রাজনীতি এমনই! তবে খালেদা জিয়া কিন্তু তখন ঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ চেয়েছিলো বিএনপি নির্বাচনে না আসুক। তাই ১৮ দলীয় জোটের কোন দাবীর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করেই ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দেয় মহাজোট। পরিকল্পনাটা ছিলো একেবারেই ডিজিটাল। বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে এবং প্রতিরোধের ঘোষণা দিবে! জাতীয় পার্টি মহাজোটের বাইরে আলাদা নির্বাচন করবে। আর খেলাফত মজলিসের রিক্সা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবে হেফাজত-জামায়াত জোট। হিসাব সহজ। হেফাজত-জামায়াত গোটা দশেক আসন পাবে আর জাতীয় পার্টি সহ অন্যরা ত্রিশ থেকে চল্লিশ। বাকি আড়াইশ আওয়ামী মহাজোটের ঝুলিতে। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনের ঠিক আগের দিন একেবারে নাইন্টি ডিগ্রি ঘুরে নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়ে বসলো বিএনপি। মাত্র চব্বিশ ঘন্টায়ই সব হিসাব নিকাশ উল্লাপাল্টা হয়ে গেলো। হেফাজতের সাথে আওয়ামী লীগের গোপন চুক্তি গোপনই রয়ে গেলো। হেফাজত ঠিকই বিএনপির সাথে সর্বশক্তি নিয়োগ করে কাজ শুরু করলো। জামায়াতও বিএনপির সাথে খুবই গোপনে নির্বাচনী কাজ শুরু করে দিলো। নির্বাচনের আগে নিযামী-মুজাহিদদের ফাঁসী ঠেকাতে যদিও জেলের বাইরে থাকা প্রথম সারির জামায়াত নেতারা আওয়ামী লীগকে একেবারে মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝ দিয়ে যেতে লাগলো! এমনকি এরশাদও ঐদিন রাত্রেই খালেদা জিয়ার আস্তানায় গুম হয়ে গেলেন। রেরুলেন একেবারে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
আওয়ামী লীগ ততক্ষণে বুঝে গিয়েছে, নির্বাচনে পরাজয় ভিন্ন গতি নাই। অবশ্য যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে চেষ্টার ত্রুটি করে নাই হাসিনা সরকার। কিন্তু দিন বদলাইছে। পাবলিক আমলীগারদের চেয়ে এখন অনেক বেশি ডিজিটাল হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীও কথা শোনেনি! শেষ পর্যন্ত যে মহাজোটের আসন তিন অংক ক্রস করেছে এটাই অনেক বেশি।
আবার সবুজ বললো, কিন্তু আমাদের বেশ কয়েকজন এমপি এমনকি দু’জন মন্ত্রীও তো ৫৭ ধারা খাইছে! তাদের ব্যাপারে একটু বলেন?
সবুজ হাসতে হাসতেই একটু টিপ্পনি কাটলো, হায়রে হাসিনাধারা?? এমন খাদ্য বানাইছে, এখন আমলীগের এমপি-মন্ত্রীরও বদহজম হইতেছে।
সজল আবার বলতে শুরু করলো, জয়ের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অনেক ইসলাম বিরোধী স্ট্যাটাস ঢুকাইয়া দিছে সেটা তো শুনেছেনই! সেগুলোর স্ক্রিনসট নিয়ে রেখে দিয়েছে প্রশাসন। তাই সজীব ওয়াজেদ জয়ের আপাতত বাংলাদেশে আসার কোন সম্ভাবনা নেই। আর আসলে ৫৭ ধারায় ১৪ বছর!
সজলের কথার মধ্যেই রুবেল আবার কথা বলে উঠলো! মাইন্ড কইরেন না সজল ভাই! জয় ভাইয়ের এ্যাকাউন্ট তো শুনছি ফেসবুকের বিশেষ নিরাপত্তায় ছিলো! তারপরও তার এ্যাকাউন্ট ক্যামনে হ্যাক হইলো?
রুবেলের প্রশ্ন শুনে আবার কথা শুরু করলো সজল! ফেসবুকের জনক জুকারবার্গের ফেসবুক এ্যাকাউন্টও কিন্তু একবার হ্যাক হইছিলো! তাই জয়ের এ্যাকাউন্ট হ্যাক করা ডিজিটাল হ্যাকারদের কাছে কোন ব্যাপারই না! যে কথা বলছিলাম সেখানে আবার ফিরে আসি! আবার শুরু করলো সজল! হ্যা! এটা সত্যি! বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের এমপি এবং মহাজোটের দু’জন মন্ত্রীও ৫৭ ধারার ছ্যাকা পাইছে। সত্যি কথা বলতে, নিজেদের পয়দা করা ৫৭ ধারাই তাদের গলা টিপে ধরেছে! এর মধ্যে আমি একজন এমপির কথা জানি। সবুজ না চিনলেও রুবেল নিশ্চয়ই শফিউর রহমান এমপিকে ভালভাবেই চেনেন। আমার দেখা নিরেট ভাল মানুষ এই শফিউর রহমান। রাজনীতিবিদরা এর চেয়ে ধার্মিক হয় সেটা আমার জানা নেই। শফিউর ভাই অসম্ভবরকম ধর্মভিরু মানুষ। নামাজ কাজা হয়না তার! রোজা রাখেননি এরকম ঘটেনি কখনও। তার নিজের মূখ থেকেই শোনা! হজ্বও করে এসেছেন স্বপরিবারে। মহাজোট করতে করতে অনেক আওয়ামী লীগ নেতার সাথেই ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। শফিউর ভাই তার মধ্যে অন্যতম। ফেসবুকের সাথে কোনকালেই তার কোন সম্পর্ক ছিলো না! তবে তিনি কম্পিউটারের ব্যবহার জানেন এবং ইমেল ব্যবহার ও পত্রিকা পড়তে ইন্টারনেটও ব্যবহার করতেন। সেই শফিউর রহমান এমপিকেও ২৪ দলীয় বিএনপি জোট সরকার ৫৭ ধারায় জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। কে বা কারা শুধুমাত্র শফিউর রহমানের নামেই নাকি ৭টি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুলেছে। সেখানে শত শত পোস্ট দিয়েছে যা কি না ইসলাম এবং নবীজীর বিরুদ্ধে। ৫৭ ধারা এটা এমন একটা অস্ত্র যে ইচ্ছামতো ব্যবহার করা যায়! বিএনপি-জামাত-হেফাজত শফিউর রহমান এমপির বিরুদ্ধে সেটাই করেছে। এই আমার কথাই ধরেন! আমি বামপন্থী হলেও পুরোদস্তুর মুসলমান। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি! ৩০ রোজার পরে ৬ রোজাও রাখি। ফেসবুকে মানুষের পক্ষে স্ট্যাটাস দেয়ার চেষ্টা করি! কিন্তু কখনই ধর্মের বিরুদ্ধে একটা কথাও লিখি নাই। তারপরও সেই আমারে নাস্তিক বলে ৫৭ ধারায় জেলে পুরে দেয়া হলো।
রুবেল আবারও একটা ছোট প্রশ্ন করে বসলো! তাইলে আপনি কি ফরহাদ মজহারের মতো বামপন্থি না কি?
সজল একটু মুচকি হাসি দিলো! বললো, ফরহাদ মজহার যতনা বামপন্থী তার চেয়ে অনেক বেশি মৌলবাদী, অনেক বেশি জামাতী। বিএনপির মৌলবাদী অংশের সাথেই তার দহরম-মহরম। তাই বামপন্থী বা কমিউনিস্ট টাইটেলটা উনি নিজেই নিজের উপর ব্যবহার করেন! বাংলাদেশের মৌলবাদীরা ছাড়া কেউ ওনাকে বামপন্থি মনে করেন না!
রুবেল বললো, সজল ভাই আজকে আর মনে হয় বেশি সময় পামু না! প্যাডে কইতাছে খাওনের সময় হইছে। তারপরেও আরো দুইখান ছোট প্রশ্ন করি! ৫৭ ধারা কি আজীবনই থাকবে? আর শ্যাষটা হচ্ছে আমলীগ কি আর কহনও ক্ষমতায় আইবো??
হ্যা! আমারও ক্ষুধা লাগছে। খুব সংক্ষেপে বলি, আমার মনে হয় বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার আগে ৫৭ ধারা বাতিল করবে। কারণ খালেদা জিয়া অন্তত এটা বুঝবে যে, হাসিনা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসলে ৫৭ ধারা দিয়েই বিএনপি-জামাত ধ্বংস করবে। আর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা যে নেই তা নয়। তবে হাসিনা-খালেদা দু’জনেরই বয়েস হইছে। আল্লা না করুন, তাদের মৃত্যুর পর কোন দলের কি হাল হয় সেটা এখনই বলা মুশকিল। তাই সময়ই বলে দেবে, জোট-মহাজোটের ক্ষমতায় যাওয়া-আসা আর কতদিন চলবে! তবে এমন হতে পারে প্রগতিশীলরাই সামনে চলে আসলো, ৯০ ভাগ শ্রমিক-কৃষকের পক্ষের শক্তি ক্ষমতা দখল করলো! কিছুই অসম্ভব না!
হঠাৎ বাঁশির আওয়াজ শোনা গেলো! সজল কথার মাঝখানেই থেমে গেলো। তারপর বললো, চলেন আগে খাবার নিয়ে আসি! খাওয়ার পরে আবার আমাকে সবজি ক্ষেতে কাজে যেতে হবে। পরে এসব নিয়ে আবার আলোচনা করা যাবে! তিনজনেই উঠে চৌকার দিকে রওনা হলো।
পাঠক লাল গোলদার
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩
[email protected]
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:০৬
মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: কিছুক্ষন পড়ে ক্লান্ত হয়ে গেলাম........তবে কাল্পনিক গল্প পড়তে ভাল লাগে না