নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

দূর্গাপূজাঃ একটুখানি ধর্ম আর অনেকখানি সংস্কৃতি

১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৫

দূর্গাপূজা মূলত সনাতন ধর্মালম্বীদের একটা বাতসরিক উতসব! আর শরতকালে এই উতসব হয় বলেই দূর্গাপূজাকে শারোদীয় দূর্গোতসব বলা হয়ে থাকে। দূর্গাপূজা যতটা না পূজা, তার চেয়ে অনেক বেশি উতসব! যতটা না ধর্ম চর্চা, তার চেয়ে অনেক বেশি সংস্কৃতি চর্চা।

অসংখ্য মানুষ যারা পূজামন্ডপ পরিদর্শণ করে তারা মূলত কয়েক সেকেন্ডের জন্য ধর্মীয় কাজটা করে থাকে। সনাতন ধর্মের খুব কম পুরুষই নিয়মিত ধর্মচর্চা করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষরা পূজামন্ডপের সামনে গিয়ে হাত জোড় করে একটা প্রনাম করেই দায় সারে। বাকী সময় মেতে থাকে উতসবে। বেশিরভাগ মানুষের কাছে দূর্গাঠাকুর দর্শনের ওই হাতজোড় করা কয়েক সেকেন্ডই ধর্মীয় কাজ। বাদবাকী পূজাকে ঘিরে সংস্কৃতি চর্চা! পূজার ধর্মীয় কাজের প্রায় পুরোটাই করে থাকেন ভাড়া করা ব্রাহ্মণ আর ব্রাহ্মণের সহযোগী নাপিত। বাকীটা মহিলারা। যে কারণে পূজার একটা মূল অংশ অঞ্জলী প্রদান অনুষ্ঠানে উপবাস থেকে নারীরাই দলে দলে অংশগ্রহণ করেন। পুরুষরা ব্যস্ত থাকেন অন্য কাজে। কেউ কেউ সময়মতো গিয়ে টুপ করে প্রণামটা সেরে আসেন। অনেকে সেটাও করেন না। কিন্তু দূর্গাপূজাকে ঘিরে যে উতসব চলে তাতে অংশগ্রহণ থাকে সকলেরই। এমনকি প্রণাম না করা বা ধর্ম চর্চা না করা ঐ পুরুষটিরও। ঢাকের বাদ্যি বা আরতী প্রতিযোগিতা পুরোটাই সাংস্কৃতিক উতসবের অংশ। আর মাস খানেক আগে থেকে হিন্দু গ্রামগুলোতে দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে যে সাজ সাজ বর ওঠে সেখানে ধর্ম চর্চার তেমন কোন সুযোগ নেই। নতুন পোশাক কেনা, মেয়ে-জামাই নিমন্ত্রণ, পূজার পাঁচদিন নিরামিশ ভোজ, পূজার পরের দিন মাছ-মাংসের ভুরিভোজ সবই সংস্কৃতি। পূজার জন্য অল্পবয়সী ছেলেদের দলবেঁধে কলা কাটতে যাওয়া, কলা কাটার উছিলায় অন্যের বাগান থেকে নারকেল-পেঁপে ইত্যাদি খাওয়া, প্রতিদিন পূজার প্রসাদ বিতরণ, পূজার চাঁদা সংগ্রহ করতে পাড়া-মহাল্লা-হাট-বাজার-অফিস কাচারী ঘোরা, পূজার মাইক বা বিজলী বাতি পরিচালনা, ঠাকুর দেখতে আসা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অর্ভ্যথনা বা পূজা শেষে খই ছিটাতে ছিটাতে নদীতে প্রতীমা বিসর্জন - এগুলোর কোনটাতেই ধর্মচর্চার তেমন বালাই নেই। আর খড়কুটো, বাঁশ, পাট, রং ইত্যাদি দিয়ে যে মানুষগুলো উদয়অস্ত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরী করে তারা মূলত ভাস্কর্য শিল্পী। পুরুষরাই মূলতঃ প্রতিমা তৈরীর কাজ করে থাকেন এবং এই ভাস্কর্ শিল্পীদের অনেকে নিজেরাই ধর্মচর্চার মধ্যে নেই। সময়মতো পারিশ্রমিকটা বুঝিয়ে দিলেই তারা খুশি। আর প্রতিমা তৈরীর কাজেও ধর্মচর্চার সুযোগ নেই তেমন। সন্ধ্যার সময় সন্ধ্যা প্রদীপ দিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে যায় বাড়ীর বা পাড়ার মহিলারাই।

আর যদি পূজা কমিটির কথাই বলেন, তো সেখানে মূলত গ্রামের বা এলাকার বিশিষ্টজনদের উপদেষ্টা হিসাবে রেখে কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয় অপেক্ষাকৃত কমবয়সী পরিশ্রমি যুবকদের। কোন কোন পূজাকমিটিতে দায় সারতে দু’একজন নারীকেও রাখা হয়। তবে পূজা পরিচালনার কাজ মূলত পুরুষরাই করে থাকে। এই পুরো পূজা কমিটির কাজের সাথেও ধর্মচর্চার তেমন কোন সংশ্লিষ্ঠতা নেই।

পূজা উপলক্ষ্যে অনেক যায়গায়ই বসে জমজমাট পূজার মেলা। এই মেলা মূলত পূজার প্রধান বাণিজ্যিক দিক। পূজা কমিটি যেমন মেলার প্রতিটি স্টল থেকে নির্ধারিত হারে চাঁদা সংগ্রহ করে, তেমনি মেলাকে ঘিরে থাকে নতুন প্রজন্মের অনেক আবেগ, অনেক স্মৃতি। অসংখ্য তরুণ-তরুণী পূজার মেলার পথ চেয়ে থাকে সারা বছর। মেলাতে গিয়েই কেবল তারা মন খুলে কথা বলা, মিষ্টি দেয়া-নেয়া বা উপহার আদান-প্রদানের সুযোগ পায়। পারিবারিক নজরদারী বেশ শিথিল থাকে পূজার মেলাতে।

দূর্গাপূজাকে ঘিরে প্রায় প্রতিটা গ্রামেই মাসাধিককাল ধরে চলতে থাকে যাত্রা, নাটক, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা বা আধুনিক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। পূজা উপলক্ষ্যে বিধায় যে কোন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড আয়োজন বেশ সহজ। প্রশাসনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন অনুমতি প্রয়োজন হয় না। কারণ ঐ সকল সাংস্কৃতিক আয়োজনকেও পূজার অংশ হিসাবেই গণ্য করা হয়। যাত্রা, নাটক বা নৃত্য-সঙ্গীতের প্রতিযোগীতার সাথে জড়িত থাকে গ্রাম বা পাড়ার অসংখ্য মানুষ। এই সকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড দূর্গাপূজার অংশ হলেও ধর্মচর্চার সাথে এর কোন সংযোগ নেই।

তাই দূর্গাপূজা মূলত একটি সাংস্কৃতিক উতসব। বহুদিন পরে অসংখ্য মানুষ পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের সাথে মিলিত হয় দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে। পূজাটা এখানে একটা উপলক্ষ্য মাত্র! অফিসে ছুটি পাওয়ার সুযোগ বা সমস্ত কাজ বন্ধ রাখার উছিলা! দুরদেশে থাকা সন্তান যখন অনেক দিন পরে মায়ের কোলে এসে মাথা রাখে, হোকনা সেটা পূজা উপলক্ষ্যে, তাতে ধর্ম চর্চার স্থান নেই।



পাঠক লাল গোলদার

১০ অক্টোবর ২০১৩

[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৩

স্বসংকোচ বলেছেন: ভাল লাগলো লেখাটা

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৪

ইমরান হক সজীব বলেছেন: দূর্গাপূজা যতটা না ধর্ম চর্চা, তার চেয়ে অনেক বেশি সংস্কৃতি চর্চা।

সহমত । ভালো লেখা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.