নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
বাংলাদেশে ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৭৩৯৭ জন, আহত হয়েছেন ১৬১৯৩ জন। অন্যদিকে ২০১৭ সালে আফগানিস্থানে যুদ্ধে মোট মৃতের সংখ্যা ৩৪৩৮ জন। আহত ৭০১৫ জন। বাংলাদেশে শুধুমাত্র সড়ক দুর্ঘটনায়ই আহত-নিহতের সংখ্যা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্থানের দ্বিগুণেরও বেশি।
মানুষের জীবন কত মূল্যহীন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত (২২-২৩ জুন ২০১৮) মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের! বাংলাদেশের সড়কপথ যেন মৃত্যুপুরী। বাসা থেকে বেরোবেন, কোন নিশ্চয়তা নেই যে আপনি দুর্ঘটনা এড়িয়ে বাড়ী ফিরে আসবেন। প্রতিদিন অসংখ্য দুর্ঘটনা, অসংখ্য মুত্যৃ-যখম। আজ বা কাল যে আপনার পালা নয়, সেটা কেউ বলতে পারে না। তাই মৃত্যু মাথায় নিয়েই ঘর থেকে বের হতে হয় প্রত্যেকটা মানুষকে। কিন্তু এই যে মৃত্যুর মিছিল এটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু একেবারে সীমিত। উন্নত বিশ্বে তো সড়কপথও নিরাপদ। সড়ক দুর্ঘটনা যেমন সীমিত তেমনি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও অনিয়মিত। আর এর মূল কারণ কঠোর সড়ক-পরিবহণ আইন এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন।অন্যদিকে বাংলাদেশের সড়ক-পরিবহন আইন খুবই দুর্বল। সেই দুর্বল আইনও ড্রাইভাররা যেমন মানে না, সরকারও তাদের মানতে বাধ্য করে না। রাজনীতিক-পুলিশ-পরিবহন মালিক-রোড কন্ট্রাকটর মোটামুটি সবাই দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত।তাই প্রতিবছর ঝরে যাচ্ছে হাজারো তাজা প্রাণ!
বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরে মাদকসেবন একেবারেই ওপেনসেক্রেট। পরিবহনের সাথে জড়িত প্রত্যেকটা ব্যক্তিই বিষয়টি জানেন। মন্ত্রী, পুলিশ-প্রসাশন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক-কর্মচারী সবাই। আপনার দুরপাল্লার বাসের ড্রাইভার মাদকাশক্ত অবস্থায়ই ড্রাইভিং করছে, আপনার জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে কিন্তু আপনার কিছু করার নেই। দুরপাল্লার ট্রাক ড্রাইভারদের মধ্যে মাদক সেবন করে না বাংলাদেশে এরকম ট্রাক ড্রাইভার নাকি খুঁজেই পাওয়া দুষ্কর। ট্রাক আর বাসে মিলেই বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটায়! দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের আলোকে তৈরি করা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল বছর (২০১৭) ছোট-বড় ৪৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বাস দুর্ঘটনা ১২৪৯টি এবং ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান দুর্ঘটনা ১৬৩৫টি। অধিকাংশ যাত্রীর প্রাণহানিও ঘটে এই বাস-ট্রাক দুর্ঘটনায়। ড্রাইভারদের বেপরোয়া গাড়ী চালানো, অসুস্থ প্রতিযোগীতা, ড্রাইভিং আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করা, পর্যাপ্ত না ঘুমিয়ে গাড়ি চালানো, হেল্পার দিয়ে গাড়ি চালানো ইত্যাদির সাথে যখন মাদকাসক্ততা যুক্ত হয় তখন দুর্ঘটনা না ঘটে আর কোন উপায় থাকে না।
সড়ক দুর্ঘটনার উপর বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের অনেক সড়ক-মহাসড়ক গাড়ী চলার অনুপযুক্ত, বাঁকগুলি ডেঞ্জারাস।” অনুপযুক্ত রাস্তাই সড়ক দুর্ঘটনার দ্বিতীয় প্রধান কারণ। দুর্নীতিগ্রস্ত ইঞ্জিনায়ার-কন্ট্রাক্টর-সড়ক পরিবহন দপ্তরই এর জন্য দায়ী।
ফিটনেসবিহীন গাড়ী চলছে সর্বত্র। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই, কোনদিন ছিলও না এমন গাড়িও নিয়মিত ঘুষ দিয়ে রাস্তায় চলে । ফিটনেস তো মালিকের ব্যাপার। আর জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার্তেই ফিটনেসবিহীন গাড়ী রাস্তায় যাতে না চলতে পারে তার জন্য সড়ক-পরিবহন আইনের প্রয়োগ করা সরকারের দায়িত্ব। আমাদের ফাটাকেষ্ট মন্ত্রীও দায়বদ্ধতার বাইরে নন।
কিন্তু বাংলাদেশ নামক এই মৃত্যুপুরীতে কে কার কথা শোনে!! কে কোন কথা রাখে?? নেতাদের টেন্ডারবাজী-চাঁদাবাজী আর কন্ট্রাক্টর-ইঞ্জিনিয়ারদের পাশবিক লোভ মিটিয়ে যখন রাস্তাটা তৈরী হয়, তখন সেটা যানবাহন চলাচলের অনুপযুক্ত হতে বাধ্য। এরপর ওই বিপদজ্জনক রাস্তায় পরিবহন মালিকের কারসাজি-দুর্নীতির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পুলিশের চাঁদাবাজী, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-পাতিনেতাদের চাঁদাবাজী, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদাবাজী, ড্রাইভারের মাদকসেবন ইত্যাদি। এর সব দায় মিটাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। কখনও জীবন দিয়ে, কখনও পঙ্গুত্ব বরণ করে।
শুধামাত্র যদি সড়ক-পরিবহন আইন যেটুকু আছে সেইটুকুও মেনে চলা যেতো, তাহলেই প্রতিবছর হাজার হাজার প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হতো। কিন্তু বাংলাদেশ চলছে উল্টো পথে। টেন্ডারবাজদের টেন্ডারবাজী যেমন বাড়ছে, চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজী তেমনই বাড়ছে। রাস্তার আইন না মানার প্রবণতাও যেমন বাড়ছে, সমানতালে সরকারের উন্নয়নের গলাবাজীও বাড়ছে। উন্নয়নের ফিরিস্তি সরকার যতই দিন না কেন বাস্তবতা হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার হার প্রতিবছর বাড়ছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের হারও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এই মৃত্যুমিছিল কবে শেষ হবে কেউ জানে না। “আল্লার মাল আল্লায় নিছে” এটা প্রকাশ্যে কেউ না বললেও মন্ত্রী-নেতা-চামচিকা সবাই ঠাটে-বাটে পাবলিককে ওরকমই বোঝাতে চাচ্ছে। সড়কে গণমৃত্যুর দায় নিচ্ছে না কেউ!
পাঠক লাল গোলদার
২৩ জুন ২০১৮
[email protected]
২| ২৩ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:০১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এক ভয়াবহ সত্য তুলে ধরেছেন।
সবাই চেনেও যেন কিছূ জানে না! যার মারা যায়- সেই বোঝে!
তুলনামূলক চিত্রই বলে দেয় কতটা অসহায় আমরা এক অব্যবস্থপনার সড়ক ফাঁদে!
ফাটাকেষ্টরা ফাটাফাটি গলাবাজিতেই শেষ করে দায়! এ ওর দিকে আঙুল তোলে সে তার দিকে!
মাঝখানে আমজনতার অসহায় বলিদান!
পুলিশ, প্রশাসন, আমলা, রাজনীতিক, সিন্ডিকেট, পরিবহন নেতা, শ্রমিক, মিডিয়া সব একসাথে এমন আকন্ঠ দূর্নীতি/দায়হীনতায় নিমজ্জিত মনে হয় বিশ্বের আর কোথাও নেই।
মিডিয়া যখন তমুক গ্রুপ বানিজ্য সংবাদ/ বা অমুক গ্রুপ সংবাদ শিরোনাম পাঠ করে তার কন্ঠে স্পন্সরশীপের কাটা আটকে থাকবে স্বাভাবিক! সংবাদ হয়ে যায় বানিজ্যের পণ্য!
সত্য পড়ে রয় সড়কে বেওয়ারিশ লাশের মতো!
৩| ২৩ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:৩৬
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: Very sad.
৪| ২৪ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৭:৩১
সিগন্যাস বলেছেন: খুবই সত্য কথা বলেছেন।কিছু কিছু হাইওয়ে দেখলে আতংকিত হতে হয়।সড়ক দূর্ঘটনা আজকাল স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
৫| ২৪ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের মতো দরিদ্র দেশেই বেশি হয় কেন?
৬| ২৪ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১
হাঙ্গামা বলেছেন: কিছু চামার মন্ত্রীকে দেশ থেকে না বাহির করে দিলে এ সংখ্যা আরো বাড়বে।
৭| ২৫ শে জুন, ২০১৮ রাত ২:২৫
নিশি মানব বলেছেন: পেশাগত কাজে আমাকে প্রায়ই ঢাকার বাহিরে যেতে হয়।
যাবার সময় নিয়ে যেতে হয় কখনো চোদ্দ কখনো বার ফিটের পিকআপ গাড়ী।
বেশীর ভাগ সময় ড্রাইভাররা থাকেন পুর্ব পরিচিত। আর আমার ড্রাইভিং এর আগ্রহ আছে বলে ড্রাইভাররা স্টিয়ারিং আমার দায়িত্ব দিয়ে পিছনে চলে যান নেশা করতে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
কাইকর বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। ঠিক বলেছেন