নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
যখন ক্ষেতে লাঙ্গল চালাতাম, লাঙ্গলের সাতে জোয়ালটা জুড়ে দিতে এক ধরণের কোটা ব্যবহার করা হতো। আইয়ে(আইক্কা) ওয়ালা চিকন বাঁশ বা বড় কঞ্চি দিয়ে বানানো হতো এই কোটা। বাঁশ দিয়ে তৈরী তাই এটিকে স্থানীয় ভাষায় বাঁশো কোটা বলতো। সেই বাঁশো কোটা এখন প্রায় হারিয়েই গেছে। লেজেহোমো এরশাদ দেশব্যাপী লাঙ্গলের মৌখিক ব্যবহারটা বজায় রাখলেও লাঙ্গল-জোয়ালের ব্যবহার আজকের তথাকথিত আধুনিক কৃষক আর করছেই না। অনেকের গোয়াল ঘরে গরুর বদলে এখন চীনা পাওয়ার টিলার শোভা পাচ্ছে।
গ্রাম-বাংলার বহুল ব্যবহৃত আর একটি কোটার কথা না বললেই নয়। লম্বা কোন লাঠি বা চিকন বাঁশের মাথায় ছোট একটা লাঠি তেরসা করে বেঁধে দিয়ে এই কোটা তৈরী করা হয়। আম পাড়া, কুল পাড়া, আমড়া পাড়া ইত্যাদি ফল পাড়ার ক্ষেত্রে এই কোটা খুবই কার্যকরী। তবে লাঙ্গল-জোয়াল জুড়ে দেয়া কোটার জন্ম আগে, না কি আম পাড়া কোটার জন্ম আগে সেই ইতিহাস আমার জানা নেই।
আম পাড়া কোটা আর লাঙ্গল-জোয়াল জুড়ে দেয়া কোটার জন্মের অনেক অনেক বছর পরে মুজিব কোটায় শেখ হাসিনা দলীয়প্রধান মনোনিত হন। তারও পরে জিয়া কোটায় খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্বে অধিষ্ঠীত হন। মুজিব কোটা বা জিয়া কোটা না থাকলে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া দলীয় প্রধান হওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিলো না বলেই অনেকের অভিমত। এর পরে রাজাকার কোটায় রাষ্ট্রনায়ক বনে যান লেজেহোমো এরশাদ। বাংলাদেশে রাজাকারদের কোন তালিকা নেই। কিন্তু এরশাদ যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে যোগ না দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়েও পাকিস্থানী সেনা অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় ছুটি কাটাতে দেশে এসে আবার পাকিস্থানে ফিরে গিয়ে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, তাই সকল বিবেচনায়ই তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের লোক। রাজাকারদের কোন তালিকা থাকলে এরশাদের নাম তার মধ্যে থাকতো বলে আমার বিশ্বাস।
বর্তমানের কোটা সংস্কার আন্দোলন, প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিল ঘোষনা, ছাত্রলীগের বর্বরোচিত হামলা ইত্যাদির পরও আমি সরকারী চাকরিতে কোটা প্রথা প্রচলনের পক্ষের মানুষ। আমার মনে হয় কোটা সিস্টেমের জন্যই অনেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ সরকারী চাকরি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য অবশ্যই এই সুযোগ থাকা উচিত এবং ভালোভাবেই থাকা উচিত। আমার মনে হয় কোটা কোন বড় সমস্যা না। মুল সমস্যা হলো চাকরী সৃষ্টির জন্য সরকারের উদ্যোগহীনতা।
বাংলাদেশের মোট বেকারের সংখ্যা কতো- এই প্রশ্নের সঠিক কোন উত্তর নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট কর্মোপযোগী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। এর মধ্যে কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষ। বাকি ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ কর্মক্ষম তবে শ্রমশক্তির বাইরে। শ্রমশক্তির বাইরে বলে চালিয়ে দেয়া হলেও আসলে এই ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সবাই বেকার। বলতে গেলে বাংলাদেশের কর্মক্ষম মানুষের অর্ধেকই বেকার। কিন্তু পরিসংখ্যান ব্যুরো ঘুরিয়ে-প্যাচিয়ে (আইএলওর সংজ্ঞা ব্যবহার করা হয়েছে যেটি উন্নত বিশ্বের জন্য প্রযোয্য) বলেছে যে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার।
কোটা ব্যবস্থা পরিষ্কারভাবে বোঝার ক্ষেত্রে বেকারের সংখ্যার সাথে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান চিত্র জানাটা খুবই প্রয়োজনীয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের মধ্যে সরকারী চাকরি ৩.৮%, বেসরকারী চাকরি ১৪.২%, ব্যক্তি মালিকানা চাকরি ৬০.৯% এবং অন্যান্য চাকরি ২১.১%। কোটা নিয়ে রাজপথে যত কাটাকাটি তা কিন্তু ঐ মাত্র ৩.৮% সরকারী চাকরি নিয়েই। কিন্তু যদি এমন হতো সরকারী চাকরির সংখ্যা ৩০.৮%! আমার মনে হয় না কোটা নিয়ে কোন কথা উঠতো। বাংলাদেশে বড় সমস্যা হচ্ছে আপনি বেকার তাতে সরকারের কিচ্ছু যায় আসে না। আপনাকে শ্রমশক্তির বাইরের লোক বলে দিয়েই সরকার খালাস। সরকারী চাকরির সংখ্যা বৃদ্ধির কোন চিন্তা নেই, উদ্যোগ নেই। কোন দায়ও নেই। যদি এমন হতো বেকারদেরকে চাকরি না দেয়ার ব্যর্থতার কারণে সরকারকে বেকার ভাতা দিতে হচ্ছে, তাহলে সরকার ব্যয় কমানোর স্বার্থে হলেও চাকরি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে বাধ্য হতো। কিন্তু “মূখ দিয়েছেন যিদি, আহার দেবেন তিনি”-যখন সরকারের আদর্শ ও বিশ্বাস, সেখানে বেকার ভাতা বা চাকরি বৃদ্ধির উদ্যোগের আশা বাহুল্য মাত্র।
অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারী কোটা, উপজাতি কোটা এগুলো তো একেবারেই অকর্মা কোটা। আসল কোটা তো দুর্নীতি কোটা। আপনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হন আর উপজাতি হন, সরকারী চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরতে আপনাকে দুর্নীতির আশ্রয় নিতেই হবে। ঘুষ, দলীয় অর্ডার, স্বজনপ্রীতি সবই দুর্নীতি কোটার আওতাভুক্ত। ঘুষ এবং দলীয় অর্ডার ছাড়া সরকারী চাকরী বাংলাদেশে এখন ব্যতিক্রমী ঘটনা। প্রয়োজন এই দুর্নীতি কোটার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা। প্রধানমন্ত্রীর উচিত অন্যান্য কোটা ঠিক রেখে এই দুর্নীতি কোটা বাতিল ঘোষণা করা এবং ঘোষণার বাস্তবায়ন করা। দুর্নীতি যদি না থাকে তাহলে আমার মনে হয় অনেক মানুষই সরকারী চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বেতন আর ভাল সুবিধার বেসরকারী চাকরিতে যোগদান করার চেষ্টা করবেন। সরকারী চাকরি মানে দুর্নীতির নিশ্চয়তা- রাতারাতি বড়লোক, সরকারী চাকরি মানে কাজ না করলেও চাকরী যাওয়ার সুযোগ নেই, সরকারী চাকর মানে আমপাবলিককে আর পাত্তা না দিলেও চলবে, কেউ যদি হিন্দি চুল ছিড়তেও চায়, তিনবার চিন্তা করবে। আর এই সমস্ত কারণেই দেশের প্রায় সকল বেকার স্বপ্ন দেখে একটা সরকারী চাকরি বাগানোর। আমার মনে হয় কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের অন্যতম কারণও এটা। ভবিষ্যতে সরকারী দুর্নিতীবাজ হওয়ার টার্গেট। তবে ছাত্রলীগের জানোয়ারগুলো যে খাঁচা ছেড়ে আন্দোলনকারীদের উপর হামলে পড়েছে তার কারণ আর একটু ব্যাপক হতে পারে। দুর্নীতি কোটা তো আছেই, সাথে আছে সন্ত্রাসী কোটা, চাঁদাবাজ কোটা, হাটহাজারী কোটা, তৈল মর্দন কোটা, ইয়াবা কোটা, আরো কত কোটা যে আছে!!! আর সে সব কোটায় মন্ত্রী হয়েছেন, এমপি হয়েছেন, আমলা হয়েছেন এরকম আওয়ামলীগার, ছাত্রলীগার, অন্যান্য লীগারদের নামের ফর্দও অনেক লম্বা। এত এত কোটা রক্ষার গুরু দায়িত্ব ছাত্রলীগকে তো নিতেই হবে। কোটা ছাড়া তার ভবিষ্যত যে অন্ধকার! বিএনপি জোট সরকারের আমলে উপরোক্ত কোটার সাথে যুক্ত হয় জামাতী কোটা, জঙ্গী কোটা, খাম্বা কোটা সহ আরো কিছু কোটা।
কোটা উঠিয়ে দিলেও তো আন্দোলনকারীদের কোন সুবিধা হবে বলে মনে হয় না। একটা পদের জন্য যেখানে হাজার হাজার জনের আবেদন, সেই অবস্থার তো তেমন কোন বদল হবে না। দুর্নিতী যতদিন আছে, ওটার প্রতি প্রবল আকর্ষণও ততদিন থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক। প্রয়োজন দুর্নীতি কোটার মূলতপাটন! হোক সেটা রাজনৈতিক দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি বা সামাজিক দুর্নীতি। কে করবে সেই কাজটা? বর্তমানের জোট-মহাজোট দিয়ে দুর্নীতি কোটার মূলতপাটন সে তো এক দিবাস্বপ্নের মতোই।
পাঠক লাল গোলদার
৮ জুলাই ২০১৮
[email protected]
২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: জনগণের অধীকার বলে কোন শব্দ বর্তমান সরকার বাহাদুরে সংবিধানে আছে?
দেশে এখন সব প্রতিবাদি জনগনকে তারা দুই ভাগে ভাগ করে ফেলছে,
১/ কিছু বললেই রাজাকার
২/কিছু বললেই জঙ্গি
৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০২
জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন পাঠক লাল গোলদার ভাই। মুজিব কোটায় শেখ হাসিনা এসেছেন রাজনীতির নেতৃত্ব, এত্তো সহজে কোটা তিনি ছাড়বেন না।
রাজীব নুর ভাইও সুন্দর বলেছেন, এটাই তো দেখছি হরহামেশা। তাদের পছন্দ বা ইচ্ছার বাইরে গেলেই ...
দেশে এখন সব প্রতিবাদি জনগনকে তারা দুই ভাগে ভাগ করে ফেলছে,
১/ কিছু বললেই রাজাকার, ২/ কিছু বললেই জঙ্গি
৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন:
কোটা আমার কোটা শুধু কোটায় ভুবন ভরা
কোটায় গড়া রাজনীতিতে কোটায় খোটা সারা!!!
পোষ্টে ভাললাগা
++++
৫| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:০৬
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: যাই হোক, কোটার সংস্কার খুবই জরুরী। এক দেশে দুই নিয়ম থাকতে পারে না...
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫
বিষাদ সময় বলেছেন: ভাল লিখেছেন। সময় পেলে পরে বিশদ মন্তব্যের আশা রাখি..............