নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে বলার আসলে কিছু নেই। বিপণি বিতানের কোন সিদ্ধহস্ত বিক্রায়কও আমি নই। হঠাৎ হঠাৎ কিছু শব্দ মনের মাঝে টুপটাপ করে ঝরে পড়ে। তাই লিখি এখানে।

আসাদুজ্জামান পাভেল

নিজের সম্পর্কে বলার মতো আসলে তেমন কিছু নেই।

আসাদুজ্জামান পাভেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

হে আমার আগুন!

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৫

হে আমার আগুন!

২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩



আমি কে? আমার পরিচয় কী? আমার পূর্বপুরুষ কারা? আমার উত্তর প্রজন্ম কী পরিচয় নিয়ে বড় হবে? আমার ঠিকানা আসলে কোথায়?



প্রশ্নগুলো নিয়ে মনের মাঝে খেলা করলে একসময় স্থির চোখের মতো চিন্তাও নিবিষ্ট হয়ে ওঠে। ফিরে তাকাই ফেলে আসা নিজের পায়ের ছাপে, যে পদচিহ্ন আসলে তো আমারই পিতৃগণের। আমি শুধু ক্রমশের ধারা বাড়াতে একটি বাড়তি পদক্ষেপ মাত্র। বুঝি, সে ইতিহাসের ঝুলি হাতড়াতে ঐতিহাসিক হবার দরকার হয় না। প্রয়োজন নেই মোটা মোটা পুস্তক হাপিশ করার। মেলা রাত নির্ঘুম পার করে গবেষণারও জরুরত নেই। চোখ দুটো বুজে মনের জানালার কাছে উঁকি দিলেই সব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঐ তো নুয়ে পড়া শরীরের ভাঁজ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ঘাম। দুদিন আগে মরে গেছে হালের বলদ। অনেকটা ধার করে এনেই দুর্বল বকনায় জুড়েছে লাঙ্গল। তাতে কি আর চলে! প্রায়ই জোয়াল খুলে যায়। সে জোয়াল লাগাতেই শরীর থেকে অতটা রক্ত ঘাম হয়ে বেরিয়ে যায়। যেন সে এক নুরুলদিন। অমন তেজী রোদে আবছা চেহারাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেন আমারই আদলে গড়া কোনো লোকজ সংস্করণ। নাহ, পুরোটা ঠিক বলি নি। আমার চেয়েও শক্ত আর মাথা উঁচু করে থাকা একটা মানুষ। আমারই প্রপিতামহ, নিশ্চিতভাবেই একজন কৃষক। এ ছাড়া কোনো উপায়ও তো নেই। বিদ্যা কি জিনিস জানা হয়নি। উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো তালুকও তো মেলে নি যে পায়ের ওপর পা তুলে খাওয়া যাবে। দাদার আমলে এসে জীবন তবু কিছুটা পাল্টে যায়। ততদিনে বৈশ্বিক এবং বৈষয়িক বিষয়ে মেলা জ্ঞান মিলেছে। হালে ভাগ্নের রাজনীতির কল্যাণে জুটেছে সামাজিক দাপট। মন্ত্রির মামা বলে কথা! থানার দারগা কেন, মহুকুমার জজ সাহেবেরও অতিরিক্ত ভক্তি নজরে আসে। আমার দাদার উঠোনে জুটে যায় সামন্তবাদের ঘাটু গানের দল। হাতের লাঠি দিয়ে মাটিতে বাড়ি দিতে দিতে আমার পৃথুল পিতামহ হয়তো তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন। তাঁর সেই কপটতা আর অনুকূল সামাজিক পরিচয়ের পুনশ্চ পরম্পরায় হয়তো আজ আমি এই বিভূঁইয়ে। অথচ যারা আমারই বড়-বাবার সমান্তরালে হাল বেয়েছেন, তাঁদের বংশধর আজো লাঙ্গল টানে। আজো কাত হয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়, সত্যি সত্যি আজো হালের বলদ অসময়ে মরে যায়। তবে আমার অহংকার কিসে? সে কি আত্মপরিচয় গোপন করাতে নাকি মিলিয়ে যাওয়া- বিলীন হয়ে যাওয়া সত্যিকারের পরিচয় প্রজন্মের ব্যালেন্স শিটে সংযোগ করাতে। এ কথা বলতে কোনোই দ্বিধা নেই যে এই ভূখণ্ডের ( যার আজকের নাম বাংলাদেশ) প্রতিটি মানুষ আসলে সেই কৃষক, চামার কিম্বা মুটেরই উত্তরাধিকার। এ কথা যে মেনে না নেয়, অথবা মানতে লজ্জা পায়, তাঁরা হয়তো এ মুলুকের কেউ নন। অথবা প্রাকৃতজনের চেতনায় বিশ্বাসী নন। ঐ আমির শ্রেনী আর যাই করুক গন-মানুষের যে কোনো চাওয়াকে অপাঙ্গে দেখবেন সেটাই তো স্বাভাবিক।



বেশ কদিন ধরে পত্রপত্রিকায় কিছু পণ্ডিত ব্যক্তির লেখা পড়ে এমনটাই মনে হয়। খুব সম্প্রতি টিভি’র কয়েকটি টক শো দেখে রীতিমতো চমকে উঠি! এই সম্প্রদায় কি তবে বাংলাদেশের কেউ নন? অন্তত একটি উদাহরণ এখানে দিতে চাই। যেহেতু পালন করছি নিদারুণ প্রবাস জীবন (যেন সত্যি সত্যিই অন্তরীন একটা জীবন), এবং প্রান্তিক পরিবার হওয়াতে বৈভবের ছিটেফোঁটাও নেই এ অধ্যায়ে। তাই দেশের খবারাখবর পেতে সম্বল ঐ অনলাইন বাংলা পত্রিকা, ব্লগ আর ইউ টিউবের ভিডিও ক্লিপ। একদিন সবিস্ময়ে দেখি তৃতীয় মাত্রায় এসেছেন সরকারি দলের একজন জন প্রতিনিধি(!)। তেল চকচকে চেহারায় সিঁথি টেনেছেন পরিপাটি করে, গলায় ঝুলিয়েছেন ফিনফিনে টাই। মাঝে মাঝে প্রাজ্ঞের মতো নিবিষ্ট মনে নিচ্ছেন নোট। আমি খুব নিশ্চিত মাত্র বছর চারেক আগেও হয়তো তাঁর চুল উড়েছে উদভ্রান্তের মতো। চকচকে গালে প্রকট ছিল ক্লিষ্ট চোয়াল। প্রায়শই উত্থিত হাত নিয়ে নিতো শক্ত মুষ্টির চেহারা। অথচ আজ তাঁর বক্তব্য অনেকটা অচ্ছুৎ এড়ানো ব্রাহ্মণের মতো। বলছেন, ‘ শাহবাগে জমায়েত এইসব ছেলেমেয়েদের দেখলেই বোঝা যায় এরা আসলে বাস্তব থেকে কতটা দূরে দাঁড়িয়ে। এদের চেহারায় ফুটে উঠেছে ধ্রুপদী সংস্কৃতির প্রতিরূপ। সবারই লম্বা লম্বা চুল, বড় বড় নখ। চোখে নির্ঘুমতার ছাপ। দেখলে মনে হয় যেন কোন বাউল সম্প্রদায়ের মেলায় এসে উপস্থিত হয়েছি। এরা কারা? ব্লগ কারা লেখে? কোনো ভদ্র ঘরের সন্তান কি দিনরাত ব্লগ বা ফেইস বুক নিয়ে থাকে! আমি কি আমার বাচ্চাদের দিবো এমন করতে? এদের না আছে যথাযথ নেতৃত্ব, না আছে প্রশিক্ষণ, না আছে রাজনৈতিক আদর্শ। যদি তাকাই ঊনসত্তরের গন আন্দোলনের দিকে......’ ইত্যাদি ইত্যাদি...। অবাক হয়ে ভাবতে হয়, উনি কি তবে এ দেশের কেউ নন? কারা তবে এঁদের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি বানিয়েছেন। অন্যবারের কথা না হয় নাই বললাম, এবার অন্তত এঁরা নির্বাচিত হয়েছেন এই তরুণদের ভোটে। তাঁদের একটাই চাওয়া, যা কিনা মূলত স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আর তা হলো, যুদ্ধ অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি। আর তা যখন মেলে না, স্বপ্ন থেকে সে জেগে ওঠে। ঘুম ঘুম চোখে সে দেখে অদ্ভুত খেলা। এর নামই বুঝি রাজনীতি। সে তো এই কিম্ভূত তামাশায় অভ্যস্ত নয়। বেরিয়ে আসে পথে। অবিন্যস্ত চুল, ঢিলে ঢালা পোশাক। স্বপ্ন ভাঙ্গা গলা যখন জোরালো হয়ে ওঠে অবাক হয়ে দেখে- সে একা নয়। শত শত, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ নির্ঘুম চোখের আলোর দিশারি আজ এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। যেন হ্যামিলনের কোন এক বাঁশীর টানে চলে এসেছে পথে। একে কি বলবো? সমাজবিদ কিম্বা চিন্তাবিদরা এ নিয়ে গবেষণায় বসুক। তারুণ্য এগিয়ে যাক সামনের দিকে। খুব ভালো করেই বুঝি সব রাজনৈতিক দলগুলো কেন উঠে পড়ে লেগেছে। বিরোধী দল, ধর্মভিত্তিক সংগঠন, সরকারিদল- সব একসাথে বসেছে এবার। প্রথমে সরকারি দল একে বানাতে চেয়েছে নিজের মাস্তুলধারী কোন লেজুড় সংগঠন। সে চেষ্টাও আমরা দেখেছি। তাড়া খেয়ে বিভ্রান্ত এবং ভীত নেতাকুল দৌড়ে এসে ঢুকেছে ভাগাড়ে। খানিক নিঃশ্বাস নিয়ে এবার তারা মিডিয়াতে সোচ্চার। কারণ এই সব মাধ্যমগুলোও তো আসলে একেকটি পোষা প্রতিষ্ঠান। তাকে তো ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু ভুলে গেছে, ‘ তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে’। যতই মিডিয়া ক্ষমতাবানদের হাতে থাকুক, যতই ইউটিউব বন্ধ থাকুক-এ প্রজন্মের কাছে সে বংশীবাদকের মতো আছে সোশ্যাল মিডিয়া। সত্যিই তারা আজ একেকজন ধ্রুপদী গোষ্ঠীর আধুনিক সংস্করণ। আমি তাঁদের অভিবাদন জানাই। অপূর্ব এই অহিংস জাগরণে আমি আপ্লুত। আর যাই হোক, এই সম্মিলন প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতার প্রকাশ।



ফিরে আসি একটি সাম্প্রতিক স্ন্যাপসটে। প্রবাস জীবন নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। আমার মতো নাজুক চিত্তের কোনো মানুষ দু’ লাইন লিখলেই কি আর না লিখলেই কি। কিন্তু আমার জন্য এটা মহা আনন্দের। সে অনুভূতি থেকেই লেখা। প্রায় সপ্তাহান্তেই এখানে বসে দাওয়াতের আয়োজন। ঘুরে ঘুরে একেক সপ্তাহে একেকটি বাসায়। পরিবেশন করা হয় উপাদেয় ফরমালিন মুক্ত বাঙ্গালি খাবার। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে চলে সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে বিলাপ। আর যাই হোক না কেন, দেশের গুষ্টি উদ্ধারে নেমে পড়ে সবাই ( অন্তত এই একটি বিষয় প্রতি সমাবেশে থাকবেই)। এবারো আলাদা কিছু নয়। খাবার টেবিলে যেতে যেতে শুনছিলাম, ‘আসলে এই আন্দোলনে দেশের মেলা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। কেমন করে যে এটা সামাল দেয়া হবে সে এক মাত্র উপরাল্লাহই জানেন’। বক্তার কপালে চিন্তার রেখা। দেখি আদি অভিবাসীরা সম্মতি সূচক মাথা দোলায়। আমি মিনমিন করে জানতে চাই, ‘ক্ষতি কিসের?’

আমার কথায় বিচক্ষণের চিন্তার রেখা দেখলাম বিরক্তিতে পাল্টে যাচ্ছে, তার সাথে মিশে আছে কিঞ্চিৎ উদ্বিগ্নতা। বলে কি এই নব্য অর্বাচীন। বললেন, বুঝলে না তো, তোমাকে তথ্য দিয়ে বোঝাচ্ছি। বলেই স্মার্টলি পকেট থেকে বের করে আনেন অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোন। যেন কোন মোহময় অস্ত্র। জেমস বন্ডের মতো দ্রুত চলে তাঁর হাত। বেরিয়ে পড়ে অজানা তথ্য। স্লাইড শোয়ের মতো তিনি আউড়ে যান উপাত্তগুলো। আমি চুপচাপ শুনি। কোনো উত্তর দিতে পারি না। আমার কাছে যে কোনো তথ্য অস্ত্র নেই। নিজেকে আবারো লাঙ্গল হাতের পূর্ব পিতার আদলে আবিষ্কার করি। তাকিয়ে দেখি আমার চারপাশে উৎসুক প্রাচীন অভিবাসীর দল। নিজেকে বড্ড একা লাগে।



বাসায় ফিরে মেলে ধরি ব্লগের পাতা, দৈনন্দিন পত্রিকা কিম্বা সোশ্যাল মিডিয়ার জাল। যদি তাতে ধরা পড়ে কোনো অর্জন। তাকিয়ে দেখি আমার ফেলে আসা পোড়া দেশে চলছে একুশে ফেব্রুয়ারির আয়োজন। কিছু পড়েই ফুলে ফুলে ভরে উঠবে শহীদ মিনার, প্রজ্বলিত মোমবাতির আলোয় দেশের প্রতিটি উঠোন হয়ে উঠবে আলোকিত, অপার শৃঙ্খলায় চলবে তারুণ্যের জাগরণ, প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের বুকের ভিতর জ্বলতে থাকা আগুন নিয়ে নেবে সংহতির অবয়ব। সে আগুন ছড়িয়ে যাবে সবখানে। কই, ক্ষতির খতিয়ান তো দেখি না! ‘ হে আমার আগুন- আমার পালিয়ে যাওয়া পাখি’, তুমি ফিরে এসো, তুমি বেঁচে রও, যেমন বেঁচে রয় অলৌকিক।

*************************************************

অরেঞ্জবার্গ, সাউথ ক্যারলাইনা, যুক্তরাষ্ট্র থেকে।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১৯

মুক্ত মানব বলেছেন: ভালো লাগলো। আরো লিখুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.