![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ক্লান্তভঙ্গিতে লক খোলে আমার রুমে ঢুকি। ঢুকেই থতমত খেয়ে যাই। পাগলের মতো চারিদিকে তাকাতে থাকি। এইটা আবার কার রুমে ঢুকলাম! নিজের অজান্তেই কথাটা মুখ থেকে বের হয়।
মনোমুগ্ধকর পারফিউমের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে সারা রুমে। বই-খাতা পরিপাটি করে সাজানো। ল্যাপটপ-কম্পিউটার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এলোমেলো করে রাখা ক্যাবলের লাইন, চার্জার সব গুছানো। বিছানার ওপর সর্বক্ষণ মেলা রাখা কম্বল, মশারী জায়গামতো ভাজ করে রাখা। রুমের টাইলস ফেটে যেন একধরণের চকচকে ভাব ফুটে উঠছে।
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমার সেই চিরচেনা অন্ধকার রুমে কে আজ আলো জ্বালিয়ে দিল। আমার রুমে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ। অবশ্য এটা অঘোষিত।কেউ কখনো ঢুকে না। যার কারণে একজন ব্যাচেলর হিসেবে যতটুকু আবর্জনা করা যায়, সব আমি করি। কাপড়চোপড় দলামোচড়া করে এদিক সেদিক ফেলে রাখি। টুকটাক সাহিত্য সাধনা করি। সেই হিসেবে কাগজের টোকরো, পেপার-পত্রিকার পেজ ছড়িয়েছিটিয়ে থাকে। অতি আশ্চর্যের সাথে লক্ষ করলাম, আজ সেসবের কোনো বালাই নেই।
আমি চিন্তিত ভঙ্গিতে ধপাস করে টাইলসের ওপর বসি। অন্যদিন হলে বসতাম না। ময়লা-আবর্জনায় কে বসে?
না মাথায় আসছে না। কোন মহাপ্রাণ, হৃদয়বান, দয়ালু এসে আমার রুমটা মনুষ্য বসবাসের উপযোগী করে দিলেন? বুঝতে পারছি না।
পাকঘরে আম্মা কাজ করছেন। বটি দা দিয়ে আলু কাটছেন। অন্যদিন হলে হৈ চৈ শুরু করতাম। প্রতিদিন একধরণের তরকারী আর ভাল্লাগে না। আজ করলাম না।
তার পাশে উবু হয়ে বসলাম। মোলায়েম কণ্ঠে বললাম, আম্মা।
হু
একটা কথা বলো তো।
কী
আমার রুমে আজ কেউ কি ঢুকেছে?
আম্মা মহা বিরক্তির সাথে আমার দিকে তাকালেন। তোমার রুমে কে ঢুকবে বাজান? যে অবস্থা করে রেখেছ তুমি। মানুষ তো ঢুকা দুরে থাক; ইবলিশ শয়তান-ও মুখ ফিরিয়ে নেবে। যা রুমটা একটু পরিষ্কার কর!
চিন্তার জগতে হারিয়ে যেতে থাকি। কে করল কাজটা!
আমাদের বাসায় আমরা চারজন প্রাণি বাস করি। আমি, আম্মা, দাদি ও আমার একটা ভাই। তবে ভাই এই কাজগুলো করার কথা না। ছেলেরা এত মহতপ্রাণ হয় না। অবশিষ্ট থাকেন দাদি। দাদির মরোমরো অবস্থা। ইয়া নফসী ইয়া নফসীর মধ্যে সর্বক্ষণ আছেন।
আমার পেটে প্রচন্ড ভুখ ছিল। সেই সকালে এক কাপ চা আর দু’টোকরো বিসকিট খেয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত আর কিছু খাই নি। এখন বাজে বিকাল চারটা। একটুপর আসরের আজান হয়ে যাবে। খেতে বসে লক্ষ করলাম, ভাত গলা দিয়ে নামছে না। পেটের ক্ষুদা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে। টেনশন হলে কি এই অবস্থা হয়? আমার জানা নেই।
আমি বিরক্তির সাথে উঠে পড়ি। হাত ধুইয়ে রুমে আসি। সারাদিনের উপোসি ঘোরাঘুরি আর কিছুক্ষণ আগের অহেতুক টেনশনটা আমাকে আমাকে ক্লান্ত করে ফেলেছে। ছোট্ট একটা নি:শ্বাস ফেলে গা-টা এলিয়ে দিলাম বিছানায়।
কিছুক্ষণ মোচড়ামোচড়ি করি। হঠাত লক্ষ করলাম, আমার বালিশটা একবারে পাশ ঘেষে আছে। কোনোরকমে মাথাটা হালকা তুলে বালিশটা বিছানার মাঝবরাবর নিয়ে আসি। আর তখনি চোখে পড়ে এক টোকরো কাগজ। আমার সাহিত্য সাধনায় ব্যবহৃত কাগজ মনে করে ছুড়ে ফেলতে উদ্যত হই। প্রায় ফেলেই দিয়েছিলাম, সবুজ কালির দু’তিনটা শব্দ চোখে পড়ায় আর ফেল্লাম না।। কাগজের টোকরোটা অবহেলার সাথে ভাঁজ খুলতে থাকি।
“এই, তুমি কি মানুষ নাকি অন্যকিছু?
রুমের কী অবস্থা করে রেখেছো।
বুঝা যাচ্ছে, এখানে গরু-ছাগল থাকে।
তোমাকে নিয়ে আর পারা গেল না।
তাড়াতাড়ি ছাদে আসো। নইলে…..।”
©somewhere in net ltd.