![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বই, সিনেমা, গান, অল্প স্বল্প ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং, ইত্যাদি নিয়ে
আমার দেখা সবচেয়ে জবরদস্ত প্রচ্ছদের একটি হচ্ছে তিন গোয়েন্দা ভলিউম ২/২ এর নতুন প্রচ্ছদ। যদিও এটা অন্য ক্লাসিকাল প্রচ্ছদ থেকে আলাদা।
তিন গোয়েন্দা ভলিউম ২/২ এর মলাটের দুর্ধর্ষ জলদস্যুর ছবিটি কোথা থেকে এসেছে? আরেকটি বিশ্ববিখ্যাত বই Robert Louis Stevenson-এর Treasure Island, Scribner’s Sons প্রকাশনী থেকে ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। অলঙ্করণের কাজ করেছিলেন N.C. Wyeth (১৮৮২-১৯৪৫, Wikipedia Link )। তিনি আমেরিকার অন্যতম শিল্পী ও আলঙ্কারিক ছিলেন। তিনিই এই ছবিগুলো এঁকেছিলেন।
সোয়া শতাব্দী পুরনো এই বইটির মূল সংস্করণ এই লিঙ্কে বিনামূল্যে পাওয়া যায়ঃ
The Treasure Island, illustrated (1911)
এছাড়া ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ এর প্রচ্ছদেও এখন ব্যাবহার হচ্ছে।
Stevenson RL. Treasure Island. New York: Sterling Children’s Books; 2013.
এরকমই অন্য আরেকটি মলাট হল ভলিউম ১৮ (নতুন প্রচ্ছদ)। এই মলাটে দেখা যায় আরেকজন দুর্ধর্ষ ওয়েস্টার্ন চরিত্রকে।
প্রশ্ন হল, ইনি আসলে কে? আমাদের অতি পরিচিত গ্রেগরি পেক। মুভির নাম, ‘Billy Two Shots’ (১৯৭৪)।
Billy Two Shots
মুভিটি ওয়েস্টার্ন ঘরানার, এখানে পোস্টার দেখলে এই চরিত্রের সাথে (আমার মতে) সরাসরি মিল পাওয়া যায়। গ্রেগরি পেক, গানস অফ নাভারোন, টু কিল এ মকিং বার্ড, রোমান হলিডে -সহ আরো অনেক বিখ্যাত মুভিতে অভিনয় করেছেন।
বলে রাখা ভাল, এই ভলিউমের ভিতরেই আছে ‘ওয়ার্নিং বেল’ (১৯৯৩), মেক্সিকোর পরিবেশে, সিয়েরা মাদ্রে পর্বতমালার পাদদেশে দারুণ এক এ্যাডভেঞ্চার।
রিভলভারগুলো Colt Single Action Army (SAA) revolvers, যাকে ‘Peacemakers’ বলেও ডাকা হত। সাদা রঙ মানে হাতির
দাঁতের তৈরি বাঁটগুলো।
এই মেক্সিকান রহস্যময়ী মহিলা, গল্পে যার নাম ইসাবেলা, যিনি আসলে আমেরিকান, উইগ আর কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে মেক্সিকান সাজতেন, তার আসল পরিচয় নিশ্চিত ভাবে বের করা যায়না। যদি ফটোশপ এবং পরে AI এর সাহায্যে এই ছবিটি পরিষ্কার করে আনি, তাহলে নিচের মত দেখা যাবে।
ওই আমলে হলিউডে নেটিভ আমেরিকান অভিনেত্রী যারা অভিনয় করতেন, তাদের মধ্যে Tantoo Cardinal এবং Kimberly Guerrero উল্লেখযোগ্য। সমস্যা হল তাদের মুখাবয়বের সাথে এই ছবি তেমন একটা মেলেনা। যদিও proportion distortion এর কারণে এরকম হতে পারে। এইও কিছুটা চেহারা বদলে দেয়ে। আমার মতে মূল মলাটের ছবিটা মেলে Donna Reed এর সাথে। তিনি ১৯৫৫ সালের মুভি ‘The Far Horizons’-এ Sacagawea চরিত্রে অভিনয় করেন।
তবে হ্যাঁ, নিশ্চিত করে বলা আসলেই সম্ভব না। যদি সত্যিই ইনি Donna Reed হয়ে থাকেন, তবে এনাকে আরো দেখেছি, It’s A Wonderful Life মুভিতে। James Stewart (Jimmy) এর সাথে করা খুব অনবদ্য ফিল্ম, এক অর্থে Christmas Classic। Home Alone যারা দেখেছেন, দেখবেন এই মুভিটি প্রতিটি হোম এলোন পর্বেই, টিভিতে দেখানো হয়, কেভিনের (Maclay kulkin, Home Alone-এর কেন্দ্রীয় শিশু চরিত্র) ভাই বোনেরা দেখে। মজার কথা হল, ওয়ার্নিং বেল এর গল্পে, ইসাবেল উইগ আর কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে মেক্সিকান সাজেন। Donna Reed-ও তেমনি আসলে শ্বেতাঙ্গিনী, নেটিভ সেজেছেন।
মিল হোক বা নাই হোকা, এই সাচাগাওইয়া খুব ইন্টারেস্টিং ক্যারেকটার। তিনি ছিলেন একজন লেমহি শোশোন মহিলা ১৮০৪ থেকে ১৮০৬ সালের মধ্যে, তিনি কর্পস অফ ডিসকভারি (Corps of Discovery) নামী অভিযাত্রীদলের সঙ্গে উত্তর ডাকোটা থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত হাজার হাজার মাইল ভ্রমণ করেছিলেন, যেখানে তিনি দোভাষী ও পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছিলেন। এই ফলকে প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন, বিখ্যাত Louisiana Purchase-এর পরে ঐ এলাকার মানচিত্র, প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত যাবার নদীপথ, ইত্যাদি খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেন। সেখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এই নারী।
এই বইতে আরো আছে অন্য একটি সিনেমার রেফারেন্স – ‘Treasure of Sierra Madre’ (১৯৪৮,
Link)। সেটাও দেখার মতই একটা মুভি, Cassablanca (১৯৪২)- খ্যাত হামফ্রে বোগার্টকেও দেখা যায় এই মুভিতে।
আমার কথা
আমরা যদি ক্রস রেফারেন্সিং করে দেখি, কী আশ্চর্য বিস্তৃত ছিল এই প্রচ্ছদ শিল্পীদের রুচি এবং জানাশোনা। সেবা প্রকাশনী আক্ষরিক অর্থেই অন্তত দুই-জেনারেশনের বাংলাদেশকে প্রভাবিত করেছে। তারা সেটা করতে পেরেছেন যুগের চাইতে অগ্রসরতার কারণে। ইন্টারনেট বিহীন, সত্তর-আশির ঢাকা শহর কেমন ছিল যখন কল্পনা করি তখন মনে আসে রিকশার টুং-টাং, সোডিয়াম বাতি, ডায়াল ফোন, ট্রানজিস্টর রেডিও, সাদা কালো টিভি, ভেসপা-ভক্সওয়াগন। দোতলা বাড়ি, প্রচুর গাছ, অনেকটা দেয়ালের আধিপত্যবিহীন ঢাকা শহর। সেই আমলে সেগুনবাগিচায় বসে, সিয়েরা মাদ্রে, গ্রেগরি পেক, ইসাবেলাকে তারা পৌঁছে দিচ্ছিলেন কমলাপুর রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষমান কিশোর-তরুণের হাতে। এই সব প্রচ্ছদ দখল করে রেখেছিল ঢাকা কলেজের বাসস্টপের স্টেশনারী দোকান থেকে নিউমার্কেটের আজিমপুর গেট, কিংবা সোবহানবাগের জ্ঞানকোষ। তাদের কৃতিত্বতে মুগ্ধ হতেই হয়।
©somewhere in net ltd.