নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পিনাকীর ব্লগ

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য

পিনাকী ভট্টাচার্য

চিকিৎসক, লেখক। কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, আমাদের অর্থনীতি।

পিনাকী ভট্টাচার্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারঃ দলের ব্যর্থতার উপশমের দায় কী নির্দলীয় জনগনের?

০৬ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ইস্যু নিয়ে সংঘাত সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। বি এন পি এবং তাদের জোট আওয়ামীলীগের জোটকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনের বিপক্ষে, আর আওয়ামী লীগ বলছে তারা নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের গ্যারান্টি দিতে পারে। এই একই অবস্থা হয়েছিলো ১৯৯৬ এর নির্বাচনের আগে শুধু আওয়ামী লীগের জায়গায় ছিল বি এন পি আর বি এন পির জায়গায় ছিল আওয়ামী লীগ। এটা হয়তো এমন অনড় অবস্থায় যেত না যদি আওয়ামী লীগ এই কয় বছরে মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করতো, সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগের যথাযথ ব্যবস্থা নিত, শেয়ার মার্কেটের লুটপাটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত, মন্ত্রী উপদেষ্টা দের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান, বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নিত। কিন্তু বিগত সময়গুলোতে আওয়ামী লীগ তার সমর্থনের জায়গাগুলোকে মজবুত না করে দুর্বল করেছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে শাহবাগে তারুণ্যের অভাবনীয় জমায়েতের শক্তিকেও আওয়ামী লীগ পাশে রাখতে পারেনি।



বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংকট কী শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে অতিক্রম করা সম্ভব? আর এটাই কী আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবার যোগ্যতা রাখে? এই দাবী কী জনগনের দাবী না রাজনৈতিক দলগুলোর স্বেচ্ছাচারী ইচ্ছা? জনগনের ইচ্ছার কথা বলে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপিয়ে দেয়া ইচ্ছা কী সংকটকে আরো গভীর করবেনা? এই প্রশ্নগুলোর ফয়সালা হওয়া জরুরী। কারণ একাধিকবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার উপস্থিতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংকটকে নতুন কিছু মাত্রা দিয়েছে। যেমন এই ব্যবস্থাই জন্ম দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছদ্মাবরনে পরোক্ষ সেনা শাসন আর পছন্দের তত্ত্বাবধায়ক প্রধান নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগের রাজনিতিকরন। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই বিষয়টা একটা জটিল রাষ্ট্রনৈতিক ফয়সালা এবং এই ফয়সালার দায়িত্ব শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝাপড়ার আর ঐক্যমতের বিষয় করে রাখা সম্ভব নয়। এ বিষয়টি নিয়ে যেমন নাগরিক চিন্তার মিথস্ক্রিয়ার প্রয়োজন আছে তেমন শেষ বিচারে জনগনের ইচ্ছার ম্যান্ডেট নেবারও প্রয়োজন আছে। জনগনের ম্যান্ডেট কী ভাবে নেয়া হবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোকেই ঠিক করতে হবে। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই সংকটের একটা প্রধান কারণ এই যে, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনী ধারা গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ, বি এন পি দুদলই শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।



বি এন পির তরফ থেকেও দাবী করা হচ্ছে, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে আইনটি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ছিল সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠান বা পরিচালনা করার ক্ষমতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নয়, সেটা নির্বাচন কমিশনের। আইন অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী- গণতন্ত্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। একটি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে আরেকটি সরকারের নির্বাচিত হওয়ার মধ্যবর্তী পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনই সকল দেশে “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের” ভুমিকা পালন করে। সাংবিধানিক, আইনি, প্রশাসনিক, সামাজিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা গেলে একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটা সাংবিধানিক, আইনি, প্রশাসনিক ও সামাজিক শর্ত তৈরি হতো। অথচ সেই দাবী বড় রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকে কখনো করা হয়নি, তারা সেই চেষ্টাও কখনো করেনি। কিন্তু এমন এক সরকার ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে তারা দাবী করছে যার নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা নেই, যাকে কাজ করতে হবে নির্বাচন কমিশনের সহায়তাকারী হিসেবে, কিন্তু নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের নৈতিক দায় তার। এই অদ্ভুত আকাঙ্ক্ষা এই সরকার ব্যবস্থা কীভাবে পূরণ করবে? তাই নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কোন রাষ্ট্রনৈতিক যৌক্তিকতা নেই।



তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী করে আওয়ামী লীগ এবং বি এন পি পরোক্ষভাবে এটাই স্বীকার করে নিয়েছে, নির্বাচন চলাকালিন প্রশাসন ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনস্থ থাকে, এই ছত্রছায়ায় সরকারী দল ভোট চুরি করে, সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিজেদের পক্ষে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করে। এই সব অভিযোগই সত্য, কিন্তু এই সব অপকর্মের জন্য আমলা শ্রেণী, আমলাতন্ত্র অথবা প্রশাসন কখনো দায়ী হয়নি। কারণ, মনে করা হয় প্রশাসন এবং আমলাতন্ত্র রাজনৈতিক নেতৃত্বের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করেন। প্রকৃতপক্ষে আমলাতন্ত্র, প্রশাসন, সামরিক বাহিনী, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পরাশক্তি যে রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় সেই দলই ক্ষমতায় আসে। আমলাতন্ত্র আর প্রশাসনই সক্রিয়ভাবে ভোট চুরি আর সন্ত্রাসে অংশগ্রহণ করে। তাদের স্বার্থ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষমতায় বসায় আর প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে সব অপকর্মের দায় চাপিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। নিজেরা নিষ্কলঙ্ক রাজহাঁস হয়ে ক্ষমতার পুস্করনিতে বিচরন করতে থাকে। যেখানে নির্বাচিত রাজনৈতিক দলেরই আমলাতন্ত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকেনা সেখানে তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলাতন্ত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে সেটা কী একটু অতিরিক্ত আশা হয়ে গেলো না? আর রাজনৈতিক দলগুলো যদি সন্ত্রাস আর কারচুপি দিয়ে ভোটে জেতার অগণতান্ত্রিক চর্চা চালায় তারাই তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানবে না। যদি মানত, তাহলে এখনই তারা গণতান্ত্রিক আচার আচরণ মেনে চলত।





একটা যৌত্তিক প্রশ্ন আসতেই পারে, আমলাতন্ত্র, প্রশাসন আর সশস্ত্র বাহিনীর হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্পণ করা হলেও তারা রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে কেন? জনগনের সার্বভৌম ইচ্ছার সাথে যদি তারা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয় তবে তাদের শাস্তি হবেনা কেন? বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী গনবিরোধী আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনকে জনগনের গণতান্ত্রিক ইচ্ছার অধীনে আনার পরিবর্তে পুরো অসৎ কাঠামোটাকেই জনগণ ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে স্থাপন করার দাবী জানাচ্ছে। অন্যদিকে দোষী করছে রাজনীতিকে, দোষী করছে ভালমন্দ মেশানো জনগনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর মধ্যে নিহিত আছে সংগঠিত, অসীম ক্ষমতাশালী আমলাতন্ত্র ও সন্ত্রাসী প্রশাসনকে নিষ্পাপ জ্ঞান করে জনগনের ঊর্ধ্বে তুলে ধরার ঘোষণা, নির্বাচনী অপকর্মের ক্ষেত্রে তাদের ভুমিকাকে অস্বীকার করা, এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য তাদের জবাবদিহির বাইরে রেখে দেয়া। অথচ অন্যদিকে তোলা হচ্ছে জনগনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হত্যা করার দাবী। প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে রাজনৈতিক দলগুলো এতদিন নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে তার উপশমের সাময়িক দায়িত্ব কেন নির্দলীয় জনগণকে নিতে হবে?



এই প্রশ্ন গুলো উত্থাপনের ভেতরে দিয়ে যে সত্যটা বের হয়ে আসে, তাহলো: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, সাধারণ নাগরিকদের দাবি নয়। এটা ‘দলের’ দাবি।তত্ত্বগতভাবে দলের দাবিগুলিই নাগরিকদের দাবি হওয়ার কথা। যদিও একটা সুক্ষ্ম পার্থক্য সবসময়ই বিরাজ করে। কিন্তু ‘লুটপাটতন্ত্রে’ দলের দাবি ও সাধারণ নাগরিকদের দাবির মধ্যে পার্থক্যরেখাটা অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লুটপাটতন্ত্রে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রও কিন্তু ভাগিদার। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় কখনোই তাদের স্বার্থকে আলাদাভাবে দেখা সম্ভব নয়।সুতরাং আলাদাভাবে তাদেরকে দোষী সাব্যস্থ করার প্রয়োজন নেই ।তথাকথিত বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মোহগ্রস্থতার কিছু দিক আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। এরকমই আরেকটি বয়ান হলো: রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির ‘নিরপেক্ষতা’। বাঙলাদেশ কিন্তু ঐ ধরণের গনতন্ত্রে এখনো প্রবেশ করতে পারেনি। একথাগুলোকে আমাদের মনে রাখতে হবে। আমরা এখনো ‘দলতন্ত্র’র ভেতরে আছি। সুতরাঙ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘নির্বাচন’ কমিশন কোন অবস্থাতেই নিরপেক্ষ হতে পারে না, তা একে যতো ‘শক্তিশালী’ করাই হোক না কেন। এই নির্মম সত্যটা আমাদের মানতে হবে। সাদামাটাভাবে বললে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে তিনটা শর্ত পূরন করতে হবে: ১. আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, ২. প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা, আর ৩. রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে গণতান্ত্রিক সঙস্কৃতির চর্চা। যদিও এগুলো কোন স্থির-নির্দিষ্ট বস্তু নয়, সতত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনটা মানুষের সংগ্রামের ভেতর দিয়েই রচিত। অনায্য আইন আমরা মানতে চাই না, আমরা চাই প্রতিষ্ঠানগুলি শক্ত হাতে আইন বাস্তবায়ন করুক আর রাজনৈতিক দলগুলি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা করুক। আমার কাছে এগুলোই হলো জনগণ বা নাগরিকদের ‘এজেন্ডা’। এই এজন্ডাগুলো নিয়ে লড়াইয়ে শক্তিসমাবেশ ঘটানো যাচ্ছে না, বা আমরা পেরে উঠছি না। এটাও কিন্তু নির্মম সত্য। রাষ্ট্র ও সমাজের যে প্রগতিশীল রুপান্তরের সম্ভাবনা সেটাও এই লড়াইয়ের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, কোনভাবেই তত্ত্বাবধথায়ক সরকারের দাবির সাথে নয়।





তাহলে এই ইস্যু নিয়ে ব্যাপক সংঘাতের কারণ কী? এর কারণ মুলত দুটো। প্রথমত আমলাতন্ত্র, প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনী ক্ষমতা পরিবর্তনে সরাসরি ভুমিকা রাখতে চায়। আর দ্বিতীয়ত ক্ষমতায় যাবার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগনের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের প্রগতিশীল রুপান্তরের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, জনগনের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিয়ে সেই সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দেয়া। তার ফলে ফুটন্ত কড়াই আর জ্বলন্ত উনুনের মধ্যে জনগন যে কোন একটাকে বেছে নিতে বাধ্য হয়। সব ব্যর্থতার দায় নিয়ে পরাজিত দল অন্তরালে যায় কিছুদিনের জন্য রাষ্ট্রের সব নিপীড়ক কাঠামো অক্ষুন্ন থাকে। পাত্র পাত্রী কিছু বদল হয় মঞ্চায়িত হয় সেই একই নাটক যে নাটকে সবচেয়ে অবহেলিত চরিত্র হয় জনগন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:১০

সোহাগ সকাল বলেছেন: এই দুই দলের যে কবে মৃত্যু ঘটবে! আমরা কবে যে এদের হাত থেকে মুক্ত হবো!

০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫২

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ সোহাগ সকাল

২| ০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:১৩

মাহাবুব১৯৭৪ বলেছেন: চরম সত্য কথা। দেশ কারোর প্রয়োজন নাই। প্রয়োজন ক্ষমতা।

০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫২

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মাহাবুব১৯৭৪

৩| ০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:০৬

এস আর সজল বলেছেন: ভালো লাগলো দাদা। এই ঘুণে ধরা পচা রাজনীতি থেকে পরিত্রান চাই।

০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৩৬

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: ধন্যবাদ এস আর সজল মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.