নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পিনাকীর ব্লগ

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য

পিনাকী ভট্টাচার্য

চিকিৎসক, লেখক। কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, আমাদের অর্থনীতি।

পিনাকী ভট্টাচার্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

SWOT (এস ডব্লিউ ও টি) অ্যানালাইসিসঃ কেন, কীভাবে?

২৪ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৮

কীভাবে সঠিক সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় সেটার জন্যই এস ডব্লিউ ও টি SWOT অ্যানালাইসিস করতে হয়। কোন অবস্থা, কোন পণ্য এমনকি কোন কৌশলের SWOT অ্যানালাইসিস করে সঠিক সমাধান বের করা সম্ভব। ১৯৬০ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্টাডি গ্রুপ ফরচুন ৫০০ কোম্পানির তথ্য নিয়ে গবেষণা করছিলেন। উনারা দেখলেন কোম্পানি যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলো সেটা থেকে বাস্তবায়নের বিচ্যুতি ৩৫%। এই বিচ্যুতি এজন্য হয়নি যে কোম্পানির কর্মীরা অদক্ষ ছিল, বরং যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিলো সেটা অস্পষ্ট ছিল। অনেক কর্মী এটাও বুঝতে পারেনি যে তাঁরা কী করছে, কেন করছে? এই গবেষণার ফলাফলের উপ ভিত্তি করেই SWOএস ডব্লিউ ও টিT অ্যানালাইসিসের এই মাট্রিক্স তৈরি করা হয়।







এখানে শক্তি আর দুর্বলতা মানে যেটাকে স্ট্রেংথ আর উইকনেস বলা হচ্ছে সেটা আভ্যন্তরীণ কারণ, এটা নিজের উপর নির্ভর করে। সাফল্য বা ব্যর্থতার জন্য এটাই ডিসাইসিভ বা নিয়ামক। এক্সটারনাল বা অপারচুনিটি এবং থ্রেট হচ্ছে বাহ্যিক শর্ত। এটার উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নাই। তাই স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল তৈরির সময় আভ্যন্তরীণ কারণ বা শক্তি বা দুর্বলতা কে ঘিরে কৌশল নিতে হয়।



মুলত কোন দুর্বলতাকে কাটানোর জন্যই কৌশল তৈরি করা হয়। যখন কৌশল বেছে নেয়া হয় তখন বাহ্যিক শর্ত এই কৌশলকে সহায়তা করছে কিনা সেটা দেখে নিতে হয়।



এই SWOT অ্যানালাইসিসের কাজটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ। শুধুমাত্র টেম্পলেট পূরণ করলেই এই কাজটা হয়না। এর প্রত্যেকটা অংশে নিয়ে গভীর চিন্তা আর সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে লিখতে হয়।



সুবিধার জন্য SWOএস ডব্লিউ ও টিT অ্যানালাইসিস তৈরির কয়েকটি টিপস দেয়া হোল।



শক্তি



আপনার কি কোন বিশেষ সুবিধা আছে? আপনি কোনটা ভালো করেন? আপনার এমন কোন বৈশিষ্ট্য আছে যা আপনার লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করতে পারে?



নিজের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এবং যেসমস্ত মানুষের সাথে কাজ করেন তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই শক্তির দিকগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এবং শক্তির দিক বলতে গিয়ে বিনয়ী হবার দরকার নাই, রিয়ালিস্টিক হোন। যদি এভাবে শক্তির দিকগুলো খুঁজে বের করতে সমস্যা হয় তবে আপনার চারিত্রিক গুণাবলী গুলোর একটা তালিকা করে ফেলুন। দেখবেন এর মধ্যেই আপনি আপনার শক্তির দিকগুলোর অনেক উপাদান খুঁজে পাবেন।



দুর্বলতা



আরো ভালো করা যেতে পারে কোন কোন জায়গায়? কোন কোন জিনিস অতিতে খারাপভাবে করা হয়েছে? কোন জিনিস গুলো এড়ানো দরকার?



এখানেও নানা বায়াসড বিশ্লেষণ চলে আসতে পারে। আপনি চিন্তা করুন কোন বিষয়টাকে অন্যরা আপনার দুর্বলতা হিসেবে মনে করে, যেটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন না? আপনার কম্পিটিটর রা কোন জিনিসটা আপনার চাইতে ভালো করে?



অপারচুনিটি



সাফল্যের ক্ষেত্রে আপনি কোন কোন শুভ সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন? কী কী বিষয় আপনার সাফল্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে?



ফার্মা সেক্টরে অপারচুনিটি হতে পারে কোন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়তে থাকলে, দেশে রাজনৈতিক সংঘাত সংঘর্ষ না থাকলে, কোন নতুন হাসপাতাল হলে। কোন বিশেষ কনফারেন্সে আপনার প্রোডাক্টের বিশেষ প্রেজেন্টেশন করার সুযোগ পেলে, এই মলিকুল নিয়ে বিশেষ স্টাডি রেজাল্ট প্রকাশিত হলে, কম্পিটিটর দের কোন নেগেটিভ স্টাডি প্রকাশিত হলে, কোন মলিকুল নিয়ে স্থানীয়ভাবে কোন স্টাডি শুরু হলে। (সাধারণত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছাত্ররা এই স্টাডি গুলো করে থাকে)



থ্রেট



কোন কোন বিষয় বা সাম্ভব্ব্য ঘটনা থাকতে পারে যা আপনার লক্ষ্যে পৌছাতে বাঁধা দিতে পারে? আপনি কী কী বাঁধার মুখোমুখি হন? আপনার কম্পিটিটর রা কী করে?



কোন টেকনোলোজি বা নতুন আবিষ্কার কি আপনার প্রোডাক্টের প্রয়োজন কমিয়ে দিতে পারে? ফার্মা সেক্টরে বলা যেতে পারে যে, বাংলাদেশে সংক্রামক রোগ কমছে, এটা যেমন দেশের জন্য ভালো কথা কিন্তু যারা আন্টিবায়োটিক যারা বিক্রি করে তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ।







স্ট্র্যাটেজি তাহলে কী হবে? সেটাই সবচেয়ে ভালো স্ট্র্যাটেজি হবে যেটা দুর্বলতাকে শক্তিতে রুপান্তরিত করবে, থ্রেটকে অপারচুনিটিতে রুপান্তরিত করবে আর শক্তি অপাচুনিটির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করবে। তবে যেহেতু থ্রেট একটা এক্সটারনাল ফ্যাক্টর তাই থিওরিটিক্যালি এটা সম্ভব মনে হলেও প্রাক্টিক্যালি এটা সম্ভব হয় না। এই SWOTএস ডব্লিউ ও টি অ্যানালাইসিস থেকে একটা বা সর্বোচ্চ দুইটা স্ট্র্যাটেজিক গোল এক বছরের জন্য ঠিক করতে হয়।



একটা উদাহরণ দেইঃ ধরা যাক, একটা লজেন্স কোম্পানি ব্যবসা শুরু করেছে। তারা তাদের ব্যবসার শুরুতেই এই অ্যানালাইসিস করে ফেললো।



১। স্ট্রেংথ বা শক্তি বিচারের ক্ষেত্রে "সাধারণত" শুরুতেই দেখা হয়, কোন কাজটা একমাত্র তারাই পারে, যা অন্য কেউ পারে না। অতএব, তাদের শক্তিগুলো হতে পারে এমনঃ বাজারে তারাই একমাত্র ম্যাংগো ফ্লেভারের লজেন্স উৎপাদন করে, একমাত্র তারাই এক টাকা মূল্যের লজেন্স বাজারে সাপ্লাই করে, যেখানে বাকী কোম্পানি দুই টাকার লজেন্স বাজারজাত করছে - অর্থাৎ যেসব বিষয় তাদের ব্যবসাতে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারবে, সেগুলোর একটা তালিকা।



২। উইকনেস বা দুর্বলতা হতে পারে এমনঃ বাজারে যতটুকু চাহিদা, ততটুকু যোগান দেয়ার মতো উৎপাদন শক্তিওয়ালা মেশিনারি তাদের নাই। হতে পারে, তাদের পুঁজি প্রাথমিকভাবে কম। হতে পারে, এই ফ্লেভারের লজেন্স তৈরি করতে যে টেকনিশিয়ান লাগে, তাদের সংখ্যা অপ্রতুল। হতে পারে, তাদের লজেন্স বেশি তাপে গলে যায়।



৩। অপরচুনিটি বা সুযোগ হতে পারে এমনঃ বাচ্চারা অন্যান্য ফ্লেভারের চেয়ে ম্যাংগো ফ্লেভারে বেশি আগ্রহী হবে বলে তারা জরিপ করে দেখেছে, তাই ব্যবসার ভালো সুযোগ আছে। বাংলাদেশে এক টাকার কয়েনের অপ্রতুলতা একটা সুযোগ, যেখানে চান্স পেলেই ভাংতির বদলে লজেন্স দিয়ে দেয়া যাবে।



৪। থ্রেটকে আজকাল চ্যালেঞ্জ বলা হচ্ছে। থ্রেটের মধ্যে থাকতে পারে, আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে আরও কিছু কোম্পানি একই টেকনলজি নিয়ে একই ফ্লেভারের লজেন্স উৎপাদনে নামবে বলে তারা খবর পেয়েছে। তাই বাজারে তাদের প্রতিযোগী বেড়ে যাবে।



এখন ব্যবসার কর্ণধার হিসাবে আপনি সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেন। ম্যাংগো ফ্লেভারের ইনগ্রেডিয়েন্টস পেটেন্ট করে রাখতে পারেন। আপনার লজেন্স বেশি তাপে গলে যাচ্ছে, সেখানে এমন উপাদান যোগ করতে পারেন যাতে সেটা গলে না যায়।



এভাবেই সমস্যাগুলোর সমাধান করে এবং শক্তি ও সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে আপনার ব্যবসার সর্বোচ্চ লাভ ঘরে তোলা যেতে পারে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৪

খাটাস বলেছেন: অসাধারন ভাল কাজ ভায়া। অনেক কাজে লাগবে। প্লাস সহ বক্সে। ভাল থাকবেন ভায়া।

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: ধন্যবাদ খাটাস

২| ২৪ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:০৮

সিয়ন খান বলেছেন: কাজের পোষ্ট স্যার। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। পোষ্ট প্রিয়তে।

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: ধন্যবাদ সিয়ন খান

৩| ২৫ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৬

আজাইরা পেচাল বলেছেন: +++++

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: ধন্যবাদ আজাইরা পেচাল মন্তব্যের জন্য

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: ধন্যবাদ আজাইরা পেচাল মন্তব্যের জন্য

৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০৪

খাটাস বলেছেন: ভায়া আপনার পোস্ট টা আজ কে কাজে লাগছে। তাই আর একবার ধন্যবাদ জানাতে এলাম। সাথে আপনার কাছে অর্থনীতি নিয়ে কিছু ভাল বইয়ের নাম জানতে চাই।
ভাল থাকবেন ভায়া। অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.