![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিকিৎসক, লেখক। কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, আমাদের অর্থনীতি।
লাল মানইে সহজাত ভাবে আমরা মনে করি বিপদ, সবুজ মানে মনে করি নিরাপদ। ট্রাফিক সিগন্যালেও আমরা রঙ এর এই ক্রমিক ব্যবহার দিয়ে কিছু সাধারণ তথ্য সবাইকে দেবার চেস্ষ্টা করি। লাল মানে থামুন, সবুজ মানে যান। রঙ সর্ম্পকে এই ধারণার উৎপত্তি কোথায়? র্দাশনকি ক্লদ লেভি স্ট্রস রঙ এর ব্যবহারে আমাদরে মনস্তত্ত্বর বিশ্লেষণ করছেনে। আমরা ক্লদ লেভি স্ট্রস থেকেই এই চমকপ্রদ বিষয় নিয়ে বোঝার চষ্টো করবো।
বহির্বিশ্ব সম্পর্কে আমরা জ্ঞানলাভ করি আমাদের ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার কৌশলে। যে বস্তুু বা বিষয়কে আমরা উপলব্ধি করি সে উপলব্ধির রূপ নির্ধারিত হয় ঠিক যেমনটি আমাদের ইন্দ্রিয়-সংবাদকে সংহত করে এবং আমাদের চৈতন্যে প্রত্যয়ভূত করে, ঠিক তেমনিভাবেই বাইরের সত্তাকে আমরা অনুভব করি। অন্য কোন ভাবে নয়। এই অনুভবের একটি বিশেষ দিক হলো এই যে, দেশ-কালের যে সর্বব্যাপী সামগ্রিকতা রয়েছে, সেই সমগ্র নিখিলকে সম্পূর্ণভাবে আমরা অনুভব করি না।কারণ আমাদের ইন্দ্রিয় এবং মস্তিষ্কের জৈবিক গঠন সেভাবে আমাদেও অনুভব করতে দেয় না। আমরা আমাদের বাইরের জগৎকে ভেঙে ভেঙে গ্রহন করি। যেমন [পশু] [পাখী] [গ্রহ] [নদী] প্রভৃতি। কিন্তু পশু-পাখি-গ্রহ-নদী প্রকৃতির সামগ্রিকতারই একেকটি অংশ, তা আমরা সাধারণত টের পাই না। এর ফলে আমরা ভাবি যে, প্রকৃতি ও নিখিল আসলে ভিন্ন ভিন্ন সত্তায় বিভক্ত এবং আমাদেও নামকরণের বিন্যাসের মতোই পরস্পর থেকে আলাদা।
ঠিক তেমনিভাবেই আমরা যখন কোন কিছু নির্মাণ করি, আমাদের চৈতন্যের বিভক্তির জন্যই আমরা উপলব্ধ খন্ড চৈতন্যকে অনুকরণ করি। সে নির্মাণ যাই হোক না কেন, কৃত্রিম ব্যবহারিক সামগ্রী, অস্ত্র-শস্ত্র, পালা-পার্বণ, লোকশিল্প, ইতিহাস, সাহিত্য, এসবের মধ্যে সেই খন্ডতার চিহ্ন বিদ্যমান। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের খন্ড চৈতন্যের মতোই বিভক্ত এবং তেমনি নিয়মেই বিন্যস্ত ও ক্রমবদ্ধ।
আলোর বর্ণালী ধারাবাহিক ও অবিভক্ত। অর্থাৎ বেগুনী থেকে নীল সবুজ-হলুদ এবং লাল অবিভক্ত ধারাক্রমে সম্পূর্ণ। এই ধারাক্রমের নির্দিষ্ট কোনো পর্যায় নেই, যেখানে আমরা বলতে পারি ঠিক এ জায়গাটিতে সবুজ হলুদে পরিবর্তিত হচ্ছে। অথবা হলুদ লালে পরিণত হচ্ছে।
আমাদের চেতনায় আলোর এই বিভিন্ন বর্ণের চিহ্নিতকরণ এবং নামকরণ নির্ভর করছে প্রথমত বিকিরণের ওপর কিম্বা বলা যায় উজ্জ্বলতার ওপর, দ্বিতীয়ত, নির্ভর করছে আলো-তরঙ্গের দৈর্ঘ্যরে ওপর। লাল থেকে আমরা যখন বগেুনীর দিকে যাই তখন এই দৈর্ঘ্য হ্রাস পেতে থাকে। বিকিরণ বর্ণালীর দুই প্রান্তেই শূন্য এবং ঠিক মধ্যখানে সবচেয়ে বেশি। এই মধ্যাংশে হলুদের অবস্থান। এই বিকিরণের গাণিতিক তুল্য মূল্যের উদাহরণ নেয়া যাক। ছবি আঁকার তিনটি রঙ পান্না সবুজ , ক্রোম হলদে এবং ক্যাডমিয়াম লাল। এদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৫১২, ৫৮১ এবং ৬০০ মিলিমাইক্রন। এদের আনুপাতিক অনুক্রম হলো ২ ঃ ৩ ঃ ১। এ গাণিতিক তুল্যমূল্য থেকেই হলুদের বিকিরণের ঔজ্জ্বল্য সম্পর্কে ধারণা করা চলে।
মানুষের মস্তিষ্ক আলোর এই ধারাক্রমকে ভেঙ্গে খন্ড খন্ড ভাবে অনুভব করে। যেমন নীল সবুজ হলুদ লাল। এবং এমনভাবে এই খন্ডতা উপলব্ধ হয় যাতে আমরা স্পষ্টতই বিশ্বাস করি যে এরা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন রশ্মি। মস্তিষ্কের এই জৈব-মানসিক বিভক্তি এতো চৈতন্যগ্রাসী যে, কেউ যদি বর্ণান্ধ না হয় তাহলে তাকে অনায়াসেই বোঝানো সম্ভব যে, 'সবুজ' হচ্ছে লালের 'বিপরীত' রঙ, কিংবা 'অন্ধকার' হচ্ছে আলোর বিপরীত সত্তা। আসলে আমরা এভাবে বিপরীত খন্ডায়ন আমাদেও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলায় করেই আসছি।
এমনকি এমন ধারণা আমাদেও বদ্ধমূল যে, লাল ধনাত্মাক (+) দ্যুতি এবং সবুজ ঋণাত্মক (-) দ্যুতি জ্ঞাপন করে। এ ধরণের বৈপরীত্য লালের সঙ্গে অন্যান্য রঙেরও আমরা করি। লালের সঙ্গে সাদা, কালো, নীল, হলুদ প্রভৃতির বৈপরীত্য আমরা প্রকাশ করি। এমনিতরো বৈপরীত্যের সময় প্রায় সবসময়ই আমরা লালকে এর বিশিষ্ট অভিব্যক্তিতেই ব্যবহার করি। বিপদ সংকেত হিসেবে একে ব্যবহার করা হয়। যে কোন বিপদমূলক সাইনবোর্ড আমরা লালরঙে লিখি। স্ট্রেনে রাস্তায় সংকেত হিসেবে সেই একই কারণে আমরা লাল রঙ ব্যবহার করি। লালের বিপদমূলক অভিব্যক্তির আর একই সাযুজ্য হলো এই যে, রক্তের রঙও লাল। এবং লালের এই প্রাকৃতিক ও জৈবিক অধিষ্ঠান লাল রঙ সম্পর্কে আমাদেও চৈতন্যকে প্রভাবিত করেছে।
এখন ট্রাফিক আলোর কথা ধরা যাক। তা সে স্ট্রেনেই বা রাস্তাতেই হোক। সবুজ আলো আমরা যাওয়ার সংকেত হিসেবে এবং লাল আলো থামার সংকেত হিসেবে ব্যবহার করি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই দুই সংকেতই যথেষ্ট, তবে যদি আমরা মধ্যবর্তী কোনো সংকেত দেবার প্রয়োজন বোধ করি, যে সংকেত থামার উপক্রম বা যাওয়ার উপক্রম হিসেবে ব্রবহার করা যেতে পারে বা সাধারণভাবে যাকে আমরা বলতে পারি সাবধান সংকেত। সেক্ষেত্রে যে আলোটিকে আমরা বেছে নিই তা হচ্ছে হলুদ। সংকেতের ক্রমবিন্যাস স্ট্রাকচার তাহলে দাঁড়াচ্ছে এ রকম:
যাওয়া-সাবধান-থামা স্মরণীয় যে বর্ণালীর মূল ক্রমবিন্যাস হচ্ছে এ রকম:
লাল- হলুদ- সবুজ
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, বর্ণালীর স্ট্রাকচার এবং ট্রাফিক সংকেতের স্ট্রাকচার মূলত এক এবং অভিন্ন।
যাওয়া সাবধান থামা
- -
সবুজ হলুদ লাল
পুরো ব্যাপারটাকে পুনর্বিবেচনা করা যাক:
আলোর বর্ণালী প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক সত্তা, যা ধারাক্রমিক
মানুষের মস্তিষ্ক সেই ধারাক্রমকে খন্ড খন্ডভাবে চৈতন্যায়িত করে।
মানুষের মস্তিষ্ক দুটি বিপরীত চিন্ময় রাশিকে বাস্তবে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করে। ফলে এই দ্বৈত বৈপরীত্য অর্থাৎ ধনাত্মক (+) ও ঋণাত্মক (Ñ) সম্পর্কে
সবুজ ও লাল- এই দ্বৈততায় উপস্থাপিত করা হয়।
এই বৈপরীত্য প্রতিষ্ঠা করেও মানুষের মস্তিষ্ক সন্তুষ্ট নয়। ধারাক্রম থেকে বিচ্যুতি (উরংপড়হঃরহঁরঃু) সম্ভবত সে অসন্তুষ্টির কারণ। মানুষ অন্য একটি সম্পর্ক যোগ করতে চায়, যা ধনাত্মক নয় ঋণাত্মকও নয়। তখন মানুষ বর্ণালীর মূল ধারাক্রমিকতায় ফিরে যেতে চায় এবং হলুদকে বেছে নেয়, লাল আর সবুজের মাঝখানে ব্যবহার করতে।
ট্রাফিক আলোর সংকেতকে দুটো দিক থেকে বিশ্লেষিত করে অনুধাবন করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমত: এ একটি প্রাকৃতিক সত্য যে আলোর বর্ণালীতে রঙের ধারাক্রম হচ্ছে সবুজ-হলুদ-লাল। অন্য কোনো ধারাক্রম নয়। দ্বিতীয়ত, পালিয়লিথিক সময়কাল থেকেই মানুষের মনে রঙের লাল রঙটিরও একটি বিশেষ অভিজ্ঞান তৈরী হয়ে আছে। অন্তত লালের যে বিশেষ অভিব্যক্তি তার জন্য ' থামো-বিপদ' এমনি একটি প্রতিচিহ্ন হিসেবে লাল আলো ব্যবহার করার কথা মানুষের মনে আগে আসাটাই স্বাভাবিক; হলুদ বা সবুজ নয়।এতএব এক্ষেত্রে তিনটি আলোর যোগাযোগ আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল বলেই প্রমাণিত হয়-
[(যাওয়া) (সবুজ)] [(সাবধান)(হলুদ)] এবং [(থামা) (লাল)।] এই তিন সেট ট্রাফিক আলো এবং তাদের সংকেত ভাষ্যের ধারাক্রম এবং পরস্পরের মধ্যেকার যোগাযোগ প্রাকৃতিক ও জৈবিক নিয়মের অধীন। এই স্ট্রাকচার আমাদের চৈতন্যাশ্রিত অথচ বাস্তব।
(এটি কোন মৌলিক রচনা নয়, বন্ধু কৌশিক আহমেদের সাথে ফেসবুক আলোচনায় দীর্ঘ কমেন্ট এড়াতে এই ব্লগটি লেখা হয়েছে। লেখাটি ফরহাদ মজাহারের “ক্লদ লেভি স্ট্রস, স্ট্রাকচার প্রত্যাশী নৃতাত্ত্বিক কাব্য” প্রবন্ধ থেকে কিছু অংশ নিয়ে লিখিত)
২৬ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬
পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: কী উপকার হোল কৌশিক?
২| ২৬ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:১২
আগুনে পাখি বলেছেন: হুম ... ভালো লাগল
২৬ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬
পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: ধন্যবাদ আগুনে পাখি
৩| ১২ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৯
পাগলাগরু বলেছেন: বাল ছাল কি লিখছেন কিছুই তো বোজলাম না
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৪৯
কৌশিক বলেছেন: গ্রেট বস। এটা আমার দারুণ উপকার করলো।