নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পিনাকীর ব্লগ

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য

পিনাকী ভট্টাচার্য

চিকিৎসক, লেখক। কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, আমাদের অর্থনীতি।

পিনাকী ভট্টাচার্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রগতিশীলতা আর প্রতিক্রিয়াশীলতা ঃ ধর্মের সাথে প্রগতির বিরোধ কোথায় হয়?

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩৩

প্রগতির ধারণার জন্ম মানুষের ইতিহাসে এক নতুন ধারণার সংযোজন। প্রগতির ধারণা থেকেই আগামী দিন নিয়ে স্বপ্ন শুরু। প্রগতির সংজ্ঞা দিয়েছেন একজন দার্শনিক।



“মুলত প্রগতির ধারণা মনে করে যে বর্তমান অতীতের চেয়ে শ্রেয় এবং বিশ্বাস করে যে ভবিষ্যৎ আরো ভালো হতে পারে এবং হবে”।



প্রগতির এই ধারণার ব্যাপক প্রসার ঘটে সতের দশকে। ওই সময় ফ্রান্সে শুরু হয় প্রাচীন ও আধুনিকের লড়াই। চার্ল পেরো বিশ্বাস করতেন যে, প্রাচীন যুগ আধুনিক যুগের চাইতে শ্রেয়, অর্থাৎ যত সময় যাচ্ছে মানুষের অবস্থার তত অবনতি ঘটছে। প্রগতির পক্ষে বক্তব্য রাখেন বিখ্যাত ফরাসী লেখক বার্নাড দ্য ফতনেল। তাঁর মতে আধুনিক যুগে মানুষের পার্থিব ও মানসিক অগ্রগতি ঘটেছে। ইংল্যন্ডে এই বিতর্ক ব্যাটেল অব দ্য বুকস নামে পরিচিত ছিল।



প্রগতির ধারণা কারা জন্ম দিয়েছে এ সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। রবার্ট নিসবেট মনে করেন যে, সমাজবিজ্ঞানীরা প্রগতির ধারণার জনক। আবার ঐতিহাসিক কার্ল বেকার বিশ্বাস করেন যে, প্রগতির ধারনার উদ্ভাবক হোল ইউরোপের এনলাইটেনমেন্ট আন্দোলনের লেখকরা। তাঁরা কেউ দার্শনিক ছিলেননা; কিন্তু তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, আধুনিক কালে মানুষের ইতিহাসে নবযুগের সুচনা হয়েছে এবং মানুষের সভ্যতা উত্তরোত্তর প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। প্রথমদিকে অনেক সমাজবিজ্ঞানী এ মতবাদের বিরোধিতা করেছেন, তবে পরবর্তীকালে সমাজবিজ্ঞানীরাই প্রগতির সবচেয়ে বড় প্রবক্তা হয়ে দাঁড়ান।



সতের দশকে প্রগতির ধারণাকে উজ্জীবিত করেছে আধুনিক বিজ্ঞানের জয়জাত্রা। বিজ্ঞানের জয়জাত্রার সাথে সাথে শিল্পবিপ্লব-উত্তর-ইউরোপে অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রগতির ধারণাকে আরো জনপ্রিয় করে তোলে।



প্রগতির উল্টোটা প্রতিক্রিয়া। প্রতিক্রিয়া সেই দর্শন বা মতবাদ যা মনে করে মানুষের ইতিহাস ক্রমাবনতিশিল। মানুষ এবং সভ্যতা ক্রমেই অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ধর্ম আর ধর্ম দর্শনে এই প্রতিক্রিয়া গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে আছে।



ধর্মমত সমুহের মধ্যে মানুষের মুক্তির পথ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও একটা বিষয় নিয়ে আছে অদ্ভুত মিল, সেটা হচ্ছে মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে। সব ধর্মই বিশ্বাস করে মানুষের ইতিহাসে ক্রমাবনতি হচ্ছে। সেমেটিক তিনটি ধর্মই বিশ্বাস করে, জে আদমের স্বর্গ থেকে নির্বাসন থেকে শুরু করে মানুষের ইতিহাসের ক্রমেই অবনতি ঘটছে। কখনো কখনো ইতিহাসে স্বর্ণ যুগ দেখা দিলেও তা হবে অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। অবক্ষয় ও অবনতির মধ্যে দিয়েই মানুষের ইতিহাস শেষ হয়ে হবে কেয়ামত। এবং কেয়ামতের আগে মানুষ তার অবক্ষয়ের শেষ সীমায় পৌঁছাবে। হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, সকল মৃত্যুপ্রাপ্ত ব্যক্তি ৪টি সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়। এই চক্র পুর্ণ হয় যখন এক কল্প শেষ হয়। এক কল্প ১০,০০০ ঐশ্বরিক বৎসর অথবা ১০,০০০,০০০ বছর। এটাকে চার ভাগ করে তৈরি হয়েছে চারটি যুগ। এই চার যুগের নাম, সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ এবং কলি যুগ। সত্য যুগ চলেছে ৪০০০ ঐশ্বরিক বছর ধরে। তারপরে ত্রেতা ৩০০০ ঐশ্বরিক বৎসর। দ্বাপর চলে ২০০০ ঐশ্বরিক বৎসর এবং কলি চলবে ১০০০ ঐশ্বরিক বৎসর ধরে। প্রথম তিনটি চলে গিয়েছে। এই চার ভাগে দেখা গিয়েছে কিভাবে মানুষের পরিবর্তন হয়েছে। তাদের নিজেদেরকে ভুলে গিয়ে তারা পাপের দিকে ধাবিত হয়েছে। তারা বিশ্বাস করে সত্য যুগে পুর্ণ সত্য ছিলো। ত্রেতাতে ১/৪ হারিয়েছে। তারপর দ্বাপরে ১/২ হারিয়েছে এবং কলিতে ১/৪ বাকি আছে। পাপ দিয়ে পুর্ণ করা হবে এই যুগে। হিন্দুদের মত গ্রীক দার্শনিক রাও বিশ্বাস করতেন যে মানুষের ইতিহাসের উন্নতি হচ্ছে না। বৌদ্ধ ধর্ম মতে জীবন দুঃখপূর্ণ। দুঃখের হাত থেকে কারও নিস্তার নেই। জন্ম, জরা, রোগ, মৃত্যু সবই দুঃখজনক। মানুষের কামনা-বাসনা সবই দুঃখের মূল। মাঝে মাঝে যে সুখ আসে তাও দুঃখ মিশ্রিত এবং অস্থায়ী। অবিমিশ্র সুখ বলে কিছু নেই। নিবার্ণ লাভে এই দুঃখের অবসান ঘটে। কামনা-বাসনার নিস্তারের মাঝে অজ্ঞানের অবসান ঘটে। এতেই পূর্ণ শান্তি অর্জিত হয়।



তাই ধর্ম মতে যে দিনটা অতিক্রান্ত হোল সেই দিনটি অনাগত দিনের চাইতে ভালো ছিল। “যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ”। অথবা “আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম”। পশ্চাতে যাওয়াটা একজন ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য আদর্শ, একান্ত কাম্য, কারণ পশ্চাতেই সে ফেলে এসেছে আলোকিত সময়, শুদ্ধ সময়, পবিত্র সময়। যত পিছনে তত আলোকিত সময়। ধর্ম সেকারণেই মানুষকে অতীত মুখিন করে আর প্রগতি আমাদের ভবিষ্যৎ মুখিন করে। ধর্মের মর্মার্থকে আত্তস্থ করলে প্রগতির পক্ষে থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠে। এখানেই প্রগতির ধারণার সাথে ধর্মের বিরোধ উপস্থিত হয়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:১৩

মিনেসোটা বলেছেন:
গরু খাওয়া প্রগতিশীলতা, মানুষ খাওয়াটা প্রতিক্রিয়াশীলতা

বাকিটা বুঝে নেন

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:৫৯

সরলপাঠ বলেছেন: "পশ্চাতে যাওয়াটা একজন ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য আদর্শ, একান্ত কাম্য, কারণ পশ্চাতেই সে ফেলে এসেছে আলোকিত সময়, শুদ্ধ সময়, পবিত্র সময়" - এ তথ্যটি সকল ধর্মের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য নয়।

ধর্ম সর্ম্পকে লিখতে হলে এ বিষয়ে কিছু মিথের উপর নির্ভর না করে বা সরলী করণ না করে বিস্তারিত লিখা উচিত। ধর্ম সম্পর্কে সব কিছুতেই যদি আমরা ইউরুপকে উদাহরণ হিসাবে নেই তাহলে আমাদের ভুল ভাংবে না।

ধর্ম মানুষকে নৈতিকতার মানদন্ড শিক্ষা দেয়, দেয় আরও অনেক কিছু। আমি বাইবেল আর কোরআন পড়েছি। আমার মনে হয়েছে ২ টি ধর্মই ভবিষ্যতের কথা বলেছে অতীতকে উদাহরণ হিসাবে নিয়েছে মাত্র।

আমি যতটুকু বুঝেছি - ধর্মের সাথে প্রগতির কোন বিরোধ নেই। বরং প্রগতির সাথে ধর্মের সংশ্লেষন উন্নয়নকে সঠিক পথ দেখায়।

ধর্মের অপব্যবহার কে ধর্ম বলে চিন্হিত করা উচিত নয়।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৫

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ সরল পাঠ। তবে ধর্মের সাথে যে প্রগতির বিরোধ নাই সেটা তো আপনাকে প্রমাণ করে দিতে হবে। ধর্মের দর্শনের সাথে প্রগতির দর্শনের তুলনা করে। সেটার অপেক্ষায় থাকলাম।

৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৬

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: “আমি যতটুকু বুঝেছি - ধর্মের সাথে প্রগতির কোন বিরোধ নেই। বরং প্রগতির সাথে ধর্মের সংশ্লেষন উন্নয়নকে সঠিক পথ দেখায়। ... ধর্মের অপব্যবহার কে ধর্ম বলে চিহ্নিত করা উচিত নয়।”

সরল পাঠ, আপনি চমৎকার বললেন :)
আপনার উপর্যুক্ত কথায় জানাচ্ছি পাঁচতারকা সম্মতি *****

৪| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৯

ব্রাত্য বালক বলেছেন: লেখার সাথে একমত।

তারপরেও কিছু কথা থাকে। ধর্মগ্রন্থগুলো পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন কথাবার্তা দিয়ে ভর্তি। এখান থেকে আংশিক নিলে ধর্মকে প্রগতিশীল দাবি করা যেতে পারে। গীতার সারমর্মঃ "যা হয়েছিলো, ভালো হয়েছিলো। যা হচ্ছে, ভালো হচ্ছে। যা হবে, ভালোই হবে।" - এটুকু যদি গ্রহণ করা যায়, তাহলে প্রগতির সাথে ডায়রেক্ট কোনো বিরোধ কিন্তু পাওয়া যাবে না।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন: গীতার কোন সারমর্ম হয়না। এই সারমর্মটা বানানো হয়েছে।

৫| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪১

সিস্টেম অ্যাডমিন বলেছেন: বেদান্তবাদীরা বলেন যে চারটি যুগের আসলেই কোন অস্তিত্ব ছিল না । সর্বশেষ যুগ "কলি" অর্থাৎ অন্ধকার বলতে তাঁরা মানুষের মনের অজ্ঞানতার আধার কেই বুঝিয়েছেন । মানুষের মনপ্রকৃতির বিভিন্ন অবস্থাকে তাঁরা এই সকল যুগ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।


গীতায় ব্যাসদেব কেবল মাত্র তাঁর সাকার রূপ এর প্রকাশ ঘটিয়েছেন , প্রকৃত অর্থে গীতার সারমর্ম হল ত্যাগ । গীতা গীতা গীতা পুনঃ পুনঃ উচ্চারণ করলে 'তাগী' বা ত্যাগ ই প্রকট হয় , এটিই এর প্রকৃতমর্ম বলে তাঁরা বর্ণনা করেছেন ।

৬| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮

সরলপাঠ বলেছেন: ধন্যবাদ ডাঃ পিনাকী। আশা করছি এ বিষয়ে লিখব। তবে এ মুহুর্তে খুবই ব্যস্ত। একটি সায়েন্টিফিক ডিসকোরস লিখার মত সময় আগামী ২ মাসের মধ্যে হাতে নেই, তবে চেষ্টা করব যুক্তি চালিয়ে যাওয়ার মত করে এ মাসের মধ্যেই লিখতে।

প্রগতি আর ধর্ম সম্পর্কে লিখতে সবার আগে প্রগতির গ্রহনযোগ্য সংগা বা ধারণা সম্পর্কে আমাদের একমত হতে হবে।

আমি যদিও জাকের নায়েকের অনুসরণকারী বা ভক্ত কিছুই নই, তবে একজন তার একটি ভিডিও আমার ফেইস বুকে শেয়ার করেছে, এতে হয়ত আলোচনার কিছু উপাদান আছে। তবে যে এটা শেয়ার করেছে তার আদর্শ বা মতামতের সাথে আমার চিন্তার মিল নেই। সময় পেলে ভিডিওটি দেখতে পারেনঃ http://www.youtube.com/watch?v=B9Zy20uPm_4

ভিডিওটি আপনার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট নয়। তারপরও শেয়ার করলাম, হয়ত এর থেকে কিছু আলোচনার উপাদান থাকতে পারে এই জন্যে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.