![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিকিৎসক, লেখক। কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, আমাদের অর্থনীতি।
নিউইয়র্কের কুইন্স। ১৯৬৪ সালের রাতের কথা।
কিটি জেনেভি নামের এক মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা বাড়িতে ফিরছেন। রাত খুব গভীর নয়। এখনও চারপাশের এ্যাপার্টমেন্টগুলোর আলো নিভেনি। রাস্তাও নিরব জনশূন্য নয়। হঠাৎ ঘটলো এক মর্মান্তিক ঘটনা। হৃদয়বিদারক আর বিভৎস। কয়েকজন দুর্বৃত্ত ঝাঁপিয়ে পড়লো কিটির উপর। উপর্যুপরী ছুরিকাঘাতে মহিলাকে রক্তাক্ত করে তুলল। বেচারা কিটি চিৎকার করলেন। আকুতি করলেন তাকে বাঁচানোর জন্য। দুর্বৃত্তরা পিছু হটলো। কিন্তু বাঁচাতে কেউ এলো না। আবারো এগিয়ে এলো দুর্বৃত্তরা এবং এবার মৃত্যু নিশ্চিত করে নিশ্চিন্ত মনে সরে পড়লো।
চারপাশের সারি সারি এ্যাপার্টমেন্টের জানালায় দাড়িয়ে কয়েকশ’ লোক এই নির্মম হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করলো। কিন্তু কিটির আর্তচিৎকারে কেউ সাড়া দিয়ে এগিয়ে এল না। এগিয়ে এল না পথচারীরাও। প্রায় আধঘন্টা ধরে খুনীরা হত্যালীলা চালাল অথচ কেউ টেলিফোনেও কাছের পুলিশ স্টেশনে জানাল না।
পরদিন সমস্ত পত্রিকায় এই ভয়াবহ খবর ছাপা হল। আহত হল আমেরিকান মূল্যবোধ। প্রশ্ন উঠলো- আমরা কি সত্যিই এক স্বার্থপর ভিরু সমাজ তৈরী করছি। ঢাকা শহরেও এই দৃশ্য বা চিত্র বিরল নয়। প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাই, হত্যা এবং অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়া অহরহই ঘটতে দেখা যায়। অবশ্য এতে আমেরিকানদের মতো আমাদের ইগো আহত হয়না। আমাদের চামড়া আমেরিকানদের মতো পাতলা নয়।
জন ডারলী এবং বিল ল্যাটেন নামে দু’জন সামাজিক মনোবিজ্ঞানী এর কারণ খুঁজতে চেষ্টা করলেন। কিটির হত্যাদৃশ্য যারা প্রত্যক্ষ করেছেন সবাইকে প্রশ্ন করলেন। বুঝতে চাইলেন কেন তারা সাহায্য করতে এগুলো না। যেখানে কয়েকশ লোক মাত্র কয়েকজন দুর্বৃত্তকে মোকাবেলা করতে যথেষ্ট। সবাই আশ্চর্যজনকভাবে একই উত্তর দিল।
-ভেবেছিলাম অন্যরা সাহায্য করবে।
কারও কারও উত্তর আরো চমৎকার
-আমি ভেবেছিলাম সিনেমার শুটিং হচ্ছে। তাছাড়া এত লোক দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখবে কেন?
এই উত্তর গুলো ডারলী এবং ল্যাটেন কে সন্তুষ্ট করলো না। তবে তাঁরা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একটা হাইপোথেসিসে বা অনুসিদ্ধান্তে পৌছুলেন। সেটা হচ্ছে “কোন দুর্ঘটনার সময়ে যদি দর্শকের পরিমান বেশী হয় তবে কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে না।“ দর্শকের সংখ্যা যত বেশী হবে সাহায্য না করার প্রবনতা তত বাড়বে, দায়িত্ব ভাগ হয়ে এক ধরনের নির্লিপ্ততার বোধ তৈরী হবে। সে কারনেই ঘন বসতিপূর্ন এলাকায় অপরাধীরা সহজেই পালিয়ে যেতে পারে।
আমাদের গ্রামগুলোর কথা চিন্তা করে দেখুন। চারদিকে ধুধু ফাঁকা মাঠ, ছরিয়ে ছিটিয়ে কয়েকটা কুঁড়ে ঘরে ক’জনই বা মানুষ। কিন্তু অপরাধ করে পালিয়ে আসা মুশকিল। পড়শির বিপদে হারে রে রে বলে লাঠি–সড়কি-বল্লম নিয়ে ছুটে আসবে কয়েকশ মানুষ। এই সরল নির্বিবাদী মানুষগুলো রুখে দেবে দুর্বৃত্তদের। এই আলোচনার শিক্ষাটি এই। যদি কোন দুর্ঘটনার সামনে পড়ে যান তবে হয় আক্রান্তদের সাহায্যের চেষ্টা করুন অথবা দ্রুত দৃশ্যপট ত্যাগ করুন। নয়তো এই নিষ্ফল নির্লিপ্ততা অন্য সবাইকে প্রভাবিত করবে।
মানুষ বড় বিচিত্র। মন্দ জিনিষ প্রানীটিকে নিয়তই প্রলুব্ধ করে।
২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬
অচেনামন বলেছেন: ভালই বলেছেন দাদা।তবে ধীরে ধীরে আমরা প্রচন্ড স্বার্থপরও হয়ে যাচ্ছি
৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৯
অর্বাচীন উজবুক বলেছেন: স্যার, আপনার লেখাটা খুবই যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে। কিন্তু আপনার কাছে একটি জিনিস জানতে চাইছি। আমাদের ঢাকা শহরের মত জনবহুল এ এলাকায় তাহলে কি এই চিত্রপট চলতেই থাকবে? আপনি যেহেতু অনেক পড়ালেখা করে লেখাটি লিখেছেন, একটা সমাধানের পথ কি চিন্তা করে বলতে পারেন অনুগ্রহ করে?
৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
//প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাই, হত্যা এবং অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়া অহরহই ঘটতে দেখা যায়। অবশ্য এতে আমেরিকানদের মতো আমাদের ইগো আহত হয়না। আমাদের চামড়া আমেরিকানদের মতো পাতলা নয়।//
-সত্যিই তাই। মৃত্যুর পর বিচারের দাবিতে গণঅনশন করবো, নিজেরাও মৃত্যুর পথে যাবো, তবু ঘটনার সময় সামনে যাবার মনোবল আমাদের নেই।
৫| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৪৪
রাইয়ান৪৯ বলেছেন: মানুষ বড় বিচিত্র। মন্দ জিনিষ প্রানীটিকে নিয়তই প্রলুব্ধ করে।
৬| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:০১
আত্মমগ্ন আিম বলেছেন: Herd Immunity
এর মানে, একটা কমিউনিটি থেকে একটি রোগকে নির্মূল করার জন্য সেই কমিউনিটির সর্বাধিক সংখ্যক মানুষকে রোগটির বিরুদ্ধে ভ্যাক্সিনেটেড করা।
কারন ধরে ধরে সবাইকে ভ্যাক্সিনেটেড করা প্রায় অসম্ভব একটা কাজ।
এভাবেই পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়েছে গুটি বসন্ত।বাংলাদেশ হয়েছে পোলিওমুক্ত।
সামাজিক রোগগুলো নির্মূল করার জন্যও এখন এই থিওরি অ্যাপ্লাই করা লাগবে।
দেশের সব মানুষ অসত না, দুর্নীতিবাজ না।
সব মানুষ ধর্মান্ধ না, উগ্রবাদী না, জংগী না।
কিন্তু বাকি মানুষগুলোর সমস্যা হচ্ছে তারা এই খারাপ জিনিসগুলার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াচ্ছে না।
গুটিকয়েক রুখে দাঁড়ানোর চেস্টা করলেই বদগুলা চড়াও হয়। তাই শেষ পর্যন্ত সমাজটাও আর বদলায় না।
যে মানুষগুলো অন্যায়কে মনে মনে ঘৃনা করে, তাদেরকে একত্রিত করতে হবে, একটিভ করতে হবে।
যে যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।
আপনি পরিবর্তন চান, কাজ শুরু করুন।
হৃদয়ে এই দৃঢ় বিশ্বাস রাখুন, এই দেশের কোন না কোন শহর বা গ্রামে আপনারই মত আরো অসংখ্য আশাবাদী মানুষ রয়েছে।দেশের বাইরেও আছে।
নিজেকে তুচ্ছ ভাববেন না।আপনার ভেতরেই হয়ত লুকিয়ে আছে সম্ভাবনা।
তবে সাবধান, ধরাকে সরা জ্ঞান করবেন না।
আপনি উঠে দাড়ান সাহস করে, আরো দশজন উঠে দাঁড়ানোর সাহস করবে ইনশাআল্লাহ।
আমরা সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারব।
৭| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:০৪
ইমরান আশফাক বলেছেন: কোন দুর্ঘটনার সময়ে যদি দর্শকের পরিমান বেশী হয় তবে কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে না।“ দর্শকের সংখ্যা যত বেশী হবে সাহায্য না করার প্রবনতা তত বাড়বে, দায়িত্ব ভাগ হয়ে এক ধরনের নির্লিপ্ততার বোধ তৈরী হবে। সে কারনেই ঘন বসতিপূর্ন এলাকায় অপরাধীরা সহজেই পালিয়ে যেতে পারে।
আমার ধারনা ঘটনার সময় এটই হয়েছিলো, আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৬
ঢাকাবাসী বলেছেন: দারুণ বিশ্লেষন তো! আসলে পৃথিবীর নিকৃস্ট জাতির একটা হলাম আমরা।