একটি আর্তনাদ ও টায়ার পোড়া গন্ধ

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:১১

রাত সাড়ে এগারটা । জনশূন্য ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তায় কালে ভদ্রে দু'একটা মটর সাইকেল আর অটো-রিকশা চোখে পড়ছে। ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের ৪ গিয়ার উঠিয়ে ঘন্টায় ৮০ মাইল বেগে ছুটে চলেছে রফিকের বাইক । এই গতিতে চলতে থাকলে মিনিট দশেকের মধ্যেই কদমতলীর বাজার চোখে পড়বে, সেখান থেকে দক্ষিণের রাস্তা ধরে দু'মিনিট গেলেই ওদের বাড়ি । বাড়ি পৌছেই খেয়ে-দেয়ে বিছানায় গা' এলিয়ে দিবে, মনে মনে ভাবে রফিক । প্রচন্ড পরিশ্রম গেছে সারাটা দিন । মনে হচ্ছে কেউ যেন মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে । চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে থেকে থেকে । কেমন একটা ঘোর লাগা ভাব !

মাথাটা ঝাকুনি দিয়ে বাইক চালানোয় মন দেয় রফিক । আর ঠিক তখনি, সামনের রাস্তায় আলোর ঝলকের মত সাদা জিনিসটাকে দেখতে পায় ও । সহজাত রিফ্লেক্সের বসে নিজের অজান্তেই তিনটে কাজ করে ফেলে ওর শরীর । সজোরে চেপে ধরে হাত পায়ের দুটি ব্রেক, শরীর বাকিঁয়ে বাইকের গতিপথ সামান্য বা'দিকে করে ফেলে আর রক্তহিম করা একটা চিত্‍কার বের হয়ে আসে মুখ দিয়ে । কিন্তু কোন কিছুতেই শেষ রক্ষা হয় না, মাংসল কিছুর সাথে শক্ত বাইকের সংঘর্ষে থ্যাপ করে একটা শব্দ হয় । আর মিলি সেকেন্ডের জন্য কানে আসে 'ক্যাঁউঁঊঁ ' একটা আর্তনাদ । স্লিপ কেটে পিছলে যায় সামনের চাকা । তারপর যেন কোন অদৃশ্য শক্তির টানে মাঝ রাস্তা থেকে মটরবাইক সমেত রফিক ছেঁচড়ে গিয়ে ধাক্কা খায় রাস্তার পাশের একটা ইউক্যালিপটাস্ গাছের সাথে । সেখান থেকে নিচের ভুট্টা ক্ষেতে ।

ব্যাথায় কুকড়ে আসছে রফিকের সারা শরীর । বা'পায়ের হাটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত অসম্ভব জ্বলছে । রক্তে ভিজে লেপ্টে গেছে প্যান্ট । ডান হাতের কুনুই এর কাছে চামড়া ভেদ করে বের হয়ে আছে হাড় । ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝড়ছে ছেঁড়া ধমনী থেকে । অবশ হয়ে আসছে সারা শরীর । বাচাঁও বলে সজোরে চিত্‍কারের চেষ্টা করল কয়েকবার, কিন্তু গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হল না ।



বাতাসে তখনো টায়ার পোড়ার তীব্র গন্ধ ।

০ টি +০/-০