![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়াই আমার চেষ্টা
আদিম মানুষ যা খেত তার মধ্যে যে পরিমাণ সোডিয়াম থাকত তাতেই তার প্রয়োজন মিটে যেত; পট্যাশিয়াম অনেক সময় বেশি হয়ে যেত, কারণ ফলপাকড় আর শাকসবজিতে প্রচুর পট্যাশিয়াম থাকে। এখন, শরীরে সোডিয়াম আর পট্যাশিয়ামের মধ্যে সমতা রাখতে হলে যেটুকু সোডিয়াম পাওয়া গেছে তা ধরে রাখতে হবে আর বাড়তি পট্যাশিয়াম বার করে দিতে হবে। দেহের মধ্যে আপনা থেকে সেই ব্যবস্থাই হল- দেহের দুটি কিডনি আর সেই কিডনি দুটিকে চালায় যেসব রাসায়নিক তারা সোডিয়াম ধরে রাখতে আর বাড়তি পট্যাশিয়াম বার করে দিতে শিখল। তার পরে আর সমস্যা রইল না। কিন্তু আজ আমরা যা খাই, মনুষ্যদেহ তার জন্য তৈরি হয় নি। আদিম মানুষের খাদ্য যা ছিল তার জন্য তার দেহযন্ত্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আদিম মানুষের দেহযন্ত্রই আমাদের শরীরে বহাল আছে অথচ খাদ্যের ধারা পাল্টে গেছে। সুতরাং দেহযন্ত্রে যে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে।
আমাদের শরীরে সিফাম সংলগ্ন যে অ্যাপেনডিক্সটি আছে তা শুধু ব্যথা হলে কেটে ফেলার জন্য নয়। এটা হলো অব্যবহৃত লুপ্তপ্রায় অঙ্গ যা এককালে ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। যে সেলুলোজ আমরা হজম করতে পারি না, গরু, ঘোড়া তা অনায়াসে হজম করে। আমাদের পূর্বপুরুষরা যখন সেলুলোজ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতেন, তখন বিভিন্ন ব্যাকটিরিয়ার মাধ্যমে অ্যাপেনডিক্সে এই সেলুলোজ হজম হতো। যখন মানুষ ধীরে ধীরে আমিষ খাবারের দিকে মন ফেরালো এবং শাক সব্জি খাওয়া কমিয়ে দিল, তখন ধীরে ধীরে সিফাম এবং অ্যাপেনডিক্স কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং পৌষ্টিক নালীতে ভেস্টিজিয়াল অঙ্গ হিসেবে থেকে গেছে।
মানুষের দেহযন্ত্র যে খাদ্যের জন্য তৈরি, আজ আমরা ঠিক তার বিপরীত খাদ্য খাই। আজ আমরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি সোডিয়াম খাই, পট্যাশিয়াম খাই অনেক কম। তার ফল দাঁড়ায়, বডি ফ্লুইড অর্থাৎ দেহের তরল পদার্থের মধ্যে বাড়তি সোডিয়াম সঞ্চিত হয়- এবং তা হয় দেহের অনেকখানি জল টেনে নিয়ে। ফলে, ধমনীতে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাতে রক্তের চাপ আর হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনের হার বাড়ে।
এখন এই অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে তা অনেকখানি নির্ভর করে হেরেডিটি বা বংশগতির ওপর। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গোটা পৃথিবীর শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ মতো মানুষের দেহে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত একটা জেনেটিক সাসেপ্টেবিলিটি থাকে অর্থাৎ অতিরিক্ত সোডিয়ামের দরুন শরীরে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তারা তাদের জিনের মধ্যে সেই প্রতিক্রিয়ার বীজ নিয়েই জন্মায়। পরে যখন অধিক লবণযুক্ত খাদ্য খায় তখন হাই ব্লাড প্রেশারের কবলে পড়ে। কে সহজে অতিরিক্ত সোডিয়ামের কুফলের কবলে পড়বে আর কে পড়বে না, আগে থেকে বলার উপায় নেই।
আসলে লবণের প্রতি আমাদের যে রুচি, সে জন্মগত বা স্বভাবগত নয়, স্বোপার্জিত। অর্থাৎ, এই রুচি আমরা আমাদেরই ইচ্ছানুসারে তৈরি করি। সাধারণত শিশুবয়সেই লবণের প্রতি আমাদের রুচি তৈরি হয়ে যায়, কতখানি লবণে কীরকম স্বাদ তা আমরা শিশু বয়সেই ঠিক করে ফেলি। কারও জিভে কম লবণ ভালো লাগে, কারো জিভে বেশি লবণ ভালো লাগে- এবং ভালো লাগলেই আমরা ভালো লাগাই। শিশু বয়সে যদি কম লবণ খাওয়া অভ্যাস করা যায় তাহলে সেটাই তার সারা জীবন ভালো লাগবে। আমাদের দেহের প্রয়োজন মেটাবার জন্য আমাদের যতটুকু লবণের আবশ্যক, তা অতি সামান্য। গড়ে প্রত্যেকটি লোকের দৈনিক মাত্র দুই গ্র্যাম লবণ হলেই চলতে পারে (James S. Mc Lester, M.D.- Nutrition and Diet in Health and Disease, p.232, London, 1944)।
আমাদের দেহের চাহিদা মেটাবার জন্য প্রতিদিন মাত্র ২২০ মিলিগ্র্যাম সোডিয়াম হলেই হয়ে যায় অর্থাৎ এক গ্র্যামের ১,০০০ ভাগের ২২০ ভাগ। এই পরিমাণ সোডিয়ামের জন্য খাদ্যে লবণ মেশাবার দরকার হয় না, আমরা সাধারণত যে খাদ্য খেয়ে থাকি তাতেই স্বাভাবিকভাবে এই পরিমাণ সোডিয়াম পাওয়া যায়। খাদ্যে আমরা যে লবণ মেশাই সে স্বাদের জন্য।
এই স্বাদের ব্যাপারটাও অনেক সময় চোখের স্বাদ। চোখের খিদে বলে যেমন একটা কথা আছে তেমনি চোখের স্বাদও হতে পারে। পৃথিবীর বহু দেশে বহু লোকে রান্না খাবার মুখে তোলার আগেই তাতে আরো লবণ মেশায়। অস্ট্রেলিয়ায় একটা সমীক্ষা হয়েছিল, তাতে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই খাবার জিভে না ঠেকিয়েই লবণ মেশায়। আমাদের দেশে এইরকম কোন সমীক্ষা না হলেও আকছার এমন দেখা যায়।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এক একজন মানুষ রোজ ১০ থেকে ২৪ গ্র্যাম লবণ খায়, পৃথিবীর বহু দেশেই ৬ থেকে ১৮ গ্র্যাম খায়- যেখানে শরীরের ক্ষতি না করে খুব বেশি হলে ৫ গ্র্যাম খাওয়া যেতে পারে। চা-চামচের সমান সমান এক চামচ হলে প্রায় ৫ গ্র্যাম হয়। ৫ গ্র্যাম লবণ থেকে ২,০০০ মিলিগ্র্যাম সোডিয়াম পাওয়া যায়, আমাদের যা প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাদের হাই ব্লাড প্রেশার হবার সম্ভাবনা আছে তাদের ২ গ্র্যামেরও কম খাওয়া উচিত।
©somewhere in net ltd.