নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছিন্ন হয়েছে মোর নাড়ির বন্ধন

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মরানাপন্ন অবস্থায় টঙ্গী হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল এবং ঢাকা মেডিকেল থেকে হোলিফ্যামিলী হাসপাতলে পৌঁছেছি। এব্যাপারে যুগান্তর পত্রিকার টঙ্গীর রিপোর্টার আর আমার অফিসের লোকজনের সহায়াতার কথা কোনদিনই ভুলতে পারবো না। সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমার স্ত্রী ছোট বাচ্চটাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছে। রাতেই গাইবান্ধা থেকে আমার ছোট ভাই এসেছে। ছোট বোন এসেছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলেরা এসেছে। সুদুর গাইবান্ধা থেকে এত লোকজন ছুটে এলেও মাকে জানানো হয়নি। কারণ, মা ছেলে-মেয়েদের প্রতি খুবই দুর্বল। আমাদের সামান্য আহত অবস্থা দেখলেও কেঁদেকেটে একাকার করে ফেলেন। সেই মানুষ যদি আমার সড়ক দুর্ঘটনায় মরানাপন্ন অবস্থার কথা শুনতে পায়, তাহলে হার্টফেল করতে পারে। তাই আমার জ্ঞান ফেরার পর পরই সবাইকে অনুরোধ করে বলেছি, আমার দুর্ঘটনার কথা যেন মাকে না জানানো হয়।
কিন্তু বিধির সৃস্টি রহস্য বোঝা দায়। মায়ের নাড়ি-ছিঁড়ে জন্ম নেয়া সন্তানের খবর কেউ না দিলেও তার কলিজায় বিনা তারেই খবর হয়ে যায়। আমার মায়ের বেলাতেও এই নিয়মের ব্যাতিক্রম হয়নি। মা অস্থিরতায় ছটফট করতে থাকেন। এবাড়ি ওবাড়ি গিয়ে আমার খবর জিজ্ঞেস করেন। কেউ কোন উত্তর দিতে পারে না। উত্তর না দেয়ার কারণও ছিল, আমার সড়ক দুর্ঘটনার কথা আমার এলাকায় তখনও জানানো হয়নি। এ অবস্থায় মা তিনদিন অস্থিরতায় নাওয়া খাওয়া ভুলে যান। আমার খবর জানার জন্য পাড়ার সবাইকে জিজ্ঞেস করতে থাকেন। আমার ছোট ভাইটি মাকে কিছু না বলেই ঢাকায় চলে এসেছে। এতে মা আরো অস্থির হয়ে পড়েন। অবশেষে আমার ভাল-মন্দ কোন খবর না পেয়ে নিজেই রিক্সা ভাড়া করে একা একা আমার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে উঠেন। আমার স্ত্রীর বড় ভাবীকে আমার কোন দুর্ঘটনা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করেন। তিনি আমার খবর জানতেন। কিন্তু সরাসরি আমার দুর্ঘটনার খবর না বলে আদর আপ্যায়ন করে মাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আদর আপ্যায়ন ব্যার্থ হয়। মা তার প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য উদগ্রীব। মায়ের ঘনঘন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বড় ভাবী উল্টো মাকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনার মেজ ছেলে যে এক্সিডেন্ট করেছে এ খবর আপনি কোথায় পেলেন”? মা সহজ সরল ভাবেই জবাব দেন, “তিন দিন হলো আমার অস্থির লাগতেছে। কোন কিছুতেই ভাল লাগছে না। আমার মন বলতেছে আমার ছেলেটার কিছু একটা সমস্যা হয়েছে”। এ কথা শুনে আমার স্ত্রীর বড় ভাবী আশ্চার্য হয়ে যান। আমার মায়ের সন্দেহ যে সত্যি সত্যিই বাস্তব ঘটনা, এটা তিনি কিভাবে বুঝলেন! তিন দিন হলো তার মনে অস্থিরতা এবং আমার দুর্ঘটনাও তিনদিন হলো।
বড় ভাবী আমার মায়ের দুর্বলতা কিছুটা জানতেন, তাই তিনি সরাসরি আমার দুর্ঘটনার কথা না বলে বললেন, “আপনার মেঝ ছেলের সামান্য সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিল এখন ভাল হয়েছে”। এটুকু শুনেই মা কান্নাকাটি শুরু করে দেন এবং ভাবীকে বলেন, “আমার ছেলের সামান্য দুর্ঘটনা নয়, বড় কিছু হয়েছে। সামান্য দুর্ঘটনায় আমার মনে এমন অস্থিরতা হতো না”। ভাবী মাকে বুঝানোর চেষ্টা করেন। অনেক বুঝানোর পর মা শান্ত হলে তখন বাসায় এনে রেখে যান।
প্রায় আড়াই মাস হাসপাতালে চিকিৎসার পর, লোহালক্কড় লাগানো আধা ভাঙা দেহ নিয়ে বাসায় ফিরি। বাসায় ফিরে মায়ের এমন কাহিনী শুনে আমিও আশ্চার্য হয়ে যাই। এ যেন মায়ের নাড়ি-ছেঁড়া সন্তানের সংযোগ বিহীন সংযোগ। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই সন্তান থাকে না কেন, ইথারে সিগন্যাল পৌছার আগেই মায়ের কলিজায় খবর পৌছে যায়। হঠাৎ করেই আমার সেই সংযোগ বন্ধ হয়ে গেল। গত ৫ই অক্টোবর মা মারা গেছেন। সেই থেকে ছিন্ন হয়েছে মোর নাড়ির বন্ধন। এখন যত বিপদেই পড়ি না কেন, মা নেই আর কেউ আমার জন্য অস্থিরতায় ভুগবে না। যে মায়ের কলিজায় দুর্ঘটনার খবর পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই সন্তানের সুস্থ্যতা কামনা করে প্রার্থনা করতো, এখন আর কেউ সেই প্রার্থনা করবে না। কারণ আমার মায়ের কলিজায় আমার খবর যে ভাবে পৌছাতো, সেভাবে আর কারো কলিজায় পৌছাবে না। চিরতরে ছিন্ন হয়েছে মোর মায়ের সাথে নাড়ির বন্ধন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০১

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেলো।

আপনার মায়ের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে শুভ প্রার্থনা।

ভালো থাকবেন ভাই।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৩

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ অপূর্ণ রায়হান। শুভেচ্ছা রইল।

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৩

নির্বোধ পাঠক বলেছেন: জগতে মায়ের বিক্ল্প কিছু নেই ভাই।
যার মা নেই জগতে তার মত দূর্ভাগা আর কেউ নেই।
আপনার লেখা পড়ে মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল।
আপনার মায়ের পারলৌকিক শান্তি কামনা করি।
মন শান্ত করুন, ধৈর্য ধরুন - কারো মা-বাবাই চিরদিন বেঁচে থাকেন না
একদিন সবাইকেই যেতে হয়।

ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা নিন।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৩

প্রামানিক বলেছেন: আপনার মন্তব্য পড়ে মনে শান্তনা পেলাম। শুভেচ্ছা রইল।

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৬

ফুলেরপাতা বলেছেন:
﴿١٥٥﴾ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّـهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

[2:156]
যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।
তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।
قَالُوا إِنَّا لِلَّـهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
আমি আপনার মায়ের জন্য দোয়া করেছি - আপনিও করবেন।
ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা নিন।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৪

প্রামানিক বলেছেন: আপনার মূল্যবান মন্তব্য পড়ে ভাল লাগল। শুভেচ্ছা রইল।

৪| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩২

নিলু বলেছেন: দোয়া করি

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৫

প্রামানিক বলেছেন: দোয়া করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৫| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৬

সাইফুদ্দিন আযাদ বলেছেন: মায়ের তুলনা মা নিজেই। যেহেতু মা আর নেই, তাই সর্বদা জীবনের পতিটি মুহুত্বে একসাইট খালি বলে মনে হবে। ভেঙ্গে পড়লে চলবে না, নিজেকে শক্ত রাখুন... দোয়া রইল আপনার পরিবারের প্রতি।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৬

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সাইফুদ্দিন আযাদ। আপনার মূল্যবান মন্তব্য পড়ে মনে শান্তনা পেলাম। শুভেচ্ছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.