নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কানা ভুলা ভুত

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:২২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

বিকাল পাঁচটায় ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে রওনা হয়েছি। রাত সাড়ে দশটার সময় বাহাদুরাবাদ ঘাটে এসে ট্রেনের গন্তব্য শেষ হলে ট্রেন থেকে নেমে স্টীমারে উঠি। স্টীমার যথাসময়ে তিস্তামুখ ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে দেয়। যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে স্টীমার যখন অপর পাড়ে তিস্তামুখ ঘাটে এসে পৌঁছে তখন রাত দেড়টা। সবার সাথে আমিও স্টীমার থেকে নেমে খাওয়ার জন্য নাসির উদ্দিন মিয়ার হোটেলে ঢুকে পড়ি। হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসতেই বয় পিয়ালী মাছের নাম বলল। পিয়ালী মাছের নাম শুনেই মুখে পানি চলে এলো। অনেক দিন হলো পিয়ালী মাছ খাওয়া হয় না। পিয়ালী মাছের লোভ সামলাতে না পেরে অন্য সব তরকারী বাদ দিয়ে সুস্বাদু নদীর পিয়ালী মাছের অর্ডার দিয়ে বসলাম। মজা করে ভাত খাচ্ছি। এমন সময় দিনাজপুর গামী ট্রেন ছাড়ার হুইসেল দিল। অনেক যাত্রী আধা খাওয়া অবস্থায় খাবার প্লেটে রেখেই ভাতের বিল পরিশোধ করে দৌড়ে গিয়ে ট্রেনে উঠল। আমি তাড়াহুড়া না করে আস্তে ধীরে খেয়ে নিলাম। কারণ আমার ট্রেন যাত্রা এখানেই শেষ।

তিস্তামুখ ঘাট থেকে পায়ে হেঁটে আমাকে উত্তরে যেতে হবে। এতো রাতে কোন যানবাহন আশা করা অরণ্যে রোদন। কিন্তু রাত করে এত পথ একা যাওয়া ভয়ের ব্যাপার। তাই এলাকার পরিচিত লোকজন খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু ঐদিকে যাওয়ার মত একটি লোকও খুঁজে পেলাম না। অনেক দিন পর ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছি। কতক্ষণে বাড়ি পৌছাবো সেই আকাংখায় মন উদ্গ্রীব। স্টীমার ঘাটে বসে থাকতে মন চাচ্ছে না। বিড়ি সিগারেট খাই না, তরপরেও বিপদ আপদের জন্য একটা দিয়াশলাই কিনে নিলাম। দিয়াশলাই কেনার পরে কিছুটা সাহস বাড়ল, সেই সাহসের উপর ভর করে বাড়ি পৌছার আকাংখা আরো বেড়ে গেল। কাজেই রাতের ভয় ভীতি তোয়াক্কা না করে একাই বাড়ির পথে রওনা হলাম।

তিস্তামুখ ঘাটের পাশেই ফুলছড়ি বাজার। বাজার পার হয়ে শেষ প্রান্তে এসে পাকা রাস্তায় উঠতেই ছোট একটা বাঁশের টুকরা কুঁড়িয়ে পেলাম। লম্বায় তিন চার হাত হবে। বাজার থেকে কেউ বাঁশ কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়তো অধিক লম্বা হওয়ার কারণে বাঁশের মাথার দিকো চিকন অংশ কেটে ফেলে দিয়ে গেছে। এটাকে হাতে নিয়ে কিছুটা সাহস বেড়ে গেল। কারণ বিপদের সময় এটাকেই নিজের সাথী হিসেবে কল্পনা করা যাবে। তাছাড়া হাতে লাঠি থাকলে অনেক বিপদ আপদ থেকে পিটিয়ে পাটিয়ে নিজেকে রক্ষা করা যাবে।

বাজার থেকে প্রায় চার মাইল পথ উত্তরে যেতে হবে। চাঁদনী রাত। অনেক দুর পর্যন্ত দেখা যায়। ফরসা চাঁদনী রাতকে ভরসা করে দিয়াশলাই, বাঁশের লাঠি আর মনের সাহস নিয়ে রওনা হলাম। ফাল্গুন মাসের প্রথম সপ্তাহ। দিগন্তজোড়া চাষ করা ফসলের মাঠ। কোথাও এতটুকু জঙ্গল নেই।

কিছুদুর যাওয়ার পরেই পাকা রাস্তা শেষ। অল্প বালুচর হেঁটে পূর্ব পার্শ্বে আসতেই যমুনা নদীর পাড়ে চলে এলাম। নদীর পাড় দিয়ে উত্তর দিকে হেঁটে যাচ্ছি। কোথাও বাড়ি ঘর নেই। পূর্ব দিকে বিশাল যমুনা নদী। পশ্চিম দিকে ধুধু বালুচর। বালুচরের মাঝ দিয়ে পায়ে চলার রাস্তা। মাঝে মাঝে রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। বাতাসে বালু উড়ে এসে বালুচর আর পায়ে চলার রাস্তা সমান হয়ে গেছে। কোনটা রাস্তা আর কোনটা বালুচর কিছুই বোঝা যায় না। অনুমান করে করে পথ চলতে হ্েচছ।

অনেকক্ষণ হাঁটার পর বালুচরের রাস্তা পার হয়ে চাষ করা ক্ষেতে চলে এলাম। চাষ করা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা পেলাম। নদীর পাড় ছেড়ে এই রাস্তা দিয়ে উত্তর দিকে হাঁটতে লাগলাম। কিছু দুর যাওয়ার পর একটি বাঁশ ঝাড়ের কাছে এসে মনে হলো রাস্তাটি দু’দিকে ভাগ হয়ে গেছে। সামনের দিকে তাকাতেই বিলের মত মনে হলো। দু’টি রাস্তার একটি বিলের মাঝ খানে নেমে গেছে। অন্য রাস্তাটি বিলের পশ্চিম পাশ দিয়ে উত্তর দিকে চলে গেছে। বিলের মাঝে পানি এবং পানির উপরে ভাসমান ছোট ছোট কচুরি পানার মত মনে হলো। কাজেই বিলের দিকে যে রাস্তা গেছে সে রাস্তায় না গিয়ে বিলের পশ্চিম পার্শ্বের রাস্তা ধরে উত্তর দিকে হাঁটতে লাগলাম।

কিছুদুর গিয়ে বিলের দিকে তাকালাম। আমার ঠিক পঞ্চাশ গজ পূর্ব দিয়ে এবং বিলের পশ্চিম পার্শ্বের পানির কিনার দিয়ে একটা ঘোড়া হেঁটে যেতে দেখলাম। ঘোড়া ঠিক আমার সাথে সাথেই হেঁটে যাচ্ছে। আমি ঘোড়াটির হেঁটে যাওয়া দেখে জোরে গলা খাঁকারী দিলাম। ঘোড়া থেমে গেল। আমার দিকে ঘুরে চোখ করে তাকালো। আমি কিছুটা ভরকে গিয়ে একটু আওয়াজ করে বললাম, “কার ঘোড়া এতো রাতে ছেড়ে দিয়ে গেছে রে, ঘোড়াওয়ালার আক্কেল নাই”। এ কথা বলেই হাতের লাঠি দিয়ে মাটিতে তিনটা বাড়ি দিলাম। মাটিতে ঠাস ঠাস করে বাড়ি দেয়ার শব্দ শুনে ঘোড়া পানির দিকে নেমে গেল। ঘোড়া পানিতে নামতে দেখে গা শিউরে উঠল। কারণ স্বইচ্ছায় ঘোড়াকে কখনও এভাবে গভীর পানিতে নামতে দেখিনি। এটা আসলে ঘোড়া না অন্য কিছু। মনের ভিতর ভয় ভয় করতে লাগল। ভিতু ভিতু ভাবেই মুখে জোর এনে বললাম, “এই ঘোড়া, যা, পানির ঘোড়া পানিতে যা, উপরে আসবি তো ঠ্যাং ভেঙে দিব”। এ কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই দেখি ঘোড়া নেই। আমার ভিতরে সন্দেহ বেড়ে গেল। আমি জোরে জোরে হাঁটতে লাগলাম। বিলের দিকে আর তাকালাম না।

সামনে কিছুদুর যাওয়ার পর আবার বিলের দিকে তাকালাম। এবার ঘোড়া নয়, একটি শুকর বিলের ধারে পানির কিনার দিয়ে হেঁটে যেতে দেখলাম। তবে পিছন দিকে নয় আমার সাথে সাথে সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। শুকর আক্রমন করতে পারে এই ভয়ে গলা খাঁকারী না দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ম্যাচ বের করে আগুন জ্বালালাম। জ্বালানো ম্যাচের কাঠি হাতে ধরে কয়েক গজ এগিয়ে গিয়ে বিলের দিকে তাকিয়ে দেখি শুকর আর দেখা যাচ্ছে না। কাছেই জঙ্গলের মত মনে হলো। মনে মনে ভাবলাম হয়তো জঙ্গলে ঢুকেছে।

একটু পরেই পানির ভিতর থেকে শব্দ কানে এলো। মনে হলো বিশাল বড় বোয়াল মাছ তার লেজ দিয়ে পানির উপরে বাড়ি দিয়েছে। বোয়াল মাছ লেজ দিয়ে পানির উপরে বাড়ি দিলে পানিতে ঢেউ উঠার কথা কিন্তু পানিতে কোন ঢেউ দেখা যাচ্ছে না। পানি যেমনি নিটল ছিল তেমনি আছে। পানির ভিতর শব্দ এবং পানির নিটল অবস্থা দেখে গা শিউরে উঠল। ভয়ে আমি আর পানির দিকে তাকালাম না। কারণ যদি মাছ না হয়ে অন্য কিছু হয়!

আরেকটু সামনে যাওয়ার পরে মিঁউ শব্দে চমকে উঠলাম। ডান পাশে তাকিয়ে দেখি একটি বড়সড় বিড়াল। আমার পাশে পাশে হাঁটছে। বিড়ালটি কখনও আমার ডান পাশে আবার কখনও বাম পাশে হাঁটছে। এভাবে কিছুদুর হাঁটার পর বিড়াল আমার সামনে পায়ের কাছে চলে এলো। হাঁটার সময় আমার পায়ের সাথে ধাক্কা লাগে লাগে অবস্থা। বিড়ালের এরকম ভাব দেখে ধমক দিয়ে বললাম, “এই বিড়াল সর, পায়ের কাছে আসবি তো লাত্থি মেরে পেট ফাটাবো”। জোরে ধমক দিতেই বিড়াল দৌড়ে সামনে পূর্ব পাশে বিলের দিকে সরে গিয়ে উল্টাভাবে ঘুরে তাকালো। তার তাকানো দেখে গা ঝাঁকি দিয়ে উঠল। ঠিক টর্চ লাইটের মত দু’টি চোখ আমার দিকে তাক করে আছে। ভয়ে আমার শরীরের লোম কাঁটা দিয়ে উঠল। আমি “লা হাওলা ওয়ালা” বলে ম্যাচে ঠোকা দিয়ে আগুন জ্বালানোর সাথে সাথেই বিড়াল বিলের দিকে দৌড়ে পালালো। বিড়াল পালিয়ে যাওয়ায় মনের মাঝে কিছুটা ভয় কেটে গেল। এরপর অনেকদুর হেঁটে গেলাম আর কোন কিছু চোখে পড়ল না। তবে বিলের ভিতর থেকে নানা ধরনের শব্দ কানে আসতে লাগল। আমি ভয়ে বিলের দিকে আর তাকালাম না।

(চলবে--)

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৪৩

খেলাঘর বলেছেন:

সাধারণ

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৩

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৩৭

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চমতকার বর্ণনা আর থ্রিল। চলুক +++++++++

অনেক শুভকামনা :)

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫২

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অপূর্ণ রায়হান। শুভেচ্ছা রইল।

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৯

মামুন রশিদ বলেছেন: এইটুকুন পড়েই গায়ে কাঁটা দিলো!

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৭

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মামুন রশিদ। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০২

মাহবু১৫৪ বলেছেন: চমৎকার

+++

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মাহবুব। শুভেচ্ছা রইল।

৫| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৯

জিরো ডাইমেনশন বলেছেন: এই প্রচন্ড শীতেও কেমন জানি গা গরম হয়ে উঠছে গল্প পইড়া...... কিপ ইট আপ

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ জিরো ডাইমেনশন। শুভেচ্ছা রইল।

৬| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২১

হামিদ আহসান বলেছেন: ভীতিকর । গা ছম ছম করা ভুতের গল্প।................+++++++

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ হামিদ ভাই শুভেচ্ছা রইল ।

৭| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৩

দীপংকর চন্দ বলেছেন: অনেক অনেক ভালো লাগা শহীদ ভাই।

আমার শুভকামনা জানবেন। অনিঃশেষ।

ভালো থাকবেন ভাই। সবসময়।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ দীপংকর দা। শুভ্চেছা রইল।

৮| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৬

অরুদ্ধ সকাল বলেছেন:
চলিবে মানেই অপেক্ষায় রইলাম

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অরুদ্ধ সকাল। শুভেচ্ছা রইল।

৯| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:০৭

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: ভূত বিশ্বাস করতে মন চায় না, আবার ভয়ও পাই। :P
তবে আপনার লেখা খুব সাবলীল। প্রাণবন্ত লেখা পড়ে আসলেই অন্যদের মতো আমারও গা ছম ছম করে উঠলো। দেখা যাক আগামী পর্বে কী হয়।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৩

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ঘাসফুল শুভেচ্ছা রইল্

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.