নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এতিম শিশুর সেন্টার পরীক্ষা

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৯



শহীদুল ইসলাম প্রামানিক



বাদশা গার্মেন্টসে কাজ করে। শরীরটা ভাল না থাকায় অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে। মেসে থাকে। বাসায় কেউ নেই, তাই একা একা ভাল না লাগায় বাসার বাইরে রাস্তার পাশে কনফেকশনারী দোকানের সামনে বসে আছে। বেলা তিনটার সময় রাস্তা দিয়ে আধা ময়লা স্কুলের পোষাক পরা নয় দশ বছরের ছোট একটি বাচ্চা একা একা হেঁটে যাচ্ছে। বাদশা তার দিকে তাকাতেই ছেলেটি রাস্তা ছেড়ে আস্তে আস্তে তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আঙ্কেল, এই রাস্তায় ভাদাইল যাওয়া যাইবো?

-- যাওয়া যাইবো, ভাদাইল কই যাইবা?

-- হাজির বস্তি।

-- এদিকে কই গেছিলা?

-- পরীক্ষা দিবার।

-- কই পরীক্ষা দিলা?

-- ওই হাই স্কুলে।

-- কি পরীক্ষা দিলা?

-- ক্লাস ফাইভে সেন্টার পরীক্ষা।

-- সাথে কেউ নাই।

-- না।

-- সকালে কার সাথে আইছো?

-- নানীর সাথে।

-- এহন নানী আইসে নাই?

-- না।

-- ক্যান, আইসে নাই ক্যান?

-- নানী সকালে কইছিল আইবো, এহন তিনটা বাজে তাও আইল না। তাই একলা একলা রওনা দিছি।

-- তোমার আর কেউ নাই?

-- না।

-- বাবা মা নাই?

-- না।

-- তারা কই থাকে?

-- তারা তো গার্মেন্টেসে আগুন লাইগা দুই বছর হইল মইরা গেছে।

-- এহন কার কাছে থাকো?

-- নানীর কাছে।

-- নানী আইলো না ক্যান?

-- নানী হাজীর বাড়ি কাম করে, মনে হয় ছুটি পায় নাই।

-- তোমার মামা, খালা নাই?

-- খালা নাই, দুইজন মামা আছে।

-- তারা কই থাকে?

-- ওই হাজির বস্তিতেই থাকে।

-- তারা আইলো না?

-- তারা তো গার্মেন্টসে চাকরী করে, আইবো কেমনে?

-- তোমার মামারা বিয়া করছে?

-- হ, মামারা দুই জনেই বিয়া করছে।

-- মামীরা কি করে?

-- মামীরাও গার্মেন্টসে চাকরী করে।

-- তোমার নানী কি মামাদের কাছে থাকে?

-- আগে মামারা নানীর সাথে আছিল, বিয়া করার পর এহন আলাদা খায়।

-- ক্যান, আলাদা খায় ক্যান?

-- নানী আমারে কাছে রাখে দেইখা মামীরা নানীরে দেখবার পারে না। আমারে ফালায়া দিবার কয়। দুইজনরে ভাত দিব না, বলেই ছেলেটি থেমে যায়।

বাদশা মিয়া ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, তারপরে?

-- তারপরে নানীরে দুইদিন না খায়া রাখছিল, ভাত দেয় নাই। নানীর সাথে আমিও না খায়া আছিলাম। ক্ষিদা কুলাইবার না পাইরা আমি কান্দাকাটি শুরু করলে নানী দিশামিশা না পাইয়া হাজি বাড়ি গিয়া কামে লাগে। হাজি বাড়ি কাম কইরা যা পায় তাই নানী অর্ধেক খায় আমারে অর্ধেক দেয়।

-- তোমার নানীরে যে মামীরা ভাত দেয় না মামারা কিছু কয় না?

-- মামারা কইবো কি? মামারাও মামীদের কথায় উঠে বসে। নানীর কোন খোঁজ খবর নেয় না। নানী হেই দুঃখে কত কান্দে।

ছেলেটি যে অসহায়, নিজের যে কত দুঃখ সে দিকে তার খেয়াল নেই, নানী যে কষ্টে আছে সেই দুঃখে সে দুঃখিত। ছোট্ট ছেলের মুখে নিজের কষ্ট না বলে নানীর কষ্টের কথা বলায় বাদশার মন ব্যাথিত হলো। ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মুখটি শুকনা। ছোট মানুষ, না খাওয়া মুখ দেখলেই বোঝা যায়। বাদশা মিয়ার মায়া লাগল। নিজের থেকেই জিজ্ঞেস করল, সকাল বেলা কি খাইছো?

-- রাইতে খাওয়ার পরে অল্প কিছু ভাত নানী পানি দিয়া রাখছিল, পরীক্ষা দিবার আসার সময় হেই বাসি ভাত খাইছি।

-- দুপুরে কিছু খাও নাই?

-- না

-- নানী ট্যাকা দেয় নাই?

-- নানী যাওয়ার সময় দুই ট্যাকা দিযা গ্যাছে। পরীক্ষা শেষে চানাচুরওয়ালারে কইলাম, আঙ্কেল দুই টাকার চানাচুর দিবেন? চানাচুর ওয়ালা কয়, পাঁচ ট্যাকার নিচে চানাচুর নাই। তিনবার কইছি দেইখা চানাচুর তো দিলোই না, উল্টা আমার ঘাড় ধইরা ধাক্কা দিয়া রাস্তায় উপর ফালায়া দিল। অল্পের থিকা মুখ ঠাসি দিয়া পড়ি নাই। পড়লে নাক মুখ ফাইটা যাইতো। চানাচুরওয়ালা ঘাড় ধাক্কা দিল দেইখা আর কারো কাছে কিছু চাই নাই। ক্ষিদার চোটে স্কুলের চাপকলে পেট ভইরা পানি খাইছি।

ছেলেটির কথা শুনে বাদশার চোখে পানি চলে এলো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, কিছু খাইবা?

খাওয়ার কথা শুনে ক্ষুধার্ত মুখটি কালো করে বলল, বাসায় না গেলে তো আর খাওয়া হইবো না! দুই ট্যাকায় কেউ কিছু দিব না। তার চায়া দুই ট্যাকা নিয়া নানীর কাছে দিলে, নানী লবন মরিচ কিনতে পারবো। কথাগুলো বলেই বলল, আচ্ছা আঙ্কেল, চৌরাস্তা এহান থিকা কতদূর? এক ঘন্টায় যাইতে পারমু?

বড়দের একঘন্টা লাগে না। কিন্তু ছোট মানুষ এক ঘন্টায় যেতে পারবে কিনা সন্দেহ। তারপরেও উৎসাহ দিয়ে বাদশা বলল, হ যাইতে পারবা। তোমার বাড়ি যাওয়ার রাস্তা তুমি চিনবা?

-- হ আঙ্কেল, জামগড়া চৌরাস্তায় গেলেই চিনমু। চৌরাস্তা থিকা ওইদিকের রাস্তা চিনি। এই দিকের রাস্তা চিনি না। এই দিকে কোন দিন আসি নাই।

বাদশা ছেলেটিকে অভয় দিয়ে বলল, অসুবিধা নাই, এই রাস্তা দিয়া সোজা গেলেই চৌরাস্তা পাইবা। সোজা গেলে চৌরাস্তা পাবে এমন আশ্বাস পেয়ে ছেলেটির মুখ উজ্জল হয়ে উঠল, খুশি খুশি ভাব নিয়ে বলল, চৌরাস্তা গেলে আমার আর অসুবিধা হইবো না, বলেই বলল, আচ্ছা আঙ্কেল, আসি।

ছেলেটি বিদায় চাইলে বাদশাও ঘাড় কাত করে ছেলেটিকে বিদায় দিল। একটু পরেই হুশ হলো। আরে-- তার পকেটে তো টাকা আছে। দু’টি বিস্কুট দিলেও তো ছেলেটি খেয়ে পানি খেতে পারে। এতটুকু ছেলে না খেয়ে আছে। একথা মনে হতেই হাত বাড়িয়ে ছেলেটিকে ডাকল। এ-ই ছেলে, এ--ই ছেলে। ছেলেটি তখন অনেক দুর এগিয়ে গিয়েছে। ছেলেটি ডাক শুনে ফিরে তাকাল, আঙ্কেল আমাকে ডাকছেন?

বাদশা বলল, হ এই দিকে আস।

-- না আঙ্কেল আর দেরি করমু না। ক্ষিদা লাগছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই।

বাদশা আদর মাখা কণ্ঠে বলল, এই দিকে আস, আমার কাছে আস।

-- না আঙ্কেল তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই। দেরি করলে নানী আবার খুঁজতে আইবো।

-- এ-ই ছেলে আমি ডাকতেছি না। এই দিকে আস।

ছেলেটি অগত্যা অনিচ্ছা সত্বেও এগিয়ে এলো। এসেই বিজ্ঞেস করল, আঙ্কেল কিছু কইবেন?

-- হ কমু। আমার পাশে বস।

-- না আঙ্কেল এমনিই দেরি হইছে। ক্ষিদা লাগছে। তাড়াতাড়ি যাই।

বাদশা ধমক দিয়ে বলল, আমি কইছি বস।

বাদশার ধমকে ছেলেটি থতমত খেয়ে মুখটি কাচুমাচু করে বেঞ্চের উপর বসল। বাদশা দোকান থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে ছেলেটির হাতে দিল।

ছেলেটি নিতে চাচ্ছে না। বলছে, আঙ্কেল, এই বিস্কুটের দাম তো দশ ট্যাকা, আমার কাছে দুই ট্যাকার বেশি নাই। বাকি আটট্যাকা দিমু কোইত্থিকা?

-- ট্যাকা লাগবো না।

-- তাইলে কি কাম করা লাগবো। আঙ্কেল আইজ আমি কাম করবার পারমু না। কাম করলে কাইলকা পরীক্ষা দিবার পারমু না।

-- তোমার কোন কাজ করা লাগবো না। এমনিই খাইতে দিলাম।

ছেলেটির ধরা গলায় বলল, আঙ্কেল, বাপ মা মরার পর থিকা আমারে কেউ এমনি এমনি খাইতে দেয় না, কিছু না কিছু কাম কইরা নেয়। আপনি আবার ফাঁকি দিয়া খাওয়ায়া কামে লাগাইবেন না তো?

ছেলেটির কথায় বাদশার চোখ আবার ভিজে গেল। দু’বছর আগে তার স্ত্রীও গার্মেন্টসে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার ছোট একটি বাচ্চা আছে। বাচ্চাটি গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছে। বাদশার মা ছেলেটিকে লালন পালন করে। ছেলেটি তার নিজের মায়ের জন্য মাঝে মাঝে কান্না করে। ছেলেটি কান্না শুরু করলে বাদশার খুব কষ্ট লাগে। নিজের কষ্ট বুকে চাপা রেখে বাচ্চাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে। কোলে নিয়ে বাজারে চলে যায়। অনেক কিছু কিনে দেয়। কিন্তু যত কিছুই কিনে দিক না কেন মায়ের অভাব পুরণ হয় না। ছেলেটি কান্নার সময় শুধু মা মা করতে থাকে। ছেলেটির কথা শুনে মুহুর্তেই নিজের বাচ্চার কথা মনে পরে গেল। চোখের পানি মুছে ছেলেটির কাছে এসে মাথায়া হাত বুলিয়ে বলল, না রে বাবা, আমি তোরে দিয়া কাম করামু না। তুই নিশ্চিন্তায় খা।

-- আঙ্কেল এইখানে বইসা খাইলে তো সন্ধা লাগবো। সন্ধা লাগলে বাড়ি যাইবার পারমু না।

বাদশা ছেলেটির মাথায় আদর করে হাতবুলিয়ে বলল, অসুবিধা নাই, আমি তোরে বাড়ি পৌছায়া দিয়া আসমু।

বাদশার দরদ মাখা কন্ঠে বাড়ি পৌছানোর আশ্বাস পেয়ে ছেলেটি প্যাকেট খুলে বিস্কুট মুখে দিল। দু’টি বিস্কুট খেতেই আধাপুরানো ময়লা শাড়ি পরা বৃদ্ধাকে রাস্তা দিয়ে হনহন করে হেঁটে যেতে দেখে ছেলেটি লাফিয়ে উঠল। এই তো নানী আইছে। বলেই ডাক দিল, ও--ই নানী, ও---ই নানী।

ডাক শুনে বৃদ্ধা থমকে দাঁড়াল। পিছন ফিরে ছেলেটিকে দেখেই দ্রুত কাছে চলে এলো। কাছে এসেই ঠাস করে গালে একটি চড় মেড়ে দাঁত কিড়মিড় করে বকাবকি শুরু করল, মরার ঘরের মরা, এই হানে চুপচাপ বইসা রইছস, আর আমি দুইন্নাডা খুঁইজা মরতাছি। দুইজন তো মইরা বাইচা গ্যাছে। তরে রাইখা গ্যাছে না আমার ঘাড়ে আজাব রাইখা গ্যাছে। তর জন্যে আইজ বুইড়া বয়সে মাইনষের বাড়ি কাম কইরা খাই। হারামজাদা, দুইন্নার বেবাক পোলাপান বাড়ি গ্যাছে, আর তুই এইহানে বইসা খোস গল্প করতাছোস। তোর জ্বালায় আমার জানডা শেষ হইল, বলেই ছেলেটির হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে বেঞ্চ থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেল। বৃদ্ধার হেঁচকা টানে ছেলেটির হাত থেকে বিস্কুটের প্যাকেট ছিটকে পড়ে গেল। পড়ে যাওয়া বিস্কুট মাটি থেকে তুলে নিয়ে বাদশা পিছন থেকে ডাক দিয়ে বৃদ্ধাকে থামানোর চেষ্টা করল, কিন্তু বৃদ্ধা কোন কথাই কানে নিল না। সে ছেলেটিকে বকাবাকি করতে করতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল।

বাপ মা হারা ছেলেটির অসহায়ত্ব দেখে বাদশার খুব মায়া লাগল। চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত ছেলেটির দিকে একপলকে তাকিয়ে রইল।



(সমাপ্ত)

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৯

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: গরীব মানুষের অসহায়ত্বের কথা, গার্মেন্টসে পুড় মারা যাওয়া বাবা মা হারানো সন্তানদের দুঃখের কথা গল্পে উঠে এসেছে। স্ত্রীর কারণে মাকে আমরা কত নির্মমভাবে সংসার ছাড়া করি তাও তুলে ধরেছেন। গরীবের সন্তানকে দুটো পয়সা দিয়ে অমানুষের দল কীভাবে সেটা কাজ করিয়ে আদায় করে নেয়, তাও বলেছেন। তবে নারী যে আবার মমতাময়ী নানীর চরিত্র দিয়ে তাও সুন্দর করে এঁকেছেন। সমাজে শত শত অমানুষের ভিড়ে এখনো যে বাদশার মতো দরদী মানুষ আছে তাও আপনার নজর এড়ায় নাই। অনেক সুন্দর লিখেছেন প্রামাণিক ভাই। চোখ ভিজে গেলে গল্পটা পড়ে। আপনার লেখায় এতো সাবলীলতা থাকে যে, একটানে আপনার যেকোনো বড় লেখাও পড়ে ফেলা যায়। মাঝে মাঝেই গল্প লিখলে কৃতজ্ঞ থাকবো। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো ভাই।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ঘাসফুল। আপনার মূল্যবান মন্তব্য লেখার অনুপ্রেরণা। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩০

মহান অতন্দ্র বলেছেন: গল্পটা বেশ ।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ মহান অতন্দ্র শুভ্চেছা রইল।

৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৯

নুড়ি রাজ বলেছেন: অসাধারণ !!
লিখেছেন ভাই

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নুড়ি রাজ। শুভ্চেছা রইল।

৪| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৯

রিভানুলো বলেছেন: গল্প পড়ার পর মনটা আদ্র হয়ে গেল ভাই । আরো লিখতে থাকেন
++++++

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫২

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রিভানুলো। শুভেচ্ছা রইল।

৫| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:২৩

শবদাহ বলেছেন: চিত্তবিদারক কাহিনী। সুন্দর হয়েছে।
ছোটগল্প ভালইতো লিখেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.