নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
প্যাঁ প্যাঁ পাগল আমাদের গ্রামের পূবের গ্রামে বাস করতেন। গ্রামের নাম মইন্যা পাড়া। পাগলের আসল নাম কেউ জানে না। কারণ পাগোল কথা বলতে পারতেন না। যে কোন কথা বলতে গেলে শুধু প্যাঁ প্যাঁ শব্দ করতেন। কাউকে কোন কথা বললেও প্যাঁ প্যাঁ করতেন এবং কারো কথার উত্তর দিলেও প্যাঁ প্যাঁ করতেন। তবে বয়স্ক লোকজন তাকে ওসমান পাগল বলে ডাকতো। কিন্তু ওসমান নামে ডেকে কেউ কোনদিন তার নজর কারতে পারেনি। পিছন থেকে ওসমান নামে যতই ডাকা হোক না কেন সে সামনের দিকে চলতেই থাকতো। তাকে ফিরাতে হলে দৌড়ে সামনে গিয়ে ইশারা দিয়ে ফিরাতে হতো।
পাগল দেখতে মাঝারি গড়নের। গায়ের রং হলুদের মত ফর্সা। মুখে কাঁচাপাকা অল্প দাড়ি। মুখমন্ডলের জৌলুস সুন্দর। বয়সকালে তিনি যে দেখতে সুন্দর সুপুরুষ ছিলেন মাঝ বয়সেও সে নমুনার কমতি ছিল না।
মাথায় সব সময় টুপি পরতেন। গায়ে কখনও কোড়া গেঞ্জি, কখনও ছেঁড়া বা আধাপুরানো পঞ্জাবী, কখনও উদোম গায়ে থাকতেন। রাস্তা পথে চলার সময় হাতে সবসময় একটি বাঁশের লাঠি রাখতেন। হাতে লাঠি আর কাঁধে কাপড়ের ঝোলা এই লেবাসে ভিক্ষা করে বেড়ানো তার স্বভাব ছিল। কোমর ডান দিকে সামান্য বাঁকা ছিল।
লোকমুখে শোনা যায় পাগল নাকি আগে ভাল ছিল। সুন্দর করে কথা বলতে পারতেন। হাসি-ঠাট্টা নাচ-গান করতেন। তরুণ বয়সে বাঁশি বাজানোর শখ ছিল। খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারতেন। গভীর রাতে একা একা মাঠের মাঝে নিরালায় নিরিবিলি বসে বাঁশি বাজানো তার একটা নেশা ছিল।
এক চৈত্র মাসের নিশি রাতের ঘটনা। মাঠের মাঝে কদম গাছের তলায় বসে পাগোল বাঁশি বাজাচ্ছেন। তার বাঁশির সমুধুর সুর দিগন্ত জোড়া মাঠের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। বাঁশির সুর যতদুর পৌছেছিল ততদুর পর্যন্ত লোক তন্ময় হয়ে বাঁশি শুনছিল। বাঁশির সুর মানব কুল ছাড়িয়ে একসময় পরী রাজ্যে গিয়ে পৌঁছে। পরীরা বাঁশির সুরে মোহিত হয়ে ধরায় নেমে আসে। পাগলের বাঁশির সুরের তালে তালে কদম তলায় পরীরা নাচতে থাকে। পরীরা কতক্ষণ এভাবে নাচানাচি করছে পাগল বলতে পারে না। পাগল চোখ বন্ধ করে বাঁশি একটানা বাজিয়েই যাচ্ছে। হঠাৎ নুপুর নিক্কনের শব্দ কানে আসতেই চোখ মেলে তাকায়। চোখ খুলতেই দিশেহারা। একদল অপরুপ সুন্দরী তার চারপাশে ঘুরে ঘুরে নাচানাচি করছে। পাগল অপরুপ সুন্দরী পরীদের চেহারা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। জীবনে অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখেছে, কিন্তু এত অপরুপ সুন্দরী কখনও চোখে পড়েনি। পাগল বাঁশি বাজনো বন্ধ করে পরীদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ বাঁশি বন্ধ হওয়ায় পরীদের নাচ থেমে যায়। বাঁশি বাজানো বন্ধ করায় পরীরা ক্ষেপে যায়। তারা বারবার পাগলকে বাঁশি বাজাতে অনুরোধ করে। কিন্তু পরীদের অপরুপ রুপে মুগ্ধ হয়ে পাগল বাঁশি বাজানো ভুলে যায়। শত চেষ্টা করেও আর বাঁশি বাজাতে পারে না। পরীদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে শুধু হা করে তাকিয়ে থাকে।
পরীদের অনুরোধ সত্বেও পাগল বাঁশি না বাজানোর কারণে পরীরা ভীষণ ক্ষেপে যায়। তাদের রাগন্বিতভাব দেখেও পাগল হা করে তাকিয়ে থাকে। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত পরীগণ পাগলকে দু’হাত দিয়ে উপরে তুলে নিচের দিকে আছাড় মেরে ফেলে দেয়। পরীদের হাতে আছাড় খেয়ে পাগল জ্ঞান হারায়।
অজ্ঞান অবস্থায় কদম গাছের তলে সারারাত পড়ে থাকে। সকাল বেলা গ্রামের কৃষকরা মাঠে গিয়ে পাগলকে অজ্ঞান অবস্থায় পায়। কয়েকজন কৃষক পগলকে ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে আসে। মাথায় পানি ঢেলে ওঝা-বদ্যি ডেকে জ্ঞান ফিরালেও কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কোন কথার উত্তর দিতে পারে না। শুধু মানুষের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। এভাবে কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর কোন একদিন হঠাৎ কথা বলা শুরু করে। উৎসুখ লোকজন কিভাবে তার এ দশা হলো তা জিজ্ঞেস করায় কদম তলায় বাঁশি বাজানো আর পরীদের কাহিনী বলার পরেই আবার অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর জ্ঞান ফিরলেও আর কথা বলার ক্ষমতা ফিরে পাননি। সেই থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত জবানহীন ছিলেন । শুধু প্যাঁ প্যাঁ করেছেন।
তার কমর বাঁকা হওয়ার কারণও এখান থেকেই। পরীরা দু’হাত দিয়ে উপরে তুলে আছাড় দিলে কোমরে প্রচন্ড আঘাত পান। এই আঘাতের পর থেকে মৃত্যুর পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত আর কোমর সোজা করে হাঁটতে পারেননি।
কদম গাছের তলায় পরীদের সাথে এই ঘটনা ঘটার পর থেকেই তিনি বোবা। সারা জীবন একা একা থেকেছেন। কোন বিয়ে শাদী করেননি। বিয়ে করানোর জন্য গ্রামের লোকজন অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাগোল কখনই বিয়ে করতে রাজী হননি।
বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। একার সংসার। রাতে মসজিদে ঘুমান আর দিনের বেলা ভিক্ষা করেন। ভিক্ষা করারও তার নিয়ম ছিল। আজ যে বাড়িতে ভিক্ষা নিয়েছেন এক সপ্তাহের মধ্যে না খেয়ে মরলেও ওই বাড়িতে আর ভিক্ষা নিতে যাননি। পরের সপ্তাহে গিয়েছেন। একদিন ভিক্ষা করার পর ঐ ভিক্ষার চাল যতদিন চলবে ততদিন আর কারো বাড়িতে ভিক্ষা করতেন না এবং একবেলা খাবার থাকলেও ঐদিন আর ভিক্ষায় বের হতেন না। ঘরের খাবার সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পর ভিক্ষায় বের হতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তেন। ওয়াক্ত অনুযায়ী মসজিদে মোয়াজ্জিন না থাকলে পাগোল নিজেই আজান দিতেন। আজানের কথাগুলো কিছুই বোঝা যেত না তবে লম্বা সুরে প্যাঁ---- প্যাঁ ---- শব্দ হতো। তাঁর প্যাঁ প্যাঁ সুরের আজান শুনে এলাকার ছোট বড় সব ধরনের লোক নামাজ পড়তে আসতো। তার আজান বোঝা না গেলেও কেউ কখনও এ নিয়ে অভিযোগ করতো না।
পাগল মারা গেলে তার কাছে কোন টাকা পয়সা ছিল না। গ্রামের সবাই পাগলের উপর খুশি ছিল। তার মৃত্যুতে সাধ্যমত সবাই টাকা পয়সা দিয়ে সৎকার করেছে। জীবনে অনেক পাগল, অনেক ভিক্ষুক দেখেছি, কিন্তু এরকম নীতিবান জবানহীন পাগল ভিক্ষুক আর একটিও এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। ভবিষ্যতে এরকম পাগল আর একটি দেখতে পাবো কিনা জানিনা।
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৮
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই আপনার কাহিনীও মন্দ না। ভাল লাগল। শুভেচ্ছা রইল।
২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২০
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: পরীর ব্যাপারটা কি সত্যি? লোকমুখে যদিও এমন অনেক কাহিনী শোনা যায়, কিন্তু এগুলোর কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না। তবে তার নীতির কথা খুব ভালো লাগলো। একটা পাগলের নীতি আছে। অথচ আমাদের কোন নীতি নাই। আফসোস! ভালো লাগলো লেখাটা।
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৯
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ঘাসফুল ভাই। পাগলকে আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। দেখতে খুব সুন্দর ছিল গায়ের রং হলুদ বর্ণ ছিল। কথা বলতে পারতো না তবে তার নীতি নিযে তখনও সবাই মুগ্ধ ছিল। এক বেলা খাবার থাকলে ঐদিন সে ভিক্ষায় যেত না। আমি নিজেও তাকে প্যা-- প্যা --- শব্দ করে আজান দিতে দেখেছি। সে কখনও কোন অন্যায় তো দুরের কথা এক মুঠো চাল আগামী কালের জন্য সঞ্চয় করতেও রাজী ছিল না। এরকম মানুষ আর আমার চোখে একটিও পরে নাই।
৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫
শুভ্র বিকেল বলেছেন: দারুন লিখেছেন! অনেক অনেক ধন্যবাদ!
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৯
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই শুভ্র বিকেল। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৩৫
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ভাললিখেছেন সুপ্রিয় ব্লগার ।
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৪৭
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সেলিম আনোয়ার। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
৫| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৪০
সুদীপ্ত সরদার বলেছেন: দারুন লাগলো,শুভেচ্ছা থাকলো
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৪৮
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সুদীপ্ত সরদার। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
৬| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৯
সাদাসিধা মানুষ বলেছেন: এরকম নীতিবান লোক আসলেই দূর্লভ।শুভেচ্ছা আপনাকে, ভালো লিখেছেন।
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১০
প্রামানিক বলেছেন: তিনি জীবিত থাকতে তার মূল্যায়ন করা হয় নাই কিন্তু তার মৃতু্যর পরে এখন সবাই তার কথা শ্রদ্ধাভারে স্মরণ করে।
৭| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:০৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
প্রোফাইল পিকচার কিভাবে যোগ করেছেন?
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১১
প্রামানিক বলেছেন: প্রোফাইলে পিকচার যোগ করার অপশন আছে তো। চেষ্টা করেন সমাধান পেয়ে যাবেন।
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১৮
প্রামানিক বলেছেন: আপনি আপনার ডান পাশে ছবির উপরে যে চাঁদগাজী কথাটা লেখা আছে ওখানে ক্লিক করেন এবং এটা ক্লিক করলে উপরে ছায়ামুর্তি যেটা আসবে সেখানে ক্লিক করেন তাহলেই দেখবেন ছবি পরিবর্তন বা সংযুক্ত করার অপশন পাবেন।
০৩ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:২০
প্রামানিক বলেছেন: আর যদি না হয় আপনি টেলিফোন নাম্বার দেন আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি।
৮| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৪৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ
আমি আপনার দেয়া স্টেপগুলো চেস্টা করবো।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:২৮
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ
৯| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ২:৫৭
আমার বাংলাদেশ স্বাধীন বলেছেন: চমৎকার গল্প।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:২৮
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আমার বাংলাদেশ স্বাধীন। শুভেচ্ছা রইল।
১০| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:০৫
জাফরুল মবীন বলেছেন: মনোজাগতিক বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ থাকায় গল্পটা বেশ মন দিয়ে পড়লাম।
ভাল লিখেছেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:২৯
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই জাফরুল মবীন। গল্প পড়ায় খুশি হলাম। শুভেচ্ছা রইল।
১১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
শায়মা বলেছেন: বাপরে!!!!!!!
কি শয়তান ছিলো পরীগুলা!!!!!!!!!!!!!
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:২৯
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ বোন শায়মা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
১২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার সাহায্য কাজ করেছে, প্রো-পিক লোড করতে পেরেছি।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৬
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই চাঁদগাজী। খুশি হলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
বাঁশী বাদককে ভালোবেসেছিলেন এক বিবাহিত তরুণী; তরুণীর স্বামী পক্ষের লোকজন জেনে যায়; এক রাতে তরুণীর স্বামী পক্ষের লোকজন সেই লোককে ভয়ংকরভাবে আহত করেছিল।
তরুণীকেও হয়তো মারধর করেছিল; সেই শোকে উনার এই অবস্হা হয়েছিল