নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
এ্যাড ইসাহক আলী প্রামানিক
=== (এই উপন্যাসটি আমার বড় ভাই এ্যাডভোকেট ইসাহক আলী প্রামানিক-এর লেখা) ===
(নয়)
ঢাকা এক অচেনা শহর। কোন দিন এ শহরের পথ চেনেনি। অচেনা পথ ধরে বেনু এসে পৌছেছে এই বাড়িতে। সে বাড়ির অচেনা ঘর। অচেনা মানুষ। আজ সবই তার চেনা। কিন্তু কতদিন চলবে এভাবে। একদিন তো তাকে চলে যেতে হবে। কিন্তু কোথায় যাবে? তার যে কোন কিছুই মনে পড়ে না। শুধু বুক ভেঙ্গে কান্না পায়। আব্বার কণ্ঠস্বর কানে ভেসে আসে। মা তোকে আমি বড় তাক্তার বানাবো মা। কিন্তু সে আব্বু কোথায়? তোর হাত ভরে সোনা দেবো মা, কিন্তু আব্বু চলে গেলো কেন? আব্বু তুমি আমার এত দুঃখে ফেলে গেলে কেন? এখন আমার যে দুর্দিন আব্বু। ইত্যাদির ভাবনার মাঝে বেনুর সারা রাত কাটে।
বেনুর আব্বার স্মৃতি নিয়ে নিজকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। সে একটা জিনিষ বুকের ভিতর করে লুকিয়ে এনেছে। যা কেউ টের পায়নি। এমনকি যখন হাসপাতালে ছিল তখন নার্স ও আয়ারা পর্যন্ত টের পায়নি যে, তার কাছে একটা দামী জিনিষ রয়েছে। জিনিষটা তার খুব দরকার। সে ভাবে এ বাড়িটি ভাল। চিরটা জীবন যদি এখানে কাটান যেত হয়ত নিরাপদেই থাকতে পারত। অন্ততঃ শয়তানদের হাতে আর তাকে পড়তে হতো না। এমনি করে সে নিজেকে ভাবিয়ে তুলছে।
এমন সময় মাহমুদা বেগম ডাকলেন বেনু ওমা বেনু একটু ওঠো তো মা।
দ্রুত উঠে বাইরে এল বেনু। মাথায় এলোকেশ শাড়ীর আঁচল খোলা। উজ্জল চোখ। নিষ্পাপ মুখ মন্ডল। ঘোমটা মেলানো।
মাহমুদা বেনুর দিকে এক পলক দেখে সে চমকে গেল। একি অপরুপা! এমন করে তো কখনও তাকে দেখিনি। মাথা ভরা লম্ব চুলে দেহ ছেয়ে আছে। চোখে নিষ্পাপ চাহনী। মুখ খানা যেন অবুঝ শিশুর মত। মাহমুদার বুকটা যেন কেমন করে উঠল। সে মনে মনে বলতে লাগলÑ
আরে তুই কার ঘরের মেয়ে? তুই কে? তুমি কেন এখানে মা? মাহমুদা যেন তার রুপে অভিভুত হয়ে গেল।
না- নিজেকে সামলে নিল মাহমুদা। না থাক এখনও বলার সময় হয়নি।
-- মা তুমি শিউলীকে একটু সাজিয়ে দাওনা ভাল করে। আমি ঐ যে নাজমার মেয়ের জন্মদিন অনুষ্ঠান থেকে একটু ঘুরে আসি। নইলে তো যে অভিমানী ও আমাকে মেরে ফেলবে।
বেনু মাথার চুলগুলো হাত জড়িয়ে ধরে হাত খোপা বেধে দিল। মাহমুদা আর চোখে দেখলেন ইস মাথা ভরা খোপা। কি সুন্দর মেয়েরে বাবা।
শিউলীকে সাজিয়ে দিতে লাগল বেনু। মাহমুদা বলে উঠল, কামাল বাসায় এলে তুমি একটু খেয়াল রেখ যেন বুয়া ঠিক মত খাবার দেয়। চা নাস্তা একটু দেখে দিও কেমন মা।
-- জী আম্মা।
রহিমা বুয়া এ বাড়িতে অনেক দিন হল থাকে। কাজেই এ বাড়ির ভাল-মন্দ নিজের ভাল-মন্দ বলেই মনে করে। তাই বেনুকে মাঝে মাঝে একটা জিনিষ গোপনে নাড়া চাড়া করতে দেখে। বুয়ার নজরে সেটা পড়ে যায়। সে কৌতুহল ভরে ঐ জিনিষটা কি তা সরানোর চেষ্টা করে। তারপর একদিন সে সুযোগ পেয়ে যায়।
বুয়ার অভিমান এই জন্য যে, বেনু যেদিন এবাড়িতে আসে সেদিন কাজের মেয়ে বলেই ভেবেছে। কিন্তু না যতই দিন চলে যাচ্ছে ততই কেমন যেন ওলট পালট হচ্ছে। ধীরে ধীরে মাহমুদার কলিজার টুকরা হয়ে যাচ্ছে। শিউলীতো তাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। এখন দেখি কামাল ভাইও মাঝে মাঝে ভাল করে তার সাথে কথা কয়। সেদিন নাকি সে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। এসব মিছে কথা। তার মতলবটা অন্য কিছু আছে। তাই তার শিকড় না তুলে ছাড়ছি না আমি।
আম্মা যে কি? আজ দশ বছর হল আছি, আমারে মেয়ের মত আদর দেয়না। আর কি না তিনদিন হল মেয়েটা আসছে আর তাকে নিয়ে গল্প করে। আবার কিনা আজ নাজমা আপার বাড়ি যাইতে ওকে বলে গেল আমাকে নজর রাখতে। হায়রে ছ্যামরি তোর চালাকি এবার দেখাচ্ছি। রহিমা বেনুর উপর মনে মনে এভাবে ক্রোধ ঝাড়ছে। একদিন যখন তোমার জারিজুড়ি ফাঁস হইব সেদিন তুমি বুঝবা কত ধানে কত চাল। আপন মনে এভাবে বুয়া নিজের সঙ্গেই কথা বলে সে।
পড়ন্ত বিকেলে বাসায় কাজ করছিল কামাল। তার অফিসের জরুরী কাজকর্মগুলো শেষ করতে ছিল। কাজের মাঝে বুয়া চা দিয়েছিল। কাজের মাঝে কামাল আর দেখেনি। চা ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাই সে বুয়া কে ডাকল। চা-ঠান্ডা হয়ে গেছে আর এক কাপ দিয়ে যাও।
বুয়া এসে গরম চায়ের কাপ দিয়ে গেল। কিন্তু তার মুখ খানা ভার। কামাল ঘড়িতে সময় দেখে নিল। সন্ধ্যার আর বেশি দেরি নেই কিন্তু আম্মা মা মনিকে নিয়ে ফিরছেনা কেন?
একটু পর বুয়া আবার চা দিতে এসে বলল, ভাইজান একটা কথা।
-- কি কথা? ঝটপট বল।
-- দ্যাহেন তো এইটা কি? ছ্যামড়ির ঘরে ছিল।
-- দেখে হাতে একটা কৌটা খপ করে টেবিলে রাখল।
-- কৌটা খুলেই দেখে সোনার চেইন ও অন্যান্য গহনা ভরা। কামালের দেখে চোখ ছানাবড়া। তাই বেনুকে ডেকে নিল কামাল।
-- বেনু কামালের ডাকে সাড়া দিয়ে সামনে এসে হাজির হলে তাকে সে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
-- বেনু তার জবাবে প্রথমে কিছু না বললেও কামালের ধমক খেয়ে তার মনের জড়তা খুলে যায়। সে তার জীবনের কাহিনীটুকু ধীরে ধীরে খুলে বলতে থকে।
সে বলে তার সৎমায়ের কাহিনী। সৎমায়ের চরিত্রের কথা। সৎমায়ের ভাইয়ের চরিত্রের কথা বর্ননা করে। তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি হাত করার জন্য সৎমায়ের ভাইয়ের অশিক্ষিত দুশ্চরিত্রবান কুৎসিত কিম্বাকার চেহারার ছেলেকে দিয়ে জোর পুর্ব্বক স্বামী বানিয়ে সম্পত্তিগুলো লিখে নেওয়ার অপচেষ্টার কাহিনী বলতে থাকে। বলতে বলতে এক সময় তার মুখ শুকিয়ে আসে।
কিন্তু কামালকে সে এতসব কাহিনী বলার পরও মনে হয় বিশ্বাস করাতে পারেনি। কামালের দিকে চেয়ে সে দেখে। কিন্তু কামালের কোন মনের পরিবর্তন না দেখে সে ভাবে হয়ত সে বিশ্বাস করেনি ওটাকে একটা নিছক কল্প কাহিনী মনে করছে।
কামাল তার কাহিনী শুনে মনে মনে নিজকে অপরাধীবোদ করছে। তবুও একটু মজা করার জন্য এবং বেনু কতটুকু ধৈর্য্যশীল ও শক্ত মনোবলের মেয়ে পরীক্ষা করার জন্য আবার বলল।
-- তা এজিনিষের সাথে কাহিনীর মিল কোথায়? এটা তো ঠিক নয়।
-- ওটা আমার মায়ের, মা মৃত্যুকালে আব্বার কাছে রেখে গেছেন। আর আব্বা আমার কাছে গচ্ছিত রেখে গেছেন। বলেছেন, মা বেনু তোমার মা রেখে গেছে তোমার জন্য। তুমি যতœ করে রেখ। লেখাপড়া শেষ হলে যখন ঘর বাঁধবে তখন এগুলো ব্যবহার করো। আব্বার আর আমার সংসার দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
-- সত্যি বলছ তোমার আব্বা দিয়েছে।
-- সত্যি বলছি- ওগুলো আমাকে দিন।
-- তারপরই মাথা ঘুরে মাগো মা বলে পড়ে যায়।
-- এ যে বেনু অজ্ঞান হয়ে পড়েছে রে। সর্বনাশ ! এখন কি হবে! এই রহিমা তোর কথামত ধমকাতে গিয়ে এখন কি হল। আম্মও নেই বাসায় এখন কি করি।
কামাল হাটু মুড়ে বসে পড়ল এবং দুহাত দিয়ে বেনুকে তুলে নিল। বেনুর শরীর নিস্পন্দন । তাই তাকে খাটের উপর বিছানায় শুইয়ে দিল।
-- সে ফোনে ডাক্তারকে ডাকল।
এমন সময় শিউলীর গলা শোনা গেল। আব্বু আমি এসেছি।
নাচতে নাচতে সে ঘরে ঢুকল। তখন সন্ধার আঁধারে ছেয়ে আছে তাই। মাহমুদাও ভিতরে ঢুকলেন। কিন্তু বাড়ির অবস্থা থমথমে। তার মনে কেমন যেন সন্দেহ জাগল। তাই সে বলল কি ব্যাপার তোরা কে কোথায়? কোন সাড়া পাচ্ছি না কেন?
এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। বাড়ির অবস্থাটা আরো গম্ভীর হয়ে উঠল। এই রহিমা, বেনু তোমরা আলো জ্বালো।
তখন বুয়া কাছে এসে বলল, আম্মা আমি কিছু করি নাই। ছ্যামড়িডার একটা কৌটা ভাইজানকে দিয়েছিলাম। ভাইজান তাকে কি জিজ্ঞাস করতে না করতে হ্যাই বেডি দাঁত লাগছে।
-- আঃ তোরা বলিস কি?
-- আবার বেনুকে জ্বালিয়েছিস। আমি একটু যেতে না যেতেই এই অবস্থা এখন কি হবে। হায় আল্লাহ তোরা এই এতিম মেয়েটিকে এই ভাবে অত্যাচার করেছিস।
-- মা চুপ কর। ডাক্তার আসছে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
ডাক্তার এসে চেক আপ করলেন। মানসিক দুশ্চিন্তায় সে আহত হয়েছে। একটু বিশ্রাম দিতে হবে। অল্পতেই সুস্থ্য হবে। চিন্তার কোন কারণ নেই। ঔষধের ব্যবস্থা করে ডাক্তার চলে গেলেন।
মাহমুদা বেনুর নিকট থেকে আর সরছেন না। তিনি বেনুকে বার বার দেখছেন। হাতে ও পায়ে তেল দিচ্ছেন আর আফসোস করছেন। বেনুকে রেখে যাওয়া ঠিক হয়নি। যদি সাথে নিয়ে যেতাম তাহলে মেয়েটার মনটা একটু পরিস্কার থাকতো। অনেকের সাথে কথা বার্তা বললে হয়ত সে নিজের বুকে লুকিয়ে থাকা চাপা দুঃখ কষ্টের অনেকটা লাঘব হতো। কিন্তুু কেন যে তাকে রেখে গেলাম। ইত্যাদি কথায় তিনি নিজকে অপরাধী করছেন।
অনেকক্ষণ পর বেনু চোখ খুলে দেখে মাহমুদা তার মাথার কাছে বসে মাথায় হাত দিয়ে আছে। সে নিজকে অপরাধী ভেবে তাড়াতাড়ি উঠার চেষ্টা করল। কিন্তু মাহমুদা উঠতে দিলেন না।
বেনু মাহমুদার হাত ধরে কেঁদে ফেললেন। আম্মা আম্মা আপনি কখন এসেছেন। আম্মা আমাকে মেরে ফেলুন।
-- না না তোমার আর কোন ভয় নেই। তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না। তুমি আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে। তুমি শান্ত হও মা। তোমার জন্য আমি জীবন দিয়ে তোমার সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করব। তুমি কিছু ভেবো না মা।
বেনু তার হাত ধরে নিরবে কেঁদে চলল।
(চলবে)
( আগের পর্ব দেখার জন্য নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন )
উপন্যাস– আঁধারে শশী (পর্ব-৪)
২৫ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪৯
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ বোন অর্বাচীন পথিক।
২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০০
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
জনাব প্রামানিক,
উপন্যাসের জন্য শুভ কামনা রইলো। ছড়াও লিখবেন কিন্তু।
২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১৩
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অন্ধবিন্দু। চেষ্টা করব।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১৭
অর্বাচীন পথিক বলেছেন: ভাল লাগলো।
শুভেচ্ছা রইল