নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাঁয়ের বধুর চিঠি

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

ওগো মোর প্রিয়তম,
প্রথমে জানাই আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক ভালবাসা। আশা করি ভাল আছো। তবে আমি কিন্তু ভাল নই। তোমাকে এয়ারপোর্টে বিদায় দেয়ার পর থেকে অনেক রাত ঘুমাতে পারিনি। শুধু কেঁদেছি তোমার কথা মনে করে। এখনও কাঁদি। আমার এ দুঃখ তুমি বুঝতে পারো কি না জানিনা। আমি তোমায় কত ভালবাসি তুমি যদি সত্যি সত্যি বুঝতে, তাহলে এতোদিন আমাকে চিঠি না লিখে থাকতে পারতে না। অচেনা অজানা অবস্থায় তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের আগে তোমাকে দেখার সুযোগ হয়নি। বাসর রাতেই প্রথম তোমাকে দেখেছি। সেই থেকে আজো তোমাকে ভালবেসে পাগলিনী হয়ে আছি। শয়নে-স্বপনে শুধু তোমার কথাই মনে পরে। গত তিনমাস হলো তোমার কোন চিঠিপত্র না পেয়ে খুব চিন্তার মধ্যে আছি। যদি বিদেশের মাটিতে কাজের চাপের কারণে চিঠি লেখার সুযোগ না পাও তাহলে আমার কোন অভিযোগ নাই। যদি ইচ্ছা করে চিঠি না দিয়ে থাকো তাহলে আমার ভালবাসার দিব্যি রইল। আর যিদি তোমার কাছে আমি কোন অপরাধ করে থাকি, সে অপরাধ আমাকে বললে আমি তোমার দু’টি পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নেব।

যাক এসব কথা। তুমি যাওয়ার সময় এয়ারপোর্টে আমার হাতে দু’হাজার টাকা দিয়েছিলে। সে টাকা দিয়ে আমি একটি ছাগল কিনেছি। গত সপ্তাহে সে ছাগলের তিনটি বাচ্চা হয়েছে। মা বলেছে বাচ্চাগুলা বড় হলে বিক্রি করে গরু কিনে দিবে। ছয়মাস আগে আমার হাত খরচের জন্য যে দশ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলে। আমি সেটাকা একটাও খরচ করিনি। বাবার হাতে দিয়েছিলাম। বাবা সে টাকা দিয়ে দশ কাঠা ধানের জমি বন্ধক রেখে দিয়েছে। সে ক্ষেত থেকে বর্গার ভাগ ছয়মন ধান পেয়েছি।

মা তোমার জন্য দুইটা মোরগ রেখেছে। মোরগগুলো অনেক বড় হয়েছে। তার একটা গত কাল রাতে খোয়াড় ভেঙে শেয়ালে নিয়ে গেছে। শেয়ালের পিছনে পিছনে আমরা লাঠিসোটা নিয়ে অনেক দূর দৌড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ধরতে পারিনি। সকাল বেলা দেখি মোরগের নাড়ীভুড়ি আর পাখগুলো বাড়ির পিছনে পরে আছে, বাকি সব শেয়ালে মজা করে খেয়ে নিয়েছে।

আমাদের ঘরের পিছনে যে কাঁঠাল গাছ আছে, সেই গাছে বড় বড় তিনটা কাঁঠাল ধরেছিল। গত সপ্তাহে চোরেরা সব কাঁঠাল চুরি করে নিয়ে গেছে। কাঁঠাল চোরে নিয়েছে তাতে আমাদের আফসোস নেই, কিন্তু চোরেরা এমন এক কান্ড করে গেছে, যা শুনলে না হেসে থাকতে পারবে না। কাঁঠাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় দাদার ঘরের দরজার সামনে ইচ্ছে মতো পায়খানা করে গেছে। দাদা শেষ রাতে যখন নামায পড়ার জন্য উঠেছে, দরজা খুলে বাইরে পা দিতেই পা পিছলে ধরুম করে পরে গিয়ে সে কি চিৎকার, ওরে বাবারে ---- মরে গেলাম রে ----- দাদার চিল্লাচিল্লি শুনে ঘুম থেকে ধুসমুস করে উঠে দরজা খুলে বাইরে এসে দেখি-- দাদা উঠানের মাঝে গড়াগড়ি করছে। আমরা ভেবেছি না জানি কি হয়েছে। আলো জ্বালিয়ে দেখি দাদার লুঙ্গিসহ সারা গায়ে পায়খানা মেখে একাকার। প্রথমে ভেবেছিলাম বুড়ো মানুষ দাদাই হয়তো পায়খানা করেছে। কিন্তু পরে খেয়াল করে দেখি চোরেরা এই কান্ড করে গেছে। দাদা পিছলে পরে কোমরে ব্যাথা পেয়ে সাতদিন বিছনায় শুয়েছিল।

গত মাসে আমার বান্ধবী শীলার বিয়ে হয়েছে। দাওয়াত দিয়েছিল। তোমার দেয়া শাড়ি গয়না পরে দাওয়াতে গিয়েছিলাম। অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে এগুলো কে কিনে দিয়েছে। আমি বলেছি তোমার কথা। এ কথা শুনে তারা তোমার অনেক প্রশংসা করেছে।

আর বেশি কিছু লিখে তোমার মূল্যবান সময় নষ্ট করবো না। আমরা বাড়ির সবাই ভাল আছি। তুমি সুখে থাকো এই কামনা করে আজকের মতো চিঠি লেখা শেষ করছি। চিঠি পাওয়া মাত্রই চিঠির উত্তর দিও। তোমার চিঠির অপেক্ষায় এই অভাগিনী বসে রইল।

ইতি
তোমারই প্রিয়তমা
সরলা

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০

শায়মা বলেছেন: এত ভালো বঁধুটা কে ভাইয়া??? এই বঁধু পড়ালেখা করলে নিশ্চয় থিসিস পেপার লিখে ফার্স্ট কেলাস ফার্স্ট হবেই হবে!:)

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ বোন শায়মা। এত ভালো বধু এই দেশেরই মহিলা। আশির দশকে মোবাইল ই-মেইল ছিল না। চিঠি দিয়েই মনের ভাব আদান প্রদান করতে হতো। বিদেশে অনেকেই গিয়েছে তাদের বউগুলো লেখা পড়া জানতো না। অনেক ভাবীর মনের কথা তার স্বামীকে চিঠিতে লিখতে গিয়েই এধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। খুশি হলাম চিঠিটি পড়ার জন্য।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:০৭

জেন রসি বলেছেন: আমাদের ঘরের পিছনে যে কাঁঠাল গাছ আছে, সেই গাছে বড় বড় তিনটা কাঁঠাল ধরেছিল। গত সপ্তাহে চোরেরা সব কাঁঠাল চুরি করে নিয়ে গেছে। কাঁঠাল চোরে নিয়েছে তাতে আমাদের আফসোস নেই, কিন্তু চোরেরা এমন এক কান্ড করে গেছে, যা শুনলে না হেসে থাকতে পারবে না। কাঁঠাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় দাদার ঘরের দরজার সামনে ইচ্ছে মতো পায়খানা করে গেছে। দাদা শেষ রাতে যখন নামায পড়ার জন্য উঠেছে, দরজা খুলে বাইরে পা দিতেই পা পিছলে ধরুম করে পরে গিয়ে সে কি চিৎকার, ওরে বাবারে ---- মরে গেলাম রে -----

মজা পাইলাম ভাই।

ভালো থাকবেন।

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪১

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই জেন রসি। আপনি পড়েছেন জেনে খুশি হলাম। শুভেচ্ছা রইল।

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০৪

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আহ ! চিঠিটি পড়ে নস্টালজিক হলাম । কত ভাবীদের এরকম চিঠি লিখে দিয়েছি । পড়ে দিয়েছি , পোস্ট করেছি ।
কত জনকে ''দাম'' দেখিয়েছি ।
পাশের বাড়ীর এক ভাবী অনেক দিন থেকে একটা চিঠি লিখে দেয়ার জন্য পিছু নিয়েছে ।ভাইটি দুবাই । নানা আকামে সময় পাইনা ।
স্কুলে আসার পথে একদিন ভাবীটি আমার হাতে একটা চিঠি সাথে টাকা দিয়ে বলল ,এটা পোস্ট করে দিস ।
পোস্ট করতে এসে পকেট থেকে চিঠি বের করে দেখি মুখ খুলে গেছে । ভাত দিয়ে জোড়া লাগিয়েছিল ।
উতসুখ হয়ে চিঠি খুলে দেখি , ভিতরে সাদা কাগজ , ৩/৪ টা লম্বা চুল, আর কিছু তিব্বত পাউডার । আহারে ! আহারে !!

সেই থেকে ভাবীটি চিঠি লিখে দিতে বললে , আমি কখনো না করিনি ।

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪৫

প্রামানিক বলেছেন: আহারে ভাই লিটন! বাস্তব কথাই বলেছেন। সেই সময়ে ভাবীরা স্বামীর একটা চিঠির জন্য কত উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করতো। স্বামীর চিঠি পেয়ে উত্তর দেয়ার জন্য পাগোল হয়ে যেত। কিন্তু লেখা পড়া না জানায় আমাদের মত স্কুলের ছাত্রদের শরণাপন্ন হতো। তার মুখের বক্তব্য শুনে যখন সুন্দর করে গুছিয়ে লিখে পড়ে শোনাতাম তখন ভাবীরা খুব খুশি হতো। সেই স্মৃতিগুলো আজো মনে পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:

এসব চিটির শেষ নেই, ৩৫/৪০ লাখ বউদের এই অবস্হা; মুহিতকে বোধ হয় চিঠি পড়তে হয় না; উনার ঘরে ইঁদুরও নেই!

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪৬

প্রামানিক বলেছেন: মুহিত মিয়ার তো ছাগল পালতে হয় না কাজেই উনার চিঠি লেখার দরকার নাই। চমৎকার মন্তব্য শুভেচ্ছা রইল।

৫| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:১৭

রাজীব বলেছেন: এত এত ত্যাগ স্বীকার করে, দিন-রাত, মাস-বছর ধরে কষ্ট করে বিদেশে থেকে যারা রেমিটেন্স পাঠায় তাদের টাকায় আমাদের দেশ চলে।

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:৪৭

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রাজীব। আপনি ঠিক কথাই বলেছেন।

৬| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:১৩

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: চিঠি মনকাড়া হইছে।

গিয়াস ভাইয়ের কমেন্ট পইড়া হাহাকারের মত জাগলো, ভালোও লাগলো।

ভালোলাগা রইলো।

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৪০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই শতদ্রু একটি নদী। আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।

৭| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া ঐ গানটা শুনেছো??

কোনো এক গাঁয়ের বঁধুর কথা তোমার শোনাই শোনো রূপকথা নয় সে নয় ???

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:০৩

প্রামানিক বলেছেন: গানটা মনে ছিল না এখন মনে পড়েছে। ধন্যবাদ বোন শায়মা।

৮| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:০২

লেখোয়াড়. বলেছেন:
বধুঁ কোন আলো লাগল চোখে।

দারুণ লিখেছেন। ++++++

শিরোণামে বানান ঠিক করে দিন জলদি।

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:২৬

প্রামানিক বলেছেন: ভাই লেখোয়াড়, "বধু" বানানে চন্দ্রবিন্দু হবে না। সংসদ বাংলা অভিধান দেখেই শিরোণাম দিয়েছি।

৯| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২

লেখোয়াড়. বলেছেন:
আর গঁয়ের?? ওটা কি গাঁয়ের হবে? নাকি আপনার অন্য কোন ভাবনা আছে?

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

প্রামানিক বলেছেন: এই তো ভাই একটা কাজের মত কাজ করেছেন। এই দুই দিনে আকার নাই এটা আমার চোখেই পড়ল না অথচ আপনি ঠিকই দেখিয়ে দিলেন। একেই বলে শ্যেন দৃষ্টি।

১০| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৮

গোর্কি বলেছেন: পত্রে প্রকৃত আদর্শ ভালবাসার চিত্র ফুটে উঠেছে। খুব ভাল থাকুন এই বরষায়।।।

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই গোর্কি। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

১১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫১

লেখোয়াড়. বলেছেন:
আরে ব্যাপার না। ওরকম আমারো হয়।

লিখুন আরো লিখুন অজস্র।

৩১ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৫

প্রামানিক বলেছেন: ভাই এটাকে বলে প্রিন্টিং মিসটেক। বানান ভুল অথচ নিজের চোখে ধরা পড়ে না।

১২| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১০

এই স্বাধীনতা চাইনি আমি বলেছেন: ভাই আমি প্রবাসী ,আমার একমাত্র কন্যা কে আমি এখনও দেখতে পারিনি ।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০২

প্রামানিক বলেছেন: ভাই আপনার বুকের ব্যাথা আমি বুঝতে পারছি। নিজের সন্তান জন্মের পরে নিজের চোখে না দেখার কষ্ট যে কত বড় এটা যারা ভুক্তভুগী তারা ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট শেয়ার করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.