নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথম নানার বাড়ি ভ্রমণ

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

উনিশ শ’ আটষট্টি সাল। তখন এদেশটার নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। বড় মামা আমাদের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন। প্রায় একমাস থাকার পর মামা মাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুব তাড়া দিতেছিলেন। কিন্তু অগ্রাহায়ণ মাস, ধান কাটা এবং মাড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মা ইচ্ছে করলেও যেতে পারছেন না। মামাও নাছোর বান্দা, তার বড় বোনকে (আমার মাকে) সাথে না নিয়ে যাবেন না। যে কারণে মামা ধান কাটা-মাড়াই শেষ হওয়া পর্যন্ত একমাস থেকে মাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরী হলেন। তখন দুরের পথে যাতায়াতের একমাত্র বাহন হলো রেল গাড়ি আর কাছের বাহন হলো গরুর গাড়ি। রেল স্টেশন আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় চার মাইল। এতোপথ মা’র পক্ষে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই পাশের গ্রামে গিয়ে বাবা গরুর গাড়ি ভাড়া করে এলেন।

গরুর গাড়িওয়ালা সন্ধার সময় গড়ি নিয়ে এসে হাজির। রাতে গাড়িওয়ালা আমাদের বড়িতে ভাত খেয়ে শুয়ে থাকল। নানার বাড়ি যাওয়ার আনন্দে আমার আর রাতে ঘুম হলো না। মাও ঘুমালেন না। অধিক রাত পর্যন্ত নান-নানির জন্য পিঠা-চিড়া তৈরী করে সময় কাটালেন। মধ্য রাতে জামা কাপড়ের ব্যাগ আর পিঠা-চিড়ার পোটলা-পুটলিসহ গরুর গাড়িতে চড়ে রেল স্টেশনের দিকে রওনা হলাম। আমি এবং মা গরুর গাড়িতে, বাবা, মামা এবং আমাদের বড়ির দুই চাকর গফুর ভাই ও এন্তাজ ভাই গরুর গাড়ির পিছনে পিছনে হেঁটে আসছেন। আমরা যখন স্টেশনে গিয়ে পৌঁছি তখনও অনেক রাত। স্টেশনে পৌঁছার আরও একঘন্টা পর ঢংঢং করে লোহার ডান্ডা পিটিয়ে গাড়ি আসার খবর জানানো হলো। বাবা টিকিট কেটে মামার হাতে দিলেন।

রাত ঠিক চারটার সময় রেল লাইন বরাবর দক্ষিণ দিকে দূরে ছোট একটি আলো চোখে পড়ল। আলোটি ক্রমেই বড় হচ্ছে। বড় হতে হতে একসময় পুরো স্টেশন আলোকিত করে ঝকাঝক্ ঝকাঝক্ বিকট শব্দ করতে করতে এক চোখা দৈত্যের মত কয়লার ইঞ্জিনওয়ালা রেল গাড়ি এসে স্টেশনে থেমে গেল। বাবা তাড়াতাড়ি আমাদেরকে একটা কামরায় উঠিয়ে জানালার পাশের সিটে বসিয়ে দিলেন। গড়িতে তেমন একটা ভির নেই। অনেক সিট ফাঁকা পড়ে আছে। ছোট একটি কামরায় পাঁচটি ইলেক্ট্রিক বাতি জ্বলছে। কামরার মেঝেতে সুই পরলেও স্পষ্ট দেখা যায়। একটু পরেই গাড়ি হুঁ --- উঁ --- হুইসেল দিলে বাবা তাড়াতাড়ি কমরা থেকে নেমে গেলেন। গাড়ি একটা ধাক্কা দিয়েই আস্তে আস্তে গতি বাড়িয়ে চলতে লাগল।

হেমন্ত কাল, শীত শীত ভাব থাকায় গাড়ির সব জানালা আটকানো। গড়ি চলছে, বাইরে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। কিছুক্ষণ পর পর হুইসেল দিয়ে স্টেশনে গাড়ি থামছে। থামার সময় হালকা একটা ঝাকি দিচ্ছে, একটু পরেই হুইসেল দিয়ে আবার একটা ধাক্কা দিয়ে আস্তে আস্তে গতি বাড়িয়ে চলছে। প্রত্যেক স্টেশনেই গাড়ি থামছে, আর থামলেই মাঝে মাঝে গরম ডিমওয়ালা, চানাচুর ওয়ালা, পান-বিড়ি-সিগারেটওয়ালা কামরায় উঠে তার পশার অনুযায়ী চেচামেচি করে কেউ কিছু বিক্রি করছে আবার কেউ কেউ বিক্রি না করেই নেমে যাচ্ছে। যাত্রীরা হকারদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে কিছু কিনছে আবার কেউ কিছুই কিনছে না। প্রথমেই মামা আমাকে গরম ডিম কিনে ছাল ছাড়িয়ে দিলেন। আমি মজা করে খেলাম। পরের স্টেশনে চানাচুরওয়ালা কামরায় উঠে এলে মামা চানাচুর চাইতেই এক খামছা চানাচুর কৌটার মধ্যে তুলে পিয়াজ, মরিচ, তেল, মশলা দিয়ে কৌটাটা ডান হাতে ধরে বাম হাতের তালুতে ঠকাঠক্ ঠকাঠক্ ঘন তালে কয়েক বার আছাড় দিয়ে ঝালিয়ে দিল। দাম খুব বেশি নয়, এক আনা। খেয়ে দেখি খুব মজা। খুশি হয়ে খেলাম। ইতিমধ্যেই বাইরে ফর্সা হয়েছে। মামা জানালা খুলে দিলে বাইরে তাকিয়ে দেখি পূর্বদিকে সূর্য লাল হয়ে উঠছে। কিন্তু গাছ-গাছালি ঘর-বাড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম। সব পিছন দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। আমি মামাকে বললাম, মামা, গাছগুলো পিছনে দৌড়ায় কেন?
মামা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, না মামা, গাছ দৌড়ায় না, আমাদের গাড়ি দৌড়ায়। কিন্তু মামার কথা বিশ্বাস হলো না। কারণ যতবারই আমি বাইরে তাকাই ততবারই দেখি বাইরের সবকিছু পিছনে দৌড়ায়।

এক পর্যায়ে বেলা উপরে উঠে গেলে রোদে বাইরের সব কিছু ঝলমল করে উঠল। এখন বাইরের সব কিছু পরিস্কার দেখা যায়। বাইরে তাকিয়ে দেখতে দেখতেই বড় একটি স্টেশনে এসে গাড়ি থেমে গেল। আমি মামাকে প্রায় প্রত্যেক স্টেশনের নাম জিজ্ঞেস করতাম। মামা কোনটার নাম বলতেন আবার কোনটার নাম বলতে পারতেন না। এই স্টেশনের নাম জিজ্ঞেস করতেই মামা বললেন, এটা কাউনিয়া জংশন। আমি মামাকে বললাম, মামা জংশন কি?

মামা বললেন, তিন দিক থেকে রেল লাইন এসে যে স্টেশনে লাগে সেটাকে জংশন বলে। আমি মামাকে আর কোন প্রশ্ন না করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। এই স্টেশনে অনেক রেল লাইন। এতো রেল লাইন অন্য কোন স্টেশনে দেখিনি। প্লাট ফরম দু’টি। আমাদের গাড়িটি পূর্ব পার্শ্বের প্লাট ফর্মে এসে থেমেছে। স্টেশন মাস্টারের অফিসসহ হোটেল-রেস্টুরেন্ট সব এই প্লাট ফরমে। তাকিয়ে দেখি একটি হোটেলের উপরে সাইনবোর্ডে লেখা আছে মুসলিম হোটেল, তার পাশেই অন্যটিতে লেখা আছে হিন্দু হোটেল। বুঝতে বাকি রইল না যে, হিন্দু মুসলমানের জন্য আলাদা আলাদা হোটেল। একটু পরেই দুইজন কালো কোট গায়ে টিকিট চেকার কামরায় উঠে এলো। তারা উর্দুতে কথা বলতেছিল। তারই একজন মামাকে জিজ্ঞেস করলো, টিকিট বি আছে? মামা পকেট থেকে তিনটি টিকিট বের করে দেখালেন। দু’টি বড়দের টিকিট একটি আমার জন্য হাফ টিকিট। টিকিট চেকার প্রত্যেকটি টিকিটের গায়ে পেন্সিল দিয়ে দাগ দিয়ে দিলেন। বিনা টিকিটে কোন যাত্রী ছিল না। সবার টিকেট চেক করার পর দুইজনই নেমে গেলেন।

এই প্লাট ফরমে মানুষের সমাগমও অনেক বেশি হকারদের সমাগমও বেশি। হকারদের কণ্ঠে বিচিত্র সুর। খুব ভালো লাগছিল। এই চা গর- - -ম, এই চানাচুর- - - , এই ঝালমুড়ি- - -, এই পান-বিড়ি-সিগারে- - -ট ইত্যাদি বিচিত্র সুর শুনতে শুনতেই হঠাৎ আমাদের কামরার কাছে এসে এক জন হকার চেচিয়ে উঠল, লাগবে আরবের খুরমা খেজুর। আরবের খুরমা খেজুরের নাম শুনেই মামার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকালাম। মামা অন্য দিকে তাকানো ছিল। আস্তে আস্তে বললাম, মামা আরবের খুরমা খেজুর! আমার কথা শুনে মামা আমার দিকে তাকালেন। আমার বলার ভাব ভঙ্গি আর আগ্রহ দেখে মামা খেজুরওয়ালাকে জানালা দিয়ে ডাক দিলেন, এই খেজুরওয়ালা এই দিকে আয়। খেজুরওয়ালা কাছে এলে মামা বললেন, খেজুরের দাম কত রে?
খেজুরওয়ালা বলল, দুই আনা ছটাক।
দুই আনা ছটাক দাম শুনেই মামা বললেন, আধা পোয়া দে অর্থাৎ দুই ছটাক।
খেজুরওয়ালা ছোট একটি দাড়ি পাল্লা দিয়ে আধা পোয়া খেজুর মেপে দিলে আমি খেজুর হাতে নিয়ে খুব মজা করে খেতে লাগলাম। মাকে বললাম, মা খাও, খুব মজা। মা মাথা নেড়ে জানালেন খাবে না। মাথা উপর নিচে ঝাকিয়ে মামাকে বললাম, মামা খাবেন? মামা দু’তিনটি খেজুর হাতে নিয়ে আর নিলেন না।

খেজুর খেতে খেতেই গাড়ি ছেড়ে দিল। হকারদের বিচিত্র সুরের ডাকাডাকি বন্ধ হলো। গড়ি আস্তে আস্তে গতি বাড়িয়ে চলছে। কিছুদুর যাওয়ার পরেই হঠাৎ কানে ঝমঝম শব্দ এলো। এরকম শব্দ আগে কখনও শুনি নাই। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি লোহার বড় বড় পিলার একটার পর একটা পিছনে সরে যাচ্ছে। অনেক বড় ব্রিজ। নিচে বিশাল নদী। নদীতে কিছু নৌকা পাল তুলে, আবার কিছু নৌকা দাড় টেনে কেউ উজান দিকে কেউ ভাটির দিকে যাচ্ছে। মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, মামা এটা কোন নদী? মামা বললেন, এটা তিস্তা নদী। জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে পিলে চমকে গেল। ট্রেন থেকে অনেক নিচে পানি। কোন কারণে ট্রেন থেকে নিচে পরে গেলে আর রক্ষা থাকবে না। খুব ভয় ভয় করতে লাগল, নিচে না তাকিয়ে দুরে নদীর দৃশ্য দেখতে দেখতেই গাড়ি তিস্তা ব্রিজ পার হয়ে এলো। এর পর তিস্তা স্টেশনে গাড়ি থেমে একটু পরেই ছেড়ে দিল। এরপর লালমনির হাট স্টেশনে এসে গাড়ি থামল। এটিও অনেক বড় স্টেশন। লালমনির হাটে অনেকক্ষণ গাড়ি দাঁড়িয়ে রইল। মামা আমাকে সাথে নিয়ে নিচে নামল। গাড়ির উপর দিকে তাকিয়ে দেখি একটি লোক লম্বা একটি কালো পাইপ নিয়ে গাড়ির উপর দিয়ে হাঁটছে। আমি মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, মামা লোকটি পাইপ দিয়ে কি করে?
মামা বলল, গাড়িতে পানি দেয়।

উপরে অনেক গুলো লোহার পাইপ একটু পরপরই লাগানো আছে। লোকটি লোহার পাইপগুলোর একটির মুখে রাবারের আঁকাবাঁকা নল লাগিয়ে গোল একটি চাবি ঘুরিয়ে দিল। চাবি ঘুরানোর সাথে সাথেই পানি চির চিরিয়ে পাইপের লিক হওয়া ছিদ্র দিয়ে চিকন ধারায় বের হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে চাবি বন্ধ করে দিলে পানি পড়া বন্ধ হলো। লোকটি পাইপ খুলে নিয়ে গাড়ির ছাদের উপর দিয়ে লাফ দিয়ে এক বগি থেকে আরেক বগিতে চলে গেল। সেখানেও লোহার পাইপের সাথে নল লাগিয়ে সেই বগির টাঙ্কিতেও পানি দিল। এভাবে পুরো গাড়ির প্রত্যেকটি বগিতে পানি দিয়ে লোকটি পাইপসহ নিচে নেমে এলো। এর কিছুক্ষণ পরেই স্টেশনে ঝুলিয়ে রাখা লোহার ডান্ডায় ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজালে মামা তাড়াতাড়ি আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলেন। গার্ড বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে সবুজ পতাকা হাতে নিয়ে ডাইনে বামে নাড়াতে থাকলে গাড়ি হুইসেল দিয়ে ছেড়ে দিল।

লালমনির হাট স্টেশন থেকে গাড়ি ছেড়ে তুষ ভান্ডার, কাকিনা, হাতি বান্ধা, বড়খাতা, পার হয়ে আমরা যখন আমাদের গন্তব্য বাবুরা স্টেশন এসে পৌঁছি তখন প্রায় দুপুর হয়েছে।

গাড়ি থেকে নেমে বাবুরা স্টেশনের পশ্চিম দিকে বাজারের ভিতর দিয়ে হাঁটছি। মামার দুই হাতে ব্যাগ। মামা আগে আগে হাঁটছে আমরা মামার পিছনে পিছনে হাঁটছি। বাজারের একটি মিস্টির দোকানে নিয়ে মামা আমাকে কিছু মিস্টি খাওয়ালো। মামাও কিছু খেলেন কিন্তু অনঅভ্যাসের কারণে মা হোটেলে বসে কিছুই খেলেন না। কারণ বাড়িতেও মা অপরিচিত লোকের সামনে কখনও ঘোমটা খোলেন না সেই কারণে হোটেলে অপরিচিত মানুষ জন থাকায় লম্বা ঘোমটা টেনে বসে রইলেন। মামা মা’র অবস্থা বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি হোটেল থেকে আমাদের সাথে নিয়ে বের হয়ে এলেন।

বাজার থেকে অল্প কিছু পশ্চিমে গিয়েই একটা ছোট নদী চোখে পড়ল। এটার নাম বুড়ি তিস্তা। বুড়ি তিস্তা পার হতে কোন নৌকা লাগল না। অল্প পানি হেঁটেই পার হলাম। নদীর ওপারে ধুধু বালুচর। বালুচরের মাঝ দিয়ে মানুষ চলাচলের মেঠো পথ। সেই পথ দিয়ে বালুচর হাঁটতে লাগলাম। কিছুদুর গিয়ে আমি হাঁপিয়ে গেলাম। মা আমাকে কোলে তুলে নিল। কিন্তু কোলে নিয়ে বেশিদুর হাঁটতে পারলেন না। হাঁপিয়ে গেলেন। অবশেষে মা আমাকে নিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লেন, আমাদের অবস্থা দেখে মামাও ব্যাগ নামিয়ে আমাদের সাথে বসে পড়লেন। কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে আবার আমরা হাঁটা শুরু করি। কিছুদুর যাওয়ার পর আমার পক্ষে আর হাঁটা সম্ভব হলো না। মামা তার হাতের ব্যাগ দু’টা এক ঘাড়ে নিয়ে অন্য ঘাড়ে আমাকে তুলে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন। কিছুদুর যাওয়ার পর মামা হাঁটলেও মাকে নিয়ে সমস্যা দেখা দিল। মা ঘাসের উপর বসে পরে মামাকে বকাবকি করতে লাগলেন। মা মামাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এতো রাস্তা হাঁটতে হয় তুই আগে কইলি না ক্যা, তাইলে তো আমি আইসি না।

মামা মার কথায় ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে বললেন, আরে বুবু বেশি রাস্তা নাই তো, আর একটু সামনে গেলেই বাড়ি পাওয়া যাইবো।

আর একটু করতে করতে মামা আমাদের অনেক রাস্তা হাঁটিয়ে নিয়ে এলেন। মা বিরক্ত হয়ে মামাকে বললেন, আর একটু সামনে আর একটু সামনে করতে করতে তো বেলা আসর ওক্ত হইল, তারপরেও তর আর একটু রাস্তা শেষ হয় না। তোরা কোন জায়গায় বাড়ি করছারে। হাঁটতে হাঁটতে তো আমার জান থাকে না।

মামা মা’র কথায় অনুনয় বিনয় করে বলতে লাগলেন, বুবু আর সামান্য পথ। এই টুকু হাঁটলেই তিস্তা নদী। ওই যে দেখা যায় নদী। পশ্চিম দিকে চায়া দেখ। ্ওই যে নদী। ওই নদী পার হইলেই আমাগো বাড়ি।
মামার এ কথা বলার পরও আরো প্রায় এক মাইলের মত পথ হাঁটতে হলো। এই এক মাইল হাঁটতে গিয়ে মা মামাকে বকাবকি করতে করতে তার হাঁটার ঝাল মিটিয়ে নিলেন। আমার মা তার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়, যে কারণে এতো বকাবকির পরও মামা মা’র কোন কথার উত্তর দিলেন না এবং বিরক্তও হলেন না।

এই অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে তিস্তা নদীর পাড়ে যখন এসে পৌছলাম তখন পশ্চিম দিকে বেলা ঢলে পড়েছে। খেয়া নৌকা ওপারে ছিল। আমাদের দেখে দু’জন যাত্রী নিয়ে তাড়াতাড়ি এপার চলে এলো। খেয়া নৌকায় যখন নদী পার হয়ে এলাম তখন সুর্য ডুবে ডুবে অবস্থা। আরো প্রায় দুই মাইলের মত রাস্তা হেঁটে নানার বাড়ি যখন পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যা পার হয়ে অন্ধকার নেমে এসেছে। মামা আমাদের বাইরে রেখেই আগে আগে বাড়ি ঢুকে হাঁক ছাড়লেন, সব বাইরে বাড়াও রে-- দেখো কেডা আইছে। মামার ডাক শুনে নানী দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলেন। মা নানীর গলা ধরে কেঁদে দিলেন। নানীও কান্না শুরু করে দিলেন। কান্না অবস্থায় নানী মাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। এরমধ্যে নানা বাইরে কোথায় ছিল খবর পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে মা’র কান্নার আগেই নানা কেঁদে দিলেন। কান্না করতে করতে মাকে বলতে লাগলেন, মা তুই আইছস। আমি প্রতি দিনই তর লাইগা পথের দিকে চায়া থাকি। বহুদিন পরে কাছে পাওয়ায় মেয়ের প্রতি বাবার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার সে কি দৃশ্য, সে কথা বলে বুঝানো যাবে না!

এবার নানা মাকে ছেড়ে দিয়ে নানীকে লক্ষ্য করে বললেন, আমার নাতিডা কই গো?
নানি আমাকে ধরে নিয়ে নানার কাছে দিলে নানা আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে নানিকে ধমক দিয়ে বললেন, এই ব্যাক্কল, কলাগাছের মত খারায়া রইছো ক্যা? হাঁটতে হাঁটতে নাতির পাও দুইডা ফুইলা গ্যাছে। দুইডা বড় বড় চোখ থাকতেও কেউ দেহ নাই, তাড়াতাড়ি পানি গরম করো। গরম পানি দিয়া ওগো দুই মাও বেটার পাও ধুইয়া দাও। বলেই নানা আমাকে নিয়ে উঠানে পাতা জলচৌকিতে বসে পড়লেন। একটু পরে নানী গরম পানি নিয়ে এসে নিজের হাতে আমার দুই ঠ্যাংগ পানি ঢেলে ঢেলে ধুয়ে দিলেন। নানা-নানীর এই আদর আমি জীবনেও ভুলতে পারবো না।

(চলবে)

মন্তব্য ৭৪ টি রেটিং +১৬/-০

মন্তব্য (৭৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১২

ডাঃ মারজান বলেছেন: ভাই নানা বাড়ির গল্প খুব ভালো লাগছে। নানা বাড়ি মিস করছি। চলুক আপনার গল্প। ভালো থাকবেন

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ডাঃ মারজান। আপনার মূল্যবান মন্তব্য পড়ে ভাল লাগল। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৪

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: নানাবাড়ির অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন!!!
লিখব একদিন, অনেক শুভেচ্ছা প্রামানিক ভাই!!
ভাল লেগেছে ---------

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ কামরুন্নাহার আপা। আপনার নানা বাড়ির স্মৃতি কবে লিখবেন? তাড়াতাড়ি চাই।

৩| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২০

ঢাকাবাসী বলেছেন: নানাবাড়ি ঐ সময়ে ছোটদের কাছে খুব প্রিয় ছিল। আপনার নানাবাড়ির গল্প খুব ভাল লাগল, নিজেদেরটা্র কথা মনে পড়ল আর কি! খুব ভাল লেগেছে।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৭

প্রামানিক বলেছেন: ঠিকই বলেছেন ভাই, আগে নানা নানীরা নাতীদের যে আদর যত্ন করতো তার তুলনা হয় না। এখনও নানা নানীদের আদর যত্ন কমে নাই তবে ডিজিটালের কারণে আগের মত মজা পাওয়া যায় না। মন্তব্যর জন্য অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৪| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মা তুই আইছস। আমি প্রতি দিনই তর লাইগা পথের দিকে চায়া থাকি। বহুদিন পরে কাছে পাওয়ায় মেয়ের প্রতি বাবার হৃদয় নিংরানো ভালবাসার সে কি দৃশ্য, সে কথা বলে বুঝানো যাবে না!

আহা হৃদয় নিংড়ানো বিশূদ্ধ খাঁটি সেই প্রেম তুলনাহীন!

আমার নানী পাইনি- এক খালা ছিলেন! এইরকম মায়াবতী! নিজের ছেলেকে ঘুমে রেখে আমার পায় সুড়সুড়ি দিয়ে জগলেই ঠোটে আঙুল দিয়ে ইশারা করতেন চুপ! শেষ রাতে উঠিয়ে নিয়ে বাবুই পাখির আস্ত রোস্ট, খেজুরের রস সহ বিশেষ সব খাবার খাওয়াতেন! আহা সেই সোনালী দিনগুলো........

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৮

প্রামানিক বলেছেন: যাক ভাই, নানী পাননি সেই অভাবটা হয়তো খালা্য় পুরণ করার চেষ্টা করেছে। আপনার স্মৃতিচারণ পড়ে আনন্দিত হলাম। শুভ্চেছা রইল।

৫| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৩

চ্যাং বলেছেন: মচৎকার লেখা! :D

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ চ্যাং ভাই, কেমন আছেন?

৬| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৩

কিরমানী লিটন বলেছেন: চমৎকার মুগ্ধতায় এক নিঃশ্বাসে পড়লাম- নানাবাড়ি নাইওরের লিখনিটা পড়লাম-কিছুটা স্মৃতিকাতর হলাম, অনেক ভালোলাগা নিয়ে পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম...
শুভকামনা জানবেন প্রিয় প্রামানিক ভাই ...!!! +++

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই কিরমানী লিটন, আপনি মনোযোগসহকারে পড়েছেন যেনে খুশি হলাম। শুভেচছা রইল।

৭| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৬

মেরিনার বলেছেন: আজকের দিনটা আমার খুব সুন্দে ছিল - আপনি আমার দিনটাই নষ্ট করে দিলেন। মনের উপর নস্টালজিয়ার গাঢ় এক পরত নীল রঙ ঢেলে দিলেন। বিশেষ করে ট্রেনের ছবিটা দেখে মনটা হু হু করে উঠলো!

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২২

প্রামানিক বলেছেন: আমাদের ছোটবেলার স্মৃতি যাদের কাছাকাছি তাদের যে কোন একজনের স্মৃতিচারণ শুনলে নিজের স্মৃতিকথা মনে পড়ে যায়। আপনারও হয়তো তাই হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য।

৮| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: নানা বাড়ির স্মৃতিচারণ মূলক গল্প।

বেশ ভালই লাগছে। পরেরটার অপেক্ষায় রইলাম।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৬

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রক্তিম দিগন্ত। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৯| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৪

মোঃমোজাম হক বলেছেন: চমৎকার , মনে হচ্ছিল আমার ছোট বেলার কাহিনী আপনি লিখে ফেলেছেন :)

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৪

প্রামানিক বলেছেন: আমরা যারা গ্রামে বসত করেছি তাদের সবার নানা বাড়ির কাহিনী প্রায় একই রকম। যে কারণে আমার কাহিনীর সাথে আপনার জীবন কাহিনীর মিল আছে। মন্তব্যর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

১০| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৪

আরিফুর রহমান হাওলাদার বলেছেন: সো ইমোশনাল

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আরিফুর রহমান হাওলাদার, অনেক অনেক শুভ্চেছা।

১১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৪

অশ্রুকারিগর বলেছেন: সারাদিনের ব্যস্ত সময়ের পর ব্লগে ঢুকেই মনটা ভালো হয়ে গেল আপনার স্মৃতিচারণ পড়ে!
ভালোলাগা নেবেন।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকব।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৫

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অশ্রুকারিগর, আপনার মন্তব্য পড়ে খুশি হলাম শুভেচ্ছা রইল।

১২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৬

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: আপনার সহজ সরল সেইসব দিনগুলোর কথা পড়তে ভালোলাগে প্রামানিক ভাই। শুভকামনা রইলো। :)

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৭

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভা্ই শতদ্রু একটি নদী, আপনার মূল্যবান মন্তব্যর জন্য অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

১৩| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৪

সাহসী সন্তান বলেছেন: নানাবাড়ির স্মৃতি কথন অনেক ভাল লাগলো ভাই! সাবলিল বর্ননার সাথে বেশ কিছু কমিক্স! সব মিলিঢে অসাধারণ!

বিঃদ্রঃ- ভাই বাদ দিয়ে কমেন্টের উত্তর করলেন কেন? ব্লগের নিতীমালা বহির্ভূত কর্মকান্ডের জন্য আপনার লেখার উপর সাড়ে সাত পারসেন্ট ভ্যাট আরোপ করা হলো! কোথায় পরিশোধ করতে হবে জানেন তো? :P

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৩

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সাহসী সন্তান, আমার উপরে ভ্যাট না ধরে ইন্টারনেট ওয়ালাদের উপর ভ্যাট ধরা দরকার। দু'টা মন্তব্য করতে না করতেই নেট চলে গেল আর কিছু দেখতেই পেলাম না, কামরুন্নাহার আপার মন্তব্য করা ছিল এখন দেখি নাই।। ধন্যবাদ

১৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৬

কালের সময় বলেছেন: অসাধারণ পড়ে ভালো লাগলো প্রামানিক ভাই ।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই কালের সময়। অনেক অনেক শুভেচছা রইল।

১৫| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৮

শিশির খান ১৪ বলেছেন: আমিও ছোটো বেলা ট্রেন করে ময়মনসিং নানা বাড়ি যেতাম মা আর খালার সাথে আপনার লেখা পরে সেই স্মৃতি গুলো ফিরে আসছে

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩৫

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই শিশির খান। আপনার ছোট কালের স্মৃতি মনে পড়ায় খুশি হলাম। শুভ্চেছা রইল।

১৬| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৫

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আপনার নানা বাড়িতে কত বছর পর গিয়েছিলেন আপনার মা?

আপনার লেখা পড়ে আমারও নানা বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০০

প্রামানিক বলেছেন: সম্ভাবত আট দশ বছর পর। আমার জন্মের পরে আর নানা বাড়ি যাওয়া হয়নি। যে কারণে আমার প্রথম নানা বাড়ি যাওয়া। এর কারণ হলো নানারা নদী ভেঙে অনেক দূরে চলে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। ধন্যবাদ আপনাকে।

১৭| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৩২

বিপ্লব06 বলেছেন: নানা বাড়ি!!! নাতি হওয়ার প্রিভিলেজই আলাদা। সাত খুন মাপ। আমার নানা খুব রাগী ছিল, একটা ধমক দিলে সবাই জড়সড় হইয়া যাইত!

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০১

প্রামানিক বলেছেন: নানা যত রাগীই হন না কেন নাতীদের কাছে দুর্বল থাকে। ধন্যবাদ

১৮| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৩৬

অমাত্রিক সমীকরণ বলেছেন: হয়তো কিছু স্মৃতিকাতরতার স্পর্শে চোখের কোনাটা জ্বালাপোড়া করলো হঠাৎ।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৩

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অমাত্রিক সমীকরণ। ঠিকই বলেছেন, এখন যাদের নানা বাড়ি স্মৃতির পাতায় চলে গেছে তাদের কাছে আমার এ কাহিনী চোখের জ্বালাপোড়ার মতনই হবে। কারণ পুরোনো স্মৃতি মনে পড়লেই বর্তমানকে ভাল লাগে না। ধন্যবাদ

১৯| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৯

হামিদ আহসান বলেছেন: অাপনার জীবন কাহিনী মানেই দারুন কিছু৷ ভাল লাগা জানবেন৷
চলতে থাকুক ...।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ হামিদ ভাই, অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

২০| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৪

রোষানল বলেছেন: এই সুখ সৃতিটা খুব ভাল লাগলো চলুক...

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভা্ই রোষানল। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

২১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৭

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আহ !! এখনকার ছেলে মেয়েরা নানা বাড়ি নামক স্বর্গপুরীর সাথে তেমন পরিচিত নয় ।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৬

প্রামানিক বলেছেন: পরিচয় হবে কি করে বুদ্ধি হওয়ার আগেই কিন্ডারগার্টেনের জাতাকলে থাকে। ধন্যবাদ ভাই গিয়াস লিটন। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

২২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ভালো লাগলো।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৬

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই দেশ প্রেমিক বাঙালী। অনেক অনেক শুভেচছা রইল।

২৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: কী সুন্দর এই বাড়ি ফেরা! অনেক ভালো লাগলো পড়তে।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৭

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই হাসান মাহবুব। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

২৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৮

এম মিজানুর রহমান বলেছেন: Keu jodi aalu vorta banate jesob kaj (aalu shidho kora, piaj ana khosha sarano and so on...............) tahole ami 5 hazar shobdo babohar korte parbo kintu pathok er kase khub biroktkor hobe noy ki ? Nana bari beranor golpo onekta shei rokomer hoyese . Ta sara doy shunno ro er babohar na kore boy shunno lekha bemanan hoyese. Ashakori lekhok aamar shathe ekmot hoben.

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৫

প্রামানিক বলেছেন: আপনার কথা বুঝতে পেরেছি। ধন্যবাদ আপনাকে

২৫| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৪

মামুন রশিদ বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণে সময়টাকে তুলে এনেছেন ।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৬

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মামুন রশিদ। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

২৬| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫

শামছুল ইসলাম বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম।

প্রামানিক ভাইয়ের স্মৃতিচারণ মানেই দারুণ একটা কিছু---হয় কাহিনী শেষ করার পরও মনে মনে হাসতে থাকি, না হয় একটা বেদনার ছায়ায় মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়, মিশ্র অনুভূতি -তাও হয়।

তবে আপনার প্রথম নানা বাড়ি ভ্রমণ শুধু অনুভূতি জাগিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, এর বর্ণনা ভঙ্গি আমার কাছে অত্যন্ত উঁচু মানের সাহিত্য মনে হয়েছে। বিনীতভাবে দু'একটা উদ্ধৃতি দিতে চাই।

প্রথম দেখা কয়লার রেল গাড়ির বর্ণনাটা সত্যি অতুলনীয়ঃ
//রাত ঠিক চারটার সময় রেল লাইন বরাবর দক্ষিণ দিকে দূরে ছোট একটি আলো চোখে পড়ল। আলোটি ক্রমেই বড় হচ্ছে। বড় হতে হতে একসময় পুরো স্টেশন আলোকিত করে ঝকাঝক্ ঝকাঝক্ বিকট শব্দ করতে করতে এক চোখা দৈত্যের মত কয়লার ইঞ্জিনওয়ালা রেল গাড়ি এসে স্টেশনে থেমে গেল।//

চলন্ত রেল থেকে বিস্ময়াভিভূত বালকের চোখে দেখা প্রকৃতিঃ
//মামা জানালা খুলে দিলে বাইরে তাকিয়ে দেখি পূর্বদিকে সূর্য লাল হয়ে উঠছে। কিন্তু গাছ-গাছালি ঘর-বাড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম। সব পিছন দিকে দৌড়ে যাচ্ছে।//

হকারদের সুরটা যেন কানে বাজছেঃ
//হকারদের কণ্ঠে বিচিত্র সুর। খুব ভালো লাগছিল। এই চা গর- - -ম, এই চানাচুর- - - , এই ঝালমুড়ি- - -, এই পান-বিড়ি-সিগারে- - -ট//

কেজির এই যুগে ছটাকের হিসাবটাতো প্রায় ভুলতেই বসেছিলামঃ
//খেজুরওয়ালা বলল, দুই আনা ছটাক।
দুই আনা ছটাক দাম শুনেই মামা বললেন, আধা পোয়া দে অর্থাৎ দুই ছটাক। //

ঝমঝম শব্দে ক্ষুদে বালকের তিস্তা আবিষ্কারঃ
//কিছুদুর যাওয়ার পরেই হঠাৎ কানে ঝমঝম শব্দ এলো। এরকম শব্দ আগে কখনও শুনি নাই। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি লোহার বড় বড় পিলার একটার পর একটা পিছনে সরে যাচ্ছে। অনেক বড় ব্রিজ। নিচে বিশাল নদী। নদীতে কিছু নৌকা পাল তুলে, আবার কিছু নৌকা দাড় টেনে কেউ উজান দিকে কেউ ভাটির দিকে যাচ্ছে।//

কৌতুহলী ক্ষুদে বালকের জিজ্ঞাসু দৃষ্টিঃ
//গাড়ির উপর দিকে তাকিয়ে দেখি একটি লোক লম্বা একটি কালো পাইপ নিয়ে গাড়ির উপর দিয়ে হাঁটছে। আমি মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, মামা লোকটি পাইপ দিয়ে কি করে?
মামা বলল, গাড়িতে পানি দেয়।//

সেকালের অনেক মাই কিন্তু এমনই ছিলঃ
//মা হোটেলে বসে কিছুই খেলেন না। কারণ বাড়িতেও মা অপরিচিত লোকের সামনে কখনও ঘোমটা খোলেন না সেই কারণে হোটেলে অপরিচিত মানুষ জন থাকায় লম্বা ঘোমটা টেনে বসে রইলেন। মামা মা’র অবস্থা বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি হোটেল থেকে আমাদের সাথে নিয়ে বের হয়ে এলেন।//

স্নেহময়ী মাঃ
//বালুচরের মাঝ দিয়ে মানুষ চলাচলের মেঠো পথ। সেই পথ দিয়ে বালুচর হাঁটতে লাগলাম। কিছুদুর গিয়ে আমি হাঁপিয়ে গেলাম। মা আমাকে কোলে তুলে নিল।//

আর মামার কাছে ভাগ্নের আদর চিরকালইঃ
//মামা তার হাতের ব্যাগ দু’টা এক ঘাড়ে নিয়ে অন্য ঘাড়ে আমাকে তুলে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন। //

মামা যে একটু চিকন বুদ্ধির, তাতে সন্দেহ নেইঃ
//মামা মার কথায় ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে বললেন, আরে বুবু বেশি রাস্তা নাই তো, আর একটু সামনে গেলেই বাড়ি পাওয়া যাইবো। //

এমন মিলন মেলায়, আনন্দ-বেদনায়, পাঠকও নিশ্চুপ রয়ঃ
//সব বাইরে বাড়াও রে-- দেখো কেডা আইছে। মামার ডাক শুনে নানী দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলেন। মা নানীর গলা ধরে কেঁদে দিলেন। নানীও কান্না শুরু করে দিলেন। কান্না অবস্থায় নানী মাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। এরমধ্যে নানা বাইরে কোথায় ছিল খবর পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে মা’র কান্নার আগেই নানা কেঁদে দিলেন। কান্না করতে করতে মাকে বলতে লাগলেন, মা তুই আইছস। আমি প্রতি দিনই তর লাইগা পথের দিকে চায়া থাকি। বহুদিন পরে কাছে পাওয়ায় মেয়ের প্রতি বাবার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার সে কি দৃশ্য, সে কথা বলে বুঝানো যাবে না! //

নানা-নানীর প্রাণঢালা আদর-ভালবাসা, পাঠকের স্মৃতির মণিকোঠায় জেগে রবে অনেক কালঃ
//হাঁটতে হাঁটতে নাতির পাও দুইডা ফুইলা গ্যাছে। দুইডা বড় বড় চোখ থাকতেও কেউ দেহ নাই, তাড়াতাড়ি পানি গরম করো। গরম পানি দিয়া ওগো দুই মাও বেটার পাও ধুইয়া দাও। বলেই নানা আমাকে নিয়ে উঠানে পাতা জলচৌকিতে বসে পড়লেন। একটু পরে নানী গরম পানি নিয়ে এসে নিজের হাতে আমার দুই ঠ্যাংগ পানি ঢেলে ঢেলে ধুয়ে দিলেন।//

একটা সুন্দর ভাল লাগায় ভরা দুপুর উপহার দেওয়ার জন্য প্রামানিক ভাইকে ধন্যবাদ।

ভাল থাকুন। সবসময়।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২

প্রামানিক বলেছেন: ভাই সামছুল ইসলাম, আপনি এত সুন্দর করে আমার লেখার খুটিনাটি তুলে ধরবেন কল্পনাও করি নাই। আপনার মূল্যায়ন মূলক মন্তব্য পড়ে অভিভূত হলাম। আন্তরিকতার সাথে আমি আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

২৭| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণ!!
ছোট বিষয়গুলো ও দারুন কাব্যিক
ভাবে তুলে এনেছেন। বিলের দেশের মানুষ আমরা।
রাস্তা ঘাট তেমন একটা ছিলনা বিধা
আমার মামা বাড়ি যেতে হতো নৌকায়।
সে এক দারুন সময় ছিলো বটে। আজকালকার
ছেলে মেয়েরা মামার বাড়ির মজাই বুঝলোনা। হয়তো
দিনে দিনেই ফিরতে হয় আপন ডেরায়!!
ধন্যবাদ প্রমানিক ভাই নষ্টালজিয়াতে ডুবাবার জন্য।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ নুরু ভাই, আপনি ঠিকই বলেছেন এখনকার ছেলেরা নানার বাড়ির মজাই পায় না।

২৮| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২

খোলা মনের কথা বলেছেন: অসাধারন লেখারে ভাই আপনার। লেখাটা এত তাড়াতাড়ি না ফুরালে ভাল হত যে। আগামী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৩

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই খোলা মনের কথা। আপনার মন্তব্য পড়ে উৎসাহবোধ করলাম। শুভেচছা রইল।

২৯| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৭

এস কাজী বলেছেন: আহ নানার বাড়ি। চমৎকার হয়েছে প্রামানিক ভাই। চলুক।


০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই এস কাজী, অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

৩০| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৩

গেম চেঞ্জার বলেছেন: গ্রামের পথঘাট, নদী, জীবনযাত্রা, জীবনবোধ, চাওয়া, ব্যক্তিত্ব, ঐসময়ের মানুষদের হালচাল কতকিছুই উঠে আসলো প্রামানিক ভাই। আপনার এপিক পোস্টে প্লাস না দিয়া কি উপায় আছে?

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৫

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই গেম চেঞ্জার, আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক উৎসাহ পেলাম। অনেক অনেক শুভেচছা রইল।

৩১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:

মামার বাড়ী এত দুর? চিটাগং'এর মানুষ মেয়েকে কাছেই বিয়ে দেয়।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৬

প্রামানিক বলেছেন: মামার বাড়ি দূরে ছিল না নদী ভঙনের কারণে দূরে চলে গেছে। ধন্যবাদ ভাই চাঁদ গাজী।

৩২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৭

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: আহা...........মধূ মধূ

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৭

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ কি করি আজ ভেবে না পাই, শুভেচ্ছা রইল।

৩৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

সুমন কর বলেছেন: স্মৃতিচারণ পড়তে ভালোই লাগল। অতীত থেকে কিছুটা ঘুরে আসলাম।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সুমন কর। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

৩৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৩

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: দারুন দারুন ---------- চলুক -----------

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ বোন লা্ইলী আরজুমান খানম লায়লা। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৩৫| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: স্মৃতিতাড়িত লেখা! ভালো লেগেছে । নিজের নানার বাড়ির কথা মনে পড়ে গেলো ।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রূপক বিধৌত সাধূ। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল ।

৩৬| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪২

অগ্নি সারথি বলেছেন: চলুক তবে নানা বাড়ির গল্প। সাথে আছি। ভাললাগা।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অগ্নি সারথি। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

৩৭| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১০

মানস চোখ বলেছেন: আহারে 'প্রামানিক' ভাই আপনি সবার সঙ্গে আমাকেও ছোট বেলার কথা মনে করিয়ে দিলেন!!!!!
সব বাচ্চাদেরই মনে হয় একই ফিলিং হয় প্রথম ট্রেনে উঠলে সব গাছ-পালা পেছনের দিকে দৌড়ায় :) :) !!!!!
ছোট বেলায় নানা বাড়ি যাওয়াই ছিল সবচেয়ে এক্সাইটিং ব্যপার সারা বছর এই আশাতেই বসে থাকতাম!!!!
ভালো থাকবেন!!!!

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মানস চোখ। আপনি কথা ঠিকই বলেছেন, ছোট কালে সবা্রই নানা বাড়ির দিকে একটা ঝোক থাকে। এটা থেকে আপনি আমি কেহই বাদ নই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.