নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
এপ্রিলের মাঝামাঝি একদিন বিকাল বেলা মহুরি চাচা তিন ছেলে মেয়েসহ পুরো পরিবার নিয়ে এসে হাজির। চাচার ছোট ছেলে ঘ্যান ঘ্যান করে কাঁদছে। চাচার মাথায় ছালার বস্তা। বড় ছেলের হাতে দুইটি বাচ্চাসহ রাম ছাগল। চাচার বড় মেয়ে আইভি আপার বগল তলে মাঝারি সাইজের একটা ব্যাগ। চাচীর কাঁকালেও একটি কাপড়ের পোটলা। একটি পরিবার দেশান্তরি হলে নাটক সিনেমাতে যে অবস্থা দেখে থাকি ঠিক চাচাদের পুরো পরিবার যখন আমাদের বাড়িতে পৌঁছেছিল তখন ঐরকমই দৃশ্যটি ছিল।
মহুরি চাচা আমার আপন খালুর ছোট ভাই। রংপুর শহরে বসবাস করতেন। খালু সবার বড় ছিলেন। রংপুর জেলা জজকোর্টের সিনিয়র উকিল এ্যাডভোকেট নেসার আহমেদ উকিল আমার খালুর মেজো ভাই। মহুরী চাচা সবার ছোট।
চাচাতো ভাইবোনগুলোর চোখ মুখ শুকিয়ে আমচুর হয়ে গেছে, শুকনা মুখ নিয়েই তিন ভাইবোন আমাদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। তারা যে ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত তা তাদের শুকনো চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমাদের প্রতি তাদের ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার কারণ হলো-- মহুরী চাচা আমাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে যাতায়াত করলেও এই চাচাতো ভাইবোনগুলো কখনো আসে নাই। আমাদের বাড়ি থেকে রংপুর শহর শত মাইল দূরে হওয়ায় তাদের বাসায় একমাত্র বাবা ছাড়া আমাদের কারো যাতায়াত ছিল না। যে কারণে বাবার সাথে পরিচয় থাকলেও আমাদের সাথে পরিচয় ছিল না। প্রথম দেখায় তারা বুঝতে পারছিল না কাকে কি বলবে। অচেনা অজানা অবস্থায় কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আমাদের বাড়ির লোকদের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েছিল।
চাচী ছেলে মেয়ে নিয়ে উঠানে দাঁড়ানো ছিল, এ অবস্থায় মা চাচীকে ঘরে গিয়ে বসতে বললে চাচী কোন কথা না বলে সরাসরি ঘরে ঢুকে খালি চৌকির উপর সটান শুয়ে পড়ে। কতটা ক্ষুধার্ত আর ক্লান্ত হলে একটা মানুষ প্রথম প্রথম আত্মীয়ের বাড়ি এসেই খালি চৌকির উপর ধপাস করে শুয়ে পড়তে পারে তা সেই সময়ের পরিস্থিতি না দেখলে বিশ^াস করা কঠিন।
আমাদের হাঁড়িতে সবসময় দুই একজনের ভাত বাড়তি থাকতো। এই নিয়মটি শুধু আমাদের বাড়ি নয় তখনকার বেশির ভাগ গৃহস্থ বাড়িতেই হিসাবের চেয়ে বেশি ভাত রান্না করতো। তখনকার সময় এখনকার মতো যোগাযোগ করার জন্য আধুনিক কোন প্রযুক্তি ছিল না। কোন মেহমান কারো বাড়ি বেড়াতে আসলে হুট করেই চলে আসতো। অসময়ে মেহমান আসার সাথে সাথে কোন গৃহস্থ বাড়ির বউঝির পক্ষে তৎক্ষণাত রান্না করে খাওয়ানো সম্ভব হতো না। গৃহস্থ বাড়ির বউঝিদের উপর প্রচুর কাজের চাপ থাকতো। তারা কাজের চাপে ফুরসত নেয়ার সময় পেত না। সেই কারণে গৃহস্থ বাড়িতে সব সময় বাড়তি ভাত রান্না করা হতো যাতে রান্না করা বাড়তি ভাত দিয়ে মেহমান বা অতিথ মুসাফিরদের খাওয়ানো যায়। দুপুরেই আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়েছে। তবে বাড়তি কিছু ভাত হাঁড়িতে থাকলেও কোন তরকারি ছিল না। মা তাড়াতাড়ি কিছু মুড়ি তিন ভাইবোনকে খেতে দিলে তারা গোগ্রাসে সেই মুড়ি খেয়ে নেয়।
আমাদের ঘরে অনেকগুলো হাঁস মুরগী থাকায় দুই এক হালি ডিম সবসময় থাকতো। মা মাচা থেকে সেই ডিম এনে ভেজে চাচীকে খেতে দিলে চাচী বলল, বুবু, আমাকে দেয়া লাগবে না, পাতিলে যা আছে তা আপনি আমার ছেলে মেয়ে তিনটাকে ভাগ করে দেন, ওরা দুই দিন হলো না খাওয়া।
হাঁড়িতে যে ভাত ছিল গ্রামের হিসাবে দুইজনের হলেও শহুরে লোকেদের তিন চার জনের খাবার। মা ভাতগুলো তিনজনকে সমান ভাবে ভাগ করে দিলে তারা পেট ভরে খাওয়ার পরও কিছু ভাত বেচে যায়। মা অবশিষ্ট ভাত চাচীকে খেতে দিলে, চাচী ভাতে পানি দিয়ে কাঁচা মরিচ আর ডিম ভাজা দিয়ে খেয়ে নেয়। তিন ভাইবোনসহ চাচীর ভাগ্যে ভাত জুটলেও মহুরী চাচার ভাগ্যে ভাত জুটল না, মা মহুরী চাচার জন্য কিছু মুড়ি পানিতে ভিজিয়ে দুধের সাথে গুড় দিয়ে খেতে দিলেন, চাচা দুধ মুড়ি খেয়েই শত মাইল পায়ে হেঁটে আসা ক্লান্ত দেহ কাচারী ঘরের চৌকিতে এলিয়ে দিলেন।
মজার ব্যাপার হলো-- মহুরী চাচা রংপুর থেকে পাক্কা তিনদিন শত মাইল পথ পায়ে হেঁটে শুধু পরিবার নিয়ে আসে নাই সাথে দুইটা বাচ্চাসহ রাম ছাগলও এনেছেন। বাড়ি ঘরের মায়া ত্যাগ করলেও রাম ছাগলের মায়া ত্যাগ করতে পারেন নাই। এতো কষ্ট করে আনা চাচার রাম ছাগল দেখে অনেকেই টিটকারী করতে ছাড়লেন না। যেখানে নিজেদের জীবন বাঁচানোই দায় সেখানে ছাগল নিয়ে আসাটা কেহই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে নাই। তাদের কথা হলো-- যদি রাস্তায় খান সেনাদের সামনে পড়তো তখন এই পরিবারের কি অবস্থা হতো। ছেলেমেয়ের জীবন বাঁচাতো না ছাগল রক্ষা করতো! কিন্তু চাচার কথা হলো বাড়ি ঘরে তালা দিয়ে এসেছি, থাকার মতো কেউ নাই, আসেপাশের বাসায়ও কোন লোকজন নাই, ফাঁকা বাড়িতে এই ছাগল কার কাছে রেখে আসবো, ছেড়ে দিয়ে আসলে কোথা থেকে কোথায় যায় কে দেখবে। সেই চিন্তা করেই ছাগল সাথে নিয়ে এসেছি।
তবে কষ্ট হলেও চাচা ছাগল এনে ভালোই করেছেন। শত মাইল পথ হেঁটে ছাগল আনাটা তাদের অনেক উপকারেই লেগেছে। আমাদের যেহেতু গ্রামের বাড়ি। চারদিকে ঘাসের অভাব ছিল না। কাঁচা ঘাস খেয়ে এই ছাগল এক দেড় সের দুধ দিতে লাগল। আমাদের ছাগলের সাথেই গোয়াল ঘরে রাখা হতো। সকাল হলেই চাচী ছাগলের দুধ দহন করতো। আমরা না খেলেও ওরা তিন ভাইবোন তৃপ্তিসহকারে খেত ।
আইভি আপা সবার বড় ছিল। তখন তিনি ক্লাস এইটের ছাত্রী ছিলেন। তার ছোট এনায়েত, এনায়েত আমার সমবয়সি এবং ক্লাস সিক্সে পড়তো। সব ছোট ছিল বেলায়েত, সে তখন ক্লাস ফোরে পড়তো।
প্রথম দুই একদিন ইতস্তত করলেও একটা সময় তারা আমাদের পরিবারের সাথে পুরোপুরি মিশে গেল। সারাদিন তিন ভাইবোন আমাদের সাথেই হৈহুল্লোড় করে সময় কাটায়। এনায়েত বেলায়েত আমার সাথেই মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াতো। গাছে উঠে আম পেরে খাওয়াসহ গ্রামের কোন কিছুই বাদ দিত না। আইভি আপা বেশ গল্পবাজ ছিল, সন্ধ্যা হলেই উঠানে বসে আমাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনে কিচ্ছা কাহিনীমূলক গল্প বলতো। তারা কয়েক দিনেই শহুরে পরিবেশের কথা ভুলে গিয়ে গ্রামের পরিবেশে সাথে বেশ খাপ খাইয়ে নিল।
চাচা পরিবার নিয়ে আসার সময় দুইরাত অন্য মানুষের বাড়িতে রাত কাটিয়েছে। প্রথম রাতে একজন তাদেরকে ঘরে থাকার ব্যাবস্থা করলেও পরের রাতে তারা যে বাড়িতে ছিল তাদের বাড়তি কোন ঘর না থাকায় বারান্দায় ঘুমাতে দিয়েছিল। খোলামেলা বারান্দায় চাটাইয়ের উপর তিন ভাইবোন ঘুমালেও চাচা চাচী সারা রাত বসে বসে নির্ঘুম কাটিয়েছেন। কারণ, আইভি আপা তখন বিবাহযোগ্যা হয়েছে। দেখতেও যেমন ফর্সা তেমন সুন্দরী। দুই ছেলে নিয়ে চাচার তেমন চিন্তা ছিল না, কিন্তু আপার চিন্তায় চাচা চাচী ঘুমাতে পারেন নাই, একে তো অচেনা অজানা জায়গা, তারোপর দেশের ভয়াবহ অবস্থা, এই অবস্থায় যদি কিছু একটা অঘটন ঘটে যায় তখন এই ক্ষতি জীবনেও শুধরানো যাবে না। মানুষ কতটা বিপদে পড়লে নিজের পাকা ঘরবাড়ি ফেলে বিবাহযোগ্যা মেয়ে নিয়ে অচেনা অজানা মানুষের বারান্দায় রাত কাটাতে বাধ্য হয়, তা সেই সময়ের দৃশ্য না দেখলে বোঝা মুশকিল।
রংপুর শহর থেকে বের হয়ে পুরো রাস্তায় চাচা যেমন অসহায়ত্ববোধ করেছিলেন, আমাদের বাড়ি আসার পরে তার সেই অসহায়ত্ববোধ কেটে সুস্থ্যবোধ করতে লাগলেন। আর কিছু না হোক ছেলে মেয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে না। এই এলাকায় যত বিপদই আসুক না কেন বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো আত্মীয় স্বজন এখানে আছে। আমরা ছাড়াও চাচার নিজস্ব কিছু অত্মীয়স্বজন চর এলাকায় ছিল। মহুরি চাচা সেই ভরসাতেই রংপুর শহর ছেড়ে এখানে এসেছেন।
মহুরি চাচা আমাদের বাড়িতে প্রায় দুই সপ্তাহ থাকলেন। তার ধারণা ছিল খুব তাড়াতাড়িই হয়তো দেশের এই সমস্যার সমাধান হবে এবং আমাদের বাড়ি থেকেই তিনি আবার রংপুর ফিরে যাবেন। কিন্তু দিন দিন যখন দেশের অবস্থা ভয়াবহ হতে লাগল, ফুলছড়ি থানাতেও আর্মি চলে আসলো তখন তিনি আর আমাদের বাড়িতে থাকা নিরাপদ মনে করলেন না। তখন একমাত্র নিরাপদ ছিল ব্রহ্মপুত্র নদীর চর এলাকা। চাচীসহ ছেলেমেয়েদের নিয়ে তিনি নদী পারের এক আত্মীয়ের বাড়ি চলে গেলেন। সেই বাড়িতে রাত থেকে সকাল বেলায়ই দেখি তিন ভাইবোন এসে হাজির। তাদের দেখে মা জিজ্ঞেস করল, তোমাদের মা কই?। আইভি আপা বলল, মা আসে নাই আমরা এসেছি। ওই বাড়িতে আমরা থাকবো না, খ্যাতা দিয়ে বিশ্রি গন্ধ, সারা রাত তিন ভাই বোন খ্যাতার বোটকা গন্ধে ঘুমাতে পারি নাই। আমরা ওখানে আর যাবো না, আমরা আপনাদের এখানেই থাকবো। মা একটা হাসি দিয়ে বলল, ঠিক আছে থাকো।
শহর এলাকায় জন্ম এবং শহর এলাকায় বেড়ে উঠার কারণে গ্রামের ছেঁড়া কাঁথার সাদামাটা পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছিল না। দেশের পরিস্থিতি পরিবেশের কারণে চাচা চাচি বিষয়টি মেনে নিলেও ছেলেমেয়েদের পক্ষে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। চাচা চাচী দেশের অবস্থা বুঝানোর চেষ্টা করলেও তারা বুঝতে চাচ্ছে না। তবে আমাদের বাড়িতে এসে তারা সেই সমস্যাটা উপলব্ধি করে নাই। কারণ আমরা সব ভাইবোন স্কুল কলেজে লেখাপড়া করতাম। আমাদের পরিবেশটা ছিল গ্রামের অনেক বাড়ি থেকে একটু আলাদা। শহরের মতো চাকচিক্য না থাকলেও অবজ্ঞা করার মতো পরিবেশ ছিল না। যে কারণে তারা অন্য বাড়ির পরিবেশ মেনে নিতে না পারলেও আমাদের বাড়ির পরিবেশে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতো।
মহুরী চাচা ওদেরকে ঐ বাড়িতে নেয়ার জন্য খুব চেষ্টা করল কিন্ত তিন ভাইবোন কিছুতেই রাজি হলো না। ছেলে মেয়েরা ঐ আত্মীয়ের বাড়িতে না যাওয়ার কারণে দু’দিন পরে চাচা চাচী নিজেরাই আবার আমাদের বাড়ি চলে আসল। আমাদের বাড়িতে আরো দু’দিন থেকে পুরো পরিবার নিয়ে খোলাবাড়ির চরে চাচীর বাপের বাড়ি চলে গেলেন এবং সেখানেই যুদ্ধের নয় মাস কাটিয়েছেন।
মহুরী চাচা আমাদের বাড়ি থেকে চলে গিয়ে ভালই করেছিলেন। চাচা চলে যাওয়ার তিন চার দিন পরেই আমাদের গ্রামে পাাক সেনারা হামলা চালায় এবং পর পর দুইদিন হামলা করে সাতজনকে ধরে নিয়ে যায়। চাচারা যদি থাকতো তাহলে এই পরিস্থিতিতে তারাও যেমন বিপদে পড়তো তেমনি আমরাও বিপদে পড়তাম। কারণ পাকসেনাদের আক্রমণে আমরা নিজেরাই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলাম, ঐসময় আমাদেরও আশ্রয় নেয়ার জায়গা ছিল না। ছোট ফুফুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তার বাড়িতে বাড়তি কোন ঘর ছিল না। বাধ্য হয়ে ফুফুর রান্না ঘরে শুয়েই রাত কাটাতে হয়েছে। এই অবস্থায় যেখানে আমাদেরই থাকার জায়গা ছিল না সেখানে তাদের জায়গা দেয়াটা আরো সমস্যা বাড়িয়ে দিত।
(ছবিঃ ইন্টারনেট)
০৯ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৮
প্রামানিক বলেছেন: সেই দিনগুলির কথা মনে হলে এখন যারা ইতিহাস বিকৃত করে কথা বলে তখন খুব খারাপ লাগে।
২| ০৯ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
গুরুজী, আপনারা সত্যি খুব খারাপ একটা সময় কাটিয়েছেন।
আপনাদের কষ্টের বিনিময়ে যে দেশটা পেয়েছিলাম, তা নিয়ে ছেলেখেলা করছে একদল মানুষ।
০৯ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৯
প্রামানিক বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। দিনগুলি ভয়াবহ ছিল।
৩| ০৯ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৪
কামাল১৮ বলেছেন: যুব সুন্দর গুছিয়ে লিকেছেন ।আমি তখন কলেজের লেখাপড়া শেষ করেছি।সে সব দিনের কথা মনে হলে ভাবি এই জন্য কি হাতে রাইফেল তুলে নিয়েছিলাম।ভাবনার সময় নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়।একটা জন্ম প্রায় বৃথাই চলে গেলো।জনগনের কোন কাজেই লাগলাম না।নিজের কথাটাই শুধু ভাবলাম।
০৯ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১
প্রামানিক বলেছেন: কি আর বলবো ভাই কষ্ট করলাম যারা তাদের এখন মূল্যই নাই। এখন মূল্য হলো চামচা আর চাপাখোরদের।
৪| ০৯ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭
কামাল১৮ বলেছেন: ছবিটি মনে হয় জহির রায়হানের স্টপ জেনোসাইড কোন দৃশ্য।
০৯ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩
প্রামানিক বলেছেন: এটা জহির রায়হানের ছবি হতে পারে, ছবিটি ইন্টারনেট থেকে নেয়া। জহির রায়হান বেঁচে থাকলে আরো অনেক কিছু জানা যেত কিন্তু দেশ স্বাধীনের পরে তাকে মেরে ফেলা হলো।
৫| ০৯ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:৪২
পুলক ঢালী বলেছেন: অসাধারন হয়েছে প্রামানিক ভাই। আপনি কবিতা লেখায় যেমন দক্ষ তেমনি কাহিনী লেখায়ও বটে! কাহিনীটা আমার কাছে চলমান জীবনের চলচ্চিত্রের মত লাগছিল, মনে হচ্ছিলো মানসচক্ষে যেন পুরো ঘটনাটা দেখতে পাচ্ছিলাম, তা সম্ভব হয়েছে আপনার উপস্থাপনার গুনে। ভাল থাকুন।
০৯ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:০৭
প্রামানিক বলেছেন: আপনাদের ভালোবাসা আমি কোনদিনই ভুলতে পারবো না। আপনারা আছেন বলেই এখন পর্যন্ত ব্লগে টিকে আছি। পুরোনো দিনের ব্লগের সেই পরিবেশ যদি আবার ফিরে পেতাম তাহলে লেখালেখির পরিসর আরো বৃদ্ধি পেত। মন্তব্য পড়ে খুব ভালো লাগল। শুভেচ্ছা রইল।
৬| ০৯ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:২২
মনিরা সুলতানা বলেছেন: খুব গুছিয়ে লেখা !
শুভ কামনা ।
১০ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:০৯
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ বোন অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
৭| ০৯ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪১
বিষাদ সময় বলেছেন: সেই ভয়ঙ্কর সময়ের চিত্র আপনার লেখায় সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। লিখতে থাকুন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে সব জাগায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাক ন্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের চিত্র।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
১০ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:১১
প্রামানিক বলেছেন: কত যে হৃদয় বিদারক ঘটনা এদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটেছে। সেগুলো একত্রিত করে বই প্রকাশ করতে পারলে উপন্যাস ফেল হয়ে যাবে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
৮| ১০ ই জুন, ২০২৪ রাত ২:১৮
শ্রাবণধারা বলেছেন: অসাধারণ লেখা প্রামানিক ভাই। সেই সময়ের মানুষের জীবনের দুদর্শার প্রাঞ্জল বর্ণনা মন ছুঁয়ে গেল বরাবরের মত।
মহুরী চাচার পরিবারের সেই রামছাগলটির জীবনও যেন এই যুদ্ধের সাথে বাধাঁ হয়ে গিয়েছিলো।
আশা করি যুদ্ধ শেষে মহুরী চাচার পরিবারের সকলে এবং সেই রামছাগলটিও রংপুর শহরে ফিরে যেতে পেরেছিলো।
কামাল১৮ এর মন্তব্যটিও মন ছূঁয়ে গেল।
কামাল ভাই, কিছু পরামর্শ দিন যাতে করে পরবর্তী সময়ে আক্ষেপ না করতে হয়।
১০ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:১৫
প্রামানিক বলেছেন: এতো বিপদের মধ্যে আমার চাচার রামছাগল নিয়ে আসার কথা মনে হলে এখনও হাসি পায়। এই রাম ছাগল সাথে আনার কারণে বাবা তাকে ধমকিয়ে কিছু রাখে নাই। সেসব কাহিনী তো লিখি নাই। এসব ব্যাক্তিগত ব্যাপার। মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা রইল।
৯| ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৭:৩৪
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
মুক্তি যুদ্ধের সময় আপনার মহুরী চাচার পরিবারের দুর্বোগ নিয়েআপনার গুছানো লেখটি মনযোগ দিয়ে পাঠ করলাম ।
মুক্তি যুদ্ধের সময় দেশের সকল গ্রামীন এরাকাতেই ছিল এমনি অবস্থা । আমাদের অবস্থাও মহুরী চাচার থেকে কোন
অংশে কম ছিলনা ।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি খবর ছড়িয়ে পড়ছে পাক সেনা এই এসে পড়লো বলে । রেল গাড়িতে করে পাকসেনারা
ময়মনসিংহে যাওয়ার লক্ষএ ঢাকা কেন্টনমেন্ট হতে যাত্রা করে আমাদের এলাকার কাছাকাছি এসে গেছে । মাইল
কয়েক দুর হতেই গুলাঘাটে ব্রীজে থাকা মুক্তি বাহিনীর অবস্থানের প্রতি তারা রকেট মর্টার ও কামান দাগাচ্ছে।
সেগুলির বিকট আওয়াজ ও আগুনের গোলা দেখা যাচ্ছিল আমাদের বাড়ী থেকেও ।
এ অবস্থায় আমাদের দেশের বাড়ীতে মুক্তিযুদ্ধের একটি ক্যাম্প থাকায় সেখান হতে জরুরী ভিত্তিতে অন্যত্র চলে
যাওয়ার জন্য বলছেন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার । সে সময় রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসে । উপাই নাই, আমরা
একান্নবর্তী পরবারের বয়োবৃদ্ধ দাদা দাদী ও অন্যরা সহ সকলে চাল ডাল সহ যে যা পারি বস্তায় ভরি সাথে
গরু ছাগল হাস মুরগী সাথে নিয়ে এলাকার আরো অনেক প্রত্যন্ত স্থানে চলে যাওযার ব্যবস্থা করি । আমাদের
দেখাদেখি গ্রামের সকলেই পুটলা পুটলি নিয়ে যাচ্ছে গ্রাম ছাড়ি ।
বাড়ী ছাড়ার সময় সকলেই গেলেও, ভেজাল বাধাল আধপাগল বয়স্ক কাজের বিধবা মহিলা । সে তার
মৃত স্বামীর কবর ছেড়ে কিছুতেই বাড়ি ছেড়ে যাবেনা বলে গো ধরল , বলে মরলে সে তার হাসুর বাপের '
সাথেই এখানে কবরে শুয়ে থাকবে । আধঘন্টা ধরে সাদাসধি করে তাকে শেষতক রাজি করানো গেল
আমাদের সাথে যেতে ।
চলার পথে হলো আরো সমস্য প্রকট । গায়ের লালমাটির কাঁচা রাস্তা ধরে অন্ধকার রাতে পথ হাটা হলো
আরো কষ্টের, তদুপরি বিকালে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় লালমাটির হাটু পরিমান কাদায়পথচলা হয়েছিল
বড় দায় । এর সাথে যুক্ত হলো সাথে থাকা আমার ছোট ফুপু । এক্সিডেন্টের ফলে অনেক দিন ধরে ছিলেন
পঙ্গু । তাই তাকে কাধে নিয়ে চলার ভার পড়েছিল আমার উপরেই । মাথায় বস্তা, কাধে ফুফু, অন্য হাতে
দড়িতে বাধা ছাগল টেনে নিয়ে পথ চলা । অনেক কস্টে বাড়ী হতে দের মাইল দুরে গিয়ে থামলাম আমরা ।
রাতে থাকার মত অবস্থাপন্ন নিকট আত্মীয়রা থাকে নদীর উপারে , রাতে সেখানে খেয়া নৌকা না থাকায়
একেবারে অসহায় হয়ে পথের কাছে এক গৃহস্থ পরিবারে থাকার জন্য ব্যবস্থা হয় কোন প্রকারে । তাদের
বাড়ীতে অতিরিক্ত কোন ঘর না থাকায় ভাগ ভাগ করে জায়গা দেয় কাওকে তাদের শোভার ঘরে , কাওকে
রান্না ঘরে আর আমাকে আর সমবয়সি চাচাকে থাকতে দেয় ঢেকী ঘরে খর বিছিয়ে তার উপর মাদুরের বিছানা
পেতে দিয়ে । খাওয়া দাওয়ার দুর্ভোগ সেকি আর বলতে । তার পরের ইতিহাস আরো করুন, সে কথা
এখানে আর নাই বা বললাম ।
যাহোক, আপনার পোস্টের কল্যানে সে সময়কার কিছু অভিজ্ঞতা শেযার করার সুযোগতো পেলাম ।
শুভেচ্চা রইল
১০ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:২৫
প্রামানিক বলেছেন: সেই সময় আমরা যারা কিশোর তরুণ যবুক ছিলাম আমাদের উপর দিয়ে অনেক ঝকি ঝামেলা গেছে। প্রত্যেকেরই অযাচিত বোঝা ঘাড়ে নিয়ে হাঁটতে হয়েছে। আপনার কাহিনী শুনেও আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল। আপনার জীবন স্বাচ্ছ্ন্দ-এ কাটুক এই কামনা করি।
১০| ১০ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৯:৩১
আহলান বলেছেন: সত্যি সে সময়ে আপামর দেশের সাধারণ মানুষ কত কষ্টই না করেছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন ওঠে এতো কষ্টের ফলাফল কি .... আফসোস!
১০ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:২৮
প্রামানিক বলেছেন: এই প্রশ্নের তো কোন উত্তর খুঁজে পাই না, স্বাধীনতায় চাইলাম কি এখন পাইলাম কি। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
১১| ১০ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:৪০
জোবাইর বলেছেন: স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে সারা বাংলাদেশের অবস্থা ছিল প্রায় এই রকমই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তথা সাধারণ মানুষের অবর্ণনীয় মানবেতর করুণ অবস্থাগুলো প্রত্যক্ষদর্শী অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের লেখায় সব মিডিয়ায় প্রকাশ করা উচিত। তাহলে আজকের তরুণ-তরুণীরা অনেক মৃত্যু, ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের দেশের স্বাধীনতার মূল্য কিছুটা হলেও মূল্যায়ন করতে পারবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
১০ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩২
প্রামানিক বলেছেন: ঠিক বলেছেন, তখনকার মানুষজন কি অমানুষিক কষ্ট করেছে তার ছিটেফোটাও এখনকার প্রজন্ম জানে না এবং তাদেরকে জানানোর চেষ্টাও করা হয় না। একটা সময় দেখা যাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতহাসটাই মানুষ ভুলে যাবে। ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য।
১২| ১০ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫
এম ডি মুসা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
১০ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৬
প্রামানিক বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ শুভেচ্ছা রইল
১৩| ১০ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫
এম ডি মুসা বলেছেন: আমাদের এলাকায় যে ছত্তার সাহেব মুক্তিযোদ্ধা করেছিলেন। তার কোন নাম লিস্টি কিছু নাই
১০ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০১
প্রামানিক বলেছেন: তিনি মুক্তিযোদ্ধা তাতে সন্দেহ নাই। সাত্তার ভাই, আমার ভাই, শাহজাহান ভাই, ফুলছড়ি বাজারের রব্বানি ভাই, হরিপদ দা এবং পাবনার সেকেন্দার ভাই এরা সেই সময় খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সাত্তার ভাইয়ের বাড়ি কাতলামরী কাচারি থেকে পাক্কা একমাইল পূর্ব দক্ষিণে এবং কালির ঘ্যাস ওয়াপদা বাধের পূর্ব পাশে ছিল। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ননা না করলে প্রথম পর্যায়ে অনেকের নাম ঘটনায় আসবে না। আমি যে সময়ের ঘটনা বর্ননা করছি সেসময় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অল্প কিছু লোক ছিল। পুরো ঘটনা বর্ননা করলে ঘটনার এক পর্যায়ে সাত্তার ভাইসহ অনেকের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আসবে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
গুরুজী, আপনারা সত্যি খুব খারাপ একটা সময় কাটিয়েছেন।
আপনাদের কষ্টের বিনিময়ে যে দ্বেষ্টা পেয়েছিলাম, তা নিয়ে ছেলেখেলা করছে একদল মানুষ।