![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রিয় বাবা,
আজকে আরো একটা বছর শেষ হয়ে গেল তোমাকে হারিয়েছি। দেখতে দেখতে কেমন করে ৩টা বছর পার হয়ে গেল। তবু এখনো তোমার সাথে বলা আমার শেষ কথাগুলো কানে বাজে। আমি যখন তোমার সাথে বায়না করছিলাম তখন তুমি আমাকে যে স্বান্তনা দিয়েছিলে। সেই কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজে। এখনো মনে হয়, এই মাত্র না আব্বুর সাথে কথা বললাম! কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তুমি এই কথাগুলো আমাকে বলেছিলে আজ থেকে আরো ৩ বছর আগে।
বাবা জানো, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারিনা যে তুমি আমাদের মাঝে নেই। এখনো আমার মনে হয় এই হয়ত তোমার ফোন আসবে, এখনি তুমি বলবে, 'বাবা, এই যে আমি, তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারি?' মাঝে মাঝে যখন ঘরে কেও থাকেনা তখন তোমার ছবির সাথে কথা বলি। তুমি কি সুন্দরভাবে তাকিয়ে আছো। মনে হয় যেন এখনি ছবি থেকে তুমি বের হয়ে আসবে। এখনো আমি এই আশায় আছি বাবা। এখনো।
আমি জানি, তুমি আমার সব লেখাগুলো পড়তে পারছো। আমাকে দেখতে পাচ্ছো।কিন্তু আমি তোমাকে দেখতে পাইনা। আমার জন্য তোমার এইটূকূ মায়া হয়না? আমার সামনে একবারো আসতে পারোনা? আমি কত খুজি তোমাকে। এখানে সেখানে। তোমার বয়সের কাউকে দেখলে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি, আমার বাবা যদি আজ থাকতো।! যখন কাউকে তার বাবা সম্পর্কে কথা বলতে শুনি, যখন বাবাদের গল্প করতে শুনি তখন আমার মনে হয় আমি যেন এদের মাঝে বড়ই বেমানান। আমি উঠে যাই সেখান থেকে। ঘরের কোনে গিয়ে গুমরে কাদি। আর আফসোস করি, 'আমার যদি বাবা থাকত! তাহলে আমিও হয়ত গল্প করতে পারতাম এমনি করে'
আমাকে সেই যে একটা ক্যামেরা কিনে দিয়েছিলা, সেটা এখনো আছে। সেই ক্যামেরা দিয়ে আমি অনেক ছবি তুলেছি। এখন আমি একজন স্বার্থক ক্যামেরাচালক। আমার ছবি এখন সবাই মোটামুটি পছন্দ করে। আমার ক্যামেরাটা না এখনো আছে। অনেক সুন্দর অবস্থায় আছে।
বাবা, ছোটবেলায় যখন তুমি আম্মুর কাছে চিঠি লিখতে, তখন আমি ভাবতাম, আমি কবে বড় হব। আমি কবে চিঠি লিখব। বহু চেষ্টা করতাম অংক খাতায় তোমার কাছে চিঠি লেখার। কিন্তু, লেখার বিষয় পেতাম না। আম্মুর সাথে রাগ করতাম আম্মু আমাকে সাহায্য করতনা বলে। শেষে এসে আম্মু আমাকে বলে বলে দিত, আমি তোমার কাছে চিঠি লিখতাম। আমার হাতের লেখা তোমার পছন্দ হতনা বলে আমি কত চেষ্টা করতাম হাতের লেখা সুন্দর করতে। বাবা, আজকে আমার হাতের লেখা অনেক অনেক সুন্দর। আমার হাতের আকা দেয়াল পত্রিকা পুরষ্কার পেয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এখন তুমি নেই।
বাবা, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারিনি। তুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছো। আমি পারিনি তোমার কোন আশা পূরন করতে। তোমার সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল আমি যেন একজন ভালো মানুষ হই, মানুষ যেন সবসময় আমাকে ভালোবাসে, ভালো জানে। কিন্তু বাবা, আমি পারিনি সকলের আদরের পাত্র হতে। আমি পারিনি ভালো মানুষ হতে। আমাকে ক্ষমা করে দাও। তবে তোমার কাছে আমি ওয়াদা করছি, আমি আমার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চেষ্টা করব তোমার মনের আশা পূরণ করতে।
বাবা, তোমার মনে আছে, অনেকদিন আগে তুমি গরমে অস্থির হয়ে গিয়ে একটা আইসক্রিম খেয়েছিলে দোকান থেকে কিনে। আমি তোমার সামনে ছিলাম না বলে তুমি বাসায় ফেরার সময় আমার জন্যে বিশাল সাইজের একটা আইসক্রিমের বক্স নিয়ে এসেছিলে। এনে বলেছিলে, 'আমি আমার বাবাকে রেখে আইসক্রিম খেয়েছি, বাবার জন্যতো আনতেই হবে।' কথাগুলো এখনো আমার অনেক মনে হয়। কিন্তু বাবা, আমি তোমার জন্য কি করতে পারলাম! আগামীকাল তোমার ম্রৃত্যু বার্ষিকী, আর গতকাল আমি একটা বিয়েতে গিয়েছি, পরশুদিনও যেতে হবে আরেক বিয়েতে। আমার মনের ভেতরে যে কেমন লাগে সেটা যদি কাউকে বুঝাতে পারতাম, তাহলে হয়ত শান্তি পেতাম। আমাকে বাবা মাফ করে দাও। আমি দুঃখিত। আমি তোমার ছেলে হবার যোগ্যতা রাখিনা। হয়ত তুমি আমার সামনে নেই, তবু তোমার মত মহান বাবা পেয়ে আমি গর্বিত। আমি আজো যেখানেই যাই, তোমার নাম কাউকে বললে তার চেহারা হঠাত করে পরিবর্তন হয়ে যায়। তাদের চেহারা দেখে আমি ঠিক বুঝতে পারি যে আমি কত মহান বাবার সন্তান, কত ভাগ্য নিয়ে আমার জন্ম।
তুমি আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে। অনেক অনেক দূরে। কিন্তু আমাকে এখন কেউ তোমার মত আদর করেনা। কেউ তোমার অভাব পূরণ করতে পারেনা। আমি তোমার জায়গায় অনেককেই বসাতে চেয়েছি, পারিনি। আসলে বাবা মারা গেলে বুঝা যায়, বাবা কি জিনিস! কেউ কখনো বাবার অভাব পূরন করতে পারেনা। যাকেই বলা হোক যে, আমি তোমাকে আমার বাবার মত দেখি। হয়ত এটা বলা অনেক সোজা, কিন্তু যাকে বলা হবে সে এই কথার মর্ম বুঝতে পারবেনা, পারেনা। আমি প্রমান করে দেখেছি। তবে হ্যা, বাবা, তোমার খালি জায়গার অভাবটা সম্পুর্ণ পূরণ করতে না পারলেও আংশিক পূরণ করতে পারে এমন একজন আছে। তুমি জানো সে কে। মেনন মামা! সে তোমার অভাব অনেকাংশেই আমাদের বুঝতে দেয়না। তুমি যেমন মামাকে ভালোবাসতে, মামাও আমাদের ভালোবাসে। অনেক অনেক।
ভালো থেকো বাবা। অনেক সুখে থাকো। আমার সব সুখ আল্লাহ তোমাকে দিয়ে দিন। আমার জন্য অপেক্ষা করো। এইতো কিছুদিন বাদে আমিও তোমার কাছে চলে আসব। আল্লাহ হাফেজ।
১৯ শে জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৩
প্রেত বলেছেন: জি। চেষটা করি।
২| ১৯ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১২:৫৬
আজনবী বলেছেন: সব সময় দোয়া করবেন বাবার জন্য।
১৯ শে জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৩
প্রেত বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৯ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১:১৭
নষ্ট কবি বলেছেন: কান্না পেয়ে গেল লেখাটা পড়ে-
বাবা এমন একটা জিনিস না হারালে বোঝা যায়না কি হারালাম.........
আজ আমার অনেক টাকা- কিন্তু বাবাকে কিছুই দিতে পারিনা
কেন যে বাবাকে কিছু দিতে পারিনা
২৬ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১২:৩৪
প্রেত বলেছেন:
৪| ১৯ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৩:৩৫
ফাইয়াদ ইফতিখার রাফী বলেছেন: বাবা তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি এবং ভালবেসে যাব
৫| ১৯ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৫:২৯
অনবদ্য অনিন্দ্য বলেছেন: বাবা যে কি সেটা প্রকাশ করা সম্ভব নয় । কিন্তু একদিন দেখবেন আপনাকে নিয়ে সবাই প্রশংসা করবে । আপনার বাবার আত্মা সেদিন অনেক শান্তি পাবে । উনি এখনো আপণাড় পাশেই আছে হয়তো ছায়া হয়ে । মন খারাপ হয়ে গেলও । আমার নিজেরও বাবা নেই তাই ভেবেছিলাম আজ কারো বাবাকে নিয়ে লিখা পড়ব না । কিন্তু কি বুঝে যেন আপনারটা পড়ে ফেললাম এখন খুব কষ্ট হচ্ছে ।
বাবার কাছে যেই কথাগুলো আর কোনদিন বলা হবে না
২৬ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১২:৩২
প্রেত বলেছেন:
৬| ১৯ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৫:৩২
অনবদ্য অনিন্দ্য বলেছেন: বাবার কাছে যেই কথাগুলো আর কখনোই বলা হবে না
৭| ১৯ শে জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৬
আকাশের তারাগুলি বলেছেন: বাবারা আসলে কোন কিছু পাওয়ার জন্য বাবা হন না। আমি নিজে বাবা হয়ে বুঝতে পারি।
আপনার বাবা শান্তিতে থাকুন। তাঁর জন্য দোয়া রইলো।
২৬ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১২:৩১
প্রেত বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জুন, ২০১১ সকাল ১১:১৭
হ্যামেলিন এর বাঁশিওয়ালা বলেছেন: বাবার জন্য ৫ বেলা নামাজ পড়ে দোয়া করবেন, "রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগীরা"।