Banker

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৫

-ভাইয়া,এখানে সিগনেচার করেন।
-........
-কি হলো!!!??
-আ.....কি....করবো!!!!
-চেকের পিছনে আপনার সাক্ষর নাই।সাক্ষর করেন।
-ও আচ্ছা।
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়েই সাক্ষর করছি।মেয়েটি বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে তাকালো।
-এই নিন।
-Bstr...!!!মানে কি!!!!?
-সাক্ষর করতে বল্লেন না,করলাম তো।
-ও।।এই নিন টাকা।
মেয়েটির দিকে আবার তাকিয়েই থাকলাম
-Anything wrong!!?
-নাহ!!!আমি আসি তাহলে।
আমার পরিচয় দেবার মত কিছু নাই।বাবার অন্ন ধবংশ করা একমাত্র ছেলে।এম.বি.এ কমপ্লিট করেও কোনো জব এ জইন করার ইচ্ছা হয় না।বাবার ব্যবসা আছে।তাই নো চিন্তা।
কিন্তু পেরা নামক তো একটা জিনিস আছে।এই পেরা দিতে বাবা আমাকে প্রায় সময় ব্যাংকে পাঠায় চেক ভাংগাতে।নিয়মিত আসা যাওয়ার ফলে প্রায় প্রতি ব্যাংকে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলাম।এত দিন পেরা লাগত ব্যাংকে দৌড়াতে।বাট আজকে......
প্রত্যেকদিন এর মত আজকেও ব্যাংকে যাচ্ছিলাম।আজকে বাংলাবাজার গিয়েছিলাম।মতিঝিল এর এক শাখায় সমস্যা থাকার কারনে এইখানে আসতে হল।এইখানেও আমি মোটামুটি পরিচিত।
বাট টাস্কি খাইলাম এই মেয়ে টাকে দেখে।ও মাই গড!!!একটা মেয়ে এত সুন্দর হয় কিভাবে!!আর যেই কন্ঠ!!!!উফ!!!আমি শেষ।।
রাত টা কোনমতে কাটালাম।পরদিন আবার গেলাম একটা ভুয়া চেক নিয়ে।ভুয়া বলতে এইটা আমার একাউন্টের চেক।টাকা নাই
যথারীতি গেলাম।আজকে মেয়েটাকে আরো চরম লাগছে।চোখে গ্লাসও লাগাইছে।বুঝলাম না,চোখে সমস্যা নাকি স্টাইল।বাট মানতেই হইবো,মানাইছে।।।
-ম্যাম,আপনার চোখে কি সমস্যা?
-সরি..?
-না মানে,কালকে তো গ্লাস দেখলাম না চোখে..?
-ও,আসলে কালকে গ্লাসের একটু সমস্যা ছিল।তাই নিয়ে আসি নি।বাই দা ওয়ে,আমি কি আপনাকে চিনি..?
-চিনেন না,চিনবেন।সো হোয়াট..?
-ফালতু প্যাচাল বাদ দেন।
-ওকে।এই নিন চেক
মেয়েটা চেকটা নিয়ে ভেরিফাই করে বল্ল একাউন্টে টাকা নাই।আমি তো জানি নাই।আমি তো টাকা নিতে আসি নাই।আসছি তোমার.....থাক বলার দরকার নাই
-বলেন কি...(একটু অবাক হওয়ার ভান করে)এখনো টাকা পাঠায় নাই।দেন,আমি ওয়েট করি।ম্যাম,আপনার নাম টা জানতে পারি..?
-অবশ্যই পারেন না....
-আজিপ,নাম ঈ তো জানতে চাইছি,ফোন নাম্বার তো চাই নাই।
-লিসেন,আপনি অনেক বকবক করেন।প্লিজ আসতে পারেন।
মেজাজ টা গরম হয়ে গেল।ব্যাংকের মেয়ে গুলি এইরম হয় কেন....
২ ঘন্টা ধরে বসে আছি।আমার আবার বেশিক্ষন বসে থাকলে ঘুম এসে পরে।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না।দেখি মেয়েটা আমাকে ডাকছে
-এক্সকিউজ মি...এইটা ঘুমানের জায়গা না
-আ.....কি....?
-বল্লাম,এইটা ঘুমানের জায়গা না।বাসায় গিয়ে ঘুমান।
-বাসায় ঘুম আসবে না।
-মানে কি?
-কিছু না।আপনার কাজ শেষ?
-হ্যা,তো...?
-একসাথে যাইতাম আর কি....
-আমি আপনার যাব কেনো...?অদ্ভুদ তো।
-অকে যান।
ধুর...এই মেয়ের পিছে ঘুরে লাভ নাই।আমারে এক পয়সার দাম দেয় না।অন্ন লাইনে ট্রাই করতে হবে।
অনেকক্ষন পর বের হলাম।সিগারেট ধরাতে ধরাতে হাটছি।দেখলাম মেয়েটা ক্যান্টিনে দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে ডাক দিল
-এই যে মি...
-হ্যা বলেন।
-আমি লামিয়া..আপনি?
-Bstr
-ও..আপনি সেই দিনকার পাবলিক...
-হুম
সেদিন হালকা কথা হল।তারপর লামিয়া রিক্সা করে চলে গেল।আমিও বাসায় চলে আসলাম।বাট আমার তো ব্যাংকেই থাকতে মন চায়।
পরদিন আবার গেলাম।আজকে মনে হয় আমি আগে এসে পরছি।
লামিয়া আসলো এর একটু পর।আমাকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো।আমি একটা বলদ মাকা হাসি দিলাম।কিছুক্ষন পর আমি ওর ডেস্কে গিয়ে বসলাম
-হাই।
-.........
-ভাল আছেন..?
-সমস্যা কি..?
-কই কোনো সমস্যা নাই তো....
-তাহলে বিরক্ত করছেন কেন
-আজিপ তো...বিরক্ত করলাম কই..?ভাল আছেন কিনা জিজ্ঞেস করলাম।
-thnx for ur kindness..
ধুর...সমস্যা কি মেয়ের।অলটাইম রেগে থাকে।
-বস,পাত্তা দেয় না..?
ঘাড় ঘুরে তাকালাম।আরে হাবিব।হাবিব আমার ব্যাংক বন্ধু।মানে ব্যাংকেই পরিচয়
-আরে হাবিব যে...কি খবর..?
-খবর ভাল।বাট তোমার পেরেশানি অবস্থা দেখে খারাপ লাগলো
-আর বইল্লো না।এই মাইয়াডা যে কেন এমন...
-কিচ্ছু করার নাই।সে সবার সাথেই এমন করে।ভাবখানা এমন গতবছর লাক্স সুপারস্টার হয়ে ব্যাংকে জব নিছে।
-হাহাহা....ভাল বলছো।কোনো আইডিয়া দিতে পারবা..
-আমি নিজেই কয়দিন ঘুরছি।কিন্তু লাভ নাই দেখে অন্ন লাইনে ট্রাই কইরা আরেকটারে পটাইয়া ফেলসি।
-দেখি আমি পারি কিনা।
সারাদিন বসে থাকলাম।আজকে আর ঘুমাই নাই।সারাদিন লামিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।লামিয়া ব্যাপার টা বুজতে পারছে।বাট কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই
লাঞ্চ আওয়ারে আমার কাছে আসল।
-এইভাবে সময় কেন নস্ট করছেন..?কাজ নাই.?
-আছে।কিন্তু করার ফিলিন্স পাই না।
-তাই..?
-হুম।
-খাওয়া দাওয়া তো করেন নাই মনে হয়।চলেন।
উপ্স...মেয়ে দেখি আস্তে আস্তে লাইনে আসতাছে।একটা রেস্তুরেন্টে গেলাম।লামিয়াই সব অডার করল।
-আপনি কি করেন..?
-এম.বি.এ কমপ্লিট করে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছি।
-জব করেন না কেন..?
-বল্লাম না.. ফিলিন্স পাই না।
-ও....তা কিভাবে ফিলিন্স আসবে..?
ওত্তেরি...আসল জায়গায় হাত দিসে।পরলাম পেরেশানিতে...
-কিভাবে আসবে তা তো জানি না..বাট মনে হয় এইবার আসবে
-তাই.. বাট আমার মনে হয় না।
-কেন বলুন তো?
-কারন তুমি যা ট্রাই করতেছো তা কখনো সম্ভব হবে না।
আমি এইবার রীতিমত টাস্কি খাইলাম।লামিয়া তুমি করে বলতেছে।আবার আসল কথা বুঝেও ফেলসে।
-দেখো...তোমার আর আমার মাঝে ডিফারেন্স আছে।
-কিভাবে..?
-আমি তোমার থেকে ২ বছরের বড়।
আমি পুরাই থ হয়ে গেলাম।আমার মুখ দিয়ে আর কোন কথাই বের হচ্ছে না।
-কিভাবে জানলেন। (কোনোমতে বল্লাম)
-হাবিবের কাছে।
-......
-আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছো।
-.........
-আসি তাহলে।
সেই দিন পর আর ব্যাংকে যাই নি।আজ এক মাস হয়ে গেল।লামিয়াকে ভীষন মিস করি।আর টিকতে না পেরে হাবিবের থেকে লামিয়ার নাম্বার টা কালেক্ট করলাম।এখন ফোন দিব কি দিব না এই টেনশনে পরে গেলাম।২ বার রিং হতেই রিসিভ করল।
-হ্যালো...
-........
-কে বলছেন...?
-আমি....আমি....
-কি আমি আমি করছেন...?ক্লিয়ার করে বলেন।না হয় ফোন রাখেন।
-আমি জুনিয়র।.....
-জুনিয়র....!!!ও...তুমি..?
-চিনছেন..?
-হুম..না চিনার কি আছে...?তো বল কি বলবা.....?
-আপনি ভাল আছেন...?
-আমি....?হুম,ভাল।তুমি....?
-আগে তো ভাল ছিলাম,কিন্তু ১ মাস ধরে খারাপ।
-তা আমি কি করতে পারি...?
-চলেন না,কালকে একটু দেখা করি...?
-কোথায়...?
-রমনায়...
-আচ্ছা....কাল বিকাল ৪ টায়।কেমন..?রাখি।
-আচ্ছা বাই।।
লামিয়া এত তারাতারি রাজি হবে ভাবিনি।দেখি কালকে কিছু করা যায় কিনা।
পরদিন গেলাম রমনায়।আমার আগেই লামিয়া এসে হাজির।লামিয়া কে আজকেও অসাধারন লাগছে।
-হাই লামিয়া।
-হাই।আমি তোমার বড়।কাজেই বড় আপু বলে ডাকবা।
-আজাইরা।
-আজাইরা মানে।কানের নিচে দিব একটা।
-ধুর।আপনি এমন করেন কেন সবসময়...?
-আমার ব্যবহার অনেক খারাপ,তাই না।
-না
-না......?
-আপনি অনেক ভাল।একটা কথা বলবো..?
-বলো..?
-আপনার কি বিএফ আছে..?
-থাকলে বা না থাকলে কি হবে..?
-থাকলে তো ভালই আর না থাকলে আমি তো আছি।
-মানে....(ভ্রু কুচকে তাকালো)
-জানেন,বড় আপুদের সাথে প্রেম করতে মজাই আলাদা...
-তাই...করছো কখনো...?
-না করি নাই।বাট করবো।
-দেখো,কোনো লাভ নাই।এইটা কেউ মেনে নেবে না।
-কেন।রেলমন্ত্রী ৭০ বয়সে যদি ২৫ বছরের মেয়ে কে বিয়ে করতে পারে,তাহলে আমার থেকে মাত্র ২ বছরের বড় মেয়ে বিয়ে করতে পারবো কেনো??
-দেখো,আজাইরা যুক্তি দেখাইবা না।
-ধুর,আমি গেলাম।
বাসায় এসে ভাবতে লাগলাম।বয়স কি সব।না....লামিয়ারে ডাইরেক্ট বিয়ে করুম।প্রেম পিরিতির দরকার নাই।
-মা,কিছু কথা আছে।
-তর আবার কথা।বল?
-তুমি কি চাও না আমি কাজে মনোযোগ হই..?
-অবশ্যই।কে না চায় বল....!!!!!
-তুমি সারাদিন এত কাজ কর,আমাদের জন্য এত পরিশ্রম কর,আর আমরা আয়েশ করে চলি,তা মানতেই পারছি না।
-বাবারে!!!!!এত দরদ কেন,হঠাৎ করে!!??
-তোমার কাজে সাহায্য করবে এরকম একজন কে পেয়েছি।
-তাই!!!!কে সে...?
-ইয়ে......মানে.....
-কি মানে.....
-আমি ঠিকানা দেই।
-বজ্জাত,চাকরি করস না,বাপের হোটেলে খাস,এখনি বিয়ে করতে চাস...?
-বল্লাম তো,সব হবে।।
-নাম কি...?
-লামিয়া।তোমার অনেক পচ্ছন্দ হবে।
-ভেবে দেখবো।
-মা...আরেকটা সমস্যা আছে..?
-কি...?
-মেয়ে আমার থেকে ২ বছরের বড়.....
-কিইইইইই!!!!
-তাতে কি হইসে।
-কি হইসে মানে!!!তোর বাবা জানলে আর রক্ষা নাই।
-বাবা জানবে কেন।তুমি সেটিং দিবা।
-দুনিয়াতে আর মেয়ে নাই...?
-আছে।কিন্তু ওর মত নাই।
যাক।মাকে রাজি করানো মানে ৭০% কাজ আগাইছে।নাও ফোর ওয়েট।
অবশেষে বাবাকেও রাজি করানো গেল।এক সপ্তাহ পর তারা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেল।এবং খুব তারাতারি বিয়ের ডেট ও ফাইনাল হয়ে গেল।
ঠিক এর ২ দিন পর লামিয়া আমাকে ফোন করে রমনায় আসতে বল্ল।সেই আগের জায়গা।এবার আমি তারাতারি আসলাম।এর একটু পর লামিয়া আসল।
-কি ব্যাপার,এরকম জরুরি তলব।
-একদম ভান করবা না।পিচ্ছি আসছে আমাকে বিয়ে করতে।(বলেই হাসল)
-পিচ্ছি মানে...!!!আমার বয়স কত তুমি জানো...?
-এই.....আপনি করে বলবা।আমি তোমার বড়।২ বছরের বড়।
-উফ!!!এখন এই বিষয় টা নিয়ে কি আজিবন পেরা দিবা....?
-কি করবো বলো।আমার হাসবেন্ড আমার থেকে ২ বছরের ছোট।কিছু হইল এইটা।
-ঠিক আছে।করতে হবে না আমাকে বিয়ে....
রাগের সাথে বলে উঠতে গেলাম।পিছন থেকে টান অনুভব করলাম।আমার হাত ধরে রেখেছে।
-কি ব্যাপার,হাত ধরছো কেন।বল্লাম তো করতে হবে না আমাকে বিয়ে।
-সরিইইইইইইইই।এই আমি না তোমার বড়।আমি সরি বল্লাম কেনো।
-উফ!!!তুমি তো একটা পেইন।
-হিহি।।এখন তারাতারি আমাকে প্রপোজ কর।নাহলে বিয়ে কেনসেল।
-আই লেবু।
-হোয়াট!!!!এত তারাতারি করে বলে নাকি অদ্ভুত।ভাল লাগে নাই।
-ভালবাসি.....
-কাকে....?
-তোমাকে.....
-তাই....?
-হুম....তুমি?
-আমিও....
-কি...?
-ভালবাসি।।।

২ টি +১/-০