নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মান্ধাতার ভাসমান শ্যাওলা এক! ভাসমান এই শ্যাওলাকে ফেসবুক, ইউটিউব, সাউন্ডক্লাউডে পাবেনঃ Kb Mahbub Khan এই নামে। শ্যাওলার সম্বল ছাইপাঁশ লেখা, আবৃত্তি, বাঁশের বাঁশি আর যখন তখন মুখে এক চিলতে হুদাই মার্কা হাসি!

মাহবুবুর রহমান টুনু

মাহবুবুর রহমান টুনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

গেঁয়ো শীতঃ ০২; সিডি, ডিভিডি\'র দিন; বিএফ সেকাল একাল!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬



আমরা যখন ফোর/ফাইভে পড়ি তখন দেখেছি আমাদের পুরো গ্রামজুরে বিদ্যুৎ ছিল না কারোর বাড়িতেই। দু এক বছর বাদে বৈদ্যুতিক সংযোগ এসেছিল তবে কারোর বাড়িতে নয়, জমিতে পানি দেবার জন্য যে সেচ পাম্প ছিল ক্ষেতের মধ্যে, বহু আকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুতের তারের দৌড় ছিল সে পর্যন্তই। কারো কারো বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ হয়েছিল পরবর্তীতে, সেটা ছিল চোরাই লাইন, চালাতেও হত চোরের মত, সেও আবার বিদ্যুৎ অফিসের লোকেদের নিয়মিত ঘুষ দিয়ে। ডিস এর সংযোগ ছিল না। টেলিভিশন ছিল গ্রামে গুটিকয়েক বাড়িতে, দুটি বা তিনটি বাড়ি হবে হয়তো। টেলিভিশন চালাতে হতো ব্যাটারি দিয়ে, যতক্ষণ ব্যাটারিতে চার্জ আছে ততক্ষণ টেলিভিশন চলছে, চার্জ নাই তো টেলিভিশন বন্ধ। ব্যাটারি আবার চার্জ করে নিয়ে আসতে হতো দুরের বাজারের ব্যাটারি চার্জ দেবার কোন দোকান থেকে। চার্জ ফি নিত পাঁচ টাকা দশ টাকা করে; ব্যাটারির সাইজ অনুযায়ী। চ্যানেল একটাই; বিটিভি। বর্ডারের প্রায় কাছে বাড়ি হওয়াতে দু একটি বাড়তি চ্যানেল ধরা দিত মাঝেমধ্যে বোনাসের মত, সেগুলিও ছিল ভারতের সরকারী চ্যানেল ডিডি বাংলা, দূরদর্শন এই টাইপ নাম হবে হয়তো, মনে নাই খুব একটা। টেলিভিশন সবার বাড়িতে না থাকলেও বিনোদন এর জন্য এরকম ইলেকট্রিক জিনিস একটা না একটা ছিলই প্রায় সবার বাড়িতে। এই যেমন, ক্যাসেট প্লেয়ার, রেডিও, সাউন্ডবক্স। পুরো সপ্তাহে মিলে একটি সিনেমা বা আলিফ লায়লার তিনটি পর্ব অথবা ম্যাকগাইভার এর একটি পর্ব দেখবার জন্য কি পরিমাণ কষ্ট করতে হতো আশা করি সেটা উপরের লেখা পড়েই বুঝে গেছেন। সাথে নিশ্চয়ই এও খুব সহজেই বুঝতে পারছেন যে, এত কষ্ট করবার পর যে প্রাপ্তিটুকু হতো, সেটুকু আসলে ঠিক কতখানি আনন্দের ছিল। মাইরি বলছি, সেই আনন্দের সাথে আজ থেকে আগামী পুরো জীবনের কোন আনন্দই বুঝি পাত্তা পাবে না। আজ সবকিছুই হাতের নাগালে পাই, আনন্দ পাই। কেন জানি না, আজকের আনন্দটুকু সেকেন্ডেই শেষ হয়ে যায়, কোন প্রাণ নাই, টিকে না আরকি!
.
সপ্তাহে বিটিভিতে একটি সিনেমার বাইরে একদিনে একসাথে চার পাঁচটি সিনেমা দেখতে পাবার ব্যবস্থা বলতে একটা জিনিসই ছিল, সেটা ভিসিআর। আর ভিসিআর দেখবার অন্যতম মোক্ষম সময় ছিল শীতকাল। ছোটবেলায় দেখেছি চাচারা বা বড় ভাইয়েরা মিলে ভিসিআর ভাড়া করে নিয়ে আসত গ্রামে। তারপর রাতে এশার নামাজ শেষ হলেই বাড়ির বাইরের আঙ্গিনায় চালানো হতো সেই যন্ত্র, গ্রামের জোয়ান, শৌখিন বুড়ো, বাচ্চা, মহিলা, একে একে সবাই এসে জমায়েত হতো আঙ্গিনায়। আশে পাশের গ্রামে খবর পেলে সেখান থেকেও আসত মানুষজন। প্রচুর মানুষের মেলা বসত এই রাতটায়, সিটি বাজানো, হো হো করে হাসা, হাত তালি, কিছুই বাদ ছিল না এই আসরে, সিনেমায় বাপ্পারাজ এর বিচ্ছেদের সিনে দু চারটে মহিলাকে চোখের পানিও ফেলতে দেখা যেতো! আহা! গ্রামের মুরুব্বীরা এই যন্ত্রটা একদমই সহ্য করতে পারতেন না, কোন কোন সময় তো এমনও হয়েছে যে সিনেমা চলছে, হুট করে কোন এক হুজুর কাকা বা দাদা এসে লাঠি দিয়ে টিভির উপরে এক বারি!! কে কোন দিকে দৌড় দেবে তার কি আর হিসেব আছে! সুতরাং যারা ভিসিআর ভাড়া করে নিয়ে আসত, তাদের এসব ব্যাপারে থাকতে হতো খুব সচেতন। তাদেরকে এই যন্ত্র তেমন লোকের বাড়ির আঙিনাতে নিতে হতো, যেখানে কেউ কিছু বলতে পারবে না বা কোন মুরুব্বী এলেও বাড়ীওয়ালার কাছে পাত্তা পাবেন না! এশার পর থেকে শুরু করে একটানা সিনেমা চলত ফজরের আযানের পূর্ব পর্যন্ত।
.
আমরা একটু বড় হলাম, তখন সেভেন/এইটে পড়তাম। টেলিভিশন এর সংখ্যা বেড়ে গেছে, সিমন্স, নোকিয়া ১১১০, মটোরোলাসহ এরকম অডিও মোবাইল গুলি এসে গেছে গ্রামে। ভিডিও মোবাইলও ছিল তবে সেই প্রথম বেলার টেলিভিশন এর মত রেয়ার। বিদ্যুৎ তখনও ঘরে ঘরে আসে নাই, ব্যাটারি দিয়েই চলতো টেলিভিশন। ভিসিআর এর দিন শেষ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে, চালু হয়ে গেছে আধুনিক সিডি/ডিভিডি প্লেয়ার। শীতের ছুটির সময় আমরা গাঁয়ের বন্ধুরা মিলে প্রায় প্রতিবছরই পিকনিক করতাম অথবা সিডি ভাড়া করে নিয়ে এসে দেখতাম একদম দল বেঁধে। পিকনিক বলতে এখন যেমনটা হয় তেমনটা না, আসলে তেমনটার অনুমতি বাড়ি থেকে পেতাম না আমরা। আমাদের যেটা করবার অনুমতি ছিল সেটাকে সম্ভবত চড়ুইভাতি বলে। পাঁচ ছয়জন মিলে নিজেদের বাড়ির পিছনের কোন জমিতে উনুন বানিয়ে সেখানে রান্না বান্না করে খেয়ে দেয়ে সন্ধার মধ্যে বাড়ি ফেরা আর কি! নিজেদের টাকা খরচ করতে হতো না। একেকজনের ভাগে একেকটা পড়ত, সবাই সমান মাপে চাল আর কাঠখড় দিতাম, কেউ দিত পেঁয়াজ, কেউ মরিচ, কেউ লবণ। এভাবেই হয়ে যেত আর কি! পিকনিক এর কেচ্ছা অন্যদিন বলব নে। সিডি ভাড়া করবার কথা বলতেছিলাম!
সিডি ভাড়া করবার জন্য যে টাকার প্রয়োজন হতো সেটা বন্ধুদের প্রায় সবাই বাড়ি থেকে চাল অথবা ধান চুরির টাকা থেকে চালিয়ে নিতো। পড়াশুনা ফাঁকি দিয়ে টেলিভিশন দেখবার অনুমতিই যেখানে বাড়ি থেকে পেতাম না, সেখানে রাত জেগে সিডি দেখার অনুমতি! ওরে বাবা! একেবারেই অসম্ভব। সিডি দেখতে যেতে হলে বিশেষ কায়দায় রুমের দরজা আটকানো রেখে জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতে হতো।
.
একটা কথা প্রায়ই শুনে থাকবেন যে; ইঁদুরের গলায় ঘন্টা পড়াবে কে??
আজ্ঞে, সিডি ভাড়া করে নিয়ে আসবার পর আমাদের অর্ধেক রাতই চলে যেত এই ঘন্টা পড়ানোর ফন্দি আঁটতে। বোঝেন নিতো? খুলে বলি, সবাই যেহেতু বাড়ি পালিয়ে সিডি ভাড়া করে নিয়ে এসেছি, সেহেতু কারোর বাড়ির মধ্যে সেটা নিয়ে যাওয়া অসম্ভব, যার জন্য আমাদের করতে হতো কি, নদীর পারে সেলো মেশিন দিয়ে পানি দেবার জন্য একটা করে ঘর থাকতো একসময়, সেখানে একজন পাহারাদার বা জমিতে পানি দেবার লোক থাকত, বেশীরভাগ সময়ই কোন না কোন মেশিন ঘরের কোন কাকা বা ভাইকে বলে কয়ে, সিগারেট, পান ঘুষ দিয়ে ঐ মেশিন ঘরেই জায়গা নিতাম আমরা। নানান ধরণের ফিল্মের সাথে কয়েক ধরণের ফিল্ম ছিল বাধ্যতামূলক, যা সবারই পছন্দের-
১। গোবিন্দ’র নাচের ফিল্ম
২। সাপের ছবি
৩। মান্নার লেটেস্ট ছবি
৪। মিঠুন চক্রবর্তীর ছবি
৫। হারুন কিসিঞ্জারের কৌতুক, এবং অবশ্যই-
৬। বিএফ

সেই বিএফ কিন্তু এই বিএফ না। এই জুগের বিএফ আর সেই বিএফ এর মধ্যে আহামরি তফাৎ নাই অবশ্য। ঐ সময়ের বিএফে যা দেখতাম, এই সময়ের বিএফেরা তা করে!! সময় বদলে গেছে সেই বিএফ নাই, সিডি নাই, ব্যাটারি, সাদাকালো টিভি, নরমাল ডিস্ক, সিলভার ডিস্ক, মুভি দেখার মাঝ বা শেষ সময়ে এসে ডিস্ক আটকে যাওয়ার জঞ্জাল...! কিছুই নাই। একটা পিচ্চি মুঠোফোন এসে গিলে খেয়েছে সব! প্রচুর প্রচুর সুবিধা দিয়েছে মুঠোফোন ব্যাটায় কিন্তু সেই সময়ের জঞ্জালময় সুখগুলো আজও দিতে পারে নাই।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৪

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০১

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। শুভকামনা।

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২০

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: গোগ্রাসে এনিমিষে গিলে ফেললাম। আমার জীবনী থেকে কপি পেষ্ট মারছেন নাকি ভাও.. :-P আহারে শৈশব!!!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০২

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: হে হে হে এমনি কইয়েন ভাই, নয়া মানুষ আমি! ভয় করে!! খুব সরল গাইয়া জীবন আমার! ভাল লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে। শুভকামনা।

৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২২

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: বেশ

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০১

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।

৪| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: অতীত দিনের কথন।
অতীতের কথা আপনার মনে আছে। অনেকে অতীত ইচ্ছা করেই ভুলে যায়।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৫৬

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: আমার ঝুলিতে সুখ বলতে যা আছে তার অন্যতম উৎস আমার অতীত। কত শত অতীত আছে মনে! ভুলে যাবার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নাই এবং ভুলতে চাই না, সে হোক সুখের অথবা দুঃখের!

৫| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৮

হাসান রাজু বলেছেন: দারুন লিখেছেন। মফস্বলে না থাকলে এই মধুর স্মৃতির ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয় না।
মাঝে মাঝে হিন্দি/বাংলা সিনেমার ভিডিও ক্যাসেট শেষ পর্যন্ত চালিয়ে চেক করতাম। এক সিনেমার উপর আরেক সিনেমা রেকর্ড করা হত তাই কপালে থাকলে সিনেমা শেষে সামান্য বিএফ ক্লিপ ও পাওয়া যেত হর হামেশা।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫০

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই। সেই দিনগুলি ভুলবার মত নয়। আমরা সিডিতে শেষের দিকে বেশীর ভাগ সময়ই পেতাম কোন গান বা অনাগত সিনেমার ট্রেইলার! গরম মসলাও পাওয়া যেত মাঝে মধ্যে!! হা হা হা

৬| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০২

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: হায়রে দিনগুলো... :(

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫০

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: আহারে দিনগুলা.!

৭| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:২২

Md Burhan বলেছেন: জানি আর কখনো ফিরে পাব না সেই সুখের দিন গুলো, আহারে শৈশব ! :#P

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২১

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: তাজা শৈশব! ধন্যবাদ বুরহান ভাই।

৮| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৩

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:




স্মৃতি গুলো আজও আছে

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৪

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: এবং থেকে যেতেই হবে আমৃত্যু
ভাললাগা বলতে আপাত ঐ স্মৃতিগুলিই আছে আমার ঝুলিতে! ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.