নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সব্যসাচী

মানুষের জন্য

প্রজন্ম পশ্চিমাঞ্চল

প্রজন্ম পশ্চিমাঞ্চল › বিস্তারিত পোস্টঃ

“পারভেজ তুতোঃ ফ্রম দ্যা মেমোরি”

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৩

২০১৩ সাল।
তখন আমি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। শেষ বর্ষে ছিলাম তখন, স্বভাবতই পরবর্তী দিনগুলো নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। দেখতে দেখতে ৪টা বছর কেটে গেছিলো। এই সময়ের মধ্যে একটা সার্কেলের সাথে অনেক দিন ধরেই ঘনিষ্ঠতা ছিল আমার। এই গ্রুপের একটা বিশেষ আকর্ষণ ছিল। প্রত্যন্ত এক উপজেলা শহর থেকে উঠে আসা ছেলেটার নাম ছিল পারভেজ তুতো। হালকা-পাতলা গড়নের সদা হাস্যোজ্বল এই ছেলেটি সবার সাথেই বেশ ভালই ভাব জমাতে পারত, যদিও বিশেষ আকর্ষণ বলার কারন অন্য। তুতো ছেলে হিসেবে যতনা বুদ্ধিমান ছিল তার চেয়ে অনেক নিজেকে চালাক মনে করত।কথা-বার্তা, চলা-ফেরায় একটা চাতুর্যের পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করত সবসময়। তার এই আচরনই অনেক সময়ই এতটাই বিরক্তি কর হয়ে দাঁড়ায় যে, প্রথমে ভাল লাগলেও পরে তার থেকে পালানোর চেষ্টায় থা্কত অনেকেই। অনেক সময় তাকে অনেকে ফটকা ভেবেও বসত।যেমন একবার ঘটনা বলি। আমাদের এক বড় ভাই ছিল যার কিছু স্বার্থ হাসিলের জন্যই খাতির জমিয়েছিল। কিন্তু ভাই পাশ করার পর যখনই চাকরি পেতে একটু দেরি হল তখনই সে ভাইকে এড়িয়ে চলতে লাগল। এই আমাদের তুতো।ও হ্যা বলে রাখা ভাল তুতোর এই চাতুর্যতার চেষ্টা থাকলেও মানুষ হিসেবে সে যথেষ্ট ভিতু। অনেক ক্ষেত্রেই আমার আরেক বন্ধু অর্ণব তাকে মাম্মি-ড্যাডি ছেলে বলত। তার ব্যাপারটা এরকম যে শুধু মাত্র স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় সে সব সময় উতসাহী মানুষ। যদিও এ কারনে অনেকেই তাকে খুব একটা পছন্দ করত না, কিন্তু তার মজাদার চাপাবাজি উপভোগ করার লোকের অভাব ছিলনা খুব একটা। তার এই চাপাবাজির জোড়ে এ যাবত ৩/৪টা মত প্রেম করে ফেলেছিল ঠীকই কিন্তু সেগুলোর ইতি ঘটেছিল ব্রেক আপেই। পরে অবশ্য আরেকটা সম্পর্কের কথা পরে শুনেছিলাম কিন্তু তার ইতিবৃত্ত আর জানা হয়নি।
পাশ করে বেরনোর কিছুদিন আগে তার সাথে একদিন কিছুটা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ছিলাম। সে হঠাত বলল, সজ্জাদ আচ্ছা দোস্ত আমি মানুষ্টা কি খুব খারাপ?
আমি ঠীক বুঝতে পারছিলাম না কি বলব। শুধু জিজ্ঞাস করলাম, হঠাত এই প্রশ্ন?
না মাঝে মাঝে মনে হয় আমার নিজেকে বদলানো দরকার। একটা ব্যাপার কি জানিস ছোট বেলায় বাসার সবাই আমাকে যেভাবে শিখিয়েছে আমি সেভাবেই বর হয়েছি।
আমি বললাম, কি রকম?
তুতোর সাবলীল উত্তর, সব সময় যেভাবেই হোক সুবিধা আদায়ের তালে থাকতে হবে। যার কাছে কিছু পারার আশা নাই তার সাথে না মেশাই ভাল। টাকা-পয়সা ইনকাম করতে হবে অনেক যে করেই হোক, আর ধান্দাবাজি ছাড়া টাকা ইনকাম করা যায় না সহজে। শর্টকাট আর কি সোজা কথায়।
তার সব কথা শুনে যা বলে ছিলাম যতটুকু মনে আছে, কিন্তু এসব কি ঠীক মনে হয়?
মাথা নেড়ে না সূচক উত্তর দিয়েছিল। সাথে বলেছিল যে সে বদলানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি। বহুদিন হল তার কোন খবর পাইনি তারপর। পাশ করে বেড়োনোর বছর তিন পর একবার সবাই গেট টুগেদার করেছিলাম বন্ধুরা, সেখানেও সে আসেনি। অবশ্য মাহারূফের কাছে কিছুটা জানতে পেরেছিলাম তার ব্যাপারে।
মাহারুফ যা বলেছিল তাতে সে তখন পিডিবিতে চাকরী করত। স্বভাবমত টাকা ইনকামের ধান্দা একটুকুও কমেনি তার। এব্যাপারে নাকি কিছু বললে বলত-“ ট্যাকা দিয়ে ঢুকছি, এখন কামাবো না ক্যান?”
তার শশুড়ের এক বন্ধু যে কিনা একটি বিতর্কিত ধর্মভিত্তিক দলে সক্রিয়, তার সাথে তুতোর পরিচয় হয় পিডিবিতে জয়েন করার কিছুদিন পর। তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও পাওয়ার সেক্টরের ব্যাবসা করেন মুলত, কিন্তু রাজনোতিক কারনে ব্যাবসা তে সুবিধা করতে পারছিলেন না। তাই তিনিও তুতোকে একটু ব্যবহার করে ছিলেন নাকি কাজ জোগার করার জন্যই। ভদ্রলোক তুতোকে ১০% কমিশন দিতে চাইছিলেন, কিন্তু তুতো সেই রিস্কে না যেয়ে তার ব্যাবসার অংশীদার হতে চাইলে তুতোকে তিনি ৫% মালিকানা দিয়ে দেন।এরপর অনেকদিন আর তেমন কোন খবর পাইনি, তবে শুনেছিলাম ব্যাবসা ভালই চলছিল তার চাকরীর সাথে সাথে।
তবে বছর খানেক আগে একবার মাহরুফের সাথে দেখা হয়েছিল। জিজ্ঞাস করেছিলাম তুতোর ব্যাপারে। তাতে সে যা বলেছিল তা অনেক টা এরকম-
“ব্যাটার ধান্দাবাজি আর কমবে না কোন দিন। ব্যাবসা ভালই চালাচ্ছিল, এমনিতে তো রিস্ক খুব একটা আছিল না, তারপরও মনে ও একটু ধান্দাবাজি বেশি কইরা ফেলছিল। ওর অফিসের একজন বেশ কয় মাস আগে একটা টেন্ডারের সময় তার ঐ কোম্পানীর সাথে লিঙ্কের খবর কইয়া দিছিলো দুদক কে। আর কই যায়, তার উপর আবার ওর পার্টানার তো আবার অন্য পলিটিক্স করে। ঝামেলা তো হইসেই কিছু, ও নাকি আবার ইনকয়ারীতে পরছিল একটা, সাসপেন্ডও হয়ছিল শুনছিলাম। তারপর আর কিছু জানিনা।“
দেখতে দেখতে ৬টা বছর চলে গেছে। এখন ২০২০ সাল, কাল আমদের সেই বহু প্রতিক্ষিত কনভোকেশন। কনভোকেশনে সেই প্রিয় মুখগুলোকে আরেকবার দেখব আশা করি, যদিও এখনও অনেকেই রাজশাহী পৌছে নি। জানিনা বন্ধু পারভেজ তুতোর দেখা কাল পাব কিনা। সে না আসলে হয়ত অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যাবে আমাদের সেই পূণর্মিলনের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.