![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিকালের পদ্মা বেশ ভালই লাগে সবার কাছে। একা একা বসে সিগারেটের ধুয়া ছাড়ছে আকাশ। কিন্তু প্রতিবার ধোয়ার সাথে যেন মিশে আছে তার জীবনের একেকটা মুহুর্ত। বার বার তার ফিরে পেতে ইচ্ছে করছে তার কলেজ লাইফ অথবা ভার্সিটির প্রথম দিনগুলো। যে সময়টা সবাই কাটাই অনেক রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে, অনেক চিন্তাহীন সময়। আকাশের সেই সময়গুলো আর দশটা ছেলের মত কাটেনি।
সে যখন ক্লাস নাইন - কি টেনে পড়ে তখন তার মাথায় ভূত চেপেছিল কমিউনিজমের। এর অবশ্য কারনও কম নাই। খুব ছোট বেলা থেকেই আশেপাশের মানুষের সমস্যা দেখেছে সে। তখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও আজকের মত ছিল না। সে দেখেছে মানুষকে তখন প্রতিটি পয়সা একেবারে পাই পাই হিসেব করে খরচ করতে হত; অল্প কিছু সম্পদশালী পরিবারের কথা আলাদা। আকাশ তখন দেখেছে খুব কাছ থেকে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের জীবন। সে অনুভব নিম্ন বিত্তের অভাব, মুখোমুখি হয়েছে মধ্যবিত্তের আর্থিক টানাপোড়ার, আর দেখেছে উচ্চবিত্তের বিলাসিতা আর শোষণ, সেখান থেকেই মানুষের কষ্ট নিয়ে তার ভাবনার শুরু। খুব ছোটবেলা থেকেই দুনিয়া আর এর ইতিহাসের প্রতি একটা আগ্রহের কমতি ছিলনা তার।
ওই বয়সে হঠাত করে আবার সুকান্ত পড়ার ঝোঁক উঠেছিল। দু'ইয়ে মিলে যা হবার তাই হয়েছিল। কম্যুনিজমের ঝোঁক মারাত্মকভাবে চেপে বসেছিল মাথায়। মাথায় ঢুকেছিল দেশের মানুষের অবস্থা বদলাতে ঐ পথ ছাড়া আর উপায় নাই।
পরে অবশ্য ভুত টা বেশি দূর গড়ায়নি। কিন্তু মানষের অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে তার চেষ্টার শেষ হয়নি। সেই সময়টা থেকে কিছুদিন আগে অবধি নিজেকে নুন্যতম সময়টাও দায়নি সে। সারাক্ষন কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত রেখেছে নিজেকে। কিন্তু আজকে বারবার মনে হচ্ছে যাদের জন্যই সে কিছু করতে গেছে তারাই তার সাথে হয় বিট্রে করেছে, না তো তাকে ভুল বুঝেছে। একেবারে কোন পরিবর্তন হয়নি বা কারও উপকারে আসেনি তা নয়। তবে সে যা চেয়েছিল তার অনেক-টাই অন্য ভাবে এসেছে। এখন বারবার মনে হয়, সে এগুলো করতে যেয়ে শুধু নিজের ব্যক্তি জীবনকেই হারাইনি, হারিয়ে ফেলেছে জীবনের অনেক স্বাভাবিক ব্যাপার কেউ। অনেকেই বলে তার ব্যক্তিগত উন্নতি বা প্রতিবর্তন হয়েছে অনেক। কিন্তু সে তো তার ব্যাক্তি মানুষকেই তো হারিয়ে ফেলেছে। আর ব্যক্তি মানুষ ছড়া বাকি সব তো এমনিতেই অর্থহীন হয়ে যায়। এমনকি এই সব করতে যায়ে হারিয়ে ফেলেছে তার নিজের খুব আপন একজনকেও, আর কোন দিনই সে ফিরে আসবেনা। প্রতিটা মুহুর্ত মনে হচ্ছে সে বড় একা হয়ে গেছে, নিজের বলতে কেউই আর নেই তার।
বার বার সেই দিনগুলো ফিরে পেতে ইচ্ছা করে তার। এটা ঠিক কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতে হয়। কিন্তু সেই হারানো যদি হয় একটা স্বাভাবিক জীবন তাহলে আর কি বাকি থাকে।
আর দশটা মানুষের মত সেও তো চেয়েছিল-
"তার জীবনটা একটা সাজানো সুন্দর কবিতার বই হোক, নিউক্লিয়ার বোমার ডেটোনেটর না।"
©somewhere in net ltd.