নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন মানুষ। বলার মতো বিশেষ কিছু নেই। মনের ভাবনাগুলো তুলে ধরতে চাই। ভালো লাগে কবিতা, লিখা-লিখি আর ছবি তোলা, এইতো! https://prokashoni.net

ইফতেখার ভূইয়া

গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক

ইফতেখার ভূইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন বন্ধ করা নিয়ে কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা

২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৪১


সম্প্রতি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বহুল আলোচিত "ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন" বন্ধ করা নিয়ে অনেককেই উদ্বিগ্ন দেখতে পাচ্ছি। বিষয়টি আমাদের মতো সাধারণ আমেরিকান নাগরিকদের জন্য কিছুটা হলেও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে আমরা যারা অভিভাবক পর্যায়ে আছি তারা তাদের সন্তানদের প্রাথমিক বা উচ্চ শিক্ষার ভবিষ্যতের বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করছি। দেশ বা জাতি হিসেবে সেটা আমেরিকানদের জন্য ভালো হলো না মন্দ হলো সেটা নিয়ে কিছুটা আলোচনার অবকাশ অবশ্যই রয়েছে।

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ হওয়াতে কিছু বিষয় আমার কাছে দিবালোকের মতোই পরিষ্কার। তার কিছু বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্যই এই লিখা। প্রথমেই কিছু বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা দেয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাবলিক শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে যে তালিকা প্রকাশ করা হয় তার কোনটাতেই আমেরিকা প্রথম দশটি দেশের মধ্যে নেই। এখানে "গুণগত মান" বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর পেছনে যে দুটো পরিমাপক রয়েছে তা হলো:-

ক) এডুকেশন ইনডেক্সঃ এটি মূলত আর্ন্তজাতিক সংস্থা ইউ.এন.ডি.পি. কর্তৃক প্রবর্তিত "হিউম্যান ডেভেলপম্যান্ট ইন্ডেক্স" এর একটি পরিমাপক যেখানে প্রতিটি দেশ তাদের শিক্ষা কতটুকু ভালো করতে পারছে তার একটি তালিকা তৈরী করা হয়। এখানে দুটো বিষয়ের দিকে নজর দেয়া হয়। এক, একজন প্রাপ্তবয়স্ক (২৫ বছর বা তার বেশী) ব্যক্তি তিনি কত বছর পড়াশোনায় ব্যয় করেছেন। দ্বিতীয়ত, একজন শিশুকে তার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কত বছর স্কুলে যেতে হতে পারে। পুরো বিষয় মাপা হয় ০ এবং ১ দিয়ে। সবচেয়ে ভালো শিক্ষা ব্যবস্থার এক দেশ এর পয়েন্ট হবে ১। এর নিচে যেসব দেশ থাকবে তাদের পয়েন্ট হবে ০.৯৯, ০.৯৮ .. এভাবে ০ হবে সবচেয়ে খারাপ শিক্ষা ব্যবস্থার দেশ। এ দিক থেকে তালিকার শীর্ষে থাকা দেশ সিঙ্গাপুর (০.৯৫), তারপর সুইজারল্যান্ড (০.৯২)। এভাবে বাকি দেশগুলোরও তালিকা রয়েছে (পড়ুন)।

খ) কোয়ালিটি ইনডেক্সঃ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগীতামূল অবস্থান নিয়ে রিপোর্ট তৈরী করে (পড়ুন)। মূলত ১২ মূল মানদণ্ড আমলে নিয়ে এই তালিকা তৈরী করা হয় যা একটি হলো "উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ"। এখানে বেশ কিছু বিষয় আমলে নেয়া হয়, যেমন শিক্ষদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও তাদের কর্মদক্ষতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত মান, কারিকুলামে কি কি বিষয় অর্ন্তভূক্ত করা হচ্ছে এবং ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন ও কর্মদক্ষতা উন্নয়ন। এসব কিছু মিলিয়েই মূলত এই ইনডেক্স তৈরী করা হয়। বিস্তারিত জানতে তাদের এ সংক্রান্ত বেশ কিছু আর্টিকেল পড়তে পারেন এখান থেকে।

ব্যয়বহুল শিক্ষা ব্যবস্থা
আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, ভুল না জেনে থাকলে বিভিন্ন তালিকা থেকে এটিই প্রতিয়মান হয়েছে (সূত্র)। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার দিকে তাকালে এ অবস্থার ভয়াবহতার একটি পরিষ্কার চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। আমি বেশ ক'বছর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বেশ পরিষ্কার ধারনা পেয়েছি। ইউরোপের অনেক উন্নত দেশেই উচ্চ শিক্ষা অবৈতনিক হলেও আমেরিকায় তেমনটি নয়। মোটাদাগে আমেরিকায় চার বছরের ব্যাচেলর প্রোগাম সম্পন্ন করতে ২০-৫০ হাজার মার্কিন ডলার প্রয়োজন হয়। আর স্বাভাবিকভাবে দু'বছরের মাস্টার্সে প্রোগামে ২০-৩০ হাজার ডলার প্রয়োজন পড়ে শুধু টিউশন ফি হিসেবে। তবে এম.বি.এ কিংবা স্পেশালাইজ প্রোগাম ও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ৩০-১০০ হাজার ডলার বা তার বেশীও পড়তে পারে। বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে যে উচ্চ শিক্ষা এখন আর কোন নাগরিক অধিকার নয় বরং পণ্য। রাজ্য ভিত্তিক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ব্যয়ের চিত্র পাবেন এখানে

ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন
১৯৮০ সালে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এই ডিপার্টমেন্টের বাজেট তথা খরচের খাতা ক্রমাগত বেড়েছে (সূত্র)। সমস্যাটা আসলে সেখানে নয় কারণ এই ব্যয় আমেরিকার সামগ্রিক বাৎসরিক বাজেটের বেশ ছোট একটা অংশ। সমস্যা হলো হাই স্কুল পাশ করা শিক্ষার্থী কেন লিখতে ও পড়তে পারে না (দেখুন) কিংবা হাইস্কুলে সব বিষয়য়ে "এ" পাওয়া ছাত্র কেন কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করতে পারে না (দেখুন)। বিষয়গুলো যে অস্বাভাবিক তা বলার অপেক্ষা রাখে না কিংবা সবাই যে এমন সেটাও নয়। আমার সাথে কলেজে পড়ুয়া ছাত্র সাধারণ অংক (এ্যালজেবরা) সমাধান করতে না পারা কিংবা ৪ কে ৮ দিয়ে গুণ করলে ফলাফল কত হবে তা বলতে না পারা মতও ছাত্র আমি দেখেছি। লিখতে গেলে সাধারণ ইংরেজী বানানে অজস্র ভুল করা ছাত্রও আমি দেখেছি যদিও সেটা তার মাতৃভাষা। তাহলে প্রশ্ন আসে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার যাচ্ছে কোথায়। এত টাকা খরচ করার পরেও কেন তার ফলাফল পজিটিভ হচ্ছে না।

এটা কেবল সমস্যার শুরু। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকার জনগণের টাকায় অনেক গরীব ছাত্রদের বিনামূল্যে পড়ার ব্যবস্থা করে দেয় যার অংকটাও অতটা ছোট নয়। শুধু ২০২৪ সালে ডি.ও.ই ২৬৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে যার মধ্যে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছিলো গ্র্যান্ট মানি মানে এ টাকা শুধু পড়াশোনার জন্য এককালীন খরচ হিসেবে ব্যয় করা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোকে অনুদান দেয়া হয়েছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। আর উচ্চ শিক্ষার জন্য অনুদান ও লোন বাবদ ব্যয় হয়েছে ১২৪ বিলিয়ন ডলার (সূত্র)। ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ডি.ও.ই্ প্রদত্ত অনাদায়ি লোনের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১.৭৭ ট্রিলিয়ন ডলার যা প্রতি বছরই বাড়ছে (সূত্র)। অবশ্য বাড়তে থাকা এই দায়ের পরিমাণ সমহারে বাড়ছে না। যেম কোভিডের সময় তা অনেক কমে এসেছিলো কিন্তু ২০২৪ এসে তা ৯% এর বেশী বেড়েছে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক কারনে পূর্ববর্তী প্রশাসন ক্ষমতা থাকার সময় বাইডেন ১৮৮ বিলিয়ন ডলারের লোন মওকুফ করেছেন। সেই সাথে যোগ হয়েছে আরো কিছু বিষয় যেমন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্য-পুস্তকে অযাচিতভাবে সরকারি টাকা খরচ করে এল.জি.বি.টি সম্পর্কিত বিষয়গুলো ঢোকানো হয়েছে যা নিয়ে অনেক রক্ষণশীল অভিভাবক মহলে ক্ষোভ তৈরী হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে "ডাইভারসিটি, ইকুইটি ও ইনক্লসন" (পড়ুন) এর মতো বিষয় যোগ করার কারনে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে (যারা সরকারি অনুদান গ্রহণ করে) আলাদা ডিপার্টমেন্ট চালু করা হয়েছে যা শিক্ষা সংক্রান্ত সরকারি ব্যয় কিছুটা হলেও বাড়িয়েছে। অবশ্য রক্ষনশীল রিপাবলিকানরা এর পক্ষে নয়। সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি বেশ মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সমাধান কিভাবে সম্ভব?
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিমত, বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে না দিয়ে রাজ্য সরকারের হাতে ছেঁড়ে দেয়া হোক। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনায় রাজ্য সরকার তার কোন এলাকার কোন বিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ধরনের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন তা বেশী দক্ষতার সাথে নির্ধারণ করতে পারবে এবং অযাচিত খরচ রোধ করতে পারবে। রাজ্য সরকারের হাতে ছেড়ে দিলে তারা স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের খরচ কমাতে চাইবে তা না হলে রাজ্যের জনগণের উপর নতুন করের চাপ বেড়ে যেতে পারে যা রাজ্য সরকারকে একটা প্রতিযোগীতামূলক অবস্থানে নিয়ে আসবে। কেন্দ্রীয় সরকার ডি.ও.ই এর মাধ্যমে না গিয়ে যে ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্যকে স্বাভাবিক থোক বরাদ্দ দেয়া হয়, তাদের মাধ্যমে দেয়া বরাদ্দ থেকেই রাজ নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা খাতে বরাদ্দ নির্ধারণ করবে।

এখানে মনে রাখা জরুরী যে, আমেরিকায় প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব সরকার রয়েছে, পার্লামেন্ট রয়েছে। রাজ্য নিজেও তাদের বাজেট তৈরী করে ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বাজেট থেকে টাকা বরাদ্দ দেয়। তেমনি স্ব স্ব রাজ্যের শিক্ষা খাতের বরাদ্দও রাজ্যই নির্ধারণ করবে। আরেকটি বিষয় হলো, সব রাজ্যে জনসংখ্যা ও আয়করের পরিমাণ একরকম নয়। যেমন টেনেসি রাজ্যে কোন ব্যক্তিগত আয়কর দিতে হয় না। আবার নিউ ইয়র্কের আয়করের রেট মন্টানা রাজ্যের সমান নয়। আবার রাজ্যের মাথাপিছু আয়ও সমান নয়। কোথাও শিক্ষা ব্যয় বেশী আর কোথাও কম। সবদিক থেকে বিবেচনা করলে বিষয়গুলো অনেকটাই বোধগম্য মনে হতে পারে। তবে সাধারণ জনগণ মূলত মোটাদাগে তাদের অভিমত ব্যক্ত করছেন, বিষয়টিকে আমি আপাতত পজিটিভলি দেখছি।

এছাড়া বিষয়টি নিয়ে আরো বেশ কিছু আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে। এক্সিকিউটিভ সিদ্ধান্তে এই ডিপার্টমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে না, একটা কংগ্রেস থেকে পাশ হয়ে আসতে হবে।

নোট: ব্যক্তিগতভাবে আমেরিকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মান আমার কাছে এতটাই খারাপ মনে হয়েছে যে আমি নিজেও আমার বাচ্চাদের আমেরিকায় প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনার পক্ষপাতি নয়। যদিও এখানে পড়াশোনার মান ছাড়াও আরো কিছু বিষয় জড়িত। তদুপরি সবার মতামত একরকম হবে না আর এটাই স্বাভাবিক।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:১২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:



শিক্ষা এতো ব্যয়বহুল হলে আমার মতো টোকাইরা তো পড়তে পারবে না।
কোন রকমে প্রাইমারী পাস করে খুশী থাকতে হবে।

২৩ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১৩

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আমেরিকায় টোকাই বলে কোন ধরনের লোক আছে কি না জানি না। তবে এখানে বৃদ্ধ চাইনিজ মহিলাদের এ দেশের গার্বেজ বিন থেকে কোক, পেপসি, বিয়ারের টিনের ক্যান কুড়াতে দেখেছি। তারা অবশ্য পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত নয়। প্রাইমারী পাশ না করলেও সমস্যা নেই, কাউকে না কউকেতো টিনের ক্যান কুড়াতে হবে। ধন্যবাদ।

২| ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: বিষয়টি জানলাম।
আপনাকে ধন্যবাদ।

২৩ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১৪

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

৩| ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৫৮

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: তথ্যবহূল আর্টিকেল। আপনার লিখা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

২৩ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১৪

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

৪| ২২ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:০৭

রবিন_২০২০ বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একমত।
স্কুল গুলো ভালো রেজাল্ট করতে না পারার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী দের আর্থ সামাজিক অবস্থানের ভূমিকাও বিশাল। যেসব শহরে এলাকা ভিত্তিক ভর্তি করা হয় সেখানে দেখবেন মধ্যবিক্ত এলাকার স্কুল গুলোর মান তুলনামূলক ভাবে অনেক ভালো।
আবার যেহেতু পাবলিক স্কুল গুলো বয়স ভিত্তিক গ্রেড (শ্রেণী ) নির্ধারণ করে দেয়। এতে সদ্য ইমিগ্র্যান্টদের সাথে অন্যদের বিরাট একটা ব্যাবধান থেকে যায়। এই নুতন ছাত্র দের প্রতি টিচারদের বেশি মনোযোগ দিতে হয় আর এতে বাকিরা হয় বঞ্চিত।
বর্তমানে স্কুল গুলো জেন্ডার আইডেন্টিটি আর ডাইভারসিটি নিয়েই বেশি ব্যস্ত (অন্তত ক্যালিফোর্নিয়াতে)
আপনার নিজ সন্তানদের প্রাইভেট স্কুলে পাঠানোই বেটার চয়েস। কিংবা যে সব এলাকায় চাইনিজ আর ইন্ডিয়ান আধিক্ষ, সেই এলাকায় মুভ করতে পারেন। এই এথিনিক গ্রুপ দুটি খুবই ভালো করছে।

২৩ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:২৯

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আপনার উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে আমি কম-বেশী অবগত। সদ্য ইমিগ্র্যান্টদের সমস্যাগুলো আসলে নতুন নয়। এগুলো কিছুটা কম-বেশী সবাইকেই ফেইস করতে হয়। জেন্ডার আইডেন্টিটি, ডাইভারসিটি ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত এলাকাগুলো একটু বেশী বাড়াবাড়িই করে বলে আমার মনে হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, আমি মূলত কনজারভেটিভ কিছু ক্ষেত্রে লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে তবে রেডিক্যাল ফার লেফট্ ধারনার সাথে কখনোই একমত হতে পারি না।

উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছিলাম, আমি বরাবরই চেয়েছি আমার বাচ্চাদের জন্ম বাংলাদেশে হোক আর হয়েছেও তাই, আলহামদুলিল্লাহ। ওরা প্রাইমারী ও মাধ্যমিক স্তর বাংলাদেশেই পড়াশোনা করবে। বাংলা ভাষা, লিখতে ও পড়তে পারাটা আমার কাছে জরুরী মনে হয়েছে। কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে না যাওয়া পর্যন্ত ওদের আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থায় ওদের দেয়ার ইচ্ছে নেই। চেষ্টা থাকবে ইউরোপের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো। বাকিটা তাদেরকেও বড় হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

চাইনজি আর ইন্ডিয়ানরা বেশ ভালো করছে, কোন সন্দেহ নেই। তবে আমি আসলে মোটাদাগে আমার সন্তানদের জীবনে পড়াশোনায় ভালো করার চেয়েও ভালো মানুষ হওয়ার দিকে জোর দেবো। সন্দেহ নেই সব বাবা-মা-ই সেটাই চান কিন্তু আমেরিকার সামগ্রিক পরিবেশ বাচ্চা-কাচ্চাদের সঠিক মন-মানসকিতা নিয়ে বড় হওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা ফেভারেবল বলে আমার মনে হয় নি। বাংলাদেশের পরিবেশও যে খুব ভালো তাও নয়, বলতে পারেন মন্দের ভালো।

সময় নিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৩:১৮

সোহানী বলেছেন: সত্যি বলতে কানাডায় মুভ করার পর আমিও বেশ হতাশ এখানের শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে। আপনি যেটা বলছেন সেটা কানাডায় ও আছে। বলতে গেলে মাথায় তুলে রাখে বাচ্চাদের কেউ যদি স্কুলের গন্ডীর পড়তে চায়। গ্রান্ট লোকাল ফেডারেল সবখান থেকেই পায়। যার কারনে একটি কানাডিয়ান বাচ্চার তেমন কোন খরচ নেই। কিন্তু বাইরে থেকে কেউ পড়তে আসলে তাকে টিউশন ফিই দিতে হয় ৩/৪ গুন।

আর প্রাথমিক পর্যায়ে এরা বাচ্চাদের মাথায় তুলে রাথে। তারপর যেই হাইস্কুলে গেল তখন মাথা থেকে নামিয়ে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়। এক আজিব ব্যাবস্থা। সেদিক থেকে দেশে অনেক ভালো। লিখবো নিশ্চয় এ নিয়ে।

২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আমেরিকায় প্রায় দুই যুগ কাটিয়েও আমি এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি দেখছি না, টিউশন ফি বাড়ানো ছাড়া। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি (CUNY) আমেরিকার শহর কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এনরোলড ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড়। প্রায় সব দেশের ছাত্র-ছাত্রী এখানে পড়াশোনা করে। লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীর চেয়ে অন্য দেশে জন্ম নেয়া শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করছে। এ চিত্র আমার জন্য নতুন কিছু নয়।

আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করতে গিয়ে এ প্রসঙ্গে বিশ্ব-বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী "মিচিও কাকু" যিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন অধ্যাপক তিনি কি বলেছেন, তার কথা শোনা যাক।

আমেরিকায় পি.এইচ.ডি. করতে আসা প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী-ই বিদেশে জন্মগ্রহণ করা। প্রশ্ন হলো আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন অধিক মাত্রায় আমেরিকান শিক্ষার্থী নেই। তার অন্যতম কারণগুলোর একটি হলো, উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় রয়েছে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিন্তু সেখানে কোয়ালিফাই করার মতো আমেরিকান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। কেন কম? সেটা নিয়ে ভাবনা-চিন্তার অনেক অবকাশ রয়েছে আর সেখানেই অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে।

যাইহোক, এ বিষয়ে আপনার লিখা পড়ার অপেক্ষায় থাকছি। আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:৩৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: দিপুমণিকে ওখানকার শিক্ষামন্ত্রী বানালে শিক্ষার মান এবং খরচের এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমার মনে হয়।

২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৭:২৯

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: হা হা হা =p~ ভালো বলেছেন। ধন্যবাদ।

৭| ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৪৫

শায়মা বলেছেন: একদিক দিয়ে তো ট্রাম্প তাইলে ভালোই করেছে। যদিও আমি এটা শুনে অবাক হয়েছিলাম। যদিও আদার ব্যাপরী হয়ে জাহাজের খোঁজ করতে যাইনি বেশি।

তবে মানুষ যে এত ছেলে মেয়ে পাঠাচ্ছে আমেরিকা কানাডায় উচ্চশিক্ষার জন্য এটা জন্ম থেকেই দেখে আসছি। উন্নত দেশের পড়ালেখাও উন্নত আর তাহারা যাহা করিবেন তাহাই সহি চিরকালটা এসব ভাবা মানুষ আমি এখন তো তোমাদের সকলের মন্তব্য দেখে দেখে তো এখন চিন্তায় পড়লাম ভাইয়া! :(

২৩ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:২৪

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আমেরিকার প্রাক্তন ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এর সময়ে এই ডিপার্টমেন্টটি গঠন করা হয়। তিনি মোটাদাগে সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত সিনেটর বা কংগ্রেস সদস্য ছিলেন। ট্রাম্প মূলত রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচন করে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তবে তিনি কোন কংগ্রেস সদস্য নন। দল হিসেবে রিপাবলিকানরা অনেকটাই রক্ষণশীল ও সরকারের আকার ছোট এবং খরচ সংকোচনের পক্ষে। ট্রাম্প মূলত ব্যবসায়ী, সুতরাং তার দিক থেকেও খরচ কমানোর বিষয়টিও যুক্তিযুক্ত। ট্রাম্প কিছু বিষয় ভালো করছে কোন সন্দেহ নেই, কিছু কাজ করেছেন যা অনেকেরই মনঃপূত হচ্ছে না আর রাজনীতিতে এটাই স্বাভাবিক।

শিক্ষা ব্যবস্থায় টাকা ব্যয় করা পুরোপুরি বন্ধ করা অসম্ভব। যেমন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী মানুষের পড়াশোনাতো আর বন্ধ করে দেয়া যায় না। সে বিষয়গুলোও তিনি বিবেচনায় রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। মূল বিষয় হলো, টাকা খরচ করাই যদি একটি ডিপার্টমেন্টের মূল কাজ হয় তবে সেটা ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেজারি থেকেই করা হোক যারা কেন্দ্রীয় সরকার থেকে প্রতিটি রাজ্যকে বিভিন্ন কারনে অনুদানের টাকা বরাদ্দ করে, শিক্ষা খাতে এককভাবে ডিপার্টমেন্ট করে চার সহস্রাধিক মানুষকে চাকুরি দিয়ে এটা করার প্রয়োজন নেই। তবে শিক্ষাখাতে এককভাবে বরাদ্দ কমে আসবে অবশ্যই। ১.৭৭ ট্রিলিয়ন বা ১৭৭০ বিলিয়ন ডলার লোন অনাদায়ী থাকা একটা বিরাট ব্যাপার।

কানাডায় পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশ কম। আর মানুষ আমেরিকা ও কানাডায় পড়তে যাওয়ার পেছনে বিরাট একটা কারণ থাকে ভবিষ্যতে ইমিগ্র্যান্ট হওয়া। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলোই আমেরিকায়। কিন্তু দেখতে হবে আনুপাতিক হারে সেখানে কারা পড়াশোনা করছে আর সেটা আমেরিকার কতটা কাজে লাগছে। বিদেশ থেকে প্রতিভা এনে এভাবে কতদিন? দেশের মানুষের শিক্ষার মান বাড়ানো জরুরী তা না হলে অনন্তকাল অন্য দেশের প্রতিভার উপরই নির্ভর থাকতে হবে। জাতি হিসেবে এটা কোন ভালো পন্থা নয়। বলছি না আমেরিকায় প্রতিভা নেই, অবশ্যই আছে তবে ততটা নেই যতটা থাকা উচিত।

ইংরেজীতে "ব্রেইন ড্রেইন" বলে একটা ব্যাপার আছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরই আমেরিকার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক উচ্চ ডিগ্রীধারী প্রতিভা তাদের নিজ নিজ দেশে চলে যাচ্ছে। আবার অনেকেই যাওয়ার আগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার তথ্যও চুরি করে সাথে নিয়ে যাচ্ছে যা তারা নিজ নিজ দেশে গিয়ে কাজে লাগাছে। এসব ক্ষেত্রে ভারতীয় ও চীনারা বেশ এগিয়ে। এভাবে কম্পিটিভ এজ কমে আসছে আমেরিকার। অতীতে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে এবং অনেকেই এসব কারণে আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে, এটাও ভাববার বিষয়। আমরা সাধারণ মানুষ যতটা সহজে একটা বক্তব্য দিয়ে দিচ্ছি বিষয়টা হয়তো ততটা সাধারণ নয়। ধন্যবাদ।

৮| ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৩১

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট। পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় আমেরিকাসহ পশ্চিমা অনেকে দেশে পড়াশোনা, ভার্সিটিতে অধ্যায়ন করতে মোটা অংকের অর্থের প্রয়োজন হয়। উচ্চ শিক্ষার ব্যায় মেটাতে ব্যাংক লোনসহ, মেয়েদের পতিতাবৃত্তি করা এখন খুবই সাধারণ ঘটনা। তবে একথা ও সত্য বিশ্বের লিডিং প্রতিষ্ঠানগুলো আমেরিকা, ইংল্যান্ডের টপ ভার্সিটিতে পড়া সার্টিফিকেটকে অনেক সমিহ করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.