![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক
আর্ন্তজাতিক মানদণ্ডের বিচারে আমরা আধুনিক, শিক্ষিত ও রুচিবান পর্যায়ের কোন জাতি বলে আমার মনে হয় না। অন্তত আমার অতি ক্ষুদ্র জ্ঞান সেটাই বলে তবে আমার ধারনাই যে সম্পূর্ণ সঠিক সেটাও আমি দাবি করি না। আমাদের ভাষাগত ব্যবহার, ব্যক্তিগত আচরণ, সামাজিক মূল্যবোধ, রীতি-নীতি, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বলতে পারেন মোটা দাগে সবকিছুতেই আমাদের এক ধরনের দীনতার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্যণীয়। একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখলে এমন অনেক কিছুই আমাদের অনেকের কাছে বেশ পরিষ্কার হয়ে ধরা দেবে।
এ জাতিতেও হাতে গোণা কিছু মানুষ থাকতে পারেন যারা হয়তো স্বাভাবিকভাবেই আমাদের চেয়েও অনেক বেশী আধুনিক ও রুচিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আমাদের জাতি সম্পর্কে আমার এ উপলব্ধি অবশ্য এক দিনে গড়ে ওঠে নি। এটা বোঝার জন্য জীবনের অভিজ্ঞতা ও সময়ের প্রয়োজন অনেক। তবে খুব অল্প বয়স থেকেই বিভিন্ন দেশের ও আর্থ-সামাজিক অবস্থানের মানুষদের সাথে মেলা-মেশা করার সুযোগ হয়েছে বলেই হয়তো বিষয়গুলো খুব তাড়াতাড়ি আমার চোখে পড়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন বসবাস করলে এমন অনেক সামাজিক রীতি-নীতি আপনার আমার চোখে পড়বে যা হয়তো উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে অস্বাভাবিক বা অসুন্দর বলে ধরা হয়। এমন কি স্বাভাবিকভাবে দেখলেও তাতে কটুতা দৃষ্টিগোচর হয়, তদুপরি ওটা নিয়ে আমরা খুব একটা মাথা ঘামাই না।
ধরুন, আপনি ঢাকার কোন রাস্তা দিয়ে আপন মনে হেঁটে যাচ্ছে না। কথা নেই বার্তা নেই কোথা থেকে কেউ একজন "ওয়াক-থু" বলে এক গাদা কফ কিংবা থুথু রাস্তা ফেলে দিয়েই আরেকজনের সাথে আলোচনা জুড়ে দিচ্ছে। পুরো বিষয়টি চিরচেনা এই শহরের খুব স্বাভাববিক দৃশ্য বলে মনে হলেও আদতে এটা মোটেও স্বাভাবিক বিষয় নয়। বিগত প্রায় দু'দশকের প্রবাস জীবনে আমি এ ধরনের দৃশ্য খুব বেশী দেখিনি। আর দেখলেও, যখন থুতু ফেলা মানুষটির মুখের দিকে তাকাই, তখন খুব একটা অবাক হই না। কারণ এদের চেনা সহজ।
আবার ধরুন, আপনি ঢাকার রাস্তায় কোন কর্নারে দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তা পার হওয়ার জন্য। একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন অনেকেই আপনার আগেই রাস্তার মাঝ দিয়ে অবলীলায় হেঁটে যাচ্ছে আর হাত দিয়ে দূর থেকে গতি নিয়ে আসা গাড়িকেও থামতে বলছে। বিষয়টা এমন রাস্তা পার হওয়া তার জন্য সবচেয়ে জরুরী কাজ তাতে গাড়ি আসুক কিংবা ট্রেন। এ ধরনের ঘটনায় প্রাণও যাচ্ছে অনেক। তবে এদের মৃত্যু আমাকে খুব একটা হতাশ করে না। ইংরেজীতে আমার একটা বেশ পছন্দের প্রবাদ আছে, "এফ. এরাউন্ড এন্ড ফাইন্ড আউট"। আমার কাছে বিষয়গুলো অনেকটা তেমনই মনে হয়। হাত দিয়ে ইশারা করলেই রাস্তার মাঝে গতি নিয়ে আসা একটা গাড়ি থেমে যাওয়ার কোন কারন দেখি না। গাড়ির পেছনেও গাড়ি থাকে তাই হঠাৎ করেই ব্রেক কষলে পেছনের গাড়ি এসে যে সজোরে ধাক্কা দেবে না সে গ্যারান্টিও নেই। বিপদ দু'দিকেই। তাই পথচারি হিসেবে খুব সাবধানে রাস্তা পারাপার হওয়া জরুরী। অবশ্য এ দেশের ট্রাফিক সিগন্যালও তেমন কেউ মানে না। আধুনিক সভ্য পৃথিবীতে এই দেশের অনেক ব্যবস্থাই আমার কাছে বেশ অকল্পনীয় মনে হয়।
আজীবন দেশে থাকলে হয়তো এগুলোও আমার কাছে স্বাভাবিকই মনে হতো। তবুও একজন বোধ-সম্পন্ন মানুষ কি করে কোন সিগন্যাল না মেনেই অবলীলায় রাস্তা পার হচ্ছে তা ভাবতেও অবাক লাগে। ওভার ব্রিজ আছে তবে খুব বেশী মানুষ তা ব্যবহার করছে না। উল্টো ওভার ব্রীজেও ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসেছে মানুষজন। ভিখারীরা শুয়ে-বসে ভিক্ষা চাইছে। অথচ মানুষ যে ঠিকমতো হাটতেই পারছে না এসব ভাসমান দোকান আর ভিক্ষুকের কারনে, সে দিকে কেউ নজর দিচ্ছেন না। তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ওভার-ব্রীজ দেয়ারই বা কি মানে?
পশ্চিমের দেশে ওভার-ব্রীজ আমি খুব একটা দেখিনি। ওখানে বেশীরভাগ মানুষই ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলে। নির্দিষ্ট সময় মেনে গাড়ির ট্রাফিক থামছে আর মানুষজন পার হচ্ছেন। এখানেও যে ব্যতিক্রম নেই, তা-ও নয়। অনেক সময়ই দেখবেন কিছু লোকজন থাকে যারা ওয়াকিং সিগন্যাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও রাস্তা পার হন। ওদের দিকে ভালো করে তাকালেই দেখতে পাবেন, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ওগুলো ভিনদেশী লোকজন। এরা মূলত পশ্চিমে গিয়ে নিজেদের প্রথামতই চলতে চায় বা চলে। এর মূল্যও অনেককেই চুকাতে হয়েছে অতীতে। আজও হচ্ছে আর আগামীতেও হবে।
আমার চেনা-পরিচিত এক বাঙালীও আমেরিকায় গিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে তার পা ভেঙ্গেছে। ছ'মাস বিছানায় শুয়ে কাটিয়েছে। যোগাযোগ না থাকার কারণে তার ঘটনাটা আমি তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারিনি। জেনেছি অনেক পরে, যদিও সে জন্য বিন্দু মাত্রও আফসোস হয় নি। কিছু টাকা-পয়সার লোভে ঐ লোক নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে মামলা-মোকদ্দমা করেছিলো। লাভ হয়নি, সেখানেও আদালতে হেরেছে আর টাকাও খুইয়েছে অনেক। পুরো বিষয়টিই দুঃখজনক হলেও আসলে দুঃখ করার কিছু নেই। মানুষ ভুল করবে, মাশুল দেবে, শিখবে আর নিজেকে সংশোধন করবে এটাই জীবনের দেয়া অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা। অবশ্য আমরা বাংলাদেশীরা অতীত থেকেও শিক্ষা নেই না কারন শিক্ষাকে বড় ভয় আমাদের।
নোটঃ উপরের বক্তব্যগুলো নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত জীবন ও অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দেয়া আমার লিখার মূল উদ্দেশ্য নয় বরং আত্নসমালোচনার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক রীতি-নীতির দিকে কিছুটা দৃষ্টি দিয়ে নিজেদের সংশোধন করাই মূল উদ্দেশ্য।
১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১৩
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আমরা আমাদের মতোই থাকবো, তাতে সমস্যার কিছু নেই। তবে সময়ের পরিক্রমায় অনেক কিছু বদলে যায় তেমন কিছু ইতিবাচক বদলে যাওয়াটাও জাতি হিসেবে আমাদের জন্য জরুরী। ধন্যবাদ।
২| ১২ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ২:৫৫
নতুন মেসাইয়া বলেছেন:
আপনার জাতীয়তা কোনটি: বাংলাদেশী, নাকি আমেরিকান?
৩| ১২ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:১৩
বিজন রয় বলেছেন: আমাদের জাতিগত দৈন্যতা.............. হা হা হা .........
একটু বলুন তো.......... ৫০----২৫ বছর আগের চেয়ে দৈন্যতা বেড়েছে না কমেছে?
১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১৫
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: কিছু ক্ষেত্রে কমেছে আর কিছু ক্ষেত্রে অনেক বেশী বেড়েছে। বিগত ২৫-৫০ বছরে জনগণের সংখ্যাও কিন্তু বেড়েছে, ওটাও মাথায় রাখতে হবে। ধন্যবাদ।
৪| ১২ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: এযুগের মানুষেরা ইতর। জাস্ট ইতর।
১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:১৬
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: বেশীরভাগ মানুষই মূলত ঐ শ্রেনীর তবে সবাই নয়। অনেক ভদ্র ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষও রয়েছেন, যাদেরকে কাছ থেকে আমাদের শিক্ষণীয় অনেক কিছু রয়েছে। ঐ দিকটায় সম্ভবত আমাদের একটু বেশী নজর দেয়া প্রয়োজন। ধন্যবাদ।
৫| ১২ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:০০
লোকমানুষ বলেছেন: লেখাটিতে গভীর বাস্তবতা সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। আমাদের সমাজে আচরণগত অসচেতনতা ও নিয়ম ভাঙার প্রবণতা সত্যিই উদ্বেগজনক। রাস্তা পারাপারের মতো সাধারণ বিষয়েও শৃঙ্খলার অভাব আমাদের মানসিকতার দৈন্যতা প্রকাশ করে। তবে আশার কথা, সচেতন কিছু মানুষ এখনও আছেন, যারা পরিবর্তনের সম্ভাবনা বহন করে।
১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২০
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই। অবশ্যই আমাদের এ দেশেও অনেক জ্ঞাণী-গুণী, ব্যক্তিত্ব ও রুচিসম্পন্ন মানুষ রয়েছেন। আমাদের সবার উচিত তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেেদেরকে আরো উন্নত করা। এ যুগে এসেও আমাদের এ ধরনের আচরণ মূলত অশিক্ষিত ও নিচু শ্রেনীর মানুষ বলেই আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। জাপানিজদেরও বেশী কিছু রীতি-নীতি আমার বেশ ভালো লাগে। ধন্যবাদ।
৬| ২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: দুঃখের বিষয় হলো যে জাতিগত এসব দৈন্যের চালচিত্র অনেক ছোটকাল থেকেই দেখে এসেছি। আজ জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে মনে হয়, এতদিনে দৈন্যের অবসান তো কিছু হয়ই নি, বরং তা অনেকগুণে বেড়ে গেছে। এ দেশে ফুট ওভারব্রীজ করা নিরর্থক, রাস্তায় অটোমেটিক সিগন্যাল বাতি বসানো অর্থের অপচয়ের নামান্তর মাত্র, কারণ গুলশানের মত পশ, ডিপ্লোম্যাটিক একটি এলাকায় ট্রাফিক পুলিশকে রাস্তায় দড়িবাঁধা প্রতিবন্ধক বসিয়ে হাতের বা লাঠির ইশারায় যানবাহন ও পথচারীর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এ ছাড়া যত্রতত্র কফ ও থুথু ফেলা, এমনকি ফুটপাথের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করা এদেশে এখন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লক্ষ্য করুনঃ শিরোনামে এবং মেইন বডি'র টেক্সটে উল্লেখিত শব্দটি হবে দৈন্য, 'দৈন্যতা' নয়। 'দীনতা' ও সঠিক শব্দ, সেটাও লিখা যেতে পারে, তবে কোনক্রমেই 'দৈন্যতা' নয়।
২৮ শে আগস্ট, ২০২৫ ভোর ৪:৪৯
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আমাদের কাছে "স্বাভাবিক" মনে হওয়া এই বিষয়গুলো, আসলে স্বাভাবিক নয়। পড়াশোনা করে জ্ঞান কম-বেশী অর্জন করা সম্ভব হলেও তার সাথে মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়ন প্রয়োজন। তা না হলে পড়াশোনা করে কেবল সার্টিফিকেট পাওয়া ছাড়া আর তেমন কিছু অর্জন করা সম্ভব হয় না।
বানান সম্পর্কিত ত্রুটিতে দৃষ্টিপাত করার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানবেন স্যার। আমি সংশোধন করে দিয়েছি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:২২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এসবের কোনো সুরাহা হবে না । আমরা আমাদের মতই থাকতে ভালোবাসি ।