নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন মানুষ। বলার মতো বিশেষ কিছু নেই। মনের ভাবনাগুলো তুলে ধরতে চাই। ভালো লাগে কবিতা, লিখা-লিখি আর ছবি তোলা, এইতো! https://prokashoni.net

ইফতেখার ভূইয়া

গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক

ইফতেখার ভূইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবশেষে বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন হচ্ছে

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫


বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন নিয়ে দীর্ঘদিন অনেক কথা-বার্তা হলেও আদতে বিগত এক দশকেরও বেশী সময় ধরে যুগোপযোগী তেমন পদক্ষেপ সরকার নেয় নি। এটা নিয়ে আমার কিছুটা ব্যক্তিগত ক্ষোভ রয়েছে। বিষয়টা অনেকটাই আদার ব্যপারীর জাহাজের খবর রাখার মতোই। আমি কোন সামরিক বিশষেজ্ঞ নই, তবুও স্বল্প জ্ঞাণে কম-বেশী বুঝতে পারি তাই বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ণ হওয়ার প্রত্যাশাটা বরাবরই রয়ে গেছে মনের এক কোণে।

যাইহোক, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে যা জানতে পেরেছি তা হলো বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ অর্ন্তবর্তী সরকার গ্রহণ করেছে। অতি শীঘ্রই বিমান বাহিনীতে এই সরঞ্জামগুলো যুক্ত হতে যাচ্ছে যার মধ্যে অন্যতম হলো ইউরোফাইটার টাইফুন ১০টি, চীনা জে-১০ সি ২০টি, জেএফ-১৭ ও তার্কিশ টি-১২৯ এ্যাটাক হেলকিপ্টার ৬টি। এগুলোর মধ্যে ঠিক কতগুলো জেএফ-১৭ আসছে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়, তবে ধারনা করা হচ্ছে অন্তত ১৬টি কেনা হতে পারে। কেন এবং কোন অস্ত্র কি কারনে কেনা হচ্ছে আসুন কিছুটা বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করি।

ইউরোফাইটার টাইফুন
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই মূলত রাশিয়ান ও চাইনিজ বিমান ব্যবহার করে আসছে। এই প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ইউরোপিয়ান মাল্টিরোল যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করতে যাচ্ছে। অতীতে আমেরিকার এফ-১৬ ক্রয় নিয়ে বেশ কথা শোনা গেলেও তা বিভিন্ন কারণে বাস্তবায়িত হয় নি। তবে অনেক কিছু ঘাটাঘাঁটি করে যা বুঝতে পারলাম তাতে এটা পরিষ্কার যে, পার্শ্ববর্তী দেশের এ ব্যাপারে ব্যাপক তৎপরতা ছিলো। সে তুলনায় ইউরোফাইটার টাইফুন ক্রয় অনেকটাই শাপে বর হওয়ার মতো বলে মনে হয়েছে। ইউরোপের একাধিক দেশ (অস্ট্রিয়া, জার্মানী, ইটালি, স্পেন, ইউ.কে.) ছাড়াও মিডল ইস্টের বেশ কিছু দেশ এই যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করছে তাদের বিমান বাহিনীতে। মূলত আমেরিকান যুদ্ধ বিমান থেকে ইউরোপের নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই ইউরোপের বেশ ক'টি দেশ মিলে ৪.৫ জেনারেশনের এই যুদ্ধ বিমান তৈরী করেছে।

শব্দের গতির চেয়ে দ্বিগুণ (সর্বোচ্চ মাক ২.৩৫, পড়ুন আফটারবারনার) গতিতে এই যুদ্ধ বিমান চলতে সক্ষম। তবে কোন আফটারবারনার ছাড়া এই যুদ্ধবিমান শব্দের দেড়গুণ গতিতে (মাক ১.৫) আকাশে উড়তে পারে। যুদ্ধ বিমানটি সর্বোচ্চ একটানা ২৯০০ কি.মি বা ১৬০০ নটিক্যালমাইল উড়তে সক্ষম তবে এর কমব্যাট রেঞ্জ ১৩০০+ কি.মি বা ৭৫০ নটিক্যাল মাইল। অন্যদিক দিয়ে ভাবতে গেলে এই যুদ্ধ বিমান বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড ছাড়াও এর জলসীমাও নজরদারি করতে পারবে। ভূমি থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার ফিট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এবং বিমানটির সর্বমোট ১৩ টি হার্ড পয়েন্ট রয়েছে যেখানে মিসাইল, বম্ব, রিজার্ভ ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য সরঞ্জাম বহন করতে পারবে। এক কথায় এই যুদ্ধ বিমান বাংলাদেশের ভূ ও জলসীমার নিরাপত্তায় বলিষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি।

বর্তমানে বিমান বাহিনীর হতে থাকা একমাত্র মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান হলো মিগ-২৯। ১৯৯৯ সালে এই যুদ্ধ বিমানগুলো ক্রয় করা হয়েছিলো। যন্ত্রাংশের স্বল্পতা ও রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে বেশীরভাগ সময়ই এই বিমানগুলো গ্রাউন্ডেড থাকে। বর্তমানে আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমানের মধ্যে মাত্র তিনটির ইঞ্জিন চালু রয়েছে (সূত্র)। আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশের মত যে কোন উন্নয়নশীল দেশের বিমান বাহিনীর মূল যুদ্ধ বিমানের এই করুণ হাল কেবল বাংলাদেশ বলেই সম্ভব হয়েছে। এমনকি পাশের দেশ মায়ানমারও এদিক দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে আছে। বিমান বাহিনীতে বর্তমান মিগের পাশাপাশি টাইফুন যুক্ত হলে, এর এম.আর.সি.এ. সক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে সে কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ভবিষ্যতে আরো ইউরোফাইটার টাইফুন সংগ্রহ করা হতে পারে।

জেএফ-১৭ ও জে-১০
আমেরিকার এফ-১৬ যুদ্ধ বিমানটিকে আমার কাছে সকল যুদ্ধ বিমানের মাঝে বর্তমানে এক অনন্য বিস্ময় বলে মনে হয়। এর গুণাগুণ, সক্ষমতা, নির্ভরযোগ্যতা ও আধুনিক যুদ্ধে এর ইতিহাস বার বার মনে করিয়ে দেয় কেন ৭০-এর দশক থেকে আজও এই বিমানটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হয়ে আসছে। আকারে ছোট, দ্রুত গতি, অসম্ভব জি টলারেন্স ও বিমানের নিজের ওজনের চেয়ে বেশী পে লোড বহন করার ক্ষমতা এই যুদ্ধ বিমানটিকে এক কথায় লিজেন্ড পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আমেরিকার বিমান বাহিনীতে এখনো ৭০০ এর বেশী এফ-১৬ (সি/ডি) ব্যবহার হচ্ছে তাই এটাকে বাহিনীর মূল ব্যাকবোন বলে ধরা হয়।

বিমানটি এতটাই জনপ্রিয় যে জাপান (মিতসুবিশি এফ-২) ও দঃকোরিয়া (কাই টি-৫০) নিজ নিজ দেশে লকহিড মার্টিনের সহায়তায় (এফ-১৬ এর প্রস্তুতকারক) তাদের নিজস্ব ভ্যারিয়েন্ট বিমান বানিয়েছে, যেগুলোতে এফ-১৬ এর অনেক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। পাকিস্তান অনেক আগে থেকেই আমেরিকার এফ-১৬ ব্যবহার করে আসছে এবং এর সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে দেশটি পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল। অর্জিত লব্ধ জ্ঞাণ ও চীনের সামরিক সক্ষমতার সহায়তা নিয়ে পাকিস্তান নিজেরা তৈরী করেছে জেএফ-১৭ আর চীন তৈরী করেছে জে-১০। তবে এফ-১৬ এর সাথে অন্যান্য দেশের তৈরী করা বিমানগুলোর মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে মূলত জেট ইঞ্জিন। শুধু মাত্র জাপান ছাড়া অন্য কোন দেশই আমেরিকার তৈরী জেট ইঞ্জিন ব্যবহার না করার কারণে বিমানের গতি ও অস্ত্র পরিবহনের সক্ষমতায় সবগুলো বিমানই পিছিয়ে আছে। তবে জাপানের এফ-২ বিমানটি আকারে বড় ও ভারী হওয়াতে এর সর্বোচ্চ গতি কিছুটা কম হলেও অস্ত্র বহন করতে পারে বেশী। পাকিস্তান মূলত মিগ-২৯ এর একটি ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে জেএফ-১৭ এ। অন্যদিকে চীন ব্যবহার করেছে তাদের নিজস্ব ইঞ্জিন।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের বিমানগুলো ক্রয়া করছে মূলত বর্তমানে পরিচালিত এফ-৭ যুদ্ধ বিমানগুলোকে অবসরে পাঠানোর জন্য বা রিপ্লেস করার জন্য। পাকিস্তান ও চীনের বিমানগুলো সক্ষমতা ও কার্যকারিতা মূল্যায়ন শেষে আগামীতে যে কোন একটি ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশ আবার ক্রয় করার সম্ভাবনাও রয়েছে।

তার্কিশ টি-১২৯ এ্যাটাক হেলিকপ্টার
এ্যাটাক হেলিকপ্টার নিয়েও অতীতে বাংলাদেশের সরকার টালবাহানা করেছে বহুদিন। আমেরিকার এ.এইচ-৬৪ এ্যাপাচি হেলিকপ্টার ক্রয় নিয়েও বেশ দেন দরবার হয়েছিলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত অজানা কারনে এই হেলিকপ্টারও ক্রয় করতে পারেনি বিমান বাহিনী। শোনা যায় বোয়িং এর প্রতিনিধিও বাংলাদেশে এসেছিলো এই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিশ্বের সর্বাধুনিক এ্যাটাক হেলিকপ্টার হিসেবে এর খ্যাতি রয়েছে।

এ্যাপাচি ক্রয় করতে না পারলেও তার্কিশ টি-১২৯ এ্যাটাক হেলিকপ্টারকেও হেসে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বোয়িং কোম্পানী থেকে লাইসেন্স নিয়ে এ্যাপাচি হেলকপ্টারগুলোকে ইউ.কে.-তে তৈরী করেছে অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড। এই কোম্পানীটিকে পরবর্তিতে কিনে নেয় লিওনার্ডো যা মূলত ইতালি ভিত্তিক আর্ন্তজাতিক ডিফেন্স ম্যানুফ্যাকচারার। আর অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড-ই তার্কিশ এ্যারোস্পেশ ইন্ডাস্ট্রিজ এর সাথে যৌথ উদ্দ্যোগেই তৈরী করেছে টি-১২৯ এ্যাটাক হেলিকপ্টারটি। দুই আর দুইয়ে চার মেলাতে পেরেছেন নিশ্চয়ই?! অন্যদিকে ইউরোফাইটার টাইফুন তৈরীতে যেসব অংশীদার রয়েছে তাদেরই একটি হলো এই লিওনার্ডো। আশা করছি পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

বাংলাদেশ আগে কখনো ডেডিকেটেড এ্যাটাক হেলিকপ্টার ক্রয় করেনি। তবে মূলত সৈন্য ও সরঞ্জাম পরিবহনের জন্য ক্রয় করা রাশিয়ান ইউটিলিটি হেলিকপ্টার দিয়েই এই কাজগুলো করা হতো কম-বেশী। স্পেশালাইজড না হওয়াতে এই ইউটিলিটি হেলিকপ্টারগুলোর যুদ্ধ সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তার্কিশ এ্যাটাক হেলকিপ্টার ক্রয় করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন দুর্গম অঞ্চলে ড্রোন এর পাশাপাশি সরাসরি অপারেশন চালাতে পারবে। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তায় এই হেলিকপ্টারটি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি।

সবশেষে বলবো, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের বিকল্প নেই। দেরীতে হলেও বর্তমান সরকারের সাহসী এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:১২

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:
সামরিক ও ডিফেন্স বিষয়ে আপনার আগ্রহ ,পড়াশোনা, জ্ঞান বেশ ভালো। এ বিষয়ক আগের কয়েকটি পোষ্ট পড়েছি। এখানে চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন। টাইফুন ক্রয়ের বিষয়টি আমি নিজে ও দেখেছি; কিন্তু বিস্তারিত পড়ার সুযোগ হয়নি। বেশ অনেক বছর ধরেই এমন নিউজ দেখছি যুদ্ধ বিমান ক্রয়ের, তাই আর এখন গুরুত্ব দেই নি। যাক অবশেষে কিনছে, তাহলে?? কতগুলো কিনছে ডিল সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে ভালো হতো।

টাইফুন নিঃসন্দেহে ৪+ জেনারেশন মধ্যে বেষ্ট একটি যুদ্ধ বিমান। ক্ষেত্র বিশেষে আমেরিকান "রেপটর" কে ও টেক্কা দিতে পারে। কিন্তু টাইফুন বেশ কষ্টলি একটা যুদ্ধবিমান এর দাম সম্ভবত "রাফায়েল" থেকে বেশি। বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর রিটায়ারমেন্ট কি আমি জানি না তবে "টাইফুন" একটি এয়ার সুপিরিয়র ফাইটার,‌ ডগ ফাইটের জন্যে বেষ্টি। লং রেঞ্জ মিসাইল আসার পর তো ডগ ফাইট নেই বললেই চলে। পাশাপাশি টাইফুনের স্পেয়ার-পার্টস কয়েকটি দেশ মিলে উৎপাদন করে। ক্রাইসিস এবং যুদ্ধকালীন সময়ে যা ক্রয় করা বেশ কঠিন। এই কিছু দিক বিবেচনা করে ভারত নিজে ও টাইফুন ক্রয় করা থেকে ফিরে আসে।

বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় আপনার মতো আমার পছন্দ ছিল আমেরিকান এফ-১৬। ইহা সত্যিই একটি মর্ডান মার্ভেল।

২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



সারকথা: দেশের টাকার অপচয়। এই ধরনের অপচয় সব সরকার করেছে। কেউ টাকা অপচয় চুরি চামারি করে আকাশে স্যাটেলাইট কিনেছে। কেউ খাম্বা কিনেছে। কেউ যুদ্ধ বিমান কিনছে, কমন ফ্যাক্ট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.