নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন মানুষ। বলার মতো বিশেষ কিছু নেই। মনের ভাবনাগুলো তুলে ধরতে চাই। ভালো লাগে কবিতা, লিখা-লিখি আর ছবি তোলা, এইতো! https://prokashoni.net

ইফতেখার ভূইয়া

গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক

ইফতেখার ভূইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাণীদের প্রতি মানবিক হওয়াটাও মনুষ্যত্বের পরিচায়ক

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৩

ছোট বেলায় বাবার কর্মসূত্রে আমরা দীর্ঘদিন গাজীপুর বসবাস করেছি। ওখানে আমাদের জমি, বাড়িও ছিলো। আশির দশকের শেষদিকে আমরা বেশ ছোট, স্কুলে পড়ছি। আমাদের বাড়ির আশে-পাশে একটা কুকুরকে প্রায়ই দেখতাম ঘোরাঘুরি করতো। বাবা এবং মা দু'জনই প্রায়ই কুকুরটাকে খাবার খেতে দিতেন। প্রথম দিকে কুকুরটা আমাদের ভয় পেলেও পরে অবস্থা এমন হলো যে, কুকুরটা প্রতিদিন রাত হলেই বাড়ির মূল গেটের কাছে বসে থাকতো। এক সময় নিয়মিতই আমাদের বাড়ির আশে-পাশে কুকুরটাকে ঘোরা-ফেরা করতে দেখি। মা অথবা বাবা-কে দেখলেই কুকুরটা বাড়ির বাউন্ডারি গেট পেরিয়ে বাড়ি দরজার কাছাকাছি চলে আসতো, খুব সম্ভবত খাবারের আশায়।

আমার বাবাও কুকুরটাকে বেশ আদর করতেন। কথা নেই বার্তা নেই একদিন দেখলাম কুকুরটা বেশ ক'টা বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে হাজির। ভয়ে বাবাকে ডাকলাম, বাবা ওদের তাড়িয়ে না দিয়ে বাড়ির দেয়ালের পাশে ওদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। আজিব ব্যাপার! আমরা কুকুর ভয় পাই আর বাবা কিনা! যাইহোক, দিন যেতে থাকলো বাচ্চা গুলোও বড় হতে থাকলে। এর মধ্যে কুকুরটাও প্রতি আমাদেরও এক ধরনের মায়া জন্মে গেল। কি নাম দিয়েছিলাম মনে নেই তবে ওর নাম ধরে ডাকলেই কোথা থেকে যেন দৌড়ে চলে আসতো। পরে অবশ্য আর কুকুরটাকে ভয় লাগে নি। ও অনেকটাই আমাদের পরিবারের অংশের মতো হয়ে গেল।

বেশ ক'বছর পর, বাবা-র চাকুরির সুবাদে আমাদের মিরপুর চলে আসতে হয়। বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন গাজীপুরের জমি, বাড়ি বিক্রি করে দেবেন। সময় মতো বিক্রিও হয়ে গেলে আমরাও মিরপুর চলে আসি। ঠিক যেদিন বাড়ির জিনিসপত্র ট্রাকে তুলে আমারা গাজীপুর ছেড়ে চলে আসবো, সেদিন কুকুরটা কিভাবে যেন বুঝতে পেরে ছিলো আমরা চলে যাচ্ছি। ও ট্রাকটাকে ফলো করতে করতে কয়েক মাইল চলে এসেছিলো। শেষে আর দৌড়ে ট্রাকটাকে অনুসরণ করতে পারে নি। সেদিনের কথা আমার আবছা আবছা আজও মনে পড়ে। অসম্ভব কষ্ট পেয়েছিলাম ওর জন্য, বেশ কান্নাও করেছিলাম। ছোট বেলার সেই স্মৃতি আমার মনে গভীর দাগ কেটে যায়। সেই থেকে আর কোনদিনও অন্য কোন কুকুরের প্রতি মায়া জন্মাতে দেই নি বা বাসায় কোন পোষ্য প্রাণীও রাখিনি।

সম্প্রতি পাবনায় একজন মহিলা একটি কুকুরের আটটি বাচ্চাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে। কারন হিসেবে সে তার নিজের বাচ্চাদের নিরাপত্তার কথা বলেছে। বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য বা গ্রহণযোগ্য কোনটাই মনে হয় নি। ভাবা যায়, কুকুরের বাচ্চাও এখন আর মানুষের কাছে নিরাপদ নয়। এ ধরনের অমানবিক আচরণের জন্য কঠিন শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। না, আমি কোন কুকুরপ্রেমী নই তবে আমি কুকুর কিংবা অন্য কোন প্রাণীর প্রতি এরকম নির্মম ও অমানবিক আচরণের পক্ষেও নই। এদের বোধদয় হোক, মানবিক আচরণ তথা মানবিকতার উন্মেষ ঘটুক। আমরা যেন ভুলে না যাই:

"জীবে দয়া করে যেই জন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।"
- বিবেকানন্দ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.