![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি যেন সবার চোখে পাপী হয়ে থাকি...!
জামায়াত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। একথা জামায়াতই স্বীকার করে, তারা কখনো বলেনি যে তারা বিরোধিতা করেনি।
কিন্তু তাদের স্বাধীনতা বিরোধিতাকেই যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে বছরের পর বছর প্রোপাগাণ্ডা চালানো হয়েছে। এমনভাবে একটা পারসেপশন তৈরি করা হয়েছিল যে সত্যিই তারা কোন না কোন অপরাধে জড়িত ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগপন্থী বিচারপতি, প্রসিকিউটর, তদন্ত সংস্থা, এমনকি সাক্ষীরাও আওয়ামী লীগপন্থী- তারপরেও আদালত প্রমাণ করতে পারেনি যে জামায়াত নেতারা সরাসরি কোনো অপরাধ করেছেন। আবদুল কাদের মোল্লার মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রকে কসাই কাদের সাব্যস্ত করার পরেও বিচারিক আদালত তাকে ফাঁসি দিতে পারেনি। তখন আন্দোলনের নাটক দেখিয়ে তা ফাঁসি দিতে হয়েছে। কামারুজ্জামানের মতো একজন ১৯ বছর তরুণকে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সুপ্রিম কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি দিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। মুজাহিদের সময় তো বলাই হয়েছে তিনি সরাসরি কোনো অপরাধ করেননি। নিজামীর সময়ে আদালত প্রশ্ন করেছে- তিনি সরাসরি অপরাধ না করলেও কি তাকে ফাঁসি দেওয়া যাবে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন ফাঁসি দিতে সরাসরি অপরাধ করতে হবে এমন কোনো কথা নাই।
আমরা দেখেছি, এই উল্লাসটাই করা হচ্ছে যে স্বাধীনতার বিরোধিতার জন্যই জামায়াত নেতাদের ফাঁসি হচ্ছে। এতেই অনেকের আনন্দ হচ্ছে।
কিন্তু কেউ হয়তো খেয়াল করেনি যে, ঘাড়ের উপর একটা ভারত বসে আছে, যারা ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর এসে ফাঁসি হওয়া জামায়াত নেতাদের বোকামিকেই ন্যায্যতা দিয়ে বসবে।
আমি এখানে একটা বিষয় পষ্ট করে রাখি, আমি জামায়াতকে অপরাধী মনে করি না। তবে তারা রাজনৈতিকভাবে পুরাপুরি ভুল করেছে, তাদের উচিত ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা, দেশের মধ্যে থেকেও যদি তারা এই কাজটা করতো তাহলে ভারতের আগ্রাসন বিরোধী লড়াইটা অনেক বেশি সহজ হতো এবং জামায়াতেরই নয় শুধু সামগ্রিক ইসলামী রাজনীতির সম্ভাবনা আর প্রসারিত থাকত।
জামায়াত কেন দুরদর্শীতার প্রমাণ দিতে পারেনি, তা নিয়ে ওজর আপত্তি।
কিন্তু যে যুক্তিতে তারা স্বাধীনতা বিরোধিতা করছে মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুযোগে ভারত যে সম্প্রসারণবাদী ও আধিপত্যবাদী অপচেষ্টা চালাতে পারে বলে যে শঙ্কা জামায়াত করছে তা মোটেই ভিত্তিহীন ছিল না।
বিগত ৪৪ বছরে ধরে জামায়াতের শঙ্কা শতভাগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ভারত কী না করেছে? নদীতে বাঁধ থেকে শুরু করে সীমান্তে গুলি করে হত্যা অব্যাহত রেখেছে। তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সমীহশ্রদ্ধার করার বদলে সব সময় অবজ্ঞা আর অপমান করার চেষ্টা করেছে।
আজ বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশকে নিষ্ঠুরভাবে অপমান করার ষোলকলা পূর্ণ করল ভারত।
এখন কথা হলো যুদ্ধটা যদি ভারত-পাকিস্তানেরই হয়, তাহলে জামায়াত নেতাদের বিরোধিতা কি অন্যায় কিছু ছিল? দুই দেশের যুদ্ধ হলে পাকিস্তানীদের কি ভারতকে সমর্থন করতে হবে?
আমার কথা হচ্ছে ১৯৭১ সালে যেসকল অপরাধ সংঘটিত হয়েছে. যুদ্ধের কনভেনশনের বাইরে তার বিচার হোক। হত্যা-ধর্ষণের মতো অপরাধ হলে শাস্তি পাক। কিন্তু ১৯৭১ সালে ভারতের বিরোধিতা করছে বলে কাউকে যেন আর দোষী বলা না হয়। ওইটুকুকে ভিন্নমত হিসেবে নিকেশ করে দিতে হবে।
সবাইকে একটা ব্যাপার বুঝতে হবে, কিছু মানুষকে জেল ফাঁসি যাই দেওয়া হোক না কেন, তারা যেহেতু সরাসরি কোনো অপরাধ করেনি, সেহেতু তাদের নামে অপবাদ দিয়ে লাভ হবে না। তাদের ভারত বিরোধিতাকে অপরাধ হিসেব সাব্যস্ত করতে হলে সর্বপ্রথম ভারতকে সাধু প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের কাছে নিজেকে কী সাধু প্রমাণ করবে, যখন তারা কাশ্মীর ও সেভেন সিস্টারে ৫০ বছর ধরে জরুরি অবস্থা জারি করে রেখে নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে,এই সব অঞ্চল আবার নিজ দেশের অংশ মনে করে তারা।
যাই হোক ভারতবিরোধিতার কারণে ফাঁসি পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভারত বন্ধুতা ভালো কি না এই প্রশ্নটি একদিন জোরালো হবেই। কারণ ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে শুধু নিয়েই গেল।
©somewhere in net ltd.