নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মামুন আহমদ

মামুন আহমদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প - ভোট

১২ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৯





ঃ শুনছো কাল বিয়ান বেলা টুকটুকিয়ে একটু রাখবা, আমি ঘন্টাখানেকের লাইগ্যা বাইরে যামু। টুকটুকিরে বোধহয় ডাক্তারের কাছে লইয়া যাইতে হইবো, জ্বরটাতো আজ অবধি পড়তাছে না।

ঃ তুই বাইরে বেড়াইতে যাবি আর আমি মাইয়া পাহারা দিমু ? রহিমুদ্দির ঝাঁঝালো জবাব।

ঃ আপনি রাগেন কেন? সকাল সকাল টুকটুকিতো ঘুমাইয়া থাকে। আপনি খালি হের পাশে বইস্যা থাকলে চলবো। আমি যামু আর আসমু। ফুলজানবু কইছে তাড়াতাড়ি ভোটটা দিয়া আসলে নগদ ১০০ টাকা আর একখান পিন্দরের শাড়ি দিবো। দেখছেনতো আমার শাড়ীগুলানের অবস্থা।্ দুইটা মাত্র শাড়ি তাও সাত আট দিকে তালি দেওয়া। গত ঈদে যে দু’খান যাকাতের শাড়ি পাইছিলাম তাও পিন্দনের আগে আপনার অসুখের লাইগ্যা বেইচা দিছি। আপনার শরীরডাও ভালা না। রিক্সা চালাতেই যাইতে পারেন না আজ কতদিন হইলো। আমরা না হয় উপোস দিমু কিন্ত টুকটুকিরেতো ডাক্তারের কাছে লইয়া যাইতে অইবো। কত বছর বাদে আমগো ঘর আলো কইরা এই মাইয়াটা আইছে। ওর অষুধ লাগবো, এক কেজি সাগু দানা কিনতে পারলে দুধের বদলে খাওয়াইতে পারতাম। আমার বুকের দুধ তো তেমন পাইতেছে না। পাইবো বা কেমনে দুবেলা পেট পুইরা খাইতে পারি না আইজ কয়দিন।

ঃ ক্যা, হেইদিন না এক কেজি চাইল আইন্যা দিলাম।

ঃ এক কেজি চাইলে কয়দিন যায় হেই হিসাব রাহেন। খালি চাইল দিয়া কি ভাত খাওন যায়।

ঃ তুই কি বুঝবি টেহার মূল্য। ১ কেজি চাইল কিনতে চার মাইল রিক্সা টানতে হয়। ২৩ টাকা দামের চাইল কিনমু না তরকারি কিনমূ? সারাদিন রিক্সা টাইনা মালিকেরে দেনের পর হাতে আর কি বা থাকে।

ঃ এর থাইক্কাতো আপনে ২০ টেহার বাংলা মদ গিল্লা আহেন। বাচ্চায় দুধ খাইবার পাইনা আর আপনে মদ খান, কেমনতর বাপ আপনে।

ঃ চুপ মাগী, তুই আমার মাল খাওয়া লইয়া খোটা দিমু না। খোটা দিলে কিন্তু আইজকা তোর পিঠের চামড়া তুইল্যা নিমু। কয়দিন অসুখে পইরা আছি দেইখা রাগ দেহাস। বান্দীর ঝি আইজ কইলাম তোর খবর আছে।

ঃ হাছা কথা কইলে আপনি আমারে গাইল পারেন। তিনবেলা আমার পেটে ভাত পরে নাই, ভোগে পেট ছিরি যাওনের লাগছে। পানি খাইয়া আর কত বাঁচন যাই! কাল বিয়ানে আমারে কইলাম যাইতে হইবো , ভোটটা দিলে অন্তত ১০০টাকা পাওন যাইবো.... নিজেও বাঁচত হইবো, বাচ্চাটারতো বাঁচন লাগবো।

ঃ ঠিক আছে। ঠিক আছে কাল বিয়ান বেলা যাওনের আগে আমারে চেলাই দিছ। আর টুকটুকিরে পেট পুরাইয়া দুধ খাওয়াই যাইস, রাইত অনেক হইছে এহন ঘুমাই পড়, আর বক্র ব্র ভালা লাগতেছে না।

ঃ আপনি হুতেন, আমি আরেক গ্লাস পানি খাইয়া আসি, লম্বা রাতটাই আবার ুধা লাগলে ঘুমাতে পারতাম না...

খানিক বাদে ঢক্ঢক্ করে পানি খাওয়ার আওয়াজ আসে। সম্ভবত জমিলা ুধার জ্বালায় এক গ্লাসের পরিবর্তে দুই...তিন গ্লাস পানি গিলছে।

২.

সবেমাত্র মোরগডাকা শুরু হয়েছে। আজিমপুর বস্তির বেড়ার ফাঁক গলে হালকা আলো ঢুকছে জমিলার ঘরে। জমিলা হাঁটুর উপর উঠে যাওয়া কাপড়টা টেনে পায়ের দিকে নামিয়ে দেয়। পাশে টুকটুকির বাপ গরগর করে নাক ডেকে ডেকে শান্তিতে ঘুমাইয়া থাকে । জমিলার মাথায় রক্ত উঠে, দাঁত কিড়মিড় করে আর ভাবতে থাকে পুরুষ মানুষের কথা। সারারাত না খাওয়া দুর্বল শরীরটা যে মাত্র বিছানায় এলাইয়া দিছিল মাগার চোখ লাগতেই কাপড়ের ভেতর দিয়া ..... তারপর সাপের মত ফোঁস ফোঁস...... আর কিছু পারুক আর না পারুক দুটা কামে সোয়ামীরা ওস্তাদ। বৌ পিটানো আর রাইত বিরাতে যহন তহন ......। জমিলা চাটাই থেকে উঠে দাঁড়াতেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে টুকটুকি কেঁদে উঠে। আশ্চর্য এই ছোট্ট দুধের বাচ্চাও বুঝে তার বুক থেকে হাত সরানো মানে কিছুটা সময় সেই একলা থাকা। একলা থাকা মানে কষ্ট, ভীষণ কষ্ট। জমিলা আবার তাড়াতাড়ি চাটাইয়ে হুইয়া পড়ে। টুকটুকির দিকে মুখ দিয়ে ব্লাউজের বোতাম খুলে বাম দুধটা মুখে পুরে দেয়। জমিলার মনে হইছে মাইয়াটা বোধহয় ুধায় কাঁদতাছে। জমিলা মেয়ের মাথায় হাত দিতে টের পাই টুকটুকির গা’টা ভীষণ গরম। জ্বর বোধহয় আরও বাড়ছে। আইজ যে করে হোক মাইয়াটারে ডাক্তারের কাছে নিতেই হইবো, জমিলা মনে মনে ভাবে। টুকটুকি দুধ চুষতে চুষতে আবার ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠে। সম্ভবত দুধ আসছে না। আসবো কেমনে, জমিলার পেটে ভাত পড়ছে দেড়দিন আগে। পানি খাইয়া কি দুধ বাড়ান যায়! জমিলা টুকটুকিকে বামপাশ থেকে নিয়ে ডানপাশে নিয়ে গিয়ে ডান দুধটা মুখে পুরে দেয়। টুকটুকি পাশ ফিরতেই তার বাপের গায়ে ধাক্কা লাগে। করিমুদ্দি ঘুমের ঘোরে রগড়াতে থাকে, কিরে মা ঝি মিইলা কি একটু শান্তিতে ঘুমাইতে দেবি না, এত ক্যাঁ কু খরছ কেন?

৩.

শিমুলতলি প্রাইমারি স্কুলঘরের কাছে যখন জমিলা আর ফুলজান এসে পৌঁছায় তখন পুরো স্কুল মাঠটায় লোকে লোকারণ্য। লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে পুরুষ, মহিলা। ভোট এখনো শুরু হয় নাই। কয়েকজন উঠতি বয়সের পোলাপাইনের বুকে গরু মার্কার ছবি ঝুলতে থাকে। সবাই চোখে মুখে অস্থিরতা। জমিলার বুকটা কেঁপে উঠে । বুকে একদলা থু থু ছিটাইয়া দিয়ে আল্লাহ আল্লাহ ডাকতে থাকে। একইতো জীবনে প্রথম ভোট তারপর আবার জাল। জমিলা ভোট কেমনে দিতে হয় তাও জানে না। ফুলজানবু বলছে খুব সোজা কাম ভোট দেন। খালি মার্কার উপর একটা সিল মারা। জমিলা ফুলজানকে আস্তে করে বলে, ‘অ-বু আমার কইলাম ডর লাগতাছে। চারিদিহে বন্ধুক লইয়া পুলিশ ব্যাটারা দাঁড়ানো, তারবাদে কালো কোর্তা গায়ে দেওয়া ব্যাটারা কেমন কইরা চেক করতাছে। হেরা বোধহয় র‌্যাব হইবো। যদি ধরবার পারে হেষে ক্রসফায়ার না জানি কি কয় হেইডাতে দিয়া দিলেতো টুকটুকি এতিম হইয়া যাইবো’। তোমার মানুষেরা কই? তুমি না কইছো তারা বেবাকই এহানে থাকবো। আমগোরে সব বুঝাইয়া দিবো। এতণে ফুলজানের হুশ হয়। জমিলার দিকে মুখ ফিরে বলে, ‘ঠিকই কইছোস, লেদু মিয়ারে তো দেখতাছি না। এতদূর থাইক্কা আইলাম হেরে না পাইলে তো ভোটও দিতে পারুম না, আর ভোট দিতে না পারলেতো টেহাও পামু না’। ঐ জমিলা কাউরে জিগাইবুনি?

ঃ জিগাইলে জিগাও এভাবে দাঁড়াই থাকলেতো কোন কাম হইবো না নে।

ফুলজান বিবি পাশ দিয়ে যেতে থাকা এক ছেলেকে লেদুর কথা জিগাইতে ছেলেটা ফুলজান এবং জমিলাকে স্কুল মাঠের পূর্বে একটা ঘরে নিয়ে যায়। ঘরে ঢুকেই দেখতে পাই লেদু চেয়ারে বইসা আছে। ফুলজানরে দেখে লেদুর গলা চড়া হয়। ‘কি ফুলজান বিবি এত লেট হইছে কেন? কাইল রাইতেতো একখান শাড়ি দিয়া আইছি অথচ আইজকা আইতে এত দেরি? তা কয়জন আনছো’?

ঃ একজন।

ঃ মাগী কস কি? তোরে না কইছি আট দশ জন লইয়া আইতে। তোর টাকা কি তোরে দিতাম না নে? এক ভোট ১০০ টেহা। যা, কি আর করবি, একজন লইয়া আসছো যহন তহন পাঁচটা কইরা ভোট দিবা, এক ভোট ১০০ টাকা। পাঁচ ভোট মানে ৫০০, কি খুশিতো ফুলজান?

ঃ কিন্তু টাইম কতণ লাগবো, জমিলার আবার তাড়াতাড়ি যাইতে হইব, ওর বাচ্চা উইঠা কান্দন পারবো।

ঃ এই ধর গিয়া আর একঘন্টা পরে প্রথমটা দিয়া আসলে তারপর আধ ঘন্টা পরপর একটা একটা কইরা মাইরা আসবা, তয় তিন চাইর ঘন্টাতো লাগবোই’

জমিলা তিন চাইর ঘন্টার কথা শুনে আঁতকে উঠে। ফুলজান দিকে চেয়ে বলে, তিন চাইর ঘন্টা হইলেতো টুকটুকি দুধ না খাইয়া মইরা যাইবো। লাগতোনা আমার চাইর পাঁচশ টেহা। আমি একটা ভোট দিয়া চইল্যা যামু, তুমি থাইক্কো,

জমিলার মাথায় সাšতৃনার হাত বুলিয়ে দেয় ফুলজান। আচ্ছা ,আচ্ছা, হেইডা দেহা যাইবো আগে কেমতে ভোট দিবি হেইটা শিকা ল। মার্কা কি জানস, ‘গাধা’- জমিলা নমুনা ব্যালেট পেপারের দিকে তাকায়। গাধা মার্কায় যিনি খাড়াইছেন তারে কেন যেন চেনা চেনা লাগে। জমিলা ঘরের আশেপাশে ভাল করে তাকায়। বড় বড় পোস্টারে জ্বলজ্বল করে ‘আরশাদ মিয়াকে গাধা মার্কায় ভোট দিন’। আরেক জায়গায় লেখা‘ আরশাদ ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র’। আরশাদ মিয়ার ফটো দেখে জমিলা চিনতে পারে এই আরশাদ মিয়াই জমিলার প্রথম মনিব যার বাসায় জমিলা কাজ করছে প্রায় ১ বছর। তহন সবেমাত্র জমিলার বিয়ে হয়েছে। আলতা মার্কা শরীরে যৌবন যেন টিকরে বের হচ্ছিল। আরশাদ মিয়া প্রায় এটা ওইটা দেওনের ছলে জমিলার ফর্সা হাতখানি স্পর্শ করতো। এক দুপুরে আরশাদ মিয়া পানি খাওনের নাম কইরা জমিলারে নিজ ঘরে ডেকে আনে। তারপর জোর কইরা জড়াইয়া ধরে। জমিলা পায়ে ধরে ইজ্জত ভিা চায়, ধর্মের বাপ বলেও জমিলা নিস্তার পাইনা খচ্চরটার হাত থেকে, জোর কইরা........ হাতে পাঁচশ টেহা গুঁজে দিয়ে সেই দিনই জমিলারে কাজ থেইক্কা বাইর করে দেয়। ভাগ্যের কি পরিহাস আইজ সেই খচ্চরটারে ভোট দিয়ে নেতা বানানোর জন্য জমিলা আসছে ভোট দিতে। জমিলা ভাবতে থাকে , এই রকম লোক যদি নেতা হয় তাইলে এই দেশে লাখ লাখ জমিলাই সৃষ্টি হইবে, আর কিচ্ছু হইবো না। জমিলা মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, সম্ভবত আমগো নেতারা প্রায়ই এই রকম পবিত্র (!) চরিত্রের অধিকারী, হের লাইগা এই দেশের এমন করুণ অবস্থা!

৪.

জমিলা মনে মনে নিজের নাম, স্বামীর নাম মুখস্থ করতে করতে ভোট দিতে ঢুকে । ফুলজান তাকে শিখিয়ে দিয়েছে , তার নাম ছালেহা বেগম, স্বামী-মরহুম জব্বার মিয়া। জমিলা স্বামী মরহুম কথাটা যতবার মনে করে ততবারই বুকে একটা কাঁপন অনুভব করে। মাত্র ১০০ টেহার লাইগা নিজের নামটা না হয় মিছা কন যায়। তাই বইলা স্বামীরে মরা মানুষ সাজাইতে হইবো, স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় বিধবার অভিনয় করতে হইবো- জমিলা এইসব ভাবতে ভাবতে যে মুহুর্তে ভোট দেওয়ার জন্য ঢুকে ওমনি বিপ দলের এজেন্টরা সমস্বরে চিৎকার করতে থাকে ‘জাল ভোটার’, বলে। জমিলা থতমত খেয়ে যায়। দু’একজনের রাগী চেহারা জমিলার বুকে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। প্রিসাইডিং অফিসার ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করে নাম কি-

ঃ ছালেহা বেগম।

ঃ স্বামীর নাম..জমিলার মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। অফিসার আবার জিজ্ঞেস করে কি জামাই আছে না গ্যাছে?

ঃ আছে।

ঃ আছে! অফিসার চোখ কপালে তুলেন। তা নাম কি?

ঃ রহিমুদ্দি।

ঃ কস কি ভোটার লিস্টে লেখা আছে মৃত জব্বার মিয়া, এহন তুই কইতাছোস রহিমুদ্দি, তা এটা কি তোর দু’নম্বর স্বামী?

ঃ না।

ঃ না কিরে, দু’নম্বর না হইলে মরা মানুষ জিন্দা হয় কেমনে, তাও আবার জিন্দা হইয়া নাম পরিবর্তন! বুঝছি তুমি জাল ভোট দিতে আসছো, এই পুলিশ ডাক, জাল ভোটার একটা পাইছি, ধর...---ধর।

সাথে সাথে চারিদিকে একটা হৈ চৈ পড়ে , দু’জন পুলিশ ভিড় ঠেলে জমিলাকে ধরে নিয়ে যায় একটা ঘরে। পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর শাহবাজ হাতলয়ালা চেয়ারে বসে মিটি মিটি হাসে। ‘কিরে জমিলা তুই দেহি এহানেও আইয়া পড়ছোস, তা তোর এত গরম গরম কথা তো এহানে চলবো না নে। জাল ভোট দেওনের অপরাধে তোরেতো আমি জেলে পাঠামু’।

জমিলা পুলিশটাকে চিনতে পারে । গত সপ্তাহেও বস্তিতে আসছিলো। ফেন্সিডাইলের ব্যবসার নাম করে জমিলাকে ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্ত জমিলার সাফকথা না খাইয়া মইরা শুটকি হইয়া যামু তবু এইসব হারামির টেহা নিবু না। শেষমেষ পুলিশ ব্যাটা টাকা দেওনের নাম করে একবার... জমিলা ঘরের ঝাঁটা দিয়ে পুলিশটাকে ভাল করে শাসিয়ে দেয়। কিন্তু আজ জমিলা ভালভাবে বুঝছে একটা গভীর প্যাঁচেই পড়েছে।

ঃ তা জমিলা বিবি কত টেহা দিয়া জাল ভোট দিতে আসছো?

ঃ ১০০ টেহা।

ঃ মাত্র ১০০ । ইন্সপেক্টর আবার হাসতে থাকে। ১০০ টেহার কথা আমারে কইলেতো পারতা, হেইদিনতো দিতেই চাইছিলাম। নিলা না। তা টাকা রাখছো কোথায়, তোমার তো কোন ব্যাগ দেখতেছিনা।

ঃ জমিলা নিশ্চুপ, ভাবছে শালা আমরা কি মেমসাব গো মত ব্যাগ লইয়া হাঁটি। ব্যাগের মধ্যে হাজার হাজার টাকা, লিপস্টিক, চিরুণী, আয়না, টিস্যু পেপার আর----- এইসবতো তোর মত ঘুষখোরগো বৌরা লয় । যে দু’জন জমিলাকে ধরে এনেছে তাদের একজন দাঁত খিলিয়ে হেসে হেসে বলছে,‘স্যার যে কি কন, এই সব দু’নম্বরগুলান টেহা রাখনের লাগি ব্যাগ লইবো কেন, দুই হিমালয়ের মাঝখানেই নিশ্চয় হান্দায়া রাখছে বলে এক ঝটকায় জমিলার ব্লাউজের ভেতর হাত দিয়ে ১০০ টেহার খচখচে নোটটা বের করে নেয়। বুকে হাত পড়তেই জমিলার গা শিরশির করে উঠে। কুত্তার বাচ্চা টেহা লওনের নাম কইরা দুধ ভর্তি দুধে----- জমিলার বুকে ব্যথা শুরু করে। প্রায় পাঁচঘন্টা হইছে টুকটুকিরে দুধ খাওয়াছে। এর মধ্যে বুকে দুধ আইসা জমছে। দুধের ভাবে দুধ টনটনয়ে উঠে। জমিলা কান্না শুরু করে দেয়। ‘স্যারগো আপনার পায়ে পরি , ভোটতো আমি দিতে পারি নাই, টেহাও আপনেরা লইয়া লইছেন, এহন আমারে ছাইড়া দেন। আমার দুধের মাইয়াটা না খাইয়া মইরা যাইবো। হের জ্বরটাও বাড়ছে বোধহয়’।

ঃ ইন্সপেক্টর শাহবাজ বেতের লাঠিটা দিয়ে জমিলার বুকে চাপ দিতে থাকে। বহুত তেজ দেখাইছিলা হেইদিন। আইজ সুদআসলে উঠায়া নিমু। ভোট শ্যাষ হওনের আগে কোন ছাড়াছাড়ি নাই। বেশি প্যাঁচাল পারলে থানায় নিয়া গিয়া এক্কেরে হান্দায়া দিমু। ১০০ টেহায় ভোট বিক্রি। জাল ভোট দেওনের মজা টের পাইবা। ভোট হইলো গিয়া ঈমানী অধিকার। আর তুমি ঈমানের বরখেলাপ কইরা জাল ভোট দিতে আইছো,

ঃ স্যারগো, আমগো মত মানুষের ভোট দিলে কি না দিলে কি? জাল বলেন আর অরজিনাল বলেন ভোট দিয়া আমরা যারা ঈমানী দায়িত্ব পালন করি, যারা আমগো ভোটে নেতা, এমপি, মন্ত্রী হয় তারা কোন ঈমানী দায়িত্বটা পালন করে, কন? তারা বেবাকতেই নিজেগো পেট তাজা করে আমগোরে উপোস রাখে, তারা খাইতে খাইতে গরুর লাহান হয়, আমরার পেটে আমসি লাইগা যায়, তাগো পোলাপাইনরা টিনের দুধ খাইয়া নাদুসনুদুস হয়, আমগো বাচ্চারা না খাইয়া মইরা যায়, তাগে বাড়ি হই, গাড়ী হই, আমরা বস্তির পর বস্তিতে থাকি, তাগো পোলারা অফিসে বইসা ডাকাতি করে, আর আমগো পোলারা পাঁচ দশটাকা চুরির অপরাধে গণপিটুনিতে মরে, ভোট দিয়া খালি আমরাই ঈমানী দায়িত্ব পালন করতে থাকুম, আর তারা সবসময় বেঈমানী করে ইজ্জতের সাথে থাকবো এটা কেমনে হয়?

ইন্সপেক্টর শাহবাজ জমিলার মুখের দিকে হা কওে চেয়ে থাকে। আসলেতো কথাতো সত্যি। পাবলিক খালি পুলিশগোরে দোষ দেয় কিন্তু যে নেতাগো জন্য পুলিশ দু’নম্বরী করে সেই নেতারা তো আবার এই পাবলিকের ভোটেই নির্বাচিত হয়। পাবলিকেতো এদের ভোট দিয়া নেতা বানায়। দোষ হয় শুধু পুলিশের। শাহবাজের মুখে কথা বের হয় না। নিরবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

জমিলা হাত পা ছেড়ে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বসে থাকে। তার চোখে কেবল ঘুরছে একটা দুধের বাচ্চা, দুধের জন্য চিৎকার করে কাঁদছে। বাচ্চাটার বাবা একটা লাঠি নিয়ে বসে আছে। বাচ্চার মা ফিরলে পিটিয়ে গায়ের চামড়া তুলে নিবে -এই ভরসায়। জমিলা শূন্য মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখ জলে ভিজে যায়।

জমিলা বুকের টনটনিটা আরও বাড়ছে। জমিলা ভাবতে থাকে ইস্ টুকটুকিরে যদি একটু দুধ খাওন যাইতো...----।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১৮

ভাঙ্গন বলেছেন: প্লাস

২| ১২ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৫৬

বলাক০৪ বলেছেন: প্লাস

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.