নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনোয়ারা মণি

মনোয়ারা মণি

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার

কামরুন নাহার আমার নাম নয় আমার নাম মনোয়ারা মণি

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দেখা একজন মা এবং জীবন দর্শন

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ ভোর ৫:০৮

প্রায় দুই দশক আগে লিডস এ এসেছি। ঐ সময় স্থায়ী বসবাসকারী বাংলাদেশীদের কারো সাথেই তেমন পরিচয় হয়ে ওঠে নি। যাঁদের সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিলো তাঁরা ছিলেন এখানে পড়তে আসা বাংলাদেশী স্টুডেন্টস।

প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরে প্রতিষ্ঠিতদের সাথে পরিচিত হওয়া সহজ হয় একথা বেশি করে অনুভব করেছি পরবাস জীবনে। বয়সে যত বড়ই হোক আপা, ভাবী, ভাই, দুলাভাই সম্বোধনে অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সে কথা বুঝতে অসুবিধা হয় নি।

মেয়েকে আপা ডাকার কারণেই এক পার্টিতে তাঁকে খালাম্মা নামে ডেকেছিলাম। সেই আমাদের প্রথম পরিচয়। পরে শুনেছিলাম সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারানোর পর থেকে তিনি তাঁর নিজের বাসাতেই থাকেন। এরপরে প্রায় সব গেট টুগেদারেই খালাম্মার সাথে আমাদের দেখা আর কথা হয়েছে। আমরা গিয়েছি তাঁর বাসায় তিনিও এসেছেন।

বেশ আগে আমাদের এক পার্টিতে সবাইকে ইনভাইটেশন কার্ড পাঠাবো জেনে আপা (তাঁর মেয়ে) বললেন, ‘মাকে আলাদা করে তাঁর নিজের নামে কার্ড পাঠাবে...’

একজন মা হিসাবে তাঁর স্বনির্ভরতা সম্পর্কে বুঝতে আমার আর বাকি রইলো না। প্রতিষ্ঠিত সন্তানদের কাছে না গিয়ে সারাটি জীবন তিনি আঁকড়ে থাকলেন তাঁর চির চেনা আশ্রয়ে, দেশে আমরা যাকে বলি স্বামীর ভিটেয়। খালাম্মাকে খুব স্পষ্টবাদী মনে হয়েছে আমার। স্পষ্টবাদীদের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে আর যাচ্ছি না।

গত সামারে বাংলাদেশে যাওয়ার আগে খালাম্মার সাথে দেখা হলে বললেন,‘শরীরটা ভালো না...’। হাসি মুখে কথা বলছিলেন তিনি। আমার স্বভাব মতো আমরা একসাথে কিছু ছবি তুললাম। তখনও বুঝি নি তাঁর সাথে আমার আর দেখা হবে না।

ইংল্যান্ডে একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি এখানে নিজের অসুস্থতার কথা অনেকেই সহজে প্রকাশ করেন না। যাহোক দেশ থেকে ফেরার সপ্তাহ-খানেক আগে তাঁর তিরোধানের খবর পেলাম। বাসায় ফিরে আপার সাথে দেখা করতে গেলাম।

‘মায়ের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে, হসপিসে যেতে হয় নাই, চলে যাওয়ার আগে বাসায় তাঁর চারপাশে সব ছেলেমেয়ে আর আত্মীয় স্বজনেরা ছিলো...’ খালাম্মার সম্পর্কে এসব কথাই বলছিলেন আপা। আমাকে অবাক করলো তাঁর চিকিৎসার বিষয়টি।

হাসপাতালে গিয়ে তিনি ডাক্তারকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন - ‘আমার জীবন যতদূর সম্ভব আমি আনন্দে কাটিয়েছি বাকি সময়টুকু কেমোথেরাপি নিয়ে কষ্ট পেতে চাই না...’ একজন মা প্রচণ্ড অসুস্থতায় ডাক্তারের চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করেছেন।আমার দেখা স্পষ্ট ভাষী এই মা’টির স্বনির্ভরতা ছিলো মনে রাখার মতো।

খালাম্মা আমাকে একটা শাড়ি আর একটা প্ল্যান্ট গিফট করেছিলেন।

আমি তাঁর দেয়া প্ল্যান্টে জল দেই আর ভাবি...তাঁর কথা কেন এভাবে মনে পড়ে?

ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি একজন নারীর অনেক পরিচয় আর ভূমিকা রয়েছে-মেয়ে, বোন, স্ত্রী এবং মা।

সব ভূমিকা সাময়িক না হলেও পরিবর্তনশীল।

মেয়ে আর বোন বড় হতে হতেই তাঁদের ভূমিকা বদলায়।

সন্তানেরা স্বনির্ভর হওয়া পর্যন্ত মায়েদের ভূমিকা থাকে সক্রিয়। সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে একজন নারীকে যে দায়িত্ব পালন করতে হয় সেটা হলো স্ত্রীর।

সামর্থ্য সাপেক্ষে প্রত্যেকটা বাবা বা স্বামীর কর্তব্য তাঁর স্ত্রীকে পরনির্ভর না করা বা ছেলেমেয়েদের ঘাড়ে না চাপিয়ে দেয়া।

ব্রিটেনে এসব সমস্যা কম কারণ স্বামী-স্ত্রী আধাআধি সম্পত্তির মালিক এটা এদেশের আইন। কিছু না থাকলেও সোশাল সিকিউরিটি আছে। আমাদের দেশে এ ধরণের সুযোগ সুবিধা নাই। ছেলেমেয়েদের সংসার কখনো মায়েদের সংসার হয় না।

এখানে সেদিন একজন ছেলেকে বলতে শুনলাম,‘মাকে টিকেটের টাকা দিয়ে এনে বৌ এর মুখ কালো দেখাতে চাই না বরং ঐ টাকা পাঠিয়ে দেবো মা দেশে ভালো থাকবেন...’ আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

আমার মনে হয় প্রত্যেকটা সন্তানের কর্তব্য বাবা মাকে তাঁদের নিজের বাসায় রেখে দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করা।

তাঁদের তিল তিল করে গড়া আবাসে তাঁরা যত শান্তিতে থাকবেন তত শান্তি অন্য কোথাও পাবেন না।

অসুস্থতা আর চিকিৎসা সম্পর্কে আমার ভাবনা হলো প্রত্যেকটা মানুষের সাহস থাকা প্রয়োজন যতক্ষণ বেঁচে থাকি কোয়ালিটি লাইফ নিয়েই বেঁচে থাকবো।

যদি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তবে নাকে টিউব দিয়ে খাওয়ানো অথবা লাইফ সাপোর্টে রাখার মতো চিকিৎসা করে কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে হয় না। একজন মানুষ বিছানায় শুয়ে সবাইকে দেখতে পাচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে অথচ আপনজনদের কিছুই বলতে পারছে না এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে?

আমার নিজের জীবন দর্শনের সাথে খালাম্মার দর্শনের মিল খুঁজে পেয়েছি বলেই তাঁকে এতো শ্রদ্ধা করি এবং স্যালুট জানাই।





(বেশ আগে ‘আমার দেখা একজন মা’ শিরোনামে আমার ছোট্ট লেখাটি পড়ে

লেখক সোনাবীজ; ( অথবা ধুলোবালিছাই) এবং প্রোফেসর শঙ্কু বলেছিলেন লেখাটি একটু বিস্তারিত লিখতে।

তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা। লেখাটি পোষ্ট করতে দেরি হলো বলে দুঃখিত...)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.