নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাগজের গজগজানী : (ফর অ্যাডাল্টস ওনলি)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৩৪

শচীন ভৌমিকের লেখা ফর এডাল্টস ওনলি থেকে কিছু কিছু অংশ যা পড়ে বেশ তৃপ্তি (!!) পেয়েছি। যারা বইটি পড়েননি তাঁরা পড়ে দেখতে পারেন।----




আমাদের জীবনে কাগজের স্থান অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে। খবরের জন্যও কাগজ রয়েছে, খাবারের জন্যেও কাগজ। প্রণম্য শাস্ত্র গীতা, রামায়ণ, মহাভারত, কোরান শরিফ, বাইবেলে রয়েছে কাগজ। আবার মুখ মােছার জন্য টিস্যু পেপার থেকে পিছন মােছার জন্য টয়লেট পেপার পর্যন্ত সর্বত্র কাগজের জয়জয়কার।

কাগজ ধার্মিকদের জন্য শাস্ত্র হয়েছে, আবার বিপ্লবীদের জন্য অস্ত্র।
কাগজ কথাটায় ‘গজ’ রয়েছে বলেই মনে হয় অনেক সাহিত্যিকরা হাতির মত মােটা মোটা উপন্যাস লিখেছেন।

সত্যি বলতে আমাদের সভ্যতার অগ্রগতির সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই কাগজী, একমাত্র কাগজীলেবু ছাড়া কাগজী সব কিছুই শিক্ষা-সংস্কৃতির ধারক।

প্রেমপত্র থেকে আত্মহত্যার পত্র (যদিও দুটো একই। প্রেম ও আত্মহত্যায় কোন তফাত নেই। মেয়ে ও মৃত্যুতে কি তফাত? ম্যারেজ আর মার্ডার মানে একই। বাসর রাত মানেই শেষের রাত, ফুলশয্যাই শূলশয্যা।) সর্বত্রই কাগজ।

একজন কাগজেই লেখে "আমি তােমাকে এত ভালবাসি যে তােমার জন্যই বেঁচে আছি।"
আবার আরেকজন কাগজেই লেখে—"আমি তােমাকে এত ঘৃণা করি যে তােমার জন্যই মরতে যাচ্ছি।"
কাগজেই একজন ‘ভালবাসি' বলে মরছে, আরেকজন 'ফাঁসি দিচ্ছি' বলে বাঁচছে ।

পেপার কারুর কাছে পাপরের মত কুড়মুড়ে, কারুর কাছে ‘পিপারের মত চিড়চিড়ে।

এই কাগজেই বিপ্লবী সাহিত্য লিখে কেউ জেলে গেছেন, কেউ আবার জেলে গেছেন অশ্লীল সাহিত্য লিখে।
দিগগজ সাহিত্য বা দিগম্বর সাহিত্য—দু’ক্ষেত্রেই কাগজের প্রয়ােজন।
এই কাগজেই তিন নদীর সঙ্গমের ছবি ছাপা হয়েছে (প্রয়াগের সঙ্গমতীর্থের), আবার তিনজন নরনারীর একত্রে দৈহিক সঙ্গমের ছবিও ছাপা হয়েছে (কোপেনহেগেনের নগ্নসঙ্গতীর্থে)

প্রফেসরের নােট থেকে আমাদের জীবনে সবচেয়ে প্রয়ােজনীয় যে বস্তু সেই টাকার নােট, সব কিছু কাগজেই তৈরি। যে টাকা না থাকলে আপনি পাতলা রঙিন কাগজের ঘুড়ি কিনতে পারবেন না, পাতলা রঙিন শাড়ির ছুড়িও না। ভাবুন তাহলে কাগজ কি বস্তু। এ বস্তু ছাড়া মানুষের অবস্থান অসম্ভব। এ বস্তু না থাকলে আপনি আসলে উদ্বাস্তু।

সারা বিশ্বে কাগজ সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয় সংবাদপত্র মুদ্রণে। মানে খবরের কাগজে। গদীতে বসে কাগজ না পড়লে অনেকের মাথা পরিষ্কার হয় না, আবার কমােড় বসে কাগজ না পড়লে কারুর পেট পরিষ্কার হয় না।

ফ্রেশ মেয়েদের মত সকালে ফ্রেশ কাগজ পাওয়ার জন্য সবাইকার প্রচণ্ড আগ্রহ থাকে। ফ্রেশনেস চলে গেলে মেয়েদের যেমন কদর কমে যায়, পড়া হয়ে গেলে কাগজেরও সেই একই অবস্থা। সকালের তাজা কাগজ যেন তাজা একটি নগ্ন সােমত্ত মেয়ে। লুফে নেয় সকলে। পরে কি হয়? কি আবার, নাে চার্ম। খবর পড়া কাগজ আর কাপড় পরা মেয়ের কি আর আকর্ষণ বলুন।

কাগজে আর মেয়েতে অনেক মিল কিন্তু। দেখুন, কাগজের শেষের পাতায় থাকে স্পাের্টস সেকসন, মেয়েদেরও, ইয়ে, মানে, স্পোর্টস সেকসনটা শেষের দিকেই থাকে! এছাড়া খবরের কাগজ আগাগােড়া মিথ্যেয় ভরা, মেয়েরাও তাই। কাগজের দিকে তাকালে প্রথমে চোখে পড়ে বিজ্ঞাপন, মেয়েরাও আজকাল শুধু বিজ্ঞাপন। একজন বলেছেন, Papers are for crying and lying। মেয়েরাও তাই। ওরা crying-এর জন্য বিখ্যাত, আর lying-এও ওদের জুড়ি নেই। সে lie মানে মিথ্যে কথাই হােক বা শোয়াই হােক। যে সব ছেলেরা lie বলা মেয়েদের লাই দেয় তারা জানে কত তাড়াতাড়ি ওরা বিছানায় lie down হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সব মেয়েরই এক রা। দেখলেন তাে কত মিল। নতুন কাগজ আর নতুন মেয়ে তাে নেশা মশাই, সর্বনাশা নেশা বলা যায়। নেশা কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব সুরঞ্জনাই তখন আবর্জনা। সব পেপারই তখন টয়লেট পেপার।

মেয়েদের সঙ্গে শুধু খবরের কাগজের তুলনা চলে বললে কম বলা হয়। বইয়ের সঙ্গেও তুলনা করেছেন অনেকে। বিশেষ করে ডিটেকটিভ নভেলের সঙ্গে। দেখুন এটাও কাগজেরই ফসল। রহস্য উপন্যাসের রহস্যের নিরসন করতে হলে কোথায় পাবেন সেটা? উপন্যাসের অন্তিম ভাগে। মেয়েদেরও সব রহস্যের সমাধান থাকে অন্তিম ভাগেই। ডিটেকটিভ নভেলের শেষের দিকের পা খুলুন। আহা, বইয়ের আবার পা হয় না কি, আমি বলছিলাম পাতা খুলুন, দেখবেন সব রহস্যের সমাধান সেখানে, রহস্যময়ী নারীর সঙ্গে হুবহু মিল রহস্যময় উপন্যাসের। ডিটেকটিভ গল্পে থাকে সাসপেন্স, সারপ্রাইজ, সলিউশন। মেয়েদের মধ্যেও পাবেন এই ত্র্যহস্পর্শ। সেজন্যই আমার এক বন্ধুকে সর্বদা দেখি হয় সে বৌকে নিয়ে প্রমত্ত, নয় কোন হত্যা কাহিনী নিয়ে মত্ত! বৌ বা বই, একটা হলেই তার সময় কেটে যায়।

কাগজের বইয়ের সঙ্গে মেয়েদের তুলনা করলাম বলে অনেকে গোসা করবেন। কিন্তু গোঁসাই মশাই, বই কেন, ফুলের সঙ্গেও ওদের তুলনা চলে। কবিরা হরহামেশাই করছে। Fool মাত্রই মেয়েদের ফুল বলছে, বিউটিফুল বলছে। সেটা কি ফুল জানেন? কাগজের ফুল।

একটা কথা মানতেই হবে কাগজ যে আবিষ্কার করেছিল সে বােধহয় জানতই না একসময়ে এই কাগজ ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে উঠবে। কাগজ আমাদের দাস না হয়ে ক্রমে প্রভু হয়ে উঠেছে। এই কাগজের পাতায় হিটলারের ‘মাইনকামফ, পড়েই জার্মানী যুবকরা নাৎসী হয়ে উঠেছিল, মার্কস-এঙ্গেলের বই পড়েই দেশ বিদেশে হাজার হাজার মার্কসবাদী হয়ে উঠেছে। চীনের মাও সে তুঙের লাল বই পড়েই হয়ে উঠেছে মাওয়ালী বা মাওবাদী। কাগজের জ্ঞানের পরই এত হানাহানি। একদিকে অশ্লীল সাহিত্য ও ছবি দেখে দেশে শরীর নিয়ে ছানাছানি, অন্যদিকে রাজনৈতিক মতবাদের বই পড়ে দেশ নিয়ে হানাহানি।

আমার এক বন্ধু একদিন আমাকে একটি মেয়ের কাছে চড় খাওয়ার গল্প বলেছিল। সেটাও কাগজ-ঘটিত। সংবাদপত্র নয়, বই। সে তার ক্লাস ফ্রেণ্ড মেয়েটিকে গিয়ে বলেছিল, আপনার বুকটা দেখাবেন একটু?
সঙ্গে সঙ্গে রামচড়। গালে পাঁচআঙুলের দাগ বসে গিয়েছিল।

আমি বললাম, গাধা কোথাকার। বুকটা না বলে বইটার নাম নিয়ে দেখতে চাইলি না কেন? তাতে মেয়েটা ভুল বুঝত না নিশ্চয়ই।
বন্ধু বলল, এভাবে বললে এতক্ষণে আমি জেলে থাকতাম।
প্রশ্ন করলাম, কেন?
বন্ধু বলল, বইটার নাম ছিল বিবর। আপনার বিবর দেখাবেন একটু? বললে রক্ষে ছিলো না।
(বিবর অর্থ যারা জানে না, এই শেষ চুটকিটা তাদের জন্য নয়।)




শচীন ভৌমিকের লেখা "ফর অ্যাডাল্টস ওনলি" বইয়ের "কাগজ" নামক অংশ থেকে।



মদিরা : (ফর অ্যাডাল্টস ওনলি)
নগ্নতা : (ফর অ্যাডাল্টস ওনলি)
কিছু কৌতুক : (ফর অ্যাডাল্টস ওনলি)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগলো। পোষ্ট টি।
জনাব কাগজ নামে একটা হিন্দি সেনেমা আছে। দেখেছেন? না দেখলে দেখুন এবং একটা রিভিউ দেন।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: জনাব কাগজ নামে কোনো সিনেমার নামই শুনিনি। লিংক দেন দেখি।

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৯

রংবাজপোলা বলেছেন: ভাইজান, আপনার জেক্তি গুইল্লা শুইনামাথাটাই চক্করদিলোগা।

জব্বর লেখছেন। কদমবুসি লইয়েন ভাইজান।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমিতো কিছু লেখিনাই ভাইসাপ, সব লেখছে শচীন ভৌমিকের দাদায়। আমি খালি শেয়ার মারছি।

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি পশ্চিম বাংলার কি এক লেখক/বকবক নিয়ে কত পোষ্ট দিয়ে ফেললেন!
কাগজ নিয়ে রচনা লিখতে দিতো ৪র্থ শ্রেনীতে।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আপনার নিজের পড়াশোনার (পাঠ্যবইয়ের বাইরে) অতি সীমিতো, সেটি আপনার মন্তব্য গুলিতে (বই-পড়া সম্পর্কিত) খুব ভালো ভাবে বুঝা যায়।

৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১১

জুল ভার্ন বলেছেন: খুব সুন্দর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণী লেখায় প্লাস।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪৫

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সবটাই মূল লেখকের কৃতিত্ব। ধন্যভাদ + এর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.