নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের পর্বে অর্থাৎ দাদা কাহিনীর প্রথম পর্বে বলেছি আমার দাদা ছিলেন এলাকার ক্ষমতাধর সাদাসিধে নিরহ টাইপ ভালো মানুষ। সবাই দাদাকে সম্মান করলেও দাদী দাদাকে থোরাই কেয়ার করতেন। আমার দাদার যা ক্ষমতা আর পরিচিতি ছিলো দাদীর ক্ষমতা আর পরিচিতি ছিলো তার চেয়েও বেশী। যদিও তার বেশীরভাগই ছিলো আমার দাদা আর বাবার কারণে এবং চাচা-জেঠাদের কারণেও। সেই সাথে ছিলো দাদীর নিজের বংশ আর তার মেয়েদের প্রভাবও। আমার দুই ফুপির বিয়ে হয়েছি শাহাজাদপুরে। জমিদার নজর মাহমুদের দুই নাতীর সাথে। শাহাজাতপুরের সুবাস্তু নজর ভ্যালী এই নজর মাহমুদের নামেই তৈরি।
তো যাইহোক, আমার জন্মের আগে আমার এক বড় ভাই ছিলেন। তিনি ১০-১২ বছর বয়েসে মারা যান। তার পরে আমার ৩ বোনের জন্ম হয়। আমার দাদা-দাদী দেশের নানান মাজার আর দরবার শরীফে গিয়ে গিয়ে মানত করে আসেন - মেম্বরের পোলা হইলে মাজারে গিয়ে জিয়ারত করে ১০০ টাকা নিজ হাতে দান করে আসবে। (আমার বাবা ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, ওমর আলী মেম্বার।) এরমধ্যে সবচেয়ে খাতারনাক মানত ছিলো আজমির শরিফে আমাকে গিয়ে নিজ হাতে ১০০ টাকা সেই বিখ্যাত বিশাল ডেগে ফেলতে হবে।
আমার জন্মের পরে আমার উকিল নানা আমার দুধ খাওয়ার জন্য একটি দুধেল গরু দিয়ে ছিলেন আমাকে। কারণ বেশ বড় হয়েও আমার প্রধান খাদ্য ছিলো দুধ। সেই ৫-৬ বছর বয়স পর্যন্ত আমি খুব একটা ভাত খেতাম না। তখন আমার দাদা ও আব্বা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফরিদপুর আটরশির হুজুরের দরবারে। সেখানে তবারক (ডাল-ভাত) খাওয়ার পরে আমি ভাত খাওয়া শুরু করি। এবং এখান থেকেই শুরু হয় আমার মানত পুরন করার সফর।
আমার আব্বা আমাকে সেই ছোট বেলা থেকেই ফরিদপুর আটরশী থেকে শুরু করে সিলেট-চট্টগ্রাম থেকে সেই বাগেরাট পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে মানত পুরন করিয়ে এসেছে। তবে আজমের শরিফে নিয়ে যেতে পারেন নাই। তবে অন্য লোককে দিয়ে টাকা পাঠানো হয়েছিলো। পরে আমাকে একাই যেতে হয়েছে সেই ১০০ টাকা ফেলতে। তবে চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম ১০০ টাকা দিবো, নাকি ১০০ রুপি দিবো সেটা নিয়ে।
ভাবছেন দাদা কাহিনী থেকে সরে এসেছি!! না, সরিনি।
ঐযে বললাম দাদা ছিলেন নিরিহ টাইপ ভালো মানুষ। তো মানত করার জন্য দাদা যখন দাদীকে নিয়ে আজমির শরিফে গেলেন। আসলে বলা উচিত দাদী যখন দাদাকে নিয়ে গেলেন, কারণ এই মানত গুলিতে দাদার চেয়ে দাদীর আগ্রহ বেশী ছিলো। তো যাইহোক, দাদা-দাদী যখন আজমির শরিফে গেলেন তখন সেখানে গিয়ে দাদার সাথে কোনো তুচ্ছ কারণে রেগেমেগে টাকা পয়সা সব নিয়ে দাদী একাই ঢাকা ফিরে চলে আসলেন দাদাকে ফেলে। দাদা বেচারা পড়লো মহা ফাপরে। দাদাতো আর জানে না দাদী ঢাকা চলে গেছে! আজমির শরিফে কয়েক দিন থেকে চারপাশ খুঁজে দাদিকে না পেয়ে নানান ঝামেলা করে দাদা বাড়িতে ফিরে এসে দেখেন দাদী ঘর আলো করে বিরাজোমান। দাদা যেখানে চিন্তায় শেষ যে বাড়িতে ফিরে ছেলে-মেয়েদের কি করে বুঝাবেন যে দাদীকে হারিয়ে ফেলেছেন, সেখানে বাড়িতে ফিরে জলজ্যান্ত দাদীকে দেখতে পেয়ে বেচারা দাদা অনন্দিত হবেন নাকি রেগে যাবেন সেটাই মনে হয় বুঝে উঠতে পারেন নাই!!
=================================================================
স্মৃতি কথা
এক কাপ চা
আরো এক কাপ চা
শেষ আর এক কাপ চা
পথের কথা - ০১
আমাদের জাম কাহিনী
=================================================================
০৯ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৪৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আমার দাদীর রাগ আর গলার জোড়ের সুনাম এখনো মুরুব্বীরা করেন।
- আমার উকিল নানা ছিলেন ছোটখাটো আমোদী-আয়েশী-খরুচে মানুষ। উনার কথা বলতে গেলে আলাদা পর্ব লিখতে হবে।
- সম্ভবতো গত প্রায় ২০ বছরে ১ বার গিয়েছিলাম, উদ্দেশ্য ছিলো একটি বটগাছ খুঁজে বের করা। পারিনি। গত ৫-৭ বছর ধরেই ফেব্রুয়ারি এলেই ভাবি যাবো যাবো, যাওয়া আর হয়ে উঠে না।
২| ১০ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ২:১১
সোনাগাজী বলেছেন:
মানত ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
১০ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:০১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় কাজ। তবে এর ফলে বেরাবার সুযোগ হয়।
৩| ১০ ই অক্টোবর, ২০২২ ভোর ৬:৫০
কামাল৮০ বলেছেন: আপনার দাদা ছিল ক্ষমতাধর এবং নিরিহ টাইপ।নিরিহ টাইপ লোক সাধারনদের ক্ষমতাধর হয় না।আপনার দাদা ছিল ব্যতিক্রম।
আমি বছরে দুই তিনরার দিল্লী যেতাম ব্যবসার কাজে।বন্ধুরা বললো তাদের মানত আছে আজমির যাবে।আমি বাসায় বললাম এবার আজমির যাবো।গিন্নি ৫০০ টাকা দিয়ে বললো মাজারে দিয়ে দিও।আজমির যেয়ে আমি দেখলাম সবাই বাটপার।টাকাটা না দিয়ে অন্য কাজে খরচ করে ফেললাম।কিছুদিন পর বললাম,মাজারে টাকা দেবার ফল ফেলে।বললো,হাতে হাতে।অফিসে আমার একটা ঝামেলা চলছিল,সমাধান হয়ে গেছে।তুমি বিশ্বাস না করলেও গরম মাজার।
১০ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:০৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- কথা সত্যি বলেছেন, ক্ষমতাধরা নিরিহ হন না। আমার দাদা ব্যতিক্রম ছিলেন।
- আমি দুবার গেছি আজমির। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিলো বেরানো। দেশের অন্য বেশ কয়েকটা মাজারেও গেছি, উদ্দেশ্য সেই বেরানোই।
৪| ১০ ই অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৯:৪১
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: আল্লাহ আপনি আমাকে ওটা দিলে এটা করবো এমন না করে , আল্লাহ কিছু দান করলে দুই রাকাত নফল নামাঝ পড়ে শোকরিয়ার নামাজ পড়া শিখিয়েছিলেন আমার আম্মু আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন । আজও আমি কোন ভাবে সফল হলে মায়ের শেখানো পদ্ধতিতে শোকরিয়া আদায় করি।
মানত করা হয় আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে। এটা দোষের কিছু মনে হয়না।
১০ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:০৭
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আপনার আম্মু চমৎকার একটি জিনিস শিখিয়েছেন আপনাকে। উনাকে সালাম জানাই।
- আমাদের মানত করার পদ্ধতি ও বিশ্বাসটা প্রায়ই শিরকের পর্যায়ে পরে।
৫| ১০ ই অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১০:৩২
জুল ভার্ন বলেছেন: বায়োগ্রাফিক লেখা সব সময়ই আমার পছন্দ। আমাদের সমাজে এখনও আপনার দাদীর মতো অনেক নানী-দাদী আছে। +
১০ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:০৭
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- গ্রামের দিকে এখনো আছেন। শহরে নেই হয়ে গেছে।
৬| ১০ ই অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৪:২০
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
দাদী ছিলো দাদার জন্য প্যারালাল ইউনির্ভাস।
১০ ই অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৪:৪৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হা, তা বলা যায়।
৭| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:১০
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: দাদীতো দেশি ভিষণ ঠ্যাটা ছিলেন।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৩:০২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- দাদীর গুণের কোনো শেষ নাই। দাদীর ভয়ে বাড়ির গাছে কাক বসতেও হিসাবনিকাশ করে বসতো।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৪১
শেরজা তপন বলেছেন: বাহ বেশ বেশ !!
এমন জাঁদরেল দাদী পাওয়ার সৌভাগ্য কজনের হয়!
আপনার উকিল নানা কে ছিলেন?
আটরশী-তে আমার বাড়ির উপর দিয়ে যেতে হয়। এখন আর সেই আগের রমরমা দিন নেই তাদের। রাজনীতিতে নেমে ভয়ঙ্কর ভুল করেছেন পীরজাদা।
এখনো ওদিকে যাওয়া হয়?