নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লারাম বম

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০৭


যে সময়ের কথা বলছি তখন বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করে বান্দরবানের কারো সাথেই সেইভাবে জানাশোনা না থাকায় শেষ পর্যন্ত প্রায় কোনো রকম প্রস্তুতি এবং প্লান ছাড়াই আমরা ৫ জনের একটি গ্রুপ সম্ভবতো ২০০১ বা ২০০২ সালের প্রথম দিকে ঢাকা থেকে রওনা হই বান্দরবানে অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় (তখনকার হিসেবে) কেওক্রাডং যাবার উদ্দেশ্যে। আমাদের ভাগ্য খুবই ভালো, আমরা যে বাসে বান্দরবান যাচ্ছিলাম সেই বাসেই পরিচয় হয় আরো দুজন ছেলের সাথে। তারাও যাচ্ছে কেওক্রাডং। তো আমরা ৫ থেকে হয়ে গেলাম ৭ জনের গ্রুপ। এই দুজন গতবছর বগালেক পর্যন্ত গিয়ে ছিলো।

বান্দারবান নেমে আমরাান্দের গাড়ির ছাদে বসে চলে আসলাম রুমা বাজার যাওয়ার ট্রলার ঘাটে। এখন যেমন বাসে বা চান্দের গাড়িতে সরাসরি রুমা বাজার চলে যাওয়া যায়, তখন এই সড়ক পথ ছিলো না। হয় নাফ নদী ধরে নৌকায় অথবা নদীর পাড় ধরে হেঁটে যেতে হতো রুমা বাজার। আমরা নৌকা দিয়ে যাওয়ার সময় রুমা বাজারের কাছাকাছি পৌছানোর আগেই দেখতে পাই নদীর তীর ধরে একটি পাহাড়ি ছেলে হেঁটে যাচ্ছে রুমার দিকে। বাসে পরিচয় হওয়া দুজন এই পাহাড়ি ছেলেটিকে ডেকে আমাদের নৌকায় তুলে নিলো। এই পাহাড়ি ছেলেটি হচ্ছে বগালেক পাড়ার কারবারীর (পাড়ার প্রধান ব্যক্তি) বড় ছেলে লারাম বম

রুমা বাজারে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা লারামের সাথে হাঁটা শুরু করি ঝিরিপথ ধরে বগা লেকের উদ্দেশ্যে। রাতে আমরা থাকি বগালেকের পাড়ে লারামের বাড়িতেই, খাওয়াও ছিলো ওর বাড়িতেই। লারামকে পাওয়ার কারণে সেবার আমাদের ট্রিপের সমস্ত ঝামেলা মিটে গিয়েছিলো। পরদিন লারামের ছোট ভাই আমাদের কেওক্রাডং এর গাইড হয়।

গত ২০২২ সালের মার্চের ১৪ তারিখে আবার আমরা ৯ জনের একটি দল গিয়ে ছিলাম কেওক্রাডং। এবারও বগালেকে পৌছে উঠে ছিলাম লারামের হোটেলে, খেয়ে ছিলাম ওরই রেষ্টুরেন্টে। লারামের আন্তুরিকতা আর ভালো ব্যবহার আমাদের সকলেরই ভালো লেগেছিলো সেই ২০ বছর আগের মতোই। খুবই তৃপ্তি করে খেয়ে ছিলাম দু দিন ওর আতিথিয়তায়।



গত কাল হঠাত করেই ফেসবুকে একটি পোস্ট চোখে পড়লো। বান্দরবানের বগালেকপাড়া থেকে পর্যটন ব্যবসায়ীর গলিত লাশ উদ্ধার। বগালেকপাড়া নামটা দেখেই ভিতরের সংবাদটা পড়তে শুরু করলাম। এবং সংবাদটি পড়ে একেবারেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। -

বান্দরবানে রুমা উপজেলায় একটি পাহাড়ের ঝিরি থেকে লালরামচন ওরফে লারাম বম (৪৩) নামের এক পর্যটন ব্যবসায়ীর গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বগালেকপাড়ার পূর্ব পাশে হারমনপাড়া এলাকা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের ধারণা, অন্তত চার-পাঁচ দিন আগে ওই ব্যবসায়ীকে হত্যা করে লাশ ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগালেকপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা ওই ব্যবসায়ীকে ৫ ফেব্রুয়ারি ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। বগালেকপাড়ায় তাঁর কটেজ ও খাবারের দোকান আছে।

পাড়াবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বগালেক। লেকসংলগ্ন বগালেকপাড়ায় গত রোববার সন্ধ্যায় কেএনএফের সশস্ত্র একটি দল আসে। তারা লারাম বমসহ তাঁর পরিবারের পাঁচজনকে ধরে নিয়ে যায়। ওই দিন গভীর রাতে লারামের বাবা, স্ত্রীসহ চারজন ফিরে এলেও লারামকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এর পর থেকে লারামের হদিস মিলছিল না। পাড়াবাসী খোঁজাখুঁজি করে আজ হারমনপাড়া এলাকায় তাঁর লাশ খুঁজে পান।

কেন লারাম বমকে ধরে নিয়ে কেএনএফ হত্যা করেছে, এ ব্যাপারে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, লারাম বম আগে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) করতেন। তবে এখন কোনো দল করেন না। তিনি বিভিন্ন মহলে গোপনে তথ্য দেন, এই ধারণা থেকেই হয়তো কেএনএফ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারে।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, এলাকার লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল হারমনপাড়া এলাকায় যায়। পাড়া থেকে কিছু দূরে একটি টিলার পাদদেশে ঝিরি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। চার থেকে পাঁচ দিন আগে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ গলে যাওয়ায় কীভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

- প্রথম আলো

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: বগা লেক যাওয়া হয়নি এখনও । কেওকারাডংও যায়নি। বগা লেকের উৎপত্তি নিয়ে দ্বিমত আছে। দেখলে একটা মতের পক্ষ নিতে পারতাম ।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৪০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- এখন যাওয়াটা খুব সহজ, তবে আগের তুলনায় খরচ কিছুটা বেড়েছে। এখন বান্দরবান থেকে (শীত কালে) চান্দের গাড়ি নিয়ে বগালেক হয়ে সরাসরি কেওকারাডং পৌছে যেতে পারবেন। বর্ষায় বগালেক থেকে কেওকারাডং হেঁটে গেতে হয়। তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বর্ষায়ও চান্দের গাড়ি কেওকারাডং চলে যেতে পারবে।
- শুধু খালি চোখে দেখে কোনো একটি মতের পক্ষ নেয়া কঠিন হবে। ৫০% সম্ভবনা আছে বুল হওয়ার। ;)

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৬

বিটপি বলেছেন: এমনভাবে শকিং নিউজটা দিলেন, কষ্টে আমার বুকের উপর যেন পাহাড় চেপে বসল। ঐ এলাকায় যারা থাকে, বা ব্যবসা বাণিজ্য করে, তাদের জীবন সর্বদা ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৪২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- কিছুদিন আগ পর্যন্তও পাহাড়ের পরিবেশ পরিস্থিতি বেশ ভালো ছিল। হঠাত করেই আবার কুকি-চিন ঝামেলা শুরু করেছে।

৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৭

রানার ব্লগ বলেছেন: কে এন এফ বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য হুমকি স্বরুপ !!! এদের দমন করা অতি প্রয়োজন !!!

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- কিছুদিন আগে পর্যন্ত যৌথবাহিনী অভিযান চালালো। ট্যুরিস্ট যাওয়া বন্ধ ঘোষণা করেছে অনেকদিন আগে থেকেই। মাঝখানে একটু খুলেছিলো। এখন হয়তো আবার বন্ধ আছে।

৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:১১

দারাশিকো বলেছেন: এহ! খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বান্দরবান-কেওক্রাডং এ আমিও গিয়েছিলাম, ২০১১ সালে। সে সময় কেওক্রাডং এ একটা হোটেলে থেকেছি, খেয়েছি। সেই হোটেলের মালিক কি লারাম বম ছিলেন? বলতে পারেন? এতদিন বাদে আমি নাম ভুলে গেছি।

বান্দরবান ভ্রমণ আমার জীবনে অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা। এতটাই রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম যে ফিরে এসে লম্বা পোস্ট লিখেছিলাম - হাতের মুঠোয় মেঘদল নামে। পড়ার আমন্ত্রণ রইল।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:১৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- কেওক্রাডং এ যে হোটেলে ছিলেন সেটির মালিক লারাম নয়। লামার বগালেকের বসিন্দা। কেওক্রাডং এর হোটেলের মালিকের নাম মনে নেই আমার। তবে উনি শুধু হোটেলের মালিক নন, বরং তিনি পুরো কেওক্রাডং পাহাড়ের মালিক। সেখানে আর্মিদের যায়গাটুকু তিনি সরকারকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন।

- অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য ও আপনার লেখার লিংকটি দেয়ার জন্য। সময় করে অবশ্যই পড়বো।

৫| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৪৭

শেরজা তপন বলেছেন: ঠিক ওই সময়ে আমিও ওই পথে কেউক্রাডাং গিয়েছিলাম!
ভীষন দুঃখজনক! :(

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:১৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আসলেই দুঃখজনক। পর্যটনের কি অপার সম্ভবনা ওদেরই কারণে নষ্ট হচ্ছে।

৬| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৩৮

জুল ভার্ন বলেছেন: বহু বছর আগে গিয়েছিলাম।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:১৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আমিও

৭| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:৫৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এইসব জায়গাতে সরকার নজয় দিতে পারে । পর্যটনের যাওয়া আসা থাকা খাওয়া কিভাবে সহজ ও সুন্দর করা যায়। বহু আগে গিয়েছি একবার ।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- পাহাড়িদের নিজের ভালো নিজে বুঝতে হবে সবার আগে। নিজেদের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে হবে। ট্যুরিস্টদের সাথে ভালো ব্যবহার আর নিরাপত্যার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ আমি গিয়েছি।
ঘুরেছি। রমা বাজারে খেয়েছি। ওদের কাছ থেকে পুরো কলার কাঁদি কিনেছি। পাহাড়ি কলা খুব মিষ্টি হয়।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- রুমা বাজার হবে।
- পাহাড়ের পেঁপে খেয়ে দেখবেন আবার কখনো গেলে। স্বাদ অনেকদিন মনে থাকবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.