নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিমুল ফুল

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫২

তপন চৌধুরীর গাওয়া এই গানটি শোনেননি এমন গানপ্রিয় মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে এসেছে দারুন মাস
আমি জেনি গেছি তুমি আসিবেনা ফিরে মিটিবেনা পিয়াস...
----- তাজুল ইমাম -----


গায়কের পিয়াস না মিটলেও শিমুল শতশত পাখির পিয়াস মিটায়। আমি দেখেছি শিমুল গাছে শত শত শালিক, বুলবুলি, কাঠ শালিক, টিয়া পাখিকে বসে থাকতে। আর দেখেছি কাঠবিড়ালিদের শিমুল গাছে হামলে পরতে। তাবে শিমুল ফুলে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। ওদের সমস্ত আগ্রহ কচি শিমুল ফলে। ওরা ফলগুলি কুটি কুটি করে খায়। তখন গাছের নিচে অপুষ্ট সাদা সাদা তুল তুষারের মতো ছড়িয়ে বিছিয়ে থাকে।

শিমুল
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : রক্ত শিমুল, লাল শিমুল,
সংস্কৃত নাম : শাল্মলী, মোচা, তূলিনী, কুক্কুটী, রক্তপুষ্পিকা, কণ্টকাঢ্যা, স্থূলফলা, পিচ্ছিলা, চিরজীবিনী।
Common Name : Silk Cotton tree, Bombax, Simal, red cotton tree, Kapok Tree.
Scientific Name : Bombax ceiba



হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে । আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,–দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক ।
----- নির্মলেন্দু গুণ -----


বাংলাদেশের প্রায় সব অংশেই শিমুল ফুলের দেখা মেলে। অনাদরে অবহেলায় কোনো রকম যত্ন ছাড়াই আমাদের দেশে ছিমুল গাছ জন্মে বনে বাদারে, পথের ধারে, মাঠের পাশে, পাহাড়ে। আমার জানা মতে পরিকল্পিতো ভাবে একটি মাত্র শিমুল বাগান আছে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের জাদুকাটা নদীর তীরে। আমাদের দেশে শিমুল সেইভাবে চাষ করা না হলেও মালয়, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ চীন, হংকং এবং তাইওয়ানে ব্যাপকভাবে এ গাছের চাষ হয় বলে শুনেছি।

শিমুল একটি পত্রঝড়া বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। একটি দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। মাত্র ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে উচ্চতায় আশপাশের আম-কাঁঠাল জাতীয় ২০ থেকে ২৫ বছরের পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ৫০ বছর বা তারও বেশীসময়ে গাছের পরিধি ২ থেকে ৩ মিটার এবং উচ্চতা ১৫ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পুরনো বিশাল শিমুল গাছের গোড়ায় অধিমূল বা ঠেসমূল বা রুট বাট্রেস থাকে। তখন সেই গাছগুলিকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। শিমুল গাছের মূল কাণ্ডের চারপাশে সুবিন্যস্ত হয়ে শাখা-প্রশাখা প্রসারিত হয়। অল্প বয়সী শিমুলগাছে কাণ্ডের গোড়ার দিকে মোটা মোটা বেঁটে কাঁটা থাকে। কাঁটাগুলির গোড়ার অংশ বেশ পুরু এবং অগ্রভাগ সূচালো। তবে বয়স্ক গাছে তেমন কাঁটা থাকে না।



আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----


শিমুল গাছের পাতা শীতের শেষে ঝরে যায়, ফাল্গুনে ফুল ফোটে। লাল লাল বড় বড় পুষ্ট ফুলে যখন গাছ ছেয়ে যেতে শুরু করে তখনো গাছটি থাকে পাতাহীন। পত্রহীন গাছে লাল ফুলের এমন রূপ মুগ্ধ করে না এমন লোক পাওয়া ভার। তবে এই ফুলের কোনো সৌরভ নেই। সৌরভহীনতা ফুলের সৌন্দর্যের কোনো হানী করতে পারে নি। শিমুল ফুল গাঢ় লাল রঙের হলেও কখনো কখনো ফিকে লালও দেখা যায়। হলুদ রঙের শিমুল ফুলও দেখতে পাওয়া যায়। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম।

শিমুল ফুল ঘণ্টাকৃতির হয়। ফুলে বেশ পুরু পাঁচটি পাপড়ি থাকে। পাপড়ি গুলি সুসজ্জিত। একটি ফুল ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। ফুলের আকার আর পুরত্বের কারণে একটি শিমুল ফুলের ওজন ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম হতে পারে। ফুলের অনেকগুলি পুংকেশের থাকে। স্ত্রীকেশর পুংকেশর অপেক্ষা লম্বায় বড় হয়।



সে বর্ষপঞ্জির সম্রাট বসন্ত
যৌবনের চঞ্চলতা তার তারুণ্যে অনন্ত
সে ভালবাসার এক ভাবুক যুবক
সে ভালবাসার এক প্রতীক প্রেমিক
তার ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুলে
পতঙ্গের আনাগোনা হয় ফুলে ফুলে
তার মুকুলিত বৃক্ষের মৌমাছির গুঞ্জনে
প্রকৃতির রুপে আনে রঙিন রঞ্জনে
কোকিল গায় তার উদাসী কুহুতানে
মৃদুমন্দ দক্ষিণায় ভরায় মনে প্রাণে
তার পুস্পভরা কৃষ্ণচুড়া অশোক শিমূলে
বিকশিত ডালে ভরা কাঞ্চন ফুলে।
----- অসীম চক্রবর্ত্তী -----


শিমুল গাছে মোচাকৃতি ফল হয়। বৈশাখ মাসে ফল পাকে এবং ফল ফেটে বীজ ও তুলা বের হয়ে আসে। বীজের রং কালো। শিমুল তুলায় উন্নতো মানের আরামদায়ক বালিশ, লেপ, তোশক, কুশন ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

শিমুল আসলে এক ধরনের দেশি তুলা গাছ। এটি শিমুল তুলা নামে পরিচিত। শিমুল তুলার বেশ নাম ডাক ও চাহিদা রয়েছে দেশে।

শিমুল গাছের ছাল ঘা সারাতে সহায়তা করে। রক্ত আমাশয়ে দুর করে। ছাল ফোড়ার উপর প্রলেপ দিলে উপকার হয়। শিমুল চারার কচি মূল খুবই উপকারি ঔষধী।


'এবার যখন ঝরব মোরা ধরার বুকে
ঝরব তখন হাসিমুখে--
অফুরানের আঁচল ভ'রে
মরব মোরা প্রাণের সুখে।'
তুমি কে গো।-- "আমি শিমুল।'
তুমি কে গো।-- "কামিনী ফুল।'
তোমরা কে বা।-- "আমার নবীন পাতা গো
শালের বনে ভারে ভারে।'
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----



ছবি তোলার স্থান : কিশোরগঞ্জ, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ।
তথ্য সূত্র : বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া, অন্তর্জাল।
ছবি ও বর্ণনা : নিজ

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: খুবই চমৎকার একটা ফুল। দূর থেকে দেখতে বেশি ভালো লাগে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:২৫

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- কাছ থেকে দেখতেও ভালো লাগে। অন্য প্রায় সব ফুল থেকে এর ধরন-গড়ন আলাদা।

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৮

জুল ভার্ন বলেছেন: "পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে এসেছে দারুন মাস আমি জেনি গেছি তুমি আসিবেনা ফিরে ..."

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:২৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
তাজুল ইমাম -----

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৭

সোনাগাজী বলেছেন:


এবার কি শিমুল গাছের অন্য পাশ থেকে ছবি তুলেছেন?

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:২৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আপনার কি মনে হয়?

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৪

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: চমৎকার!
ছোটবেলায় অনেক খেলেছি শিমুল ফুল দিয়ে।
আর এখন দেখতেও পাইনা।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- গ্রামের দিকে এখনো প্রচুর শিমুল গাছ দেখতে পাওয়া যায়। যদিও আগের তুলানায় তার সংখ্যা কমে গেছে।

৫| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫০

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: আমাদের বাড়িতে অনেক শিমুল গাছ ছিল।
আমরা শিমুল তুলা দিয়েই সব লেপ-তোষক-বালিশ বানাতাম।
এখন আর নেই।
গ্রামে কোথাও থাকলেও দেখতে যাওয়ার মত সুযোগ তেমন নেই। রোবটিক বন্দি জীবন!!!

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:২৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আমাদের একালাকয় কখনোই কারো বাড়িতে শিমুল গাছ ছিলো না। কি বিচিত্র!!
- একবার কিশোরগঞ্জের দিকে এক বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম বছর ১৫ আগে হয়তো। দেখি উঠানে একটি শিমুল গাছে নেট জড়িয়ে রেখেছে তুলা সংগ্রহের জন্য।

৬| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০১

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: যখন হাতে ক্যামেরা মুঠোফোন আসলো তখন থেকে আমি এসব থেকে দূরে। শিমুল ফুল দেখা হয় না অনেক দিন।

সুন্দর পোস্ট

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:২৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- হাতির ঝিলে বেশ কয়েকটি শিমুল গাছ আছে। বেশী বড় নয়, মাঝিরি আকারের গাছ। প্রায় সবকটিতেই ফুল ফুটেছে।

৭| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:০৮

শাওন আহমাদ বলেছেন: ছবি গুলো দেখে চোখ শীতল হয়ে গেলো।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:২৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

৮| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৯

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


শিমুল ছেলেদের নাম,অথচ ফুল বলতে নারীজাতিদের বোঝানো হয় ; বৈপরীত্য মনে হচ্ছে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৩৫

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আংশিক সত্য বলেছেন।
- ফুল বলতে নারীজাতিদের বোঝানো হয় এটা সঠিক নয়। তবে অধিকাংশ ফুলের নামেই সাধারনত মেয়েদের নাম রাখা হয়।কিছু কিছু ফুলের নাম আবার ছেলে-মেয়ে উভয়েই রাখে। যেমন- বকুল।
আর ছেলেদের প্রাধান্য আছে- শিমুল, তমাল, কদম, অশোক, আকন্দ, কাঞ্চন, গোলাপ, তমাল, নাগেশ্বর, রুদ্রপলাশ, সিদ্ধেশ্বর ইত্যাদি।

৯| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৫০

কামাল১৮ বলেছেন: এই শিমুল গাছের কোন কাটা দেখছিনা।আমাদের যে শিমুল গাছ ছিল তার কাটা ছিলো বেশ শক্ত নিচের দিকটা বেশ মোটা।সেই সব গাছ কেটে খড়ি বানিয়ে সারা বছরের রান্নার কাজ চলতো। নিচের দিকে বৈঠার মতো চওড়া কিছু শিকড় ছিল যা প্রায় ১০/১৫ হাত চওড়া।এটা মনে হয় গাছকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতো।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:২০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য। আপনার প্রতিটি কথা জবাব আমার পোস্টেই আছে। যেহেতু আপনি পোস্টের লেখাগুলি পড়েন না তাই সেগুলি চোখে পরেড়ি। আমি লিখেছি-
পুরনো বিশাল শিমুল গাছের গোড়ায় অধিমূল বা ঠেসমূল বা রুট বাট্রেস থাকে।

আরো লিখেছি-
অল্প বয়সী শিমুলগাছে কাণ্ডের গোড়ার দিকে মোটা মোটা বেঁটে কাঁটা থাকে। কাঁটাগুলির গোড়ার অংশ বেশ পুরু এবং অগ্রভাগ সূচালো। তবে বয়স্ক গাছে তেমন কাঁটা থাকে না।

১০| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:২৯

শায়মা বলেছেন: আমাদের বাসায় এই গাছ ছিলো।

ফুলগুলো তো অসাধারণ!
সবচেয়ে মজার হলো পাপড়িগুলা। যেন রাবার দিয়ে বানানো।

আর তাই দিয়ে তুলার বালিশও বানানো হত। :)

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:৪১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- অনেক বছর আগে বেড়াতে গিয়েছিলাম ফরিদপুরের এক গ্রামে। ঘরের মধ্যে একটি বস্তায় ভরা ছিলো এই শিমুল তুলা। শিমুল তুলা বাতাসে উড়ানোর মজাই আলাদা।

১১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:৪৬

কামাল১৮ বলেছেন: দুঃখিত।স্বিকার করছি পড়া হয় নাই।কাহাতক আরপড়া যায়।না পড়ে মন্তব্য করা ঠিক হয় নাই।এই জন্য অনেক লেখায় মন্তব্য করা হয় না।সবথেকে ভালো বুধহয় অল্প কয়েক জনের লেখা পড়ে মন্তব্য করা।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:০৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- বিষয়টা তা নয়। আমি কদাচ পোস্টের লেখা না পড়েও মন্তব্য করি।
আমি লক্ষ্য করেছি আমার মতোই আরো কয়েকজন আছেন যারা পোষ্ট না পড়েই মন্তব্য করেন। আমরা কিঞ্চিত একই দোষে দুষ্টু। ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.