নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কুয়াশা

কুয়াশা

কুয়াশা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অন্য রকমের বীজ ব্যাংক!

২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৬


মানুষের কৃষি কাজের ইতিহাস ১৩ হাজার বছরের পুরনো। হয়তো কয়েক লাখ বছর আগে থেকেই মানুষ কৃষি নির্ভর ছিল কিন্তু পরিকল্পিত কৃষি ও বীজ সংরক্ষণের ইতিহাস পাওয়া গেছে মাত্র ১৩ হাজার বছরের পুরনো।
কৃষি তথা খাদ্য উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বীজ। আর এর সাথে সাথে বীজ প্রাপ্তিটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন অঞ্চলে একেক রকমের খাদ্য শস্য তথা কৃষিপণ্য উৎপন্ন হয়। এটা আল্লাহর চমৎকার একটি আঞ্চলিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনার নিদর্শন। আর সে অঞ্চলের মানুষেরা তাদের উৎপন্ন সেসব ফসল থেকেই আগামী দিনের জন্য বীজ রেখে দেয়।
আচ্ছা, যদি দূর ভবিষ্যতে সারা পৃথিবী জুড়ে ভয়াবহ পারমাণবিক যুদ্ধ বেঁধে যায় কিংবা অন্য কোন মহাদূর্যোগে পৃথিবীটা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় আর তার আঘাতে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায় বিভিন্ন খাদ্য শস্যের জাত, মানুষের ঘরে ঘরে সংরক্ষিত বীজ এবং নানান রকমের লতা গুল্ম আগাছা ঔষধিগাছ ফলের গাছ ইত্যাদি, তাহলে কেমন হবে?
নিশ্চয়ই সেটা হবে মানব জাতির জন্য বেদনার বিষয়। কেননা পৃথিবীর বুক থেকে শুধুমাত্র গত দুই'শ বছরেই চিরতরে হারিয়ে গেছে অনেক ফসলের জাত সহ প্রায় এক হাজার প্রজাতির নানান উদ্ভিদ। সেগুলো আর কখনোই পৃথিবীর বুকে ফিরে আসবেনা....
আপনার ছোট বেলার কথাই একটু মনে করে দেখুন- কতো শত জাতের জানা অজানা লতা পাতা আগাছা দেখেছেন অথচ এখন আর সেগুলো চোখে পড়েনা!
এসব চিন্তা মাথায় রেখেই নরওয়ে সরকার তৈরি করেছে একটি ব্যতিক্রধর্মী বীজ সংরক্ষণাগার।
পাঠক চলুন ঘুরে আসি উত্তর মেরুর দেশ নরওয়ের সেই Svalbard Global Seed Vault (সালবার্ড বিশ্ব বীজ সিন্ধুক) থেকে।
নরওয়ের মূল ভূখণ্ড থেকে ৮০০ কিলোমিটার উত্তরে এবং উত্তর মেরু বিন্দু থেকে ১০৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে আর্কটিক মহাসাগরের Svalbard দ্বীপ যা নরওয়ের একটি অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র এবং পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরের জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ।
এই দ্বীপের একটি পাথরের পাহাড় কেটে
৩৯০ ফুট ভিতরে ১১ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই বীজ সংরক্ষণাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। সমুদ্র সমতল থেকে যার উচ্চতা ৪৩০ ফুট।
বিজ্ঞানীদের এই স্থানটি বেছে নিলেন কেন? তার অবশ্য কতগুলো কারণ আছে। সেগুলো হলো-
১) পৃথিবীর সমস্ত বরফ যদি একদিন গলেও যায় তাহলেও এটি সমুদ্র সমতলের সমান থাকবে অর্থাৎ এখানে কখনো পানি ঢুকবেনা।
২) পারমাণবিক বোমায় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক ধ্বংসলীলা সাধন করলেও এই দ্বীপটি অক্ষত থাকবে। কেননা এখানে কোন সামরিক কার্যক্রম নেই। ফলে বীজ গুলো বিকিরণমুক্ত থাকবে।
৩) এটি পাথরের পাহাড় এবং এর উপর আছে ঘন প্রাচীন বরফের আচ্ছাদন যা কখনোই গলেনি।
৪) এর অভ্যন্তরের সাধারণ তাপমাত্রা -৩°C থেকে -৫°C, যা দীর্ঘস্থায়ী বীজ সংরক্ষণের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা।
৫) বীজাগারটির তাপমাত্রা সবসময় -১৮°C রাখা হয়, যদি কোন কারণে শীতলীকরণ ব্যবস্থা কাজ না করে তাহলেও পরবর্তী ২০০ বছর এর ভিতরের তাপমাত্রা 0°C থাকবে যার ফলে কোন বীজ নষ্ট হবেনা।
৬) এই দ্বীপে ২৪ ঘন্টাই দিনের আলো থাকে, উত্তর মেরুতে হওয়ায় এখানে সূর্যাস্ত হয়না, ইত্যাদি।
প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের বীজাগারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯ জুন ২০০৬ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ সালে এর কাজ শেষ হয় এবং কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রধান ফটক থেকে সরু সুরঙ্গ পথ ধরে পরপর ৫ টি নিরাপত্তা দরোজা পেরিয়ে মূল ভবনে প্রবেশ করতে হয়। তারপর বিভিন্ন কক্ষ গুলোতে বিশাল সব তাকে থরে থরে সাজানো আছে বিশেষ ভাবে ও বিশেষ প্রযুক্তিতে করা বীজের প্লাস্টিক মোড়ক এবং তারপর সেগুলো বাক্স বন্দী (Carton) করা হয়েছে। (ছবিতে দেখুন)।
এখানে মূলত বিভিন্ন খাদ্য শস্য ও ফলমূলের বীজ রাখা হয় কিন্তু ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে বিভিন্ন ধরনের ঘাস আগাছা লতা গুল্ম ইত্যাদির বীজও রাখা হয়েছে। দেশ ভিত্তিক এবং ফসলের জাত ভিত্তিক এই দুই শ্রেনীতে ভাগ করে কাঠের ও কাগজের বাক্সে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
আমেরিকা ও উত্তর কোরিয়া থেকে সংগ্রহ করা বীজ বাক্স দুটি একটি অপরটিকে পিছু করে মিলিয়ে রাখা হয়েছে।
বীজগুলো সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন দেশের কৃষি ও বীজ গবেষণা কেন্দ্র থেকে। সবচেয়ে বেশি বীজের নমুনা (২০ হাজারের ও বেশি) নেওয়া হয়েছে আমেরিকার Agricultural research service থেকে। এছাড়াও রয়েছে চীন মেক্সিকো কলম্বিয়া সিরিয়া কানাডা মিশর অস্ট্রেলিয়া কোরিয়া আয়ারল্যান্ড ভারত সহ প্রভৃতি দেশের বীজ।
বাংলাদেশের সাথে এই বীজ ব্যাংকের দূরতম কোন সম্পর্কের কথাও আমার জানা নেই। (হয়তো বাংলাদেশের কর্তা ব্যক্তিরা এর খবরই জানেন না!)
যে কোন ধরণের পরিপক্ব জীবাণুমুক্ত ও ত্রুটিহীন বীজ freezing temperature এ কয়েক শতাব্দী ভালো থাকতে সক্ষম এবং এই vault এর উদ্দেশ্য তাই।
(আমার দাদী করলা ঝিংগা দুন্দল এগুলোর বীজ কাদামাটির দলা তৈরি করে তার ভিতরে ঢুকিয়ে গোলাকার বল বানিয়ে সেটা ভালো ভাবে শুকিয়ে রেখে দিতেন। পরের মৌসুমে সেটা ভেঙে সেই বীজ লাগিয়ে দিতে। মূলতঃ তাপ, আলো এবং পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য এই ব্যবস্থা করতেন)
২০২০ সাল পর্যন্ত এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি বিভিন্ন বীজের নমুনা এবং মোট নমুনা বা বীজের সংখ্যা প্রায় ৫ বিলিয়ন। যার মধ্যে শুধুমাত্র আয়ারল্যান্ড থেকেই নেওয়া হয়েছে ৩২ জাতের আলু বীজ, চীন থেকে নেওয়া হয়েছে ২৬ জাতের ধান ইত্যাদি।
২০০৮ সালে এর কার্যক্রম শুরু হলেও প্রকৃত অর্থে ১৯৮৪ সালে Nordic Gene Bank নামে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং তখন শুধুমাত্র পাঁচটি নর্ডিক দেশ যথা- ডেনমার্ক সুইডেন নরওয়ে ফিনল্যান্ড ও আইসলেন্ডের বীজ সংরক্ষণ করা হতো। (উত্তর মেরুর দেশগুলোকে একসাথে নর্ডিক কান্ট্রি বলে)
বর্তমানে এই পাঁচটি দেশ Svalbard Global Seed Vault এর পরিচালনা ব্যয় বহন করে তবে বিভিন্ন সংস্থাও এখানে আর্থিক সহায়তা করে থাকে। তারমধ্যে অন্যতম প্রধান হলো বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
এই বীজ সংরক্ষণ কেন্দ্রটিকে অনেকে Doomsday seed vault (doomsday- কেয়ামত/পৃথিবীর শেষ দিন) বলেও ডাকতে ভালোবাসে।
মানুষের কল্যাণকর সকল কাজ সফল হোক
(কিছু তথ্য ও সকল ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)
ধন্যবাদ
মাসুদ আলম
২৭-১০-২০২০

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:০৭

*আলবার্ট আইনস্টাইন* বলেছেন: এই বীজ-ব্যাংক দেখে টার্মিনেটর ছবির পাহাড়ের গুহার কথা মনে পড়ে গেল।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:১৭

ইসলামিক_নলেজ বলেছেন: ও

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৪২

উদারত১২৪ বলেছেন: হুম

৪| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.