![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলামী কট্টরপন্থী শাসন: একটি সম্ভাব্য বিপর্যয়ের পূর্বাভাস।
-------------------------------------------------------------
বাংলাদেশ একটি ধর্মপ্রাণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হলেও এর শাসনব্যবস্থা, সমাজ ও সংস্কৃতি শতাব্দীকাল ধরে সহনশীলতা, বহুমত, এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে ধারণ করে এসেছে। কিন্তু যদি কোনো কট্টর ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে এবং রাষ্ট্রীয় নীতিতে ধর্মীয় কট্টরতা আরোপ করে, তবে এই বহুমাত্রিক সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বাধ্য। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশের সংস্কৃতি, ক্রীড়া, নারী স্বাধীনতা, এমনকি মানুষের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক ধারাও।
সংস্কৃতি ও বিনোদনের অপমৃত্যু:
ইসলামী কট্টরপন্থীরা ধর্মের ব্যাখ্যায় এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে নাচ-গান, কবিতা, নাটক, সিনেমা, এমনকি চিত্রশিল্প ও সাহিত্যকেও “অইসলামি” আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, তালেবান শাসিত আফগানিস্তান এবং ইরানের কট্টর ইসলামী শাসনে সিনেমা হল, মিউজিক স্টোর, কনসার্ট ভেন্যু ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মানুষ সাংস্কৃতিক পরিচয় হারিয়ে ধর্মীয় আইনের নিচে নিস্পৃহ এক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
ক্রীড়াঙ্গনের পতন:
ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, ভলিবল এই খেলার মাঠে বাংলাদেশের অর্জন ও জাতীয় পরিচয়ের গর্ব। কিন্তু ইসলামী কট্টর শাসনে এই ক্রীড়াগুলোকে ‘বিনোদনের নামে অপচয়’ বলে বন্ধ করার নজিরও রয়েছে অনেক ইসলামপন্থী রাষ্ট্রে। নারীদের খেলাধুলা তো আরও বেশি নিষিদ্ধ, এমনকি পুরুষের খেলাও ধর্মীয় অনুশাসনের নামে সীমাবদ্ধ করা হয়। এটি জাতীয় মনোবল, স্বাস্থ্য এবং যুব সমাজের স্বাভাবিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
নারী স্বাধীনতার বিলুপ্তি:
ইরান বা আফগানিস্তানে যেমন নারীদের বাইরে বের হওয়া কঠিন করে দেওয়া হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশে কট্টর ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে হিজাব, বোরকা বাধ্যতামূলক করা হবে। জিন্স, টপস, পশ্চিমা পোশাক, এমনকি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণও বাধাগ্রস্ত হবে। মেয়েদের স্কুলে যাওয়া সীমিত হতে পারে। মেয়েদের শুধু ‘ঘরের ভেতরকার দায়িত্বে’ আটকে রাখার চেষ্টা হবে। ফলে নারীশিক্ষা, নারীস্বাধীনতা এবং নারীঅধিকার ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক সংকট:
কট্টর ইসলামি দলগুলো সাধারণত মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে 'অসতর্কতা' বা 'ধর্ম অবমাননা' আখ্যা দিয়ে দমন করে। সংবাদমাধ্যম, লেখক, গবেষক, ব্লগারদের ওপর নজরদারি বাড়বে। সামান্য মতভেদে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে গ্রেপ্তার, নির্যাতন বা হত্যা পর্যন্ত হতে পারে।
এভাবে গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা ও মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়ে।
অর্থনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্কের সংকট:
যদি বাংলাদেশ ইরান, তালেবান আফগানিস্তান কিংবা সৌদি মডেলে চলে যায়, তবে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও পর্যটন হারিয়ে যাবে। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবে। আন্তর্জাতিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমন শাসনের ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি থমকে দাঁড়াবে।
উপসংহার:
ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়; বরং সকল ধর্ম ও সংস্কৃতির সহাবস্থান। কিন্তু ইসলামী কট্টর দল রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে তারা একটিমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে চাপিয়ে দিয়ে এক ধরনের 'জঙ্গী শাসন' প্রতিষ্ঠা করবেযা বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিকে স্থবির করে দেবে।
এই প্রেক্ষাপটে আমাদের জাতীয় ঐক্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা জরুরি। নয়তো একটি অন্ধকার সময় অপেক্ষা করছে যেখানে গান থাকবে না, কবিতা থাকবে না, হাসি থাকবে না শুধু শাসন থাকবে।
-- সালাউদ্দিন রাব্বী
সভাপতি- সংখ্যালঘু বাচাও আন্দোলন
বাংলাদেশ।
©somewhere in net ltd.