নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালাউদ্দিন রাব্বী

রাবব১৯৭১

সালাউদ্দিন রাব্বী

রাবব১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৯৭১ এর আর্তনাদ ও যুদ্ধের অজানা অধ্যায় ধর্ষণ ও পরিকল্পিত নির্যাতন।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৩৯

১৯৭১ এর আর্তনাদ ও যুদ্ধের অজানা অধ্যায় ধর্ষণ ও পরিকল্পিত নির্যাতন।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
ভূমিকা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি রাজনৈতিক স্বাধীনতার লড়াই ছিল না - এ ছিল মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধগুলোর এক মহাযজ্ঞ। গোলাগুলি, বোমা, আগুনের পাশাপাশি নারীদেহকে ব্যবহার করা হয়েছিল যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে। এই পরিকল্পিত ধর্ষণ ও নির্যাতনের দলিল আজও কাঁপিয়ে তোলে বিবেক।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
“ক্যাম্প থেকে কয়েকটি কাঁচের জার উদ্ধার করা হয়েছিল। ফরমালিনে সংরক্ষিত ছিল মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অংশ খুব নিখুঁতভাবে কাটা।”
-- ডাঃ বিকাশ চক্রবর্তী, খুলনা
“আমাদের সব মেয়েকে ঘর থেকে বের করে লাইন করে দাঁড় করানো হয়। বাচ্চারা চিৎকার করছিল। সেনারা হুমকি দিল রাজি না হলে শিশুদের পা ধরে ছিঁড়ে ফেলবে।”
-- জোহরা, নাটোর
“ধর্ষিতা মেয়েরা কাঁদতে কাঁদতে বলত ‘আমরা মরব, কিন্তু যদি তোমরা বেঁচে থাকো, আমাদের কথা বাড়িতে গিয়ে বলবে।’ পাকিদের নির্যাতন ছিল বীভৎস রাইফেল দিয়ে যৌনাঙ্গে গুলি, স্তন কেটে ফেলা এসব আমি নিজের চোখে দেখেছি।”
-- মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আবু ইউসুফ, ফরিদপুর

“ধোপা যেমন কাপড় আছড়ে মারে, তেমনি শিশুদের মাথা আছড়ে হত্যা করেছে। আমার বোনের ফ্রকের টুকরো কাপড় পরে পাওয়া গিয়েছিল।”
-- বিনোদ কুমার, নীলফামারী

“সদ্য মা হওয়া এক নারীর শিশুকে গরম ভাতের হাঁড়িতে ছুঁড়ে মারা হয়েছিল।”
- -ভানু বেগম, টাঙ্গাইল

এগুলো কেবল কিছু উদাহরণ। প্রতিটি কণ্ঠ একেকটি ইতিহাস-অপরাধের নিরেট প্রমাণ।

পরিকল্পিত এজেন্ডা
অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস কুমিল্লায় পাক অফিসারদের জেরা করলে তারা নির্লজ্জভাবে বলে-
“আমাদের নির্দেশ ছিল যত বেশি সম্ভব বাঙালি নারীকে গর্ভবতী করতে হবে।”
এক পাক মেজর তার বন্ধুকে চিঠি লিখেছিল-
“আমাদের এসব উশৃঙ্খল মেয়েদের পরিবর্তন করতে হবে, যাতে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভালো মুসলিম ও ভালো পাকিস্তানি হয়।”
লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী প্রকাশ্যে বলেছিলেন-
“যুদ্ধে এইসব ঘটনাকে স্বাভাবিক ধরো। বাঙালির রক্তে পাঞ্জাবি রক্ত মিশিয়ে তাদের জাত উন্নত করে দাও।”

এতে স্পষ্ট বোঝা যায় ১৯৭১ সালের ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধ ছিল না, বরং সামরিক কৌশল ও ধর্মীয়-রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ।

যুদ্ধোত্তর বাস্তবতা
যুদ্ধ শেষে দেখা যায় ---
অধিকাংশ নারী সমাজে ফিরে পায়নি সম্মান।
পুনর্বাসন কেন্দ্রে এসে তারা এনেছিল ক্ষতবিক্ষত শরীর আর ভাঙা আত্মা।
শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়াত অসংখ্য নারী, যাদের কারও ঘর ছিল না, সমাজে ঠাঁই ছিল না।
অন্যদিকে অপরাধীরা প্রায় নির্বিঘ্নেই দেশে ফিরে যায়, পরিবার ও সমাজে মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। ইতিহাসের এই নির্মম বৈপরীত্য আজও প্রশ্ন তোলে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?

উপসংহার
১৯৭১ সালের ধর্ষণ ছিল না হঠাৎ ঘটে যাওয়া কিছু অপরাধ। এটি ছিল পরিকল্পিত, রাষ্ট্র-সমর্থিত, সামরিকভাবে চালিত এক নৃশংসতা। নারীর শরীরকে যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে তারা জাতিগত শুদ্ধিকরণের নামে ধর্মীয় এজেন্ডা চাপিয়ে দিয়েছিল।
এই ইতিহাস মনে রাখা জরুরি। কারণ ভুলে গেলে অপরাধীরা জিতে যায়, শিকাররা হারিয়ে যায়। আজও যখন ধর্মান্ধতার নামে খুন ও সহিংসতা ঘটে, তখন মনে করিয়ে দিতে হয় আমরা যদি নীরব থাকি, তবে দায় এড়াতে পারব না।
“মন থেকে আমরা এখনও পাকিস্তানিই রয়ে গেছি…”

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: শেখ হাসিনা এবং লিগর লুটপাট নিয়ে কিছু লিখুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.