![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলা অভিধানে ‘অপরাধ’ ও ‘পাপ’ শব্দ দুটো পরস্পরের প্রতিশব্দ হলেও ব্যবহারের দিক থেকে ভিন্ন। ‘অপরাধ’ শব্দটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বা আইন বিরোধী কোনো কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। অন্যদিকে ‘পাপ’ শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে ধর্ম। ধর্মীয় দৃষ্টিতে গর্হিত বা ধর্মীয় বিধি-বিধান বিরোধী কোনো কাজকে পাপ বলা হয়ে থাকে। দুটো শব্দ একই অর্থবোধক হলেও ব্যবহারগত এ পার্থক্যে আপত্তির কিছু নেই। আপত্তি তখনই, যখন কেউ বলে সমাজ থেকে ‘পাপ’ শব্দটির ব্যবহার উঠিয়ে দিয়ে সবক্ষেত্রে ‘অপরাধ’ শব্দটির ব্যবহার করতে হবে। ধর্ম বিরোধী, নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী লোকেরাই এরকম কথা বলে থাকে। সে প্রেক্ষিতে আমার জিজ্ঞাসা হলো কোনটি মানুষকে অপরাধ বা পাপ থেকে দূরে রাখে – অপরাধবোধ না পাপবোধ?
রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক আইন অমান্য করলে কেউ অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়। রাষ্ট্রে বা সমাজে সুশাসন থাকলে তার সুষ্ঠু বিচার হবে, শাস্তি হবে। তাতেই কি সমাজ বা রাষ্ট্র থেকে অপরাধ দূর হবে? হয়েছে কোথাও? কেননা আইনের রয়েছে নানা ফাঁক। সেই ফাঁক কাজে লাগিয়ে বিত্তশালী, প্রভাবশালীরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করে। আবার সাধারণ অপরাধীরা শাস্তির ধরন জেনেও অপরাধ করতে সাহস করে। আমাদের সমাজে গা সয়ে উঠা একটি অপরাধ প্রসঙ্গে আসা যাক। ঘুষ খাওয়া এবং দেয়া আইনের চোখে অপরাধ সে কথা সবাই জানে। এ অপরাধ করতে সমাজে এখন আর কাউকে তেমন দ্বিধাবোধ করতে দেখা যায় না। কেননা এ অপরাধ করে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় কম। ধরা পড়লেও শাস্তির সম্ভাবনা নেই, থাকলেও খুবই কম। তাই জেনে বুঝে এ অপরাধ করছে অফিস আদালতের পিওন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা, সরকারি আমলা, আইন প্রণেতা সবাই। দু একজন ব্যতিক্রম আছে অবশ্যই। এমনি আরও সামাজিক, পারিবারিক ছোটো খাটো অপরাধ থেকে শুরু করে অতি জঘন্য অপরাধ রয়েছে, যা করে আইনকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব বলে প্রায়ই সে অপরাধগুলো সংঘটিত হচ্ছে। অপরাধবোধ এ সব ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। অন্যদিকে একজন মানুষের মনে যদি পাপবোধ প্রবল থাকে, তবে সে মানুষের চোখ, আইনের চোখ ফাঁকি দেয়া সম্ভব হলেও কোনো পাপ বা অপরাধ করবে না। কেননা তার মনে এই ভীতি থাকে যে, কোনো মানুষ না জানলেও, আইনের চোখ ফাঁকি দেয়া সম্ভব হলেও মৃত্যুর পর তার পার্থিব সব কৃতকর্মের বিচার হবে এবং পাপকাজের জন্য অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। সেই ভয়েই সে পাপকাজ থেকে দূরে থাকবে। প্রশ্ন উঠতে পারে অনেক লোক আছে যারা তাদের ধর্মীয় উপাসনা যথারীতি করছে , তা সত্ত্বেও মিথ্যা বলছে, ঘুষ খাচ্ছে এবং আরও অনেক পাপ বা অপরাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে কি পাপবোধ নেই? না নেই। থাকলে তারা পাপ বা অপরাধ করতে পারতো না। তারা লোক দেখানো ধর্ম কর্ম করে। কিংবা কেউ কেউ মনে করে ধর্মীয় উপাসনা যথাযথভাবে করলে তারা যে পাপ কাজ করছে, সেই পাপের শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে। তারা জানে না যে, হিসেবটা এতো সরল নয়। প্রচলিত প্রধান চারটি ধর্মানুসারে জেনে বুঝে করা প্রতিটি পাপকাজের শাস্তি ভোগ করতে হবে, তারপরই মুক্তি মিলবে। ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম ও হিন্দু ধর্মে সে কথা স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মে যে নির্বাণ লাভের কথা বলা হয়েছে, তারও মূলসুর একই।
মানুষ যদি যথার্থ ধার্মিক হয়, তার মধ্যে পাপপুণ্যের বোধ যথাযথ থাকে, তাহলে কেউ জানবে না, জানলেও তার কোনো শাস্তি হবে না, সে ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হলেও সে পাপ কাজ থেকে দূরে থাকবে। কিন্তু
অপরাধবোধ যথাযথ থাকলেও, যদি পারলৌকিক শাস্তির ভয় না থাকে, যদি সে শতভাগ নিশ্চিত হয় যে, কেউ জানবেনা এবং জানলেও তার কোনো শাস্তি হবে না, তবে সে নিজের খ্যাতি, প্রভাব-প্রতিপত্তি লাভের জন্যে, কামনা বাসনা চরিতার্থের জন্যে অপরাধ করতে পারে।
তাই যারা ভাবে ধর্ম বিলুপ্ত হলে, ‘পাপ’ শব্দটি অভিধান থেকে, সমাজ থেকে উঠে গেলেই সমাজে শান্তির বাতাস বয়ে যাবে, তাদের ভাবনাটি সঠিক নয়।
২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৯
বার্ণিক বলেছেন: ভালো বলেছেন। আপনাকে অনুসরণ করে ভুল করিনি। আপনার সব পোস্ট দেখছি।
৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০১
সায়ন্তন রফিক বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪
ঢাকাবাসী বলেছেন: বাঙালী বড়ই বিচিত্র জীব অপরাধ করতেই ভাল বাসে মনে হয়। দুনিয়াতে সবচাইতে নিকৃস্ট মাল।