নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সায়ন্তন রফিক

অপেক্ষায় আছি কেউ একজন আসবেই আলোয় ভরিয়ে দেবে সব।

সায়ন্তন রফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবই অনিশ্চিত তবুও ......

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:১৪



কিছুদিন আগে আমার আরও একটি জন্মদিন আমাকে জানিয়ে দিয়ে গেল পৃথিবীতে আমার সময় ফুরিয়ে আসছে। আমাকে যারা জানে, চিনে এমনকি আমার পরিবারের লোকজনের মধ্যে দু একজন আমার এ প্রকৃত জন্মদিনটির কথা জানে। সবাই শুধু সনদ সমর্থিত জন্মদিনটির কথাই জানে। আমি কোনো জন্মদিনই পালন করি না। তাই আমার প্রকৃত জন্মদিনটির কথা কারো না জানাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার জন্ম এবং এস.এস.সি. রেজিস্ট্রেশন ফর্মে আমার জন্মতারিখ কোনোটাই আমার ইচ্ছে মতো হয় নি। আমার জন্মের সময়ে জন্মনিবন্ধন ছিলো না। আমাদের সময়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর এস. এস. সি. সার্টিফিকেটে তার প্রকৃত জন্ম তারিখ নেই। কখনো অভিভাবকের ইচ্ছাতে জন্মতারিখ নির্ধারিত হতো, কখনো স্কুলের দায়িত্ব প্রাপ্ত করণিক পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত বয়স হিসেব করে একটা তারিখ বসিয়ে দিতেন। আমার জন্মতারিখ হিসেব করে বসিয়ে দিয়েছিলেন আমার এক শিক্ষক। তিনি আমার বাবারও শিক্ষক ছিলেন। সনদে জন্মতারিখ যাই থাক, বিখ্যাত কেউ না হলে জন্মতারিখের কোনো গুরুত্ব নেই, অফিসিয়াল কাজকর্ম ছাড়া। তবে জন্মটা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মানুষের জন্মের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ জীবনের অনেক কিছু, মনীষীগণ যতো কিছুই বলুন না কেন।
এই আমি জন্ম নিতে পারতাম বহু শতাব্দী আগে কিংবা বহু শতাব্দী পরে। আমি জন্ম নিতে পারতাম কোনো রাজ পরিবারে কিংবা জমিদার পরিবারে কিংবা কোনো মালটিবিলিয়নিয়ার পরিবারে। তেমনটি হয়নি। আমি জন্ম নিয়েছি গত শতাব্দীতে অতি সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে। কেন এমন হলো? আমার জন্মের জন্যে আমি তো দায়ী নই। আমি কেন পৃথিবীর কোনো মানুষই তার জন্মের জন্যে যেমন দায়ী নয়, তেমনি ইচ্ছেমতো সময়ে, ইচ্ছেমতো স্থানে, ইচ্ছেমতো পরিবারে জন্ম নিতে পারে না। প্রতিটি মানুষের জন্ম তাই অতি অনিশ্চিত। কেন? এর উত্তর খুঁজতে গেলে অনিবার্যভাবে যে বিষয়টি সামনে এসে দাঁড়ায়, তা হচ্ছে ভাগ্য। এ ভাগ্যটা কী ? কে এই ভাগ্য লিখে? সে কি বিধি বা ঈশ্বর? তাই কি ভাগ্যের অন্য নাম বিধিলিপি?
কে এই ঈশ্বর? কোথায় তাঁর নিবাস? অনেকে বলে থাকে প্রকৃতির কাছে অসহায় মানুষ তাকে আবিষ্কার করেছে? কেউ বলে নি জন্মের কাছে অসহায় মানুষ তাঁকে আবিষ্কার করেছে। অথচ তাই সত্যি। যে মানুষটি প্রথম ঈশ্বর শব্দটি আবিষ্কার করেছে, সে যদি তখন জন্ম না নিয়ে জন্ম নিত এ কালে, হতো কোনো অথর্ব তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী, তবে সে বলতে পারতো এ বিরাট বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে আপনা আপনি, কোনো ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। কিংবা হতে পারতো অল্পবিদ্যার অভিমানে আত্মহারা মুক্তমনা। বলতে পারতো অথর্ব তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীর অপ্রমাণিত তত্ত্বকথাই সত্যি। ঐ তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীর কাছে যেমন ঈশ্বরের অনস্তিত্বের প্রমাণ নেই, তেমনি প্রথম যে মানুষটি ঈশ্বর শব্দটি আবিষ্কার করেছিলো, তার কাছেও ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছিলো না। পার্থক্য শুধু এই যে প্রথম আদিম মানুষটি কর্মের মাঝে কর্তার পরিচয় খুঁজে পেয়েছে, আর এ যুগের বিজ্ঞানীটি কর্তাহীন কর্মের কথা বলে। বাস্তবে কর্তাহীন কোনো কর্মের পরিচয় পাওয়া যায় না। মানুষ সৃষ্টিকর্মেরও তাই কর্তা আছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। সেই কর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্মকাল, স্থান, পরিবেশ নির্ধারিত হয়। মানুষ যদি নিজ ইচ্ছায় জন্ম নিতে পারতো, তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়াতো ? সে অবস্থাটাও মানুষের অজানা। অর্থাৎ কোনো মানুষের জন্ম একটা অতি অনিশ্চিত ঘটনা, যার নিয়ন্তা সে নিজে নয়।
মানুষের জীবনের গতিপ্রবাহ সেও মানুষের হাতে নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা জন্মের দ্বারাই নির্ধারিত হয়। ব্যতিক্রম খুবই সামান্য। ভাগ্যে অবিশ্বাসী লোকেরা সেই নগণ্য উদাহরণ সামনে নিয়ে এসে বলে পরিশ্রমই ভাগ্যের নিয়ন্তা। যারা পরিশ্রম করে ভাগ্যকে জয় করেছে তাদের পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে, তার সংখ্যা কতো নগণ্য। যদি ধরে নেই বর্তমান পৃথিবীর সাত লক্ষ মানুষ পরিশ্রম করে জীবনের নানা ক্ষেত্রে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে , তবে তা হবে বর্তমান জনসংখ্যার দশ হাজার ভাগের একভাগ। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এমন সাতলক্ষ মানুষ পাওয়া যাবে না যারা কেবল পরিশ্রমের জোরে জীবনের কর্মক্ষেত্রে স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছে। জন্মের স্থান কাল ও পরিবেশ এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে অবশ্যই। যে অথর্ব বিজ্ঞানীর কথা পূর্বে উল্লেখ করেছি, সে যদি ইউরোপে জন্ম না নিয়ে, জন্ম নিতো বাংলাদেশে কোনো দরিদ্র পরিবারে, তাহলে তার বেঁচে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়তো। তাত্ত্বিক বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতি অর্জনতো দূরের কথা।

The last station বা শেষ গন্তব্য বললেই মনের পর্দায় যে ছবিটা ভেসে উঠে, তা হচ্ছে কবর নয়তো চিতা। কিন্তু কবর বা চিতা কি সত্যি শেষ গন্তব্য? নাকি শেষ গন্তব্যের আগের স্টেশন? যদি কবর বা চিতা শেষ গন্তব্য হতো, তবে সব মানুষ মৃত্যুর পর কবরেই ঠাঁই পেতো নয়তো চিতায় পুড়তো। তা কি হয়? পৃথিবীতে মানুষ কতো জায়গায়, কতো ভাবে মৃত্যুবরণ করে। সবাই তো কবরে ঠাঁই পায় না বা চিতার আগুনে ভস্ম হয় না। তার মানে মানুষের শেষ গন্তব্য কবর বা চিতা নয়। ধর্মগ্রন্থগুলোও এমনটা বলে না। ধর্মগ্রন্থ অনুসারে বেহেস্ত বা দোজখ, স্বর্গ বা নরক হচ্ছে মানুষের শেষ গন্তব্য। সে গন্তব্য মানুষের অজানা। সে গন্তব্য অনিশ্চিত। ধর্মীয় দৃষ্টিতে শেষ গন্তব্যের আগের স্টেশন অনিশ্চিত হলেও সাধারণভাবে ধরে নেয়া যায় তা কবর বা চিতাই। কিন্তু এই শেষ গন্তব্য বা শেষ গন্তব্যের আগের স্টেশন মৃত্যু পরবর্তী ব্যাপার। কিন্তুর মৃত্যুর আগে মানুষের শেষ ঠিকানা? তাও কি নিশ্চিত করতে পারে মানুষ? পারে না। সেও অনিশ্চিত। কেউ হয়তো সারাজীবন পরিশ্রম করে কিংবা চুরিডাকাতি, দুর্নীতি করে গাঁয়ে কিংবা শহরে নয়তো বিদেশে একটা ঠিকানা তৈরি করলো জীবনের শেষ দিনগুলো নিশ্চিন্তে শান্তিতে কাটাবে বলে। কিন্তু দেখা গেলো তার শেষ জীবন পুরোটাই কাটলো হাসপাতালে, বৃদ্ধাশ্রমে কিংবা কারাগারে। নয়তো শেষ জীবনের আশ্রয় টুকু হারিয়ে পথে বা কোনো ঘিঞ্জি বস্তিতে কাটাতে হলো বাকি জীবন। এ সবের উদাহরণ দুর্লভ নয়। তার মানে মানুষের জীবন, মৃত্যু, শেষ গন্তব্য সবই অনিশ্চিত। তবুও মানুষ নিশ্চিত জীবনের মোহে কতো কিছু করে!

এই অনিশ্চয়তার নিয়ন্তা কে? কেউ কি তা জানে? কেউ দেখেছে কি তাকে? তবুও কেউ একজন নিশ্চয়ই আছে। একথা ভাবতে স্বস্তি বোধ হয়। জীবনকে নিরর্থক মনে হয় না। প্রশান্তি জাগে মনে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮

ক্লে ডল বলেছেন: যাবতীয় অনিশ্চিতের নিয়ন্ত্রণকর্তা একজন নিশ্চয় আছেন।

২৭ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:১৮

সায়ন্তন রফিক বলেছেন: নিশ্চয়ই। ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩

বার্ণিক বলেছেন: স্রষ্টায় বিশ্বাস আছে। লেখাটি ভাল হয়েছে।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০১

সায়ন্তন রফিক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮

মনস্বিনী বলেছেন: কেবল মূর্খরাই স্রষ্টাকে অবিশ্বাস করে।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪৯

সায়ন্তন রফিক বলেছেন: আমিও তাই মনে করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.